সৌদিতে ফিরতে প্রবাসীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

সৌদিতে কর্মস্থলে ফিরে যেতে এয়ার লাইন্সের টিকিটের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে দেশে এসে আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীরা। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন তারা। এর আগে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের অফিসও ঘেরাও করে। গত সোমবার প্রবাসীদের বিক্ষোভের মুখে ১০ জন প্রতিনিধিকে ভেতরে নিয়ে যায় সৌদি এয়ারলাইন্স। তাদের মাধ্যমে অন্যদের টিকিট সংগ্রহের সিরিয়ালের টোকেন দেয়া হয়। তবে গতকাল কোন ঘোষণা না দিয়েই অনির্দিষ্টকালের জন্য অফিস বন্ধ করে দেয় সৌদি এয়ারলাইনস। এতে সৌদিতে ফিরতে অনিশ্চয়তায় পড়া প্রবাসীরা বিক্ষোভে নামেন। প্রবাসীদের ভাষ্য তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সময় মতো না যেতে পারলে চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব হবেন অনেকে। এদিকে প্রবাসীদের বিক্ষোভে কারওয়ান বাজার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পথচারীরাও পড়েন চরম দুভোর্গে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সম্প্রতি সৌদি আরব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুরও ঘোষণা দেয়। কিন্তু প্রথম দিকে বিমান ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিলে ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়নি সৌদি। তারপর বাংলাদেশও সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি বাতিল করে। নানা নাটকীয়তা শেষে গত সোমবার ২১ সেপ্টেম্বর সৌদি কর্তৃপক্ষ বিমানকে ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়। কিন্তু এখনও ল্যান্ডিং অনুমতি দেয়নি। ফলে বিমানও সৌদি আরবে শিডিউল ঘোষণা করতে পারছে না। এরপর থেকেই মূলত টিকিটের সংকট তৈরি হয়েছে। সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সৌদিতে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের অনুমতি পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ল্যান্ডিং পারমিশন না পাওয়ায় যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করতে পারছে না তারা। অন্যদিকে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ রুটে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইটের ঘোষণা দেয় সৌদিয়া। বিমানকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি না দেয়ায় এখনও ঝুলে আছে সৌদির ফ্লাইট পরিচালনার ভবিষ্যৎ। ফ্লাইট চালানোর অনুমতি পাওয়ার পরই সৌদি এয়ারলাইন্স টিকিট বিক্রি শুরু করে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাদের প্রধান গেটের সামনে একটি কাগজে নোটিশ লিখে তারা জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইন্সের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হলো । ক্ষোভ আর হতাশা থেকে সড়কে বসে পড়েন প্রবাসীরা। সকাল থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন তারা।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সৌদি প্রবাসী নোয়াখালীর মো. এনামুল বলেন, ‘আমরা মার্চে দেশে ফিরে লকডাউনে পড়েছি। দেশে ফেরার সময় আমরা সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটেছিলাম। তবে যেতে পারিনি। আমাদের আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। কয়েক দিন ধরে এখানেই আছি। দীর্ঘদিন দেশে থাকতে থাকতে সবারই বাড়িতে অনেক ধার-দেনা হয়ে গেছে। আমাদের যেতেই হবে। প্লিজ আমাদের সৌদি ফেরানোর ব্যবস্থা করেন। আরেক প্রবাসী শরীয়তপুরের রাজুবলেন, ‘আমাকে গত সোমবার ২৭৫৪ নম্বর সিরিয়ালের একটি টোকেন দেয়া হয়েছে। আমাকে সৌদিয়া বলেছে যেন ৫ অক্টোবর এসে টিকিট সংগ্রহ করি। অথচ আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। এখন আমরা কী করব? আমরা বিক্ষোভ করছি আমাদের জন্য, দেশের জন্য। আমরা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। আমরা প্রবাসী। আমাদের সৌদি ফেরানোর ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। বরগুনার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী আবু হানিফ বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে দেশে আটকা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বরগুনা থেকে ঢাকায় এসেছি। প্রতিদিনই ফিরতি টিকিটের তারিখ জানতে সৌদির অফিসে আসছি। তবে তারা তারিখ দিতে পারছে না। ৩০ সেপ্টেম্বর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আমরা এখানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এ বিষয়ে গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গণশুনানির এক অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের ফেরাতে সৌদি অ্যারাবিয়া এয়ারলাইন্স যত ফ্লাইট চাইবে, তত ফ্লাইটের অনুমোদন দেয়া হবে। বাংলাদেশিদের ফিরে যেতে সৌদি এয়ারলাইন্স যে কয়টা ফ্লাইটের অনুমোদন চাইবে, আমরা দেব। তবুও যেন প্রবাসীরা ফিরে যেতে পারেন। একই সঙ্গে আমাদের বিমান বাংলাদেশও যেন যেতে পারে সেজন্য কাজ করছি। আমাদের বিমানও যেন সৌদি আরব যেতে পারে, সেই চেষ্টা করছি। বিমান থেকে জানতে পেরেছি, তারা এখনও অপারেশনের অনুমতি পায়নি। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আমরা সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি শীঘ্রই ল্যান্ডিং পারমিশন পাব।

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৪ মহররম ১৪৪২, ০৫ আশ্বিন ১৪২৭

