মোবাইল ফোনের স্বেচ্ছাচারিতা

ভাস্কর রাসা

‘সম্মতি ছাড়া প্যাকেজ চালু অন্যায়’- মাননীয় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। ‘কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব’- বিটিআরসি। গত ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখ বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ১ম পাতায় প্রকাশিত খবর ‘মোবাইল ফোন অপারেটরদের গ্রাহকের সঙ্গে সীমাহীন প্রতারণার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে’। খবরে দেশের একাধিক অপারেটর কোম্পানির গ্রাহকের সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়েছে। তারা বলছেন গ্রাহকের সম্মতি ছাড়া অফার চালু করছে কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছামতো।

সম্মতি ছাড়া কোন প্যাকেজ চালু করেছে কি না, এ বিষয়টি দেখার জন্য নির্দিষ্ট বিভাগ থাকা উচিত, যার কাজ হবেÑ কি কি প্যাকেজ চালু করেছে কোম্পানিগুলো সারা বৎসর সেটা মনিটর করা। বিটিআরসির নির্দিষ্ট আইন মানা হয়েছে কি না বা লঙ্ঘিত হয়েছে কি নাÑ তা ওই বিভাগ থেকে নিয়মিত তদারকি করা হবে, তবেই তো বোঝা যাবে যে কোন কোন ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে। শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লঙ্ঘিত অপরাধের শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। তখন অপরাধীকে শাস্তি দিতে কারও অভিযোগের প্রয়োজন হবে না। তদারকি প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক বিন্যাসের মধ্যে উল্লেখিত ব্যবস্থাটি সংযুক্ত করলেই এই সব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব। আর বিটিআরসির নিজ উদ্যোগেই প্রতারকদের চিহ্নিত করার প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। গ্রাহককে অফার চালু করার প্রস্তাবটিতে গ্রাহকের সম্মতি আছে কি নাÑ তা যাচাই করা আজকের প্রযুক্তির যুগে খুবই সহজ ব্যাপার।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক আমি গ্রামীণফোনের একটি নাম্বার ব্যবহার করি গত প্রায় এক যুগের অধিক সময় ধরে। তবে, গত ১ বছরের অধিক সময় গ্রামীণফোন দ্বারা প্রতারিত হচ্ছি এবং অসম্ভব মানসিক চাপে পড়েছি। আমার এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কোনদিন গেমবক্স চালু করি নাই। অথচ, গত প্রায় এক বৎসরের অধিক সময় হবে প্রতি সপ্তাহে একটি-দুটি মেসেজ আসে বাংলায় আর ইংরেজিতে; তাতে বলা হয় আপনার গেমবক্স চালু হয়েছে এর জন্য প্রতি সপ্তাহে ১৩.৩৮ টাকা করে কাটা হয়েছে। এই প্যকেজটি বন্ধ করতে একটি অ্যাপসের ঠিকানা দেয়া হয় এবং বলা হয় এই ওয়েব সাইট থেকে গেমবক্স বন্ধ করা যাবে। কিন্তু এই ওয়েব সাইটে গিয়ে গেমবক্স বন্ধ করা যায় না। আমি কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে বন্ধ করেছিলাম ২/১ বার তারপর আবার নিজে নিজেই চালু হয়ে যায় গেমবক্স। এরপর আমি অভিযোগ করতে গ্রামীণফোনের ১২১ নম্বরে ডায়াল করি। ১২১ নম্বরে ডায়াল করার পর বলা হলো ১২১ -এ ফোন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমাকে অভিযোগ বলার সুযোগ না দিয়েই অনবরত বলতে লাগলো আপনার মোবাইলে আছে ‘এত’ টাকা এত পয়সা। আপনার অভিযোগ জানাতে ‘এত’ চাপুন, প্যাকেজ কিনতে ‘এত’ চাপুন, এইভাবে বলেই চলল। তারপর আমি অভিযোগ জানাতে ‘এত’ নম্বর চাপলাম এবং আমাকে অপরপ্রান্ত থেকে বলা হলো সংযোগটি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। একটু আস্বস্ত হলাম, অভিযোগটি অন্তত জানানো যাবে, কিন্তু না, এর পরেই বলা হলো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হলো। এ রকম আরও বহুবার করেছি ১২১-এ ডায়াল, অপরপ্রান্ত থেকে বলা হলো সঠিক নম্বরটি চাপতে ভুল করার জন্য সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হলো। আমি তো ব্যালেন্স জানতে ১২১ -এ ফোন করি নাই, অথচ আমাকে ব্যালেন্স জানতে বাধ্য করা হলো। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এইভাবে মানসিক চাপ দিতে থাকল অব্যাহতভাবে গ্রামীণফোন, আর প্রতি বারেই ১২১- এ ডায়াল করে কয়েক মিনিটের টাকা খরচ হতে লাগল।

