অসচেতনতা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে 

দেশে করোনা সংক্রমণ ও রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমলেও মৃত্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে। পহেলা আগস্ট করোনায় মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৩১ শতাংশ, পহেলা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর ২২ আগস্টে মৃত্যুর হার যেখানে ছিল ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, একমাস পর গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। করোনা মৃত্যুর এই হার বৃদ্ধি বিশেষজ্ঞদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর মাত্রা আসলে কোন দিকে যাচ্ছে।

বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে উদাসীনতা যেমন রয়েছে তেমন ভয়ও রয়েছে। জনগণ সচেতন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। হোটেল-রেস্তোরাঁয় আড্ডা, হাসপাতালে রোগী দেখতে গেলে মাস্ক পড়ছে না। গণপরিবহনে স্বাস্থবিধি মানার বালাই নেই। এমন সব নানা কারণে অচিরেই করোনাভাইরাস থেকে আমাদের নিস্তার মিলছে না। কারণ এখন মানুষ ভাবছে করোনা নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ ধরা পড়লে ঘরে ১৫ দিন বসে থাকতে হবে, যা তার সংসার চালানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে শহর থেকে গ্রামের পাড়া মহল্লা পর্যন্ত বার্তা দিতে হবে কারও করোনা পজেটিভ হলে সেই পরিবারের একমাসের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে সরকার। করোনা পজেটিভ হলে মানুষকে সমাজিকভাবে বয়কট করার প্রবণতা কমাতে হবে। সেই সঙ্গে হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার ভোগান্তি কমাতে হবে। এতে মানুষ নমুনা পরীক্ষার উৎসাহ পাবে। অনেকে ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মুনীর সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের তথ্যে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে কমছে। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা কমায় সংক্রমণ কম হচ্ছে। আমেরিকাসহ যেসব দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে তারা সরকারের নিয়মকানুন মেনে চেলেছেন এবং জনগণ নিজ থেকেই সচেতন হয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশে দুটোর কোনটি হয়নি।

আসন্ন শীতের মৌসুমে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছে সরকার। শীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন শ্বাসকষ্ট রোগী, কিডনি, লিভার, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, সিওপিডি, ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্তরা ইত্যাদির মতো ক্রনিক রোগে। বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ রোগে প্রথম মৃত্যুবরণকারী রোগীটিও ছিলেন হৃদরোগী, যার হার্টের করোনারি ধমনিতে রিং পরানো ছিল। অর্থাৎ হার্টের রক্তনালি ব্লকজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। আরও অন্য রোগও ছিল। এসব রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায়।

দেশে করোনা আক্রান্তের প্রথম দিকে ২০ হাজার নমুনা পরীক্ষায় করলেও এখন প্রায় ১৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। গত আগস্ট মাসে আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর’বি যৌথ জরিপ প্রকাশ করে। ওই জরিপে ঢাকার ৯ শতাংশ মাষ করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে ৮ শতাংশের কোন ধরনের উপসর্গ নেই। কিন্তু সারাদেশের করোনার প্রকৃত চিত্র ফুটে না ওঠায় মানুষ চলাচলে অসচেতনতা হয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগেও ঢিলেঢালা চলছে। ভাইরাসটি এখন দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে। এমন গাঁ ছাড়াভাবে চলতে থাকলে সহসায় করোনাভাইরাস দূর হবে না বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ জন। মোট মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪ জন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, অনেকটা উদ্দেশ্যহীন, পরিকল্পনাহীন ও সমন্বয়হীন কাজের মধ্য দিয়ে মহামারীর ছয় মাস পার করেছে বাংলাদেশ। করোনায় মানুষের মৃত্যু এখন আর অনেকের মনে দাগ কাটে না, অনেকটাই অভ্যস্ত হয়েছেন মানুষ। মাস্ক পরলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমে, মানুষ এটি জানলেও গরম ও অস্বস্তি লাগায় মুখে মাস্ক বারবার খুলছেন। অনেকে আবার হাসপাতালে রোগী দেখতে গিয়েও মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। করোনার শুরুর দিকে সরকারি-বেসরকারি অফিসে প্রবেশে জীবাণুনাশক স্প্রে আগে থাকলেও এখন তা কমেছে। প্রয়োজনের সময় হাত ধোয়ার জন্য সাবান-পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয়।

