২০২০-২১ অর্থবছর

প্রথম আড়াই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৬শ’ কোটি ডলার

করোনার মধ্যেও বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি আসছে। চলতি অর্থবছরে প্রথম আড়াই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৬শ’ কোটি ডলার। এই হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রথম আড়াই মাসে ১৪৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য দেখা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, করোনার আগে অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতো তার চেয়ে করোনাকালে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের আড়াই মাসে ৫৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই পরিমাণ রেমিট্যান্স গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দেড় গুণ বেশি। কোরবানির ঈদের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসবে বলে ধারণা করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু প্রতি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোতে ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকা কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। দীর্ঘদিন ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় প্রতি ডলারের দাম আটকে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এখন কমে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে। শুধু তাই নয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই রেমিট্যান্সের টাকায় দেশের লাখ লাখ পরিবার চলছে। এই রেমিট্যান্সের কারণে ছোট ছোট ব্যবসাও হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তবে এ বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৭ দিনে প্রবাসীরা প্রায় ১৪৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের প্রায় পুরো মাসের সমান। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসীরা ৪৫১ কোটি ৯২ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু চলতি অর্থবছরের আড়াই মাসে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বও পর্যন্ত ৫৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

রেমিট্যান্স বাড়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে হুন্ডি বন্ধ হওয়া এবং সরকারের দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনাকে দেখা হচ্ছে। এছাড়া রেমিট্যান্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আরও দেখা, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে প্রবাসীরা ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। একক মাস হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। শুধু তাই নয়, ইতিহাস বলছে এখন থেকে বিশ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১-০২ অর্থবছরের পুরো সময়ে অর্থাৎ ১২ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫০ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর করোনাকালে শুধু জুলাই মাসেই প্রবাসীরা তার চেয়ে বেশি ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। পরের মাস আগস্টে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

এদিকে রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটির মতো বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে এই রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ১২ শতাংশের মতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে ৪৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল বাংলাদেশে, যা ছিল গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।

বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে গত বছরের মতো এবারও ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। সে অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এজন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করে কোন কোন ব্যাংক আরও ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৪ মহররম ১৪৪২, ০৫ আশ্বিন ১৪২৭

২০২০-২১ অর্থবছর

প্রথম আড়াই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৬শ’ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনার মধ্যেও বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি আসছে। চলতি অর্থবছরে প্রথম আড়াই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৬শ’ কোটি ডলার। এই হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রথম আড়াই মাসে ১৪৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য দেখা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, করোনার আগে অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতো তার চেয়ে করোনাকালে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের আড়াই মাসে ৫৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই পরিমাণ রেমিট্যান্স গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দেড় গুণ বেশি। কোরবানির ঈদের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসবে বলে ধারণা করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু প্রতি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোতে ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকা কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। দীর্ঘদিন ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় প্রতি ডলারের দাম আটকে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এখন কমে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে। শুধু তাই নয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই রেমিট্যান্সের টাকায় দেশের লাখ লাখ পরিবার চলছে। এই রেমিট্যান্সের কারণে ছোট ছোট ব্যবসাও হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তবে এ বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৭ দিনে প্রবাসীরা প্রায় ১৪৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের প্রায় পুরো মাসের সমান। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসীরা ৪৫১ কোটি ৯২ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু চলতি অর্থবছরের আড়াই মাসে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বও পর্যন্ত ৫৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

রেমিট্যান্স বাড়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে হুন্ডি বন্ধ হওয়া এবং সরকারের দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনাকে দেখা হচ্ছে। এছাড়া রেমিট্যান্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আরও দেখা, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে প্রবাসীরা ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। একক মাস হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। শুধু তাই নয়, ইতিহাস বলছে এখন থেকে বিশ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১-০২ অর্থবছরের পুরো সময়ে অর্থাৎ ১২ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫০ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর করোনাকালে শুধু জুলাই মাসেই প্রবাসীরা তার চেয়ে বেশি ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। পরের মাস আগস্টে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

এদিকে রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটির মতো বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে এই রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ১২ শতাংশের মতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে ৪৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল বাংলাদেশে, যা ছিল গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।

বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে গত বছরের মতো এবারও ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। সে অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এজন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করে কোন কোন ব্যাংক আরও ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।