এই জাতীয় প্রতারণা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, সম্মতি ছাড়া প্যাকেজ চালু অন্যায়। এই রকম অন্যায়ের বিরুদ্ধে কি শাস্তি ধার্য করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়? শত সহস্র অভিযোগ প্রতিদিন হচ্ছে। কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়ার উপায় নেই। প্রতিদিন এইভাবে সম্মতি ছাড়া গেমবক্স চালু করে প্রতি সপ্তাহে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা গেমবক্স থেকে লুটে নিচ্ছে গ্রামীণফোন। এই রকম অন্য সব অপারেটদের অবস্থা এরকমেই। এর জন্য সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রণালয়কে কালবিলম্ব না করে সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে আরও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নয়ত এই সব কোম্পানি যারপরনাই পর্যায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠবে। আরও আছে, ভুয়া সিমের অত্যাচার, যা ব্যক্তি জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে নিয়ে যায়, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবস্থা ভুয়া সিম বন্ধ করা দুই মিনিটের ব্যাপার মাত্র। সাধারণ মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে অনেক কাজ সম্পাদন করে এই জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থাটি তো স্বেচ্ছাচার হয়ে উঠতে পারে না। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকারকে এদের কঠিন জবাদিহিতার মধ্যে রাখতে হবে। ক্রেতা ও বিক্রেতার মানসিকতা হচ্ছে ক্রেতা তার প্রয়োজনীয় বস্তুটি বিক্রেতার কাছে চাইবে। বিক্রেতা চাহিদা পূরণ করতে না পারলে ক্রেতাকে জানিয়ে দেবে, কিন্তু এসব মোবাইল কোম্পানি আমার চাহিদা বিবেচনা না করে সারাদিন অফার পাঠাতে থাকে। আমি ক্রেতা, প্রয়োজনত আপনার কাছে চাইব, তখন আমাকে জানান এত জিবি দাম এত জিবি ইত্যাদি এ জন্য তো একটি নাম্বারই যথেষ্ট, এই নাম্বারে ডায়াল করে জিবি এমবির মিনিট কিনতে পারেন। তাই না করে আমাকে প্রতিদিন ১৫/২০টি ম্যাসেজ দিচ্ছে অনবরত। এই অবাঞ্ছিত ম্যাসেজগুলোর কারণে আমার ম্যাসেজ বক্স ২/৩ দিনে ফিলাপ হয়ে যায়। এর ফলে আমার অনেক প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ম্যাসেজ সঠিক সময়ে আমি পাই না। ফলে এই অবাঞ্ছিত ম্যাসেজগুলোর কারণে আমি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তারপর এ ম্যাসেজগুলো মুছে ফেলতে আমার অনেক সময় অপচয় হয়। যার অর্থনৈতিক মূল্যও বিবেচনায় আনতে হবে। এ সব অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। আন্দোলকারীরা ঘোষণা দিতে পারে এই অ-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সপ্তাহে এক দিন বা দু’দিন ঘোষিত নির্দিষ্ট সময়ে ১০ মিনিট নিজ নিজ মোবাইল ফোন বন্ধ রাখবেন, এতে কাজ না হলে সপ্তাহে এক দিন পর এক দিন নির্দিষ্ট সময়ে নিজ নিজ মোবাইল বন্ধ রাখবেন, এইভাবে আন্দোলন হতে পারে কিংবা আন্দোলনকারীরা বর্তমান সময় বিবেচনা করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মোবাইল কোম্পানিগুলোর হেড অফিসের সামনে মানববন্ধন ও প্রতীকী অবস্থান করতে পারে।

হটাৎ করে মোবাইল ফোনে কথা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ জানতে কয়েকটি ফ্লেক্সিলোডের দোকানে যোগাযোগ করলে বলা হয় উন্নয়নের কাজ হচ্ছে বা লাইনের কাজ হচ্ছে ইত্যাদি। কিন্তু প্রশ্নহলো এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো একটি ম্যাসেজ দিয়ে গ্রাহককে কেন পূর্বই সতর্ক করোনা এটা কী তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? আর একটি কথা তো বলাই হয়নি, তা হচ্ছে প্রতি কল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাসেজ আসে আপনার বর্তমান ব্যালেন্স এত টাকা। অর্থাৎ আমি যদি দৈনিক ৫০টি কল করি, তবে ৫০ বার ব্যালেন্স ম্যাসেজ আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ১০টা কলের পরে একটি ব্যালেন্স ম্যসেজ পাঠালেই তো হয়। এই বিশাল একটি যোগযোগ ব্যবস্থা যত স্বচ্ছ হবে তত গ্রাহকসেবা বৃদ্ধি পাবে।