গত রোববার ৩৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ ফান্ডে অনুদান গ্রহণের সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসন্ন শীত মৌসুমে দেশে করোনা পরিস্থিতি বাড়তে পারে। এই মুহূর্ত থেকেই তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। গত সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা করেছেন শীতের মৌসুমে দেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হবে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ঠিক মতো ব্যবস্থা না নিলে করোনাভাইরাস আরও ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে। ক্ষতি হতে পারে আরও বেশি। যে দেশগুলো করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঠিক মতো নিয়ম মানছে না, তাদের প্রতি সতর্কবার্তা জারি করে ডাব্লিউএইচও। বেশ কিছু দেশ করোনা সতর্কতা মেনে চলছে না। ফলে সেখানে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখনও নিয়ম পালন না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

ঢাকা বাবুবাজারে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মানুষ। দাঁড়ানো অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই এমনকি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেননি। তাদের ভাষ্য, বাসায় বসে থাকলে খাওয়াবেন কেন? এখন আর করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুযোগ নেই। জীবন বাঁচাতে নিয়মিত অফিসে যেতে হয়। বাসের সংখ্যা কম কিন্তু মানুষের ভিড় বেশি। বাসের ভেতরে সিটে বসার পাশাপাশি গাদাগাদি করে বাসের ভেতর দাঁড়িয়ে আছেন মানুষ।

দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকোপে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত আট মার্চ, তার ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর থেকে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ৮ মার্চ মাস থেকে ১৮ মে পর্যন্ত দৈনিক ২০ থেকে ২৮ জনের মৃত্যু হয়। আর গত ৩১ মে থেকে মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩০ এর ওপরে চলে যায়। গত ৩০ জুন করোনাতে একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু এবং গতকাল দেশে করোনাভাইরাসে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪। আক্রান্তের দিকে ৮ মার্চ থেকে জুন এসে এক লাখ মানুষ করোনা সংক্রমিত হন। জুলাই মাসে ২ লাখ করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়ে যায়, ২৬ আগস্ট ৩ লাখ করোনা মানুষ সংক্রমিত হন এবং সর্বোশেষ ২১ সেপ্টেম্বর সাড়ে তিন লাখ করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দেশে।

বাংলাদেশে সব হিসাব-নিকাশ উল্টে দিয়েছে করোনাভাইরাস। আগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছিলেন, বড়জোর মে মাস পর্যন্ত থাকবে এই ভাইরাসের দাপট। কিন্তু এখন তারা বলছেন, সহজে দূর হবে না করোনা, বাংলাদেশে অনেকদিন থাকবে করোনাভাইরাস। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য করোনা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিভাগের অব্যবস্থাপনা ও জনগণের অবাধ চলাফেরাকে দায়ী করছেন।

বাংলাদেশের পাশাপাশি চলতি সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৯ লাখ ৬০ হাজারে পৌঁছেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩২ জনের। আর এ পর্যন্ত সেড়ে উঠেছে ২ কোটি ১১ লাখ ৫২ হাজার ৯৯৬ জন।

হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তির প্রবণতা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে কিন্তু চিকিৎসক রোগী শনাক্ত করতে পারছেন না। আর দেশের হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসাসেবার মান উপযোগী নয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে করোনার নমুনা পরীক্ষা মানুষকে নিরুৎসাহীত করা হয়েছে। হাসপাতালে আইসোলেশন যা করা হয়েছে সেটিও বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। এই কারণে চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের আমাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি জানেন কিন্তু মানছেন না। মাস্ক ব্যবহার নিয়ে মানুষের উদাসীনতা রয়েছে। ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিয়ম মানাছেন না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ চীন থেকে শুরু হয়েছে। এরপরও আমরা সেটি নিয়ে সচেতন ছিলাম না। বরং করোনাকালে বিদেশ থেকে যারা এলেন তাদেরও কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারলাম না। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত।

