বরাইদ ইউপি দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রকল্প

টাকা না দিলে মেলে না ঘর ৩ দফা চেয়ারম্যানকে নোটিশ

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা বরাইদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে বাসগৃহ বরাদ্দ দেয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বারবার তাগাদা দেয়ার পরও নির্দিষ্ট সময়ে বাসগৃহ নির্মাণ কাজ শেষ না করারও অভিযোগ রয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ ওই ইউনিয়নে এ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ বাসগৃহ বরাদ্দের তিনটিই অসমাপ্ত রয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাইদ ইউনিয়নে মোট চারটি বাসগৃহ বরাদ্দ দেয়া হয়। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট মাপের দুটি ঘর, একটি শৌচাগার, একটি রান্নাঘর, ও বারান্দাসহ একটি বাসগৃহের নির্মাণ খরচ বাবদ বরাদ্দ হয় ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। বাসগৃহ নিতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির কোন টাকা লাগে না। কিন্তু বরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন আর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তার চাহিদা অনুযায়ী যে টাকা দিতে পেরেছে তাকেই ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন।

বরাইদ ইউনিয়নের আগে সাভার গ্রামের আ. সাত্তার কানুর ছেলে মো. শাহিনুর হক একটি বাসগৃহের বরাদ্দ পেয়েছেন। তখন তিনি বিদেশে ছিলেন। এখনও বিদেশে অবস্থান করছেন। তার স্ত্রী শেফালী আক্তার জানান, চেয়ারম্যানকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে স্বামীর নামে ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু অর্ধেক কাজ করে এখন আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করেছেন চেয়ারম্যান। টাকা না দিলে কাজ শেষ করবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। শেফালী আক্তার বলেন স্বামী বিদেশে থাকলেও সেখানে কোন কাজ নেই। উল্টো তাকেই টাকা পাঠাতে হয়। দুই সন্তান নিয়ে বর্তমানে বাবার বাড়িতে থাকেন। ঘরের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা বাবা এবং ভাইদের কাছ থেকে নিয়ে চেয়ারম্যানকে দিয়েছেন। কিন্তু বাকি দশ হাজার টাকা দেযারমত অবস্থা তার নেই। এদিকে মো. শাহিনুরের বরাদ্দকৃত বাসগৃহ নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে না পারায় সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বরাইদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে তিন দফায় কারন দর্শানো নোটিস দেন। সর্বশেষ নোটিস দেন গত ৩ সেপ্টেম্বর। নোটিসের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে চেয়ারম্যান মোট ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। নোটিসে আরও বলা হয়েছে গত ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর হতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। নোটিস পাওয়ার তিন কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়। চেয়ারম্যানকে একই রকম নোটিস দেয়া হয়েছে বরাদ্দপ্রাপ্ত উত্তর বরাইদ গ্রামের নজরুল ইসলাম, আগ সাভার গ্রামের মোহিরন বেগমের বাসগৃহ নির্মাণ কাজ শেষ না করার জন্য। নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান স্বীকার না করলেও এদের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন চেয়ারম্যান।

গত রবিবার সরেজমিনে শাহিনুরের অর্ধসমাপ্ত বাসগৃহে কোন কাজ করতে দেখা যায়নি। শাহিনুরের স্ত্রী শেফালী আক্তার জানান বাকি দশ হাজার টাকা না দেয়ায় চেয়ারম্যান তার সঙ্গে কোন যোগাযোগই করেনি।

এ ব্যাপারে বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান হারুন আর রশিদ টাকা পয়সা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। নোটিস প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন বর্ষার কারণে মাটি না পাওয়ায় কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করা হবে। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহারিয়ার মাহমুদ রনজু বলেন বাসগৃহ বরাদ্দ বাবদ কোন টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ না হওয়া তিন দফায় চেয়ারম্যানকে নোটিস দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুর আলম বলেন, টাকা পয়াসা নিয়ে ঘর বরাদ্দের বিষয়ে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৪ মহররম ১৪৪২, ০৫ আশ্বিন ১৪২৭