বিটিআরসি পত্রিকায় জানিয়েছে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেবে। প্রশ্ন হচ্ছে বিটিআরসিতে অভিযোগ না দিলে নিজ প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং সেবা নিশ্চিত করার জন্য কি কোন ব্যবস্থা নেবে না। অনিয়ম পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিটিআরসির কি ব্যবস্থা বা বিভাগ নেই? আমার মতো লাখো কোটি গ্রাহক এই সব মুনাফালোভী বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে। সামাজিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদী কর্মসূচি চালাতে পারে অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে। সেই সঙ্গে আইনি সহায়তাকারী সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোও আইনি লড়াই করে জনগণের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।

রাত ১টার সময় ম্যাসেজ এলো ভাবলাম আমার একটি প্রয়োজনীয় ম্যাসেজ আসার কথা, উঠে দেখি এমবি কিনতে এততে ডায়াল করুন, এরপর কি মনে হয় না আছাড় দিয়ে সেটটি ভেঙে ফেলি? এই সব বিপণন ম্যাসেজ দেয়ার দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে পারে না বিটিআরসি? সর্বপরি জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ যেন কেউ অন্যায়ভাবে লুটে নিতে না পারে সেই দিকে সরকারকে আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। আর গ্রাহকদেরও নিজ অর্থনৈতিক স্বর্থের বিবেচনায় সোচ্চার হতে হবে। আশাকরি এই সব বহুজাতিক কোম্পানি নিজ প্রতিষ্ঠানের সুনাম বজায় রাখার দিকে অধিক মনোযোগী হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করতে অনেক সময় লাগে। বিনিয়োগ করতে হয় অর্থ, প্রযুক্তি, মেধা ও শ্রম। কিন্তু সুনাম ক্ষুণœ হতে সময় লাগে খুবই কম। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে একটি কথা চালু আছে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে তা হচ্ছে উইন- উইন প্লে, এর অর্থ উভয়কেই এক সঙ্গে লাভবান হতে হবে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এটি একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি।

[লেখক : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ভাস্কর]

শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৭ মহররম ১৪৪২, ০৮ আশ্বিন ১৪২৭

মোবাইল ফোনের স্বেচ্ছাচারিতা

ভাস্কর রাসা

‘সম্মতি ছাড়া প্যাকেজ চালু অন্যায়’- মাননীয় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। ‘কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব’- বিটিআরসি। গত ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখ বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ১ম পাতায় প্রকাশিত খবর ‘মোবাইল ফোন অপারেটরদের গ্রাহকের সঙ্গে সীমাহীন প্রতারণার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে’। খবরে দেশের একাধিক অপারেটর কোম্পানির গ্রাহকের সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়েছে। তারা বলছেন গ্রাহকের সম্মতি ছাড়া অফার চালু করছে কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছামতো।