তিনি আরও বলেন, করোনা নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৩-১৪ হাজারের মধ্যে রয়েছে। নমুনার সংখ্যা বাড়লে ভালো হয়। মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজ করা, এগুলো করতে হবে। এখন রাস্তাঘাটে বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, হাসপাতালে কতগুলো কোভিড বেড ফাঁকা, সেটি জানতে ওয়েবসাইট তৈরি করতে বলা হয়েছিল কিন্তু করা হয়নি। এরপর অ্যান্টিজেন টেস্টে কার্যকরি উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও সেটিরও দৃশ্যমান নেই। এখন রোগী শনাক্তের হার কম কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা কমেনি। করোনা প্রতিরোধ শৈথল্যের সুযোগ নেই। বিশ্বের অনেক দেশ যারা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল, সেখানে আবার সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ তো বিশ্বের বাইরের কোন দেশ না। তাই আমাদের দেশেও আবার সংক্রমণ বাড়তেও পারে। আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু ভ্যাকসিন আমরা বা পৃথিবীর মানুষ কবে পাবে, এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া খুবই মুশকিল। সেজন্য আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে অভ্যাস, সেটার ওপর জোর দেয়া দরকার।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের অযোগ্যতার কারণে গত ৬ মাসেও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতা রাখে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অযোগ্য রয়ে গেছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশ যা করেছে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। করোনা সংক্রমণ কেন কমছে না সেটি অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ, সেটি করা হচ্ছে না। আইসোলেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, করোনা চিকিৎসা গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতা চলছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দেশে বিপুল মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। যারা নমুনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আসছেন না। করোনা নিয়েই যত্রযত্র চলাচল করছেন। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে সহসায় করোনা সংক্রমণ দূর হবে না।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভারত ও পাকিস্তানে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে মোট মৃত্যু ৯০ হাজার ৭৭ জন, পাকিস্তানে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৪৩১ জন মানুষের। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৮তম অবস্থানে।

বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৫ মহররম ১৪৪২, ০৬ আশ্বিন ১৪২৭

করোনা সংক্রমণ

অসচেতনতা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে 

ফারুক আলম

দেশে করোনা সংক্রমণ ও রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমলেও মৃত্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে। পহেলা আগস্ট করোনায় মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৩১ শতাংশ, পহেলা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর ২২ আগস্টে মৃত্যুর হার যেখানে ছিল ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, একমাস পর গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। করোনা মৃত্যুর এই হার বৃদ্ধি বিশেষজ্ঞদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর মাত্রা আসলে কোন দিকে যাচ্ছে।

বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে উদাসীনতা যেমন রয়েছে তেমন ভয়ও রয়েছে। জনগণ সচেতন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। হোটেল-রেস্তোরাঁয় আড্ডা, হাসপাতালে রোগী দেখতে গেলে মাস্ক পড়ছে না। গণপরিবহনে স্বাস্থবিধি মানার বালাই নেই। এমন সব নানা কারণে অচিরেই করোনাভাইরাস থেকে আমাদের নিস্তার মিলছে না। কারণ এখন মানুষ ভাবছে করোনা নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ ধরা পড়লে ঘরে ১৫ দিন বসে থাকতে হবে, যা তার সংসার চালানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে শহর থেকে গ্রামের পাড়া মহল্লা পর্যন্ত বার্তা দিতে হবে কারও করোনা পজেটিভ হলে সেই পরিবারের একমাসের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে সরকার। করোনা পজেটিভ হলে মানুষকে সমাজিকভাবে বয়কট করার প্রবণতা কমাতে হবে। সেই সঙ্গে হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার ভোগান্তি কমাতে হবে। এতে মানুষ নমুনা পরীক্ষার উৎসাহ পাবে। অনেকে ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মুনীর সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের তথ্যে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে কমছে। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা কমায় সংক্রমণ কম হচ্ছে। আমেরিকাসহ যেসব দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে তারা সরকারের নিয়মকানুন মেনে চেলেছেন এবং জনগণ নিজ থেকেই সচেতন হয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশে দুটোর কোনটি হয়নি।

