কুমিল্লায় আন্তঃজেলা ডাকাতদলের চার সদস্য গ্রেফতার

বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার

‘কেউ গাড়ি চালক, কেউ অফিসার। হাতে ওয়াকিটকি, কোমরে খেলনা পিস্তল। শরীরে ডিবি পুলিশের পোশাক। প্রাইভেটকারে করে কখনও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আবার কখনও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াত একটি প্রতারক চক্র। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সময় ভুক্তভোগী নগদ অর্থ বহনকারীদের নজরে রাখতো প্রতারক দলের অন্য সদস্য। ব্যাংক থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে ভয়ভীতি ও মারধর করে ছিনিয়ে নেয়া হতো উত্তোলনকৃত নগদ অর্থ ও মোবাইলের সিম। পরে ওই ব্যক্তিকে ফেলে দেয়া হতো নির্জন স্থানে। আন্তঃজেলা ডাকাতদলের অন্তর্ভুক্ত প্রতারক চক্রের এমন ৪ জন সদস্যকে রাজধানী ঢাকা, সাভার ও গাজীপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফাতার করেছে জেলা ডিবি পুলিশের এলআইসি টিম। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে এসেছে অভিনব কৌশলের এসব তথ্য। গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে নগদ অর্থ বহনকারীদের জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে ভয়ভীতি ও মারধর করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিতো ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি প্রতারক চক্র। গত ৩ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৩টি ঘটনায় ২২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় ওই চক্রটি। এর মধ্যে গত ১২ আগস্ট দুপুরে জেলার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শাখা থেকে আবু হানিফ শামীম নামে এক ব্যক্তি ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করে সিএনজিযোগে দেবিদ্বারে যাচ্ছিলেন। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবিদ্বার পৌরসভা এলাকায় মহিলা কলেজের সামনে পৌঁছলে মেরুন রংয়ের একটি প্রাইভেটকার করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ওই সিএনজিটির গতিরোধ করে। পরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতদলের সদস্যরা তাকে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তাকে গামছা দিয়ে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে গাড়ির পিছনের সিটে পাদানির নিচে রেখে মারধর করে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। পরে জেলার বুড়িচং উপজেলার নাজিরা বাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে তাকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় দেবিদ্বার থানায় মামলা হয়। এর আগে গত ২১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার এলাকায় জনৈক তৈয়ব হোসেনের নিকট থেকে ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর দাউদকান্দির গৌরিপুর এলাকায় এক বিকাশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা অভিনব এমন কায়দায় ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি নজরে আসায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযানে মাঠে নামে ডিবি’র এলআইসি টিম। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার ভোরে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে প্রতারকচক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা, কভারসহ খেলনা পিস্তল, ১টি হ্যান্ডকাফ, ১টি ওয়াকিটকি, ডিবি’র পোশাক, ১টি লাঠি, ১টি মেরুন রংয়ের প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার ধাতুয়া গ্রামের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে সুমন মিয়া (৪৫), ভোলার তজুমুদ্দিন থানার শ্যাম্ভপুর গ্রামের শাহজাহানের ছেলে গাড়ি চালক ইউসুফ (৫২), জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার মানিকপাড়া গ্রামের মৃত আনারুলের ছেলে আপেল (৩৩) ও যশোর সদরের জমজমপুর গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে মনির (৪৫)। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আজিম-উল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-এ সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) নাজমুল হাসান রাফি, ডিআইও-১ মাঈন উদ্দিন খান, জেলা ডিবি’র ওসি মো. আনোয়ারুল আজিম ও এলআইসি শাখার পরিদর্শক ইকতিয়ার উদ্দিনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৫ মহররম ১৪৪২, ০৬ আশ্বিন ১৪২৭

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মহাসড়কে অভিনব পন্থায় ডাকাতি

কুমিল্লায় আন্তঃজেলা ডাকাতদলের চার সদস্য গ্রেফতার

বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার

প্রতিনিধি, কুমিল্লা

‘কেউ গাড়ি চালক, কেউ অফিসার। হাতে ওয়াকিটকি, কোমরে খেলনা পিস্তল। শরীরে ডিবি পুলিশের পোশাক। প্রাইভেটকারে করে কখনও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আবার কখনও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াত একটি প্রতারক চক্র। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সময় ভুক্তভোগী নগদ অর্থ বহনকারীদের নজরে রাখতো প্রতারক দলের অন্য সদস্য। ব্যাংক থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে ভয়ভীতি ও মারধর করে ছিনিয়ে নেয়া হতো উত্তোলনকৃত নগদ অর্থ ও মোবাইলের সিম। পরে ওই ব্যক্তিকে ফেলে দেয়া হতো নির্জন স্থানে। আন্তঃজেলা ডাকাতদলের অন্তর্ভুক্ত প্রতারক চক্রের এমন ৪ জন সদস্যকে রাজধানী ঢাকা, সাভার ও গাজীপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফাতার করেছে জেলা ডিবি পুলিশের এলআইসি টিম। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে এসেছে অভিনব কৌশলের এসব তথ্য। গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে নগদ অর্থ বহনকারীদের জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে ভয়ভীতি ও মারধর করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিতো ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি প্রতারক চক্র। গত ৩ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৩টি ঘটনায় ২২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় ওই চক্রটি। এর মধ্যে গত ১২ আগস্ট দুপুরে জেলার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শাখা থেকে আবু হানিফ শামীম নামে এক ব্যক্তি ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করে সিএনজিযোগে দেবিদ্বারে যাচ্ছিলেন। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবিদ্বার পৌরসভা এলাকায় মহিলা কলেজের সামনে পৌঁছলে মেরুন রংয়ের একটি প্রাইভেটকার করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ওই সিএনজিটির গতিরোধ করে। পরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতদলের সদস্যরা তাকে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তাকে গামছা দিয়ে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে গাড়ির পিছনের সিটে পাদানির নিচে রেখে মারধর করে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। পরে জেলার বুড়িচং উপজেলার নাজিরা বাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে তাকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় দেবিদ্বার থানায় মামলা হয়। এর আগে গত ২১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার এলাকায় জনৈক তৈয়ব হোসেনের নিকট থেকে ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর দাউদকান্দির গৌরিপুর এলাকায় এক বিকাশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা অভিনব এমন কায়দায় ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি নজরে আসায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযানে মাঠে নামে ডিবি’র এলআইসি টিম। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার ভোরে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে প্রতারকচক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা, কভারসহ খেলনা পিস্তল, ১টি হ্যান্ডকাফ, ১টি ওয়াকিটকি, ডিবি’র পোশাক, ১টি লাঠি, ১টি মেরুন রংয়ের প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার ধাতুয়া গ্রামের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে সুমন মিয়া (৪৫), ভোলার তজুমুদ্দিন থানার শ্যাম্ভপুর গ্রামের শাহজাহানের ছেলে গাড়ি চালক ইউসুফ (৫২), জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার মানিকপাড়া গ্রামের মৃত আনারুলের ছেলে আপেল (৩৩) ও যশোর সদরের জমজমপুর গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে মনির (৪৫)। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আজিম-উল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-এ সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) নাজমুল হাসান রাফি, ডিআইও-১ মাঈন উদ্দিন খান, জেলা ডিবি’র ওসি মো. আনোয়ারুল আজিম ও এলআইসি শাখার পরিদর্শক ইকতিয়ার উদ্দিনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।