প্রতিরক্ষা বাঁধে বারবার ধস আতঙ্কিত পদ্মাপাড়ের মানুষ

শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের ৪৭ মিটার এলাকা ধসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিনটি পরিবারের ৯টি বসতঘর। চলতি বর্ষায় বাঁধের আরও কয়েকটি অংশ ধসে যায়। হুমকি রয়েছে তীর রক্ষা বাধের কয়েকটি এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে ভাঙন রোধে কাজ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামে গেল শনিবার থেকে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ওই গ্রামের চুন্নু মাদবর, আলিফ মাদবর ও কুদ্দুস মাদবর ভাঙনের কবলে পড়ে। চলতি বর্ষায় ধাপে ধাপে পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। ভাঙন থেকে রক্ষা পায়নি সুরেশ^র রক্ষা বাধ ও পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধও। আগস্ট মাসে সুরেশ^র বাঁধে কয়েকটি ধাপে ধসে যায় ১শ ৬৬ মিটার। ওই বাঁধের বেশ কয়েকটি অংশ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ। পদ্মার ভাঙন থেকে নড়িয়া-জাজিরা উপজেলাকে রক্ষায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় ‘নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প’র কাজ। ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে নদীর অপর প্রান্তে জেগে ওঠা ১১ দশমিক ৯ কিলোমিটার চর খননে ব্যয় ধরা হয় ৫শ ৩৩ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ। খননকৃত একটি চ্যানেল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ পায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর খুলনা শীপ ইয়ার্ড লিমিটেড। সাব ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্পের কাজ করছে বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ।

সুরেশ^র গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, বাঁধের অপর প্রান্তে যে চর রয়েছে সেটি প্রতি বছরই বড় হচ্ছে। এতে বর্ষায় পানির স্র্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে বাধে এসে আঘাত করে। এর ফলেই বারবার বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই বাঁধকে ঘিরেই আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজ সেই বাধই হুমকিতে। ঘর বাড়ি নিয়ে কোথায় যাব জানি না। পাঁচগাও গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত চুন্নু মাদবর বলেন, আমাদের রক্ষার জন্য যে বাঁধ দেয়া হলো সেই বাধই তো আমাদের রক্ষা করতে পারল না। আমার ঘরের একটা অংশ ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। যা রক্ষা করতে পারছি তা নিয়ে অন্য জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধ দিয়া লাভ হবে কি যদি চর না কাটে? শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবিব বলেন, প্রতিরক্ষা বাঁধের যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ওইসব স্থানে জিও ব্যাগ, জিও টিউব ও সিসি ব্লক দিয়ে রক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণনের কারণে কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চলমান প্রকল্পে নতুন করে কিছু কাজ সংযোজন করা হয়েছে। স্র্রোত কমলে চর খননের কাজ পুনরায় শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুফল পাবে এলাকাবাসী।

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৪ মহররম ১৪৪২, ০৫ আশ্বিন ১৪২৭

প্রতিরক্ষা বাঁধে বারবার ধস আতঙ্কিত পদ্মাপাড়ের মানুষ

কাজী মনিরুজ্জামান, শরীয়তপুর

image

শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের ৪৭ মিটার এলাকা ধসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিনটি পরিবারের ৯টি বসতঘর। চলতি বর্ষায় বাঁধের আরও কয়েকটি অংশ ধসে যায়। হুমকি রয়েছে তীর রক্ষা বাধের কয়েকটি এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে ভাঙন রোধে কাজ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামে গেল শনিবার থেকে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ওই গ্রামের চুন্নু মাদবর, আলিফ মাদবর ও কুদ্দুস মাদবর ভাঙনের কবলে পড়ে। চলতি বর্ষায় ধাপে ধাপে পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। ভাঙন থেকে রক্ষা পায়নি সুরেশ^র রক্ষা বাধ ও পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধও। আগস্ট মাসে সুরেশ^র বাঁধে কয়েকটি ধাপে ধসে যায় ১শ ৬৬ মিটার। ওই বাঁধের বেশ কয়েকটি অংশ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ। পদ্মার ভাঙন থেকে নড়িয়া-জাজিরা উপজেলাকে রক্ষায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় ‘নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প’র কাজ। ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে নদীর অপর প্রান্তে জেগে ওঠা ১১ দশমিক ৯ কিলোমিটার চর খননে ব্যয় ধরা হয় ৫শ ৩৩ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ। খননকৃত একটি চ্যানেল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ পায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর খুলনা শীপ ইয়ার্ড লিমিটেড। সাব ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্পের কাজ করছে বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ।

সুরেশ^র গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, বাঁধের অপর প্রান্তে যে চর রয়েছে সেটি প্রতি বছরই বড় হচ্ছে। এতে বর্ষায় পানির স্র্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে বাধে এসে আঘাত করে। এর ফলেই বারবার বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই বাঁধকে ঘিরেই আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজ সেই বাধই হুমকিতে। ঘর বাড়ি নিয়ে কোথায় যাব জানি না। পাঁচগাও গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত চুন্নু মাদবর বলেন, আমাদের রক্ষার জন্য যে বাঁধ দেয়া হলো সেই বাধই তো আমাদের রক্ষা করতে পারল না। আমার ঘরের একটা অংশ ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। যা রক্ষা করতে পারছি তা নিয়ে অন্য জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধ দিয়া লাভ হবে কি যদি চর না কাটে? শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবিব বলেন, প্রতিরক্ষা বাঁধের যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ওইসব স্থানে জিও ব্যাগ, জিও টিউব ও সিসি ব্লক দিয়ে রক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণনের কারণে কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চলমান প্রকল্পে নতুন করে কিছু কাজ সংযোজন করা হয়েছে। স্র্রোত কমলে চর খননের কাজ পুনরায় শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুফল পাবে এলাকাবাসী।