আসন্ন শীতের মৌসুমে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছে সরকার। শীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন শ্বাসকষ্ট রোগী, কিডনি, লিভার, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, সিওপিডি, ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্তরা ইত্যাদির মতো ক্রনিক রোগে। বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ রোগে প্রথম মৃত্যুবরণকারী রোগীটিও ছিলেন হৃদরোগী, যার হার্টের করোনারি ধমনিতে রিং পরানো ছিল। অর্থাৎ হার্টের রক্তনালি ব্লকজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। আরও অন্য রোগও ছিল। এসব রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায়।

দেশে করোনা আক্রান্তের প্রথম দিকে ২০ হাজার নমুনা পরীক্ষায় করলেও এখন প্রায় ১৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। গত আগস্ট মাসে আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর’বি যৌথ জরিপ প্রকাশ করে। ওই জরিপে ঢাকার ৯ শতাংশ মাষ করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে ৮ শতাংশের কোন ধরনের উপসর্গ নেই। কিন্তু সারাদেশের করোনার প্রকৃত চিত্র ফুটে না ওঠায় মানুষ চলাচলে অসচেতনতা হয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগেও ঢিলেঢালা চলছে। ভাইরাসটি এখন দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে। এমন গাঁ ছাড়াভাবে চলতে থাকলে সহসায় করোনাভাইরাস দূর হবে না বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ জন। মোট মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪ জন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, অনেকটা উদ্দেশ্যহীন, পরিকল্পনাহীন ও সমন্বয়হীন কাজের মধ্য দিয়ে মহামারীর ছয় মাস পার করেছে বাংলাদেশ। করোনায় মানুষের মৃত্যু এখন আর অনেকের মনে দাগ কাটে না, অনেকটাই অভ্যস্ত হয়েছেন মানুষ। মাস্ক পরলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমে, মানুষ এটি জানলেও গরম ও অস্বস্তি লাগায় মুখে মাস্ক বারবার খুলছেন। অনেকে আবার হাসপাতালে রোগী দেখতে গিয়েও মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। করোনার শুরুর দিকে সরকারি-বেসরকারি অফিসে প্রবেশে জীবাণুনাশক স্প্রে আগে থাকলেও এখন তা কমেছে। প্রয়োজনের সময় হাত ধোয়ার জন্য সাবান-পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয়।

গত রোববার ৩৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ ফান্ডে অনুদান গ্রহণের সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসন্ন শীত মৌসুমে দেশে করোনা পরিস্থিতি বাড়তে পারে। এই মুহূর্ত থেকেই তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। গত সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা করেছেন শীতের মৌসুমে দেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হবে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ঠিক মতো ব্যবস্থা না নিলে করোনাভাইরাস আরও ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে। ক্ষতি হতে পারে আরও বেশি। যে দেশগুলো করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঠিক মতো নিয়ম মানছে না, তাদের প্রতি সতর্কবার্তা জারি করে ডাব্লিউএইচও। বেশ কিছু দেশ করোনা সতর্কতা মেনে চলছে না। ফলে সেখানে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখনও নিয়ম পালন না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

ঢাকা বাবুবাজারে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মানুষ। দাঁড়ানো অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই এমনকি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেননি। তাদের ভাষ্য, বাসায় বসে থাকলে খাওয়াবেন কেন? এখন আর করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুযোগ নেই। জীবন বাঁচাতে নিয়মিত অফিসে যেতে হয়। বাসের সংখ্যা কম কিন্তু মানুষের ভিড় বেশি। বাসের ভেতরে সিটে বসার পাশাপাশি গাদাগাদি করে বাসের ভেতর দাঁড়িয়ে আছেন মানুষ।

দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকোপে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত আট মার্চ, তার ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর থেকে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ৮ মার্চ মাস থেকে ১৮ মে পর্যন্ত দৈনিক ২০ থেকে ২৮ জনের মৃত্যু হয়। আর গত ৩১ মে থেকে মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩০ এর ওপরে চলে যায়। গত ৩০ জুন করোনাতে একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু এবং গতকাল দেশে করোনাভাইরাসে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪। আক্রান্তের দিকে ৮ মার্চ থেকে জুন এসে এক লাখ মানুষ করোনা সংক্রমিত হন। জুলাই মাসে ২ লাখ করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়ে যায়, ২৬ আগস্ট ৩ লাখ করোনা মানুষ সংক্রমিত হন এবং সর্বোশেষ ২১ সেপ্টেম্বর সাড়ে তিন লাখ করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দেশে।

বাংলাদেশে সব হিসাব-নিকাশ উল্টে দিয়েছে করোনাভাইরাস। আগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছিলেন, বড়জোর মে মাস পর্যন্ত থাকবে এই ভাইরাসের দাপট। কিন্তু এখন তারা বলছেন, সহজে দূর হবে না করোনা, বাংলাদেশে অনেকদিন থাকবে করোনাভাইরাস। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য করোনা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিভাগের অব্যবস্থাপনা ও জনগণের অবাধ চলাফেরাকে দায়ী করছেন।

বাংলাদেশের পাশাপাশি চলতি সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৯ লাখ ৬০ হাজারে পৌঁছেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩২ জনের। আর এ পর্যন্ত সেড়ে উঠেছে ২ কোটি ১১ লাখ ৫২ হাজার ৯৯৬ জন।

হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তির প্রবণতা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে কিন্তু চিকিৎসক রোগী শনাক্ত করতে পারছেন না। আর দেশের হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসাসেবার মান উপযোগী নয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে করোনার নমুনা পরীক্ষা মানুষকে নিরুৎসাহীত করা হয়েছে। হাসপাতালে আইসোলেশন যা করা হয়েছে সেটিও বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। এই কারণে চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের আমাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি জানেন কিন্তু মানছেন না। মাস্ক ব্যবহার নিয়ে মানুষের উদাসীনতা রয়েছে। ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিয়ম মানাছেন না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ চীন থেকে শুরু হয়েছে। এরপরও আমরা সেটি নিয়ে সচেতন ছিলাম না। বরং করোনাকালে বিদেশ থেকে যারা এলেন তাদেরও কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারলাম না। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত।

তিনি আরও বলেন, করোনা নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৩-১৪ হাজারের মধ্যে রয়েছে। নমুনার সংখ্যা বাড়লে ভালো হয়। মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজ করা, এগুলো করতে হবে। এখন রাস্তাঘাটে বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, হাসপাতালে কতগুলো কোভিড বেড ফাঁকা, সেটি জানতে ওয়েবসাইট তৈরি করতে বলা হয়েছিল কিন্তু করা হয়নি। এরপর অ্যান্টিজেন টেস্টে কার্যকরি উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও সেটিরও দৃশ্যমান নেই। এখন রোগী শনাক্তের হার কম কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা কমেনি। করোনা প্রতিরোধ শৈথল্যের সুযোগ নেই। বিশ্বের অনেক দেশ যারা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল, সেখানে আবার সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ তো বিশ্বের বাইরের কোন দেশ না। তাই আমাদের দেশেও আবার সংক্রমণ বাড়তেও পারে। আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু ভ্যাকসিন আমরা বা পৃথিবীর মানুষ কবে পাবে, এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া খুবই মুশকিল। সেজন্য আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে অভ্যাস, সেটার ওপর জোর দেয়া দরকার।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের অযোগ্যতার কারণে গত ৬ মাসেও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতা রাখে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অযোগ্য রয়ে গেছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশ যা করেছে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। করোনা সংক্রমণ কেন কমছে না সেটি অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ, সেটি করা হচ্ছে না। আইসোলেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, করোনা চিকিৎসা গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতা চলছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দেশে বিপুল মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। যারা নমুনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আসছেন না। করোনা নিয়েই যত্রযত্র চলাচল করছেন। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে সহসায় করোনা সংক্রমণ দূর হবে না।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভারত ও পাকিস্তানে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে মোট মৃত্যু ৯০ হাজার ৭৭ জন, পাকিস্তানে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৪৩১ জন মানুষের। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৮তম অবস্থানে।