ফিনসেনে প্রকাশিত লেনদেনের তথ্য ‘সন্দেহজনক নয়’ ব্যাংক কর্র্র্তৃপক্ষ

বাংলাদেশের তিন ব্যাংকের সন্দেহজনক লেনদেনের যে নথি যুক্তরাষ্ট্রের ফিনানশিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের (ফিনসেন) প্রকাশ করেছে সেই লেনদেনকে ‘সন্দেহজনক নয়’ বলে জানিয়েছেন ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ফিনসেন ফাইলসে যে লেনদেনগুলোকে সন্দেহজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সেগুলো সন্দেহজনক লেনদেন নয়। সেগুলো তাদের নিয়মিত লেনদেন এবং ভালো গ্রাহকদের লেনদেন। তারপরও তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন বলেও জানান।

জানা গেছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফিনানশিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের (ফিনসেন) হাতে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের সন্দেহজনক লেনদেনের প্রায় আড়াই হাজার দলিল গত রোববার প্রকাশ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে), যাকে বলা হচ্ছে ‘ফিনসেন ফাইলস’। এই ফাইলে বাংলাদেশের তিন ব্যাংকের নাম এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি বেসরকারি ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক।

ফিনসেন ফাইলে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আটটি ‘ট্রানজেকশনে’ সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭ ডলার লেনদেন ওই তিন ব্যাংকের মাধ্যমে, বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হারে বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৭ কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন ব্যাংক ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ফিনসেনকে এসব লেনদেনের তথ্য পাঠিয়েছিল। এসব লেনদেনে দুই লাখ কোটি ডলারের বেশি অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যার উৎস ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা ব্যাংকগুলো ফিনসেনকে জানিয়েছে। কোন লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলো গোপন প্রতিবেদন আকারে ফিনসেনকে তা জানায়, যাকে বলে ‘সাসপিসিয়াস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্টস’। এর সবক্ষেত্রেই যে অর্থপাচার বা বেআইনি কিছু ঘটেছে, তা প্রমাণিত নয়। বাজফিড নিউজ এসব গোপন দলিল হাতে পাওয়ার পর তা তারা আইসিআইজেকে দেয়। এরপর ৮৮টি দেশের ১০৮টি সংবাদমাধ্যমকে এসব নথি দেয়া হয়, যা ধাপে ধাপে প্রকাশিত হচ্ছে ‘ফিনসেন ফাইলস’ নামে। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এটি অনেক আগের বিষয়। যে বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো এসেছে রেমিট্যান্স হিসেবে। এছাড়া যে গ্রাহকের কাছে এসেছে সেই গ্রাহকও আমাদের অনেক আগের ও পুরোনো গ্রাহক। বর্তমানেও সেই গ্রাহক আমাদের সঙ্গে লেনদেন করছেন। দেশের নামকরা ব্যবসায়ীও তিনি। সেহেতু আমাদের কাছে সেই লেনদেনগুলো সন্দেহজনক মনে হয়নি। তারপরও আমরা তদন্ত করছি।’

ফিনসেন ফাইলের বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘ফিনান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়াক’ (ফেনসেন) এর কাছে ব্যাংক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাখিল করা ফাঁস হওয়া ‘সাসপিসাস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্টস’ (সার্স) এর ভিত্তিতে করা হয়েছে। এ ধরনের (সার্স) দুই হাজার একশটিরও বেশি নথি বাজফিড নিউজের হাতে এসেছে এবং তারা সেগুলো ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেশন জার্নালিস্ট (আইসিআইজে) ও অন্য গণমাধ্যম সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করেছে।

আইসিআইজে জানিয়েছে, সব মিলিয়ে ওই নথিগুলোতে ১৯৯৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ লেনদেনের তথ্য আছে, এই তহবিলগুলোকে সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত করেছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারন্যাল কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্ট। সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদনগুলো (সার্স) সরাসরি অপরাধের প্রমাণ নয় আর ফাঁস হওয়া এই নথিগুলো ফেনসেনের কাছে দাখিল করা প্রতিবেদগুলোর একটি ক্ষুদ্রাংশ বলে জানিয়েছে আইসিআইজে। এই নথিগুলোতে সবচেয়ে বেশি যে বহুজাতিক ব্যাংকগুলোর নাম এসেছে সেগুলো হলো, এইচএসবিসি হোল্ডিংস পিএলসি, জেপিমর্গান চেস এন্ড কোম্পানি, ডয়েচে ব্যাংক এজি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও নিউ ইয়র্ক মেলন কর্পোরেশন। বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচার ও অন্য অপরাধ বন্ধে সার্স গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে আসছে। গত রোববার গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনগুলোতে এমন একটি পদ্ধতির চিত্র উঠে এসেছে যেটি একইসঙ্গে অপর্যাপ্ত সংস্থান ও অতিরিক্ত চাপে নিমজ্জিত হয়ে আছে, এতে ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ তহবিল সরানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘কন্ট্রোলার অব দ্য কারেন্সি’ দফতরের তথ্যানুযায়ী, প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত হওয়ার পর একটি ব্যাংক সার্স নথি দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৬০ দিন সময় পায়। কিন্তু আইসিআইজে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কখনো কখনো ব্যাংকগুলো সন্দেহজনক লেনদেন সম্পন্ন করার পর সে বিষয়ে কয়েক বছরের মধ্যেও প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়।

বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৫ মহররম ১৪৪২, ০৬ আশ্বিন ১৪২৭

ফিনসেনে প্রকাশিত লেনদেনের তথ্য ‘সন্দেহজনক নয়’ ব্যাংক কর্র্র্তৃপক্ষ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

বাংলাদেশের তিন ব্যাংকের সন্দেহজনক লেনদেনের যে নথি যুক্তরাষ্ট্রের ফিনানশিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের (ফিনসেন) প্রকাশ করেছে সেই লেনদেনকে ‘সন্দেহজনক নয়’ বলে জানিয়েছেন ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ফিনসেন ফাইলসে যে লেনদেনগুলোকে সন্দেহজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সেগুলো সন্দেহজনক লেনদেন নয়। সেগুলো তাদের নিয়মিত লেনদেন এবং ভালো গ্রাহকদের লেনদেন। তারপরও তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন বলেও জানান।

জানা গেছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফিনানশিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের (ফিনসেন) হাতে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের সন্দেহজনক লেনদেনের প্রায় আড়াই হাজার দলিল গত রোববার প্রকাশ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে), যাকে বলা হচ্ছে ‘ফিনসেন ফাইলস’। এই ফাইলে বাংলাদেশের তিন ব্যাংকের নাম এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি বেসরকারি ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক।

ফিনসেন ফাইলে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আটটি ‘ট্রানজেকশনে’ সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭ ডলার লেনদেন ওই তিন ব্যাংকের মাধ্যমে, বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হারে বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৭ কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন ব্যাংক ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ফিনসেনকে এসব লেনদেনের তথ্য পাঠিয়েছিল। এসব লেনদেনে দুই লাখ কোটি ডলারের বেশি অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যার উৎস ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা ব্যাংকগুলো ফিনসেনকে জানিয়েছে। কোন লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলো গোপন প্রতিবেদন আকারে ফিনসেনকে তা জানায়, যাকে বলে ‘সাসপিসিয়াস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্টস’। এর সবক্ষেত্রেই যে অর্থপাচার বা বেআইনি কিছু ঘটেছে, তা প্রমাণিত নয়। বাজফিড নিউজ এসব গোপন দলিল হাতে পাওয়ার পর তা তারা আইসিআইজেকে দেয়। এরপর ৮৮টি দেশের ১০৮টি সংবাদমাধ্যমকে এসব নথি দেয়া হয়, যা ধাপে ধাপে প্রকাশিত হচ্ছে ‘ফিনসেন ফাইলস’ নামে। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এটি অনেক আগের বিষয়। যে বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো এসেছে রেমিট্যান্স হিসেবে। এছাড়া যে গ্রাহকের কাছে এসেছে সেই গ্রাহকও আমাদের অনেক আগের ও পুরোনো গ্রাহক। বর্তমানেও সেই গ্রাহক আমাদের সঙ্গে লেনদেন করছেন। দেশের নামকরা ব্যবসায়ীও তিনি। সেহেতু আমাদের কাছে সেই লেনদেনগুলো সন্দেহজনক মনে হয়নি। তারপরও আমরা তদন্ত করছি।’

ফিনসেন ফাইলের বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘ফিনান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়াক’ (ফেনসেন) এর কাছে ব্যাংক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাখিল করা ফাঁস হওয়া ‘সাসপিসাস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্টস’ (সার্স) এর ভিত্তিতে করা হয়েছে। এ ধরনের (সার্স) দুই হাজার একশটিরও বেশি নথি বাজফিড নিউজের হাতে এসেছে এবং তারা সেগুলো ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেশন জার্নালিস্ট (আইসিআইজে) ও অন্য গণমাধ্যম সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করেছে।

আইসিআইজে জানিয়েছে, সব মিলিয়ে ওই নথিগুলোতে ১৯৯৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ লেনদেনের তথ্য আছে, এই তহবিলগুলোকে সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত করেছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারন্যাল কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্ট। সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদনগুলো (সার্স) সরাসরি অপরাধের প্রমাণ নয় আর ফাঁস হওয়া এই নথিগুলো ফেনসেনের কাছে দাখিল করা প্রতিবেদগুলোর একটি ক্ষুদ্রাংশ বলে জানিয়েছে আইসিআইজে। এই নথিগুলোতে সবচেয়ে বেশি যে বহুজাতিক ব্যাংকগুলোর নাম এসেছে সেগুলো হলো, এইচএসবিসি হোল্ডিংস পিএলসি, জেপিমর্গান চেস এন্ড কোম্পানি, ডয়েচে ব্যাংক এজি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও নিউ ইয়র্ক মেলন কর্পোরেশন। বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচার ও অন্য অপরাধ বন্ধে সার্স গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে আসছে। গত রোববার গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনগুলোতে এমন একটি পদ্ধতির চিত্র উঠে এসেছে যেটি একইসঙ্গে অপর্যাপ্ত সংস্থান ও অতিরিক্ত চাপে নিমজ্জিত হয়ে আছে, এতে ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ তহবিল সরানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘কন্ট্রোলার অব দ্য কারেন্সি’ দফতরের তথ্যানুযায়ী, প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত হওয়ার পর একটি ব্যাংক সার্স নথি দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৬০ দিন সময় পায়। কিন্তু আইসিআইজে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কখনো কখনো ব্যাংকগুলো সন্দেহজনক লেনদেন সম্পন্ন করার পর সে বিষয়ে কয়েক বছরের মধ্যেও প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়।