করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় প্রস্তুত স্বাস্থ্য বিভাগ

দেশে শীতের মৌসুমে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সেকেন্ড ওয়েভ শুরুর আশঙ্কা থেকে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ভাইরাসটি মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই দেশের স্বাস্থ্য খাত সক্ষমতা দেখিয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। করোনার ফার্স্ট ওয়েভের মতো সেকেন্ড ওয়েভ একইভাবে মোকাবিলা করার কথা বলেছেন।

গতকাল ঢামেক হাসপাতালের উন্নত ও সম্প্রসারিত চিকিৎসাসেবার জন্য স্থাপিত ২৩টি ইউনিট ও বেশ কয়েকটি সেবামূলক কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, কিন্তু এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে সরকার সজাগ এবং সতর্ক আছে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত আছে। আমাদের চিকিৎসকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কনফিডেন্ট। আমরা এটা কাটিয়ে উঠতে পারবো। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মানুষ করোনাকে অবহেলা করছে। এর ফলে আমেরিকা, ইউরোপসহ অনেক দেশেই করোনায় সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও শীতকালে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরুর আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হলে তার জন্য কী কী করণীয় সে ব্যাপারে আমাদের সব প্রস্তুতি এখনই নেয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাক মেডিকেল একটি ঐতিহ্যবাহী হাসপাতাল। দেশের অন্যতম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এটি। আজকে এখানে ২৩টি ইউনিট একসঙ্গে উদ্বোধন করতে পেরে আমি আনন্দিত। এজন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। যারা এর পেছনে শ্রম দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। এ ইউনিটগুলোর জন্য হাসপাতালটি আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এর ফলে রোগীদের আরও ভালো সেবা দিতে পারবে।

জাহিদ মালেক বলেন, এরই মধ্যে ঢাকা মেডিকেল পাঁচ হাজার বেডে উন্নতিকরণের কাজও শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের জন্য দেশে ১৫ থেকে ২০ হাজার করোনা বেড করা হয়েছিল, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড ছিল ঢাকা মেডিকেলে এবং এখানে সেবাও বেশি পেয়েছেন রোগীরা। এতো জনবহুল দেশ হয়েও করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বাংলাদেশ একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বলা হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে আমাদের দেশে হাজার হাজার রোগী মারা যাবে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এমন কিছুই হয়নি। আমাদের দেশে করোনা রোগীর সুস্থতার হার ৭৫ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত কোন রোগী সেবা পায়নি এমন কোন নজর নেই। বাইরের দেশের মতো কোন রোগীকে তাঁবুতে থাকতে হয়নি। আমার দেশের চিকিৎসা প্রটোকল বিশ্বমানের হওয়ায় হাজার হাজার লোক বেঁচে গেছেন। তাই চিকিৎসক, নার্সসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। সবার প্রচেষ্টায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। ভ্যাকসিনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। যে দেশের ভ্যাকসিন সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর হবে আমরা সেই দেশ থেকেই ভ্যাকসিন আনবো।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় ধাপে অনেক দেশে করোনা ঝুঁকি বাড়ছে। আমাদের দেশে অনেক লোক এখন স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলাফেরা করছেন। কিন্তু আমাদের সজাগ থাকতে হবে। দ্বিতীয় ধাপের করোনা ঝুঁকির জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। শীতের সময়ে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। এ সময়েই বেশি সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। যেখানে করোনা ঝুঁকি বাড়তে পারে। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। লকডাউন একটি জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। ফের লকডাউনের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদসহ অনেকে।

বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৫ মহররম ১৪৪২, ০৬ আশ্বিন ১৪২৭

করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় প্রস্তুত স্বাস্থ্য বিভাগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

দেশে শীতের মৌসুমে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সেকেন্ড ওয়েভ শুরুর আশঙ্কা থেকে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ভাইরাসটি মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই দেশের স্বাস্থ্য খাত সক্ষমতা দেখিয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। করোনার ফার্স্ট ওয়েভের মতো সেকেন্ড ওয়েভ একইভাবে মোকাবিলা করার কথা বলেছেন।

গতকাল ঢামেক হাসপাতালের উন্নত ও সম্প্রসারিত চিকিৎসাসেবার জন্য স্থাপিত ২৩টি ইউনিট ও বেশ কয়েকটি সেবামূলক কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, কিন্তু এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে সরকার সজাগ এবং সতর্ক আছে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত আছে। আমাদের চিকিৎসকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কনফিডেন্ট। আমরা এটা কাটিয়ে উঠতে পারবো। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মানুষ করোনাকে অবহেলা করছে। এর ফলে আমেরিকা, ইউরোপসহ অনেক দেশেই করোনায় সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও শীতকালে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরুর আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হলে তার জন্য কী কী করণীয় সে ব্যাপারে আমাদের সব প্রস্তুতি এখনই নেয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাক মেডিকেল একটি ঐতিহ্যবাহী হাসপাতাল। দেশের অন্যতম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এটি। আজকে এখানে ২৩টি ইউনিট একসঙ্গে উদ্বোধন করতে পেরে আমি আনন্দিত। এজন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। যারা এর পেছনে শ্রম দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। এ ইউনিটগুলোর জন্য হাসপাতালটি আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এর ফলে রোগীদের আরও ভালো সেবা দিতে পারবে।

জাহিদ মালেক বলেন, এরই মধ্যে ঢাকা মেডিকেল পাঁচ হাজার বেডে উন্নতিকরণের কাজও শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের জন্য দেশে ১৫ থেকে ২০ হাজার করোনা বেড করা হয়েছিল, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড ছিল ঢাকা মেডিকেলে এবং এখানে সেবাও বেশি পেয়েছেন রোগীরা। এতো জনবহুল দেশ হয়েও করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বাংলাদেশ একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বলা হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে আমাদের দেশে হাজার হাজার রোগী মারা যাবে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এমন কিছুই হয়নি। আমাদের দেশে করোনা রোগীর সুস্থতার হার ৭৫ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত কোন রোগী সেবা পায়নি এমন কোন নজর নেই। বাইরের দেশের মতো কোন রোগীকে তাঁবুতে থাকতে হয়নি। আমার দেশের চিকিৎসা প্রটোকল বিশ্বমানের হওয়ায় হাজার হাজার লোক বেঁচে গেছেন। তাই চিকিৎসক, নার্সসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। সবার প্রচেষ্টায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। ভ্যাকসিনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। যে দেশের ভ্যাকসিন সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর হবে আমরা সেই দেশ থেকেই ভ্যাকসিন আনবো।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় ধাপে অনেক দেশে করোনা ঝুঁকি বাড়ছে। আমাদের দেশে অনেক লোক এখন স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলাফেরা করছেন। কিন্তু আমাদের সজাগ থাকতে হবে। দ্বিতীয় ধাপের করোনা ঝুঁকির জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। শীতের সময়ে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। এ সময়েই বেশি সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। যেখানে করোনা ঝুঁকি বাড়তে পারে। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। লকডাউন একটি জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। ফের লকডাউনের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদসহ অনেকে।