ভেঙে ফেলা হলো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষাদান কার্যক্রম চালাতো শুভ চন্দ্র দে নামে এক তরুণ। স্টেশনেই একটি টংয়ের দোকানে রাখা হতো ব্ল্যাকবোর্ড, চক, পেন্সিল, খাতা, কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ। গতকাল দুপুরে সেই টংয়ের দোকানটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফেলে দেয়া হয়েছে শিক্ষা উপকরণগুলো। কাজটি করেছেন চাষাঢ়া স্টেশনের ইনচার্জ খাঁজা মো. সুজন। তবে স্টেশনে অন্যান্য অবৈধ টংয়ের দোকানগুলো ছিল অক্ষত।

ঘটনার সময় স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন না শুভ চন্দ্র দে। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। শুভ বলেন, ‘আমি আজকে বাসায় গিয়েছিলাম। বাসা থেকে এসে দেখি আমার স্কুলটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত পাঁচটি বছর তিলে তিলে এই স্কুলটা আমি গড়ে তুলছি। আমি নিজে না খাইয়া সেই টাকা বাঁচাইয়া স্কুলটা চালাই। ৭০-৮০টা বাচ্চা পোলাপানরে আমি পড়াই বিনামূল্যে। খাতা-কলম-বইও আমি নিজে কিনে দেই। স্কুলটা আমার সন্তানের মতো। আমাকে ভাইঙ্গা ফালাইলেও এত কষ্ট পাইতাম না।’

শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখা শুভ চন্দ্রের মা মারা যান অষ্টম শ্রেণীতে। নিম্নবিত্ত পরিবারে মায়ের একক সমর্থনে পড়াশোনা চলতো তার। মা মারা যাওয়াতে তা আর এগোয়নি। শিক্ষক হবার স্বপ্নের তাড়না থেকে ২০১৫ সালের মার্চের শুরুতে চাষাঢ়া স্টেশনে স্থাপন করেন একটি টংয়ের দোকান। সেখানেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন লাল সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়। তখন থেকে সুবিধাবঞ্চিত অর্ধশতাধিক শিশুকে দেয়া হতো বিনামূল্যে শিক্ষা।

বিকেলে চাষাঢ়া স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের উঁচু প্ল্যাটফর্মের পাশেই উল্টে পড়ে আছে শুভর স্কুলের ব্যানার সম্বলিত টংয়ের দোকানটি। তার পাশেই পড়ে আছে কয়েকটি খাতা, কলম ও একটি ব্ল্যাকবোর্ড। পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন শুভ। তার উদাস দৃষ্টি যেন বলছে, টংয়ের দোকানটি নয় উল্টে আছে তার স্বপ্ন।

শুভ চন্দ্র জানান, চাষাঢ়ার এই স্টেশন চত্বরে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও বিক্রি হয়। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের পর থেকে এর মাত্রা বেড়ে যায়। তার গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনেও বসতো মাদকের আড্ডা। কয়েকদিন পূর্বে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন শুভ। তার স্কুলের সামনে যেন কেউ মাদক সেবন না করে, এ ব্যাপারে সরাসরি নিষেধ করেন। এই কারণে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়েছে তাকে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শুভ বলেন, এই টংয়ের দোকানে সিঙ্গারা বানাইয়া আমি বিক্রি করি। সেই টাকা দিয়া স্কুলটা চালাই। পড়াশোনার জন্য চক, পেন্সিল, খাতা, কলম, ব্ল্যাকবোর্ড সবই দোকানে থাকে। সব ফেলে দিছে স্টেশন মাস্টার। এইখানে যে স্কুলের কার্যক্রম চলে তা সবাই জানে। স্টেশন মাস্টার যদি অবৈধ উচ্ছেদ করতে চাইতো তাহলে আমারে জানাইলে আমি টং সরাইয়া নিতাম। কিন্তু সেটা করে নাই। এই স্টেশনে আরও কয়েকটি টংয়ের দোকান আছে। সবগুলো দোকান ঠিকঠাক আছে। কিন্তু আমার স্কুলের দোকানটা ফেলে দেয়া হইছে। আমি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে এর বিচার চাই।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাকিব নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘স্টেশনের লোকজন আইসা জিজ্ঞাস করছে, এইটা কী? বলছি এইটা স্কুল, এইখানে পোলাপান পড়ায়। তখন একজন বললো, প্ল্যাটফর্মে আবার কিসের স্কুল! এই বলেই সবকিছু ফেলে দেয়।’

এ বিষয়ে জানতে বিকেলে চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশনের ইনচার্জ খাঁজা মো. সুজনের অফিস কক্ষে তাকে পাওয়া যায়নি। সহকারী স্টেশন মাস্টার নাসরিন আক্তার জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। স্টেশনের ইনচার্জ এখন নেই। আগামী শনিবার পাওয়া যাবে তাকে। চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশনের ইনচার্জ খাঁজা মো. সুজনের মুঠোফোনের নম্বর চাইলেও তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন সহকারী স্টেশন মাস্টার নাসরিন আক্তার।

আরও খবর
সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির গোপন বৈঠকের খবর সরকার জানে কাদের
ক্রেডিট কার্ডে সুদের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ
এনু ও রুপনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ
রেল যোগাযোগ ২০২১ সালের মধ্যে রেলমন্ত্রী
সৌদি এয়ারলাইন্স ৫শ’ টিকিট দেবে
এবার সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে মামলা করল ঢাবির সেই ছাত্রী
জাল আইডি দিয়ে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ ও আবেদনকারী ২৫ জনের সন্ধান চলছে
ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতাসহ ৪ জন কারাগারে
চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর সন্ত্রাসী হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি
মিজানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশুনানি ৩০ সেপ্টেম্বর
নগরীর ২০ মহল্লা তলিয়ে গেছে
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ওপর নির্মিত হচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র

শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৬ মহররম ১৪৪২, ০৭ আশ্বিন ১৪২৭

নারায়ণগঞ্জে

ভেঙে ফেলা হলো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষাদান কার্যক্রম চালাতো শুভ চন্দ্র দে নামে এক তরুণ। স্টেশনেই একটি টংয়ের দোকানে রাখা হতো ব্ল্যাকবোর্ড, চক, পেন্সিল, খাতা, কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ। গতকাল দুপুরে সেই টংয়ের দোকানটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফেলে দেয়া হয়েছে শিক্ষা উপকরণগুলো। কাজটি করেছেন চাষাঢ়া স্টেশনের ইনচার্জ খাঁজা মো. সুজন। তবে স্টেশনে অন্যান্য অবৈধ টংয়ের দোকানগুলো ছিল অক্ষত।

ঘটনার সময় স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন না শুভ চন্দ্র দে। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। শুভ বলেন, ‘আমি আজকে বাসায় গিয়েছিলাম। বাসা থেকে এসে দেখি আমার স্কুলটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত পাঁচটি বছর তিলে তিলে এই স্কুলটা আমি গড়ে তুলছি। আমি নিজে না খাইয়া সেই টাকা বাঁচাইয়া স্কুলটা চালাই। ৭০-৮০টা বাচ্চা পোলাপানরে আমি পড়াই বিনামূল্যে। খাতা-কলম-বইও আমি নিজে কিনে দেই। স্কুলটা আমার সন্তানের মতো। আমাকে ভাইঙ্গা ফালাইলেও এত কষ্ট পাইতাম না।’

শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখা শুভ চন্দ্রের মা মারা যান অষ্টম শ্রেণীতে। নিম্নবিত্ত পরিবারে মায়ের একক সমর্থনে পড়াশোনা চলতো তার। মা মারা যাওয়াতে তা আর এগোয়নি। শিক্ষক হবার স্বপ্নের তাড়না থেকে ২০১৫ সালের মার্চের শুরুতে চাষাঢ়া স্টেশনে স্থাপন করেন একটি টংয়ের দোকান। সেখানেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন লাল সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়। তখন থেকে সুবিধাবঞ্চিত অর্ধশতাধিক শিশুকে দেয়া হতো বিনামূল্যে শিক্ষা।

বিকেলে চাষাঢ়া স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের উঁচু প্ল্যাটফর্মের পাশেই উল্টে পড়ে আছে শুভর স্কুলের ব্যানার সম্বলিত টংয়ের দোকানটি। তার পাশেই পড়ে আছে কয়েকটি খাতা, কলম ও একটি ব্ল্যাকবোর্ড। পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন শুভ। তার উদাস দৃষ্টি যেন বলছে, টংয়ের দোকানটি নয় উল্টে আছে তার স্বপ্ন।

শুভ চন্দ্র জানান, চাষাঢ়ার এই স্টেশন চত্বরে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও বিক্রি হয়। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের পর থেকে এর মাত্রা বেড়ে যায়। তার গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনেও বসতো মাদকের আড্ডা। কয়েকদিন পূর্বে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন শুভ। তার স্কুলের সামনে যেন কেউ মাদক সেবন না করে, এ ব্যাপারে সরাসরি নিষেধ করেন। এই কারণে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়েছে তাকে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শুভ বলেন, এই টংয়ের দোকানে সিঙ্গারা বানাইয়া আমি বিক্রি করি। সেই টাকা দিয়া স্কুলটা চালাই। পড়াশোনার জন্য চক, পেন্সিল, খাতা, কলম, ব্ল্যাকবোর্ড সবই দোকানে থাকে। সব ফেলে দিছে স্টেশন মাস্টার। এইখানে যে স্কুলের কার্যক্রম চলে তা সবাই জানে। স্টেশন মাস্টার যদি অবৈধ উচ্ছেদ করতে চাইতো তাহলে আমারে জানাইলে আমি টং সরাইয়া নিতাম। কিন্তু সেটা করে নাই। এই স্টেশনে আরও কয়েকটি টংয়ের দোকান আছে। সবগুলো দোকান ঠিকঠাক আছে। কিন্তু আমার স্কুলের দোকানটা ফেলে দেয়া হইছে। আমি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে এর বিচার চাই।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাকিব নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘স্টেশনের লোকজন আইসা জিজ্ঞাস করছে, এইটা কী? বলছি এইটা স্কুল, এইখানে পোলাপান পড়ায়। তখন একজন বললো, প্ল্যাটফর্মে আবার কিসের স্কুল! এই বলেই সবকিছু ফেলে দেয়।’

এ বিষয়ে জানতে বিকেলে চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশনের ইনচার্জ খাঁজা মো. সুজনের অফিস কক্ষে তাকে পাওয়া যায়নি। সহকারী স্টেশন মাস্টার নাসরিন আক্তার জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। স্টেশনের ইনচার্জ এখন নেই। আগামী শনিবার পাওয়া যাবে তাকে। চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশনের ইনচার্জ খাঁজা মো. সুজনের মুঠোফোনের নম্বর চাইলেও তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন সহকারী স্টেশন মাস্টার নাসরিন আক্তার।