সম্মতি ছাড়া কোন প্যাকেজ চালু করেছে কি না, এ বিষয়টি দেখার জন্য নির্দিষ্ট বিভাগ থাকা উচিত, যার কাজ হবেÑ কি কি প্যাকেজ চালু করেছে কোম্পানিগুলো সারা বৎসর সেটা মনিটর করা। বিটিআরসির নির্দিষ্ট আইন মানা হয়েছে কি না বা লঙ্ঘিত হয়েছে কি নাÑ তা ওই বিভাগ থেকে নিয়মিত তদারকি করা হবে, তবেই তো বোঝা যাবে যে কোন কোন ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে। শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লঙ্ঘিত অপরাধের শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। তখন অপরাধীকে শাস্তি দিতে কারও অভিযোগের প্রয়োজন হবে না। তদারকি প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক বিন্যাসের মধ্যে উল্লেখিত ব্যবস্থাটি সংযুক্ত করলেই এই সব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব। আর বিটিআরসির নিজ উদ্যোগেই প্রতারকদের চিহ্নিত করার প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। গ্রাহককে অফার চালু করার প্রস্তাবটিতে গ্রাহকের সম্মতি আছে কি নাÑ তা যাচাই করা আজকের প্রযুক্তির যুগে খুবই সহজ ব্যাপার।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক আমি গ্রামীণফোনের একটি নাম্বার ব্যবহার করি গত প্রায় এক যুগের অধিক সময় ধরে। তবে, গত ১ বছরের অধিক সময় গ্রামীণফোন দ্বারা প্রতারিত হচ্ছি এবং অসম্ভব মানসিক চাপে পড়েছি। আমার এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কোনদিন গেমবক্স চালু করি নাই। অথচ, গত প্রায় এক বৎসরের অধিক সময় হবে প্রতি সপ্তাহে একটি-দুটি মেসেজ আসে বাংলায় আর ইংরেজিতে; তাতে বলা হয় আপনার গেমবক্স চালু হয়েছে এর জন্য প্রতি সপ্তাহে ১৩.৩৮ টাকা করে কাটা হয়েছে। এই প্যকেজটি বন্ধ করতে একটি অ্যাপসের ঠিকানা দেয়া হয় এবং বলা হয় এই ওয়েব সাইট থেকে গেমবক্স বন্ধ করা যাবে। কিন্তু এই ওয়েব সাইটে গিয়ে গেমবক্স বন্ধ করা যায় না। আমি কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে বন্ধ করেছিলাম ২/১ বার তারপর আবার নিজে নিজেই চালু হয়ে যায় গেমবক্স। এরপর আমি অভিযোগ করতে গ্রামীণফোনের ১২১ নম্বরে ডায়াল করি। ১২১ নম্বরে ডায়াল করার পর বলা হলো ১২১ -এ ফোন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমাকে অভিযোগ বলার সুযোগ না দিয়েই অনবরত বলতে লাগলো আপনার মোবাইলে আছে ‘এত’ টাকা এত পয়সা। আপনার অভিযোগ জানাতে ‘এত’ চাপুন, প্যাকেজ কিনতে ‘এত’ চাপুন, এইভাবে বলেই চলল। তারপর আমি অভিযোগ জানাতে ‘এত’ নম্বর চাপলাম এবং আমাকে অপরপ্রান্ত থেকে বলা হলো সংযোগটি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। একটু আস্বস্ত হলাম, অভিযোগটি অন্তত জানানো যাবে, কিন্তু না, এর পরেই বলা হলো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হলো। এ রকম আরও বহুবার করেছি ১২১-এ ডায়াল, অপরপ্রান্ত থেকে বলা হলো সঠিক নম্বরটি চাপতে ভুল করার জন্য সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হলো। আমি তো ব্যালেন্স জানতে ১২১ -এ ফোন করি নাই, অথচ আমাকে ব্যালেন্স জানতে বাধ্য করা হলো। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এইভাবে মানসিক চাপ দিতে থাকল অব্যাহতভাবে গ্রামীণফোন, আর প্রতি বারেই ১২১- এ ডায়াল করে কয়েক মিনিটের টাকা খরচ হতে লাগল।

এই জাতীয় প্রতারণা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, সম্মতি ছাড়া প্যাকেজ চালু অন্যায়। এই রকম অন্যায়ের বিরুদ্ধে কি শাস্তি ধার্য করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়? শত সহস্র অভিযোগ প্রতিদিন হচ্ছে। কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়ার উপায় নেই। প্রতিদিন এইভাবে সম্মতি ছাড়া গেমবক্স চালু করে প্রতি সপ্তাহে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা গেমবক্স থেকে লুটে নিচ্ছে গ্রামীণফোন। এই রকম অন্য সব অপারেটদের অবস্থা এরকমেই। এর জন্য সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রণালয়কে কালবিলম্ব না করে সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে আরও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নয়ত এই সব কোম্পানি যারপরনাই পর্যায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠবে। আরও আছে, ভুয়া সিমের অত্যাচার, যা ব্যক্তি জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে নিয়ে যায়, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবস্থা ভুয়া সিম বন্ধ করা দুই মিনিটের ব্যাপার মাত্র। সাধারণ মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে অনেক কাজ সম্পাদন করে এই জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থাটি তো স্বেচ্ছাচার হয়ে উঠতে পারে না। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকারকে এদের কঠিন জবাদিহিতার মধ্যে রাখতে হবে। ক্রেতা ও বিক্রেতার মানসিকতা হচ্ছে ক্রেতা তার প্রয়োজনীয় বস্তুটি বিক্রেতার কাছে চাইবে। বিক্রেতা চাহিদা পূরণ করতে না পারলে ক্রেতাকে জানিয়ে দেবে, কিন্তু এসব মোবাইল কোম্পানি আমার চাহিদা বিবেচনা না করে সারাদিন অফার পাঠাতে থাকে। আমি ক্রেতা, প্রয়োজনত আপনার কাছে চাইব, তখন আমাকে জানান এত জিবি দাম এত জিবি ইত্যাদি এ জন্য তো একটি নাম্বারই যথেষ্ট, এই নাম্বারে ডায়াল করে জিবি এমবির মিনিট কিনতে পারেন। তাই না করে আমাকে প্রতিদিন ১৫/২০টি ম্যাসেজ দিচ্ছে অনবরত। এই অবাঞ্ছিত ম্যাসেজগুলোর কারণে আমার ম্যাসেজ বক্স ২/৩ দিনে ফিলাপ হয়ে যায়। এর ফলে আমার অনেক প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ম্যাসেজ সঠিক সময়ে আমি পাই না। ফলে এই অবাঞ্ছিত ম্যাসেজগুলোর কারণে আমি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তারপর এ ম্যাসেজগুলো মুছে ফেলতে আমার অনেক সময় অপচয় হয়। যার অর্থনৈতিক মূল্যও বিবেচনায় আনতে হবে। এ সব অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। আন্দোলকারীরা ঘোষণা দিতে পারে এই অ-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সপ্তাহে এক দিন বা দু’দিন ঘোষিত নির্দিষ্ট সময়ে ১০ মিনিট নিজ নিজ মোবাইল ফোন বন্ধ রাখবেন, এতে কাজ না হলে সপ্তাহে এক দিন পর এক দিন নির্দিষ্ট সময়ে নিজ নিজ মোবাইল বন্ধ রাখবেন, এইভাবে আন্দোলন হতে পারে কিংবা আন্দোলনকারীরা বর্তমান সময় বিবেচনা করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মোবাইল কোম্পানিগুলোর হেড অফিসের সামনে মানববন্ধন ও প্রতীকী অবস্থান করতে পারে।

