ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল

কুড়িগ্রাম নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জে ফের বন্যা

শত শত গ্রাম প্লাবিত

ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ঢলে কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। শত শত গ্রাম ডুবে গেছে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ চিত্র উঠে এসেছে।

কুড়িগ্রাম : ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা ও তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি গতকাল সকালে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিও বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে।

দ্রুতগতিতে পানি বাড়ার ফলে পঞ্চম দফা বন্যায় কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও উলিপুর উপজেলার শতাধিক চর নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক। নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া যাতায়াতের কোন মাধ্যম নেই। প্রায় ৫ হাজার হেক্টর আমন ও সবজি ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠায় অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে বাঁধ ও রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। ধরলা অববাহিকার কয়েকটি গ্রামে প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। পানি বাড়ার ফলে বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীর ভাঙন তীব্ররূপ নিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে বসতভিটা, স্কুল, রাস্তা ও বাঁধ।

‘তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে বৃহৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। নদ-নদী ভাঙন রোধে ড্রেজিংসহ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের বড় বড় নদ-নদীর ভাঙন রোধে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে’ বলে জানান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি।

গতকাল বিকেলে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কুড়িগ্রামে ৫ দফা বন্যায় জেলার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়ের বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের বন্যার সমস্যা অতীতেও ছিল এখনও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। উজানে যখন বৃষ্টি হয় তখন পানি এ অঞ্চল দিয়ে নেমে বঙ্গপোসাগরে যায়। ভাটির দেশ হিসেবে সব সময় এটা আমাদের ফেস করতে হয়। নদী ভাঙন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যার পানির কারণে নদী ভাঙনসহ যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এছাড়াও নদী ড্রেজিংয়ের বড় প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এসব বাস্তবায়ন করতে পারলে বন্যা ও নদী ভাঙনের ক্ষতি থেকে গ্রামবাসী রক্ষা পাবে। তিস্তায় চীনের প্রস্তাবিত প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২১টি প্রকল্প নিয়ে ডোনার কান্ট্রির সঙ্গে কথা বলেছি। এরমধ্যে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়াও প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, নদ-নদী ভাঙন রোধে ড্রেজিংসহ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। নদী ভাঙন এলাকায় আমাদের প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প আছে। এরমধ্যে ১৩৭৬ কোটি টাকা তিনটি চলমান এবং ৭১৪ কোটি ও ৩৮৩ কোটি টাকার আরও দুটি প্রকল্প রয়েছে। কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধায় বন্যার পানি নেমে এসে যে ক্ষতি করছে এটাকে রক্ষা করতে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। নদী ড্রেজিংয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে এগুলো শেষ হলে মানুষ রক্ষা পাবে এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা এবং সেই নিদের্শনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।

নেত্রকোনা : গত কয়েক সপ্তাহের অবিরাম ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারও নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী শতাধিক গ্রাম তৃতীয় দফায় প্লাবিত হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও রোপণকৃত আমনের চারা তলিয়ে যাওয়ায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে রবিশস্যের আবাদ। এমন অবস্থায় কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শীতকালীন সবজি আবাদের পরামর্শ জেলা কৃষি বিভাগের।

গত বৃহস্পতিবার সারাদিন জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবছর বৃষ্টির পরিমাণ বেশি ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী স্বোমেশ্বরী, কংস, ধনু, গোমাইখালী, গনেশ্বরী ও সদর উপজেলার মগড়া নদীসহ জেলার প্রায় সবগুলো নদ-নদীর পানি তৃতীয় বারের মতো বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কিছুদিন পর পর পানি কমে গেলেও পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিতে উন্নয়ন অনেকটাই থমকে রয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় কৃষকরা আবাদ করতে পারছেন না রবি শস্যও।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত দুই হাজার হেক্টর জমির রোপিত চারা নষ্ট হয়েছে জানানো হলেও ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলছেন দুর্গাপুরের কাকৈইগড়া ইউনিয়নের কাপাসিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, মনহর মিয়া, আবদুল হকসহ আরও অনেকেই ।

নানা প্রতিকূলতার মাঝেও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা এরইমধ্যে আমনের চারা রোপণের কাজ সম্পন্ন করলেও গত এক সপ্তাহের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি উপচে তীরবর্তী শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে শুধু ধান নয় মাছেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ফলে রোপণকৃত ধানের চারা পানিতে নষ্ট হওয়ায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন দরিদ্র কৃষকরা।

