প্রসঙ্গ : পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু বলছে, বিশ্বে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি শিশু মারা যায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে। মৃতের সংখ্যা ভারতে বেশি হলেও জনসংখ্যার অনুপাতে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর তালিকায় বাংলাদেশর নামই সবার উপরে। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা প্রবণ জেলাগুলোকে ‘সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন গবেষকগণ।

বাংলাদেশ অল্পবিস্তর প্রতিবছরই বন্যা হয়। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বরাবরে মতো সঠিক পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। বন্যাকবলিত মানুষের পুনর্বাসনের পাশাপাশি তাদের গৃহপালিত পশু-পাখিসহ অন্যান্য সম্পদেরও সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। বন্যার মধ্যে আমাদের গবাদি পশু-পাখিসহ সব সম্পদ রক্ষা করতে পারলেও সবচেয়ে বড় সম্পদ আমাদের প্রিয় শিশুদের আমরা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ও নিারপদ রাখতে পারছি না।

সারা বছরই জাতীয় দৈনিকগুলোতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। এ ধরনের খবরগুলো সচরাচর পত্রিকার ভেতরের পৃষ্ঠায় ছোট কলামে কম গুরুত্ব দিয়ে ছাপানো হয়। ফলে মানুষের নজর কম পড়ে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাধারণ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের দেশে বন্যা হয়। তাই এই সময় পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়ে যায়। তাছাড়া বছরের দুই ঈদের ছুটিতেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গেল ঈদের ছুটিতে মোট ৬৮ জন শিশু পানিতে ডুবে অপমৃত্যুর শিকার হয়েছে। যদের মধ্যে ৩৮ জনের বয়স ৫ বছরেরও কম ছিল।

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর মূলে রয়েছে সচেতনতার অভাব। সরকারি অথবা বেসরকারি পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ না থাকায় থামানো যাচ্ছে না এ ‘নীরব মহামারী। প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের জোড়ালো কোন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই এ বিষয়ে সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অন্যদিকে আমাদের দেশের অধিকাংশ এনজিও ও সামাজ সেবা প্রতিষ্ঠানই বিভাগীয় শহর ও রাজধানীকেন্দ্রিক। এদের অধিকাংশ সেবাই রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে সীমাবদ্ধ। তাছাড়া হাই প্রোফাইল এনজিওগুলো এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে কেন জানি আগ্রহ বোধ করে না। তবে আশার কথা হচ্ছে- ইদানীং ছোট ও মাঝারি পর্যায়ের কিছু এনজিও এই নীরব মহামারীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। তারা মাঠপর্যায়ে শিশুদের সাঁতার শিখানো, অভিভাবকদের সতর্ক করা ও পানিতে ডোবা শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি শিশুকে সাঁতার শিখানো এবং সকলের শ্রেণির মানুষের মাঝে সচেতনা সৃষ্টির মধ্যদিয়েই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মিলবে। শূন্য থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের সতর্কতার সঙ্গে দেখবাল করতে হবে। বিশেষ করে বর্ষাকালে। কর্মজীবী মায়েদের তাদের সন্তানের জন্য ডে কেয়ারের ব্যাবস্থা করতে হবে। আর যে সব শিশুদের বয়স পাঁচ বছর বা তার বেশি, তাদের অবশ্যই সাতার শেখাতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিশুদের সাঁতার শেখানোকেই অধিক কার্যকর মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ভারপরবর্তী প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কেও সাধারণ মানুষকে ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিশুদের জন্য এ পৃথিবীকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে তুলতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।

সিয়াম আহমেদ

আরও খবর

শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৭ মহররম ১৪৪২, ০৮ আশ্বিন ১৪২৭

প্রসঙ্গ : পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু বলছে, বিশ্বে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি শিশু মারা যায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে। মৃতের সংখ্যা ভারতে বেশি হলেও জনসংখ্যার অনুপাতে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর তালিকায় বাংলাদেশর নামই সবার উপরে। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা প্রবণ জেলাগুলোকে ‘সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন গবেষকগণ।

বাংলাদেশ অল্পবিস্তর প্রতিবছরই বন্যা হয়। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বরাবরে মতো সঠিক পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। বন্যাকবলিত মানুষের পুনর্বাসনের পাশাপাশি তাদের গৃহপালিত পশু-পাখিসহ অন্যান্য সম্পদেরও সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। বন্যার মধ্যে আমাদের গবাদি পশু-পাখিসহ সব সম্পদ রক্ষা করতে পারলেও সবচেয়ে বড় সম্পদ আমাদের প্রিয় শিশুদের আমরা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ও নিারপদ রাখতে পারছি না।

সারা বছরই জাতীয় দৈনিকগুলোতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। এ ধরনের খবরগুলো সচরাচর পত্রিকার ভেতরের পৃষ্ঠায় ছোট কলামে কম গুরুত্ব দিয়ে ছাপানো হয়। ফলে মানুষের নজর কম পড়ে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাধারণ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের দেশে বন্যা হয়। তাই এই সময় পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়ে যায়। তাছাড়া বছরের দুই ঈদের ছুটিতেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গেল ঈদের ছুটিতে মোট ৬৮ জন শিশু পানিতে ডুবে অপমৃত্যুর শিকার হয়েছে। যদের মধ্যে ৩৮ জনের বয়স ৫ বছরেরও কম ছিল।

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর মূলে রয়েছে সচেতনতার অভাব। সরকারি অথবা বেসরকারি পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ না থাকায় থামানো যাচ্ছে না এ ‘নীরব মহামারী। প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের জোড়ালো কোন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই এ বিষয়ে সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অন্যদিকে আমাদের দেশের অধিকাংশ এনজিও ও সামাজ সেবা প্রতিষ্ঠানই বিভাগীয় শহর ও রাজধানীকেন্দ্রিক। এদের অধিকাংশ সেবাই রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে সীমাবদ্ধ। তাছাড়া হাই প্রোফাইল এনজিওগুলো এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে কেন জানি আগ্রহ বোধ করে না। তবে আশার কথা হচ্ছে- ইদানীং ছোট ও মাঝারি পর্যায়ের কিছু এনজিও এই নীরব মহামারীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। তারা মাঠপর্যায়ে শিশুদের সাঁতার শিখানো, অভিভাবকদের সতর্ক করা ও পানিতে ডোবা শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি শিশুকে সাঁতার শিখানো এবং সকলের শ্রেণির মানুষের মাঝে সচেতনা সৃষ্টির মধ্যদিয়েই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মিলবে। শূন্য থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের সতর্কতার সঙ্গে দেখবাল করতে হবে। বিশেষ করে বর্ষাকালে। কর্মজীবী মায়েদের তাদের সন্তানের জন্য ডে কেয়ারের ব্যাবস্থা করতে হবে। আর যে সব শিশুদের বয়স পাঁচ বছর বা তার বেশি, তাদের অবশ্যই সাতার শেখাতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিশুদের সাঁতার শেখানোকেই অধিক কার্যকর মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ভারপরবর্তী প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কেও সাধারণ মানুষকে ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিশুদের জন্য এ পৃথিবীকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে তুলতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।

সিয়াম আহমেদ