টিকিটের জন্য

সৌদিতে ফিরতে প্রবাসীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

সৌদিতে কর্মস্থলে ফিরে যেতে এয়ার লাইন্সের টিকিটের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে দেশে এসে আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীরা। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন তারা। এর আগে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের অফিসও ঘেরাও করে। গত সোমবার প্রবাসীদের বিক্ষোভের মুখে ১০ জন প্রতিনিধিকে ভেতরে নিয়ে যায় সৌদি এয়ারলাইন্স। তাদের মাধ্যমে অন্যদের টিকিট সংগ্রহের সিরিয়ালের টোকেন দেয়া হয়। তবে গতকাল কোন ঘোষণা না দিয়েই অনির্দিষ্টকালের জন্য অফিস বন্ধ করে দেয় সৌদি এয়ারলাইনস। এতে সৌদিতে ফিরতে অনিশ্চয়তায় পড়া প্রবাসীরা বিক্ষোভে নামেন। প্রবাসীদের ভাষ্য তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সময় মতো না যেতে পারলে চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব হবেন অনেকে। এদিকে প্রবাসীদের বিক্ষোভে কারওয়ান বাজার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পথচারীরাও পড়েন চরম দুভোর্গে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সম্প্রতি সৌদি আরব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুরও ঘোষণা দেয়। কিন্তু প্রথম দিকে বিমান ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিলে ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়নি সৌদি। তারপর বাংলাদেশও সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি বাতিল করে। নানা নাটকীয়তা শেষে গত সোমবার ২১ সেপ্টেম্বর সৌদি কর্তৃপক্ষ বিমানকে ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়। কিন্তু এখনও ল্যান্ডিং অনুমতি দেয়নি। ফলে বিমানও সৌদি আরবে শিডিউল ঘোষণা করতে পারছে না। এরপর থেকেই মূলত টিকিটের সংকট তৈরি হয়েছে। সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সৌদিতে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের অনুমতি পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ল্যান্ডিং পারমিশন না পাওয়ায় যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করতে পারছে না তারা। অন্যদিকে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ রুটে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইটের ঘোষণা দেয় সৌদিয়া। বিমানকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি না দেয়ায় এখনও ঝুলে আছে সৌদির ফ্লাইট পরিচালনার ভবিষ্যৎ। ফ্লাইট চালানোর অনুমতি পাওয়ার পরই সৌদি এয়ারলাইন্স টিকিট বিক্রি শুরু করে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাদের প্রধান গেটের সামনে একটি কাগজে নোটিশ লিখে তারা জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইন্সের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হলো । ক্ষোভ আর হতাশা থেকে সড়কে বসে পড়েন প্রবাসীরা। সকাল থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন তারা।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সৌদি প্রবাসী নোয়াখালীর মো. এনামুল বলেন, ‘আমরা মার্চে দেশে ফিরে লকডাউনে পড়েছি। দেশে ফেরার সময় আমরা সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটেছিলাম। তবে যেতে পারিনি। আমাদের আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। কয়েক দিন ধরে এখানেই আছি। দীর্ঘদিন দেশে থাকতে থাকতে সবারই বাড়িতে অনেক ধার-দেনা হয়ে গেছে। আমাদের যেতেই হবে। প্লিজ আমাদের সৌদি ফেরানোর ব্যবস্থা করেন। আরেক প্রবাসী শরীয়তপুরের রাজুবলেন, ‘আমাকে গত সোমবার ২৭৫৪ নম্বর সিরিয়ালের একটি টোকেন দেয়া হয়েছে। আমাকে সৌদিয়া বলেছে যেন ৫ অক্টোবর এসে টিকিট সংগ্রহ করি। অথচ আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। এখন আমরা কী করব? আমরা বিক্ষোভ করছি আমাদের জন্য, দেশের জন্য। আমরা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। আমরা প্রবাসী। আমাদের সৌদি ফেরানোর ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। বরগুনার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী আবু হানিফ বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে দেশে আটকা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বরগুনা থেকে ঢাকায় এসেছি। প্রতিদিনই ফিরতি টিকিটের তারিখ জানতে সৌদির অফিসে আসছি। তবে তারা তারিখ দিতে পারছে না। ৩০ সেপ্টেম্বর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আমরা এখানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এ বিষয়ে গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গণশুনানির এক অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের ফেরাতে সৌদি অ্যারাবিয়া এয়ারলাইন্স যত ফ্লাইট চাইবে, তত ফ্লাইটের অনুমোদন দেয়া হবে। বাংলাদেশিদের ফিরে যেতে সৌদি এয়ারলাইন্স যে কয়টা ফ্লাইটের অনুমোদন চাইবে, আমরা দেব। তবুও যেন প্রবাসীরা ফিরে যেতে পারেন। একই সঙ্গে আমাদের বিমান বাংলাদেশও যেন যেতে পারে সেজন্য কাজ করছি। আমাদের বিমানও যেন সৌদি আরব যেতে পারে, সেই চেষ্টা করছি। বিমান থেকে জানতে পেরেছি, তারা এখনও অপারেশনের অনুমতি পায়নি। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আমরা সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি শীঘ্রই ল্যান্ডিং পারমিশন পাব।