বরাইদ ইউপি দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রকল্প

টাকা না দিলে মেলে না ঘর ৩ দফা চেয়ারম্যানকে নোটিশ

প্রতিনিধি, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)

image

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা বরাইদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে বাসগৃহ বরাদ্দ দেয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বারবার তাগাদা দেয়ার পরও নির্দিষ্ট সময়ে বাসগৃহ নির্মাণ কাজ শেষ না করারও অভিযোগ রয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ ওই ইউনিয়নে এ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ বাসগৃহ বরাদ্দের তিনটিই অসমাপ্ত রয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাইদ ইউনিয়নে মোট চারটি বাসগৃহ বরাদ্দ দেয়া হয়। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট মাপের দুটি ঘর, একটি শৌচাগার, একটি রান্নাঘর, ও বারান্দাসহ একটি বাসগৃহের নির্মাণ খরচ বাবদ বরাদ্দ হয় ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। বাসগৃহ নিতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির কোন টাকা লাগে না। কিন্তু বরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন আর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তার চাহিদা অনুযায়ী যে টাকা দিতে পেরেছে তাকেই ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন।

বরাইদ ইউনিয়নের আগে সাভার গ্রামের আ. সাত্তার কানুর ছেলে মো. শাহিনুর হক একটি বাসগৃহের বরাদ্দ পেয়েছেন। তখন তিনি বিদেশে ছিলেন। এখনও বিদেশে অবস্থান করছেন। তার স্ত্রী শেফালী আক্তার জানান, চেয়ারম্যানকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে স্বামীর নামে ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু অর্ধেক কাজ করে এখন আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করেছেন চেয়ারম্যান। টাকা না দিলে কাজ শেষ করবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। শেফালী আক্তার বলেন স্বামী বিদেশে থাকলেও সেখানে কোন কাজ নেই। উল্টো তাকেই টাকা পাঠাতে হয়। দুই সন্তান নিয়ে বর্তমানে বাবার বাড়িতে থাকেন। ঘরের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা বাবা এবং ভাইদের কাছ থেকে নিয়ে চেয়ারম্যানকে দিয়েছেন। কিন্তু বাকি দশ হাজার টাকা দেযারমত অবস্থা তার নেই। এদিকে মো. শাহিনুরের বরাদ্দকৃত বাসগৃহ নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে না পারায় সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বরাইদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে তিন দফায় কারন দর্শানো নোটিস দেন। সর্বশেষ নোটিস দেন গত ৩ সেপ্টেম্বর। নোটিসের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে চেয়ারম্যান মোট ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। নোটিসে আরও বলা হয়েছে গত ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর হতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। নোটিস পাওয়ার তিন কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়। চেয়ারম্যানকে একই রকম নোটিস দেয়া হয়েছে বরাদ্দপ্রাপ্ত উত্তর বরাইদ গ্রামের নজরুল ইসলাম, আগ সাভার গ্রামের মোহিরন বেগমের বাসগৃহ নির্মাণ কাজ শেষ না করার জন্য। নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান স্বীকার না করলেও এদের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন চেয়ারম্যান।

গত রবিবার সরেজমিনে শাহিনুরের অর্ধসমাপ্ত বাসগৃহে কোন কাজ করতে দেখা যায়নি। শাহিনুরের স্ত্রী শেফালী আক্তার জানান বাকি দশ হাজার টাকা না দেয়ায় চেয়ারম্যান তার সঙ্গে কোন যোগাযোগই করেনি।

এ ব্যাপারে বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান হারুন আর রশিদ টাকা পয়সা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। নোটিস প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন বর্ষার কারণে মাটি না পাওয়ায় কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করা হবে। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহারিয়ার মাহমুদ রনজু বলেন বাসগৃহ বরাদ্দ বাবদ কোন টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ না হওয়া তিন দফায় চেয়ারম্যানকে নোটিস দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুর আলম বলেন, টাকা পয়াসা নিয়ে ঘর বরাদ্দের বিষয়ে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।