এবার বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় কয়েক দফা পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন শীতকালীন সবজি, কালাই ও সরিষা আবাদে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান।

এ বছর নেত্রকোনায় ১ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয় ১ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর।? এর মাঝে কয়েক দফা বন্যায় ইতোমধ্যে প্রায় ২ হাজার হেক্টর রোপা আমন চারা নষ্ট হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে কৃষি বিভাগ। এমনটাই প্রত্যাশা কৃষকদের।

সুনামগঞ্জ : কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের হাওর ও সুরমা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিতে জেলায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে চতুর্থ দফা বন্যা। সুনামগঞ্জের সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গতকাল বিকেল ৩টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সীমান্তবর্তী নদী যাদুকাটা ও চলতি নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এখনও পুরোপুরি ফসলের ক্ষতি নিরূপণ করা যাচ্ছে না।

সুুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কে পানি উঠায় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও ধর্মপাশাসহ কয়েক উপজেলার নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর।

সুনামগঞ্জ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান জানান, সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ শহরের পাশের ষোলঘর অংশে পানি সাধারণ বিপদসীমার কাছাকাছি। গত বৃহস্পতিবার সকালে পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তিনি জানান, ভারতের চেরাপঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪২৪ মিলিমিটার।

তিনি জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী কাল পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আহাদ জানান, আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি এবং সব ইউএনও ও বিভিন্ন দফতর প্রধানদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। বন্যার সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে ও জানিয়েছেন ।

image

নেত্রকোনায় বন্যায় ভাসছে বিভিন্ন এলাকা -সংবাদ

আরও খবর
কক্সবাজার পুলিশে একযোগে ১৩০৯ সদস্যকে বদলি
রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি অনুসরণের নির্দেশ
১৯ বছরেও শেষ হয়নি মামলা
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ
একদিনে ২১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৩৮৩
করোনায় ৮৮ চিকিৎসকের মৃত্যু
বরখাস্ত ওসি প্রদীপের ৭ ইন্ধনদাতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা
পিয়ারের উচ্চতা জটিলতায় এক মাস যাবত বন্ধ রয়েছে নির্র্মাণ কাজ
সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোন অবস্থায়ই অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না কাদের
রাজশাহীতে পদ্মায় নৌকাডুবি নিখোঁজ ২ শিক্ষার্থী
ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটে বিমান চলাচল শুরু হচ্ছে ১ অক্টোবর থেকে

শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৭ মহররম ১৪৪২, ০৮ আশ্বিন ১৪২৭

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল

কুড়িগ্রাম নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জে ফের বন্যা

শত শত গ্রাম প্লাবিত

সংবাদ ডেস্ক |

image

নেত্রকোনায় বন্যায় ভাসছে বিভিন্ন এলাকা -সংবাদ

ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ঢলে কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। শত শত গ্রাম ডুবে গেছে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ চিত্র উঠে এসেছে।

কুড়িগ্রাম : ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা ও তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি গতকাল সকালে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিও বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে।

দ্রুতগতিতে পানি বাড়ার ফলে পঞ্চম দফা বন্যায় কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও উলিপুর উপজেলার শতাধিক চর নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক। নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া যাতায়াতের কোন মাধ্যম নেই। প্রায় ৫ হাজার হেক্টর আমন ও সবজি ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠায় অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে বাঁধ ও রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। ধরলা অববাহিকার কয়েকটি গ্রামে প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। পানি বাড়ার ফলে বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীর ভাঙন তীব্ররূপ নিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে বসতভিটা, স্কুল, রাস্তা ও বাঁধ।

‘তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে বৃহৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। নদ-নদী ভাঙন রোধে ড্রেজিংসহ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের বড় বড় নদ-নদীর ভাঙন রোধে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে’ বলে জানান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি।