হটাৎ করে মোবাইল ফোনে কথা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ জানতে কয়েকটি ফ্লেক্সিলোডের দোকানে যোগাযোগ করলে বলা হয় উন্নয়নের কাজ হচ্ছে বা লাইনের কাজ হচ্ছে ইত্যাদি। কিন্তু প্রশ্নহলো এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো একটি ম্যাসেজ দিয়ে গ্রাহককে কেন পূর্বই সতর্ক করোনা এটা কী তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? আর একটি কথা তো বলাই হয়নি, তা হচ্ছে প্রতি কল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাসেজ আসে আপনার বর্তমান ব্যালেন্স এত টাকা। অর্থাৎ আমি যদি দৈনিক ৫০টি কল করি, তবে ৫০ বার ব্যালেন্স ম্যাসেজ আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ১০টা কলের পরে একটি ব্যালেন্স ম্যসেজ পাঠালেই তো হয়। এই বিশাল একটি যোগযোগ ব্যবস্থা যত স্বচ্ছ হবে তত গ্রাহকসেবা বৃদ্ধি পাবে।

বিটিআরসি পত্রিকায় জানিয়েছে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেবে। প্রশ্ন হচ্ছে বিটিআরসিতে অভিযোগ না দিলে নিজ প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং সেবা নিশ্চিত করার জন্য কি কোন ব্যবস্থা নেবে না। অনিয়ম পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিটিআরসির কি ব্যবস্থা বা বিভাগ নেই? আমার মতো লাখো কোটি গ্রাহক এই সব মুনাফালোভী বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে। সামাজিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদী কর্মসূচি চালাতে পারে অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে। সেই সঙ্গে আইনি সহায়তাকারী সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোও আইনি লড়াই করে জনগণের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।

রাত ১টার সময় ম্যাসেজ এলো ভাবলাম আমার একটি প্রয়োজনীয় ম্যাসেজ আসার কথা, উঠে দেখি এমবি কিনতে এততে ডায়াল করুন, এরপর কি মনে হয় না আছাড় দিয়ে সেটটি ভেঙে ফেলি? এই সব বিপণন ম্যাসেজ দেয়ার দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে পারে না বিটিআরসি? সর্বপরি জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ যেন কেউ অন্যায়ভাবে লুটে নিতে না পারে সেই দিকে সরকারকে আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। আর গ্রাহকদেরও নিজ অর্থনৈতিক স্বর্থের বিবেচনায় সোচ্চার হতে হবে। আশাকরি এই সব বহুজাতিক কোম্পানি নিজ প্রতিষ্ঠানের সুনাম বজায় রাখার দিকে অধিক মনোযোগী হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করতে অনেক সময় লাগে। বিনিয়োগ করতে হয় অর্থ, প্রযুক্তি, মেধা ও শ্রম। কিন্তু সুনাম ক্ষুণœ হতে সময় লাগে খুবই কম। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে একটি কথা চালু আছে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে তা হচ্ছে উইন- উইন প্লে, এর অর্থ উভয়কেই এক সঙ্গে লাভবান হতে হবে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এটি একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি।

[লেখক : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ভাস্কর]