গতকাল বিকেলে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কুড়িগ্রামে ৫ দফা বন্যায় জেলার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়ের বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের বন্যার সমস্যা অতীতেও ছিল এখনও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। উজানে যখন বৃষ্টি হয় তখন পানি এ অঞ্চল দিয়ে নেমে বঙ্গপোসাগরে যায়। ভাটির দেশ হিসেবে সব সময় এটা আমাদের ফেস করতে হয়। নদী ভাঙন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যার পানির কারণে নদী ভাঙনসহ যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এছাড়াও নদী ড্রেজিংয়ের বড় প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এসব বাস্তবায়ন করতে পারলে বন্যা ও নদী ভাঙনের ক্ষতি থেকে গ্রামবাসী রক্ষা পাবে। তিস্তায় চীনের প্রস্তাবিত প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২১টি প্রকল্প নিয়ে ডোনার কান্ট্রির সঙ্গে কথা বলেছি। এরমধ্যে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়াও প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, নদ-নদী ভাঙন রোধে ড্রেজিংসহ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। নদী ভাঙন এলাকায় আমাদের প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প আছে। এরমধ্যে ১৩৭৬ কোটি টাকা তিনটি চলমান এবং ৭১৪ কোটি ও ৩৮৩ কোটি টাকার আরও দুটি প্রকল্প রয়েছে। কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধায় বন্যার পানি নেমে এসে যে ক্ষতি করছে এটাকে রক্ষা করতে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। নদী ড্রেজিংয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে এগুলো শেষ হলে মানুষ রক্ষা পাবে এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা এবং সেই নিদের্শনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।

নেত্রকোনা : গত কয়েক সপ্তাহের অবিরাম ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারও নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী শতাধিক গ্রাম তৃতীয় দফায় প্লাবিত হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও রোপণকৃত আমনের চারা তলিয়ে যাওয়ায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে রবিশস্যের আবাদ। এমন অবস্থায় কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শীতকালীন সবজি আবাদের পরামর্শ জেলা কৃষি বিভাগের।

গত বৃহস্পতিবার সারাদিন জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবছর বৃষ্টির পরিমাণ বেশি ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী স্বোমেশ্বরী, কংস, ধনু, গোমাইখালী, গনেশ্বরী ও সদর উপজেলার মগড়া নদীসহ জেলার প্রায় সবগুলো নদ-নদীর পানি তৃতীয় বারের মতো বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কিছুদিন পর পর পানি কমে গেলেও পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিতে উন্নয়ন অনেকটাই থমকে রয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় কৃষকরা আবাদ করতে পারছেন না রবি শস্যও।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত দুই হাজার হেক্টর জমির রোপিত চারা নষ্ট হয়েছে জানানো হলেও ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলছেন দুর্গাপুরের কাকৈইগড়া ইউনিয়নের কাপাসিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, মনহর মিয়া, আবদুল হকসহ আরও অনেকেই ।

নানা প্রতিকূলতার মাঝেও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা এরইমধ্যে আমনের চারা রোপণের কাজ সম্পন্ন করলেও গত এক সপ্তাহের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি উপচে তীরবর্তী শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে শুধু ধান নয় মাছেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ফলে রোপণকৃত ধানের চারা পানিতে নষ্ট হওয়ায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন দরিদ্র কৃষকরা।

এবার বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় কয়েক দফা পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন শীতকালীন সবজি, কালাই ও সরিষা আবাদে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান।

এ বছর নেত্রকোনায় ১ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয় ১ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর।? এর মাঝে কয়েক দফা বন্যায় ইতোমধ্যে প্রায় ২ হাজার হেক্টর রোপা আমন চারা নষ্ট হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে কৃষি বিভাগ। এমনটাই প্রত্যাশা কৃষকদের।

সুনামগঞ্জ : কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের হাওর ও সুরমা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিতে জেলায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে চতুর্থ দফা বন্যা। সুনামগঞ্জের সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গতকাল বিকেল ৩টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সীমান্তবর্তী নদী যাদুকাটা ও চলতি নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এখনও পুরোপুরি ফসলের ক্ষতি নিরূপণ করা যাচ্ছে না।

সুুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কে পানি উঠায় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও ধর্মপাশাসহ কয়েক উপজেলার নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর।

সুনামগঞ্জ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান জানান, সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ শহরের পাশের ষোলঘর অংশে পানি সাধারণ বিপদসীমার কাছাকাছি। গত বৃহস্পতিবার সকালে পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তিনি জানান, ভারতের চেরাপঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪২৪ মিলিমিটার।

তিনি জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী কাল পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আহাদ জানান, আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি এবং সব ইউএনও ও বিভিন্ন দফতর প্রধানদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। বন্যার সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে ও জানিয়েছেন ।