খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষে চার মাস জলাবদ্ধ কয়েকশ’ পরিবার

ময়মনসিংহের সদর, ফুলপুর ও তারাকান্দাসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রভাবশালীরা সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছের খামার করায় দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পরে মানবেতর জীবন যাপন করছে কয়েকশ’ পরিবার। আমন মৌসুমে ধান চাষ না করতে পেরে হতাশায় স্থানীয় কৃষকরা। ভুক্তভোগীরা জনিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। অবশেষে এ ব্যাপারে গত শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক জলাবদ্ধতা এলাকাগুলো পরিদর্শন করে স্থায়ী সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

প্রতিবছরের মতো এবারও অবৈধভাবে খাল দখল করে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের খামার তৈরি করে মাছ চাষ করায় জলাবদ্ধতায় পরেছে ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার রশিদপুর, সাহবাজপুর ও বাজিতপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। উপজেলার চরনীলক্ষীয়া ইউনিয়নের একদল প্রভাবশালী চিরনখালী ও কাটাখালী খাল দখল করে খালের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষ করায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য বছর জলাবদ্ধতার পরিমাণ কম থাকলেও এ বারের বর্ষায় বিগত চারমাস ধরে পানি বন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছেন কয়েকশ’ পরিবার। দীর্ঘদিন রাস্তা ঘাট ও বাড়ি-ঘরে পানি থাকায় গবাদিপশু ও হাসমুরগিসহ চরম দুর্ভোগে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এ এলাকার মানুষ। এছাড়াও আমন মৌসুমে ধান আবাদ না করতে পেরে এলাকার কৃষকরা এখন দিশেহারা।

গত চার মাস ধরে পনিবন্দী হয়ে মানবেতর দিন কাটছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরনীলক্ষীয়া ইউনিয়নে রশিদপুর, সাহবাজপুর ও বাজিতপুর গ্রামের বেশ কয়েক শ’ পরিবারের। এ ইউনিয়নের চিরনখালী ও কাটাখালী সরকারি খালে প্রভাবশালীরা বাঁধ দিয়ে ব্রিজ কালভার্ডের নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে মাছ চাষ করায় দেখা দিয়েছে এই জলাবদ্ধতা। এতে চার মাস ধরে পানিবন্দী অবস্থায় গবাদিপশু ও হাঁসমুরগিসহ মানবেতর জীবন যাপন করছে তিন গ্রামের কয়েক শ’ পরিবার। সরকারি খালগুলো প্রভাবশালীদের হাত থেকে দখল মুক্ত করে স্থায়ী জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পেতে গ্রামবাসীদের প্রতিবছর দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এর কোন স্থায়ী সমাধান পাচ্ছে না তারা। স্থানীয়রা বলছেন, যাদের সাধ্য আছে তাদের অনেকেই শিশুদের দুর্ঘটনায় পড়ার ভয়ে ও রান্নাবান্না না করতে পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া করে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় যদি কেউ মারা যায় তাহলে দাফন করার কোন জায়গা নেই। এছাড়া সাপের ভয়, মলমূত্র ত্যাগের সমন্যা তো রয়েছেই।

সদর ইপজেলার ৭নং চরনীলক্ষীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম রতন জানান, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। সরকারি খালগুলো দ্রুত দখলমুক্ত করে জলাবদ্ধতা দূর করা হবে।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলেও গত দুই মাসে এর কোন সমাধান করতে পারেননি। তবে তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানালেন আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতি বছরেই বর্ষা মৌসুম এলেই এ এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল সরকারি খালের মুখ ও কালবার্ড দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে মাছ চাষ করে নিজেরা লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এছাড়াও জেলা ফুলপুর, তারাকান্দাসহ বেশকিছু এলাকায় একই ধরনের জলাবদ্ধতায় স্থানীয়রা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ ব্যাপারে গত শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান জলাবদ্ধতা এলাকাগুলো পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক অনেক সমস্যা সমাধান করেছেন এবং এর স্থায়ী সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৮ মহররম ১৪৪২, ০৯ আশ্বিন ১৪২৭

খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষে চার মাস জলাবদ্ধ কয়েকশ’ পরিবার

জেলা বার্তা পরিবেশক, ময়মনসিংহ

image

ময়মনসিংহের সদর, ফুলপুর ও তারাকান্দাসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রভাবশালীরা সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছের খামার করায় দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পরে মানবেতর জীবন যাপন করছে কয়েকশ’ পরিবার। আমন মৌসুমে ধান চাষ না করতে পেরে হতাশায় স্থানীয় কৃষকরা। ভুক্তভোগীরা জনিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। অবশেষে এ ব্যাপারে গত শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক জলাবদ্ধতা এলাকাগুলো পরিদর্শন করে স্থায়ী সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

প্রতিবছরের মতো এবারও অবৈধভাবে খাল দখল করে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের খামার তৈরি করে মাছ চাষ করায় জলাবদ্ধতায় পরেছে ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার রশিদপুর, সাহবাজপুর ও বাজিতপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। উপজেলার চরনীলক্ষীয়া ইউনিয়নের একদল প্রভাবশালী চিরনখালী ও কাটাখালী খাল দখল করে খালের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষ করায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য বছর জলাবদ্ধতার পরিমাণ কম থাকলেও এ বারের বর্ষায় বিগত চারমাস ধরে পানি বন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছেন কয়েকশ’ পরিবার। দীর্ঘদিন রাস্তা ঘাট ও বাড়ি-ঘরে পানি থাকায় গবাদিপশু ও হাসমুরগিসহ চরম দুর্ভোগে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এ এলাকার মানুষ। এছাড়াও আমন মৌসুমে ধান আবাদ না করতে পেরে এলাকার কৃষকরা এখন দিশেহারা।

গত চার মাস ধরে পনিবন্দী হয়ে মানবেতর দিন কাটছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরনীলক্ষীয়া ইউনিয়নে রশিদপুর, সাহবাজপুর ও বাজিতপুর গ্রামের বেশ কয়েক শ’ পরিবারের। এ ইউনিয়নের চিরনখালী ও কাটাখালী সরকারি খালে প্রভাবশালীরা বাঁধ দিয়ে ব্রিজ কালভার্ডের নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে মাছ চাষ করায় দেখা দিয়েছে এই জলাবদ্ধতা। এতে চার মাস ধরে পানিবন্দী অবস্থায় গবাদিপশু ও হাঁসমুরগিসহ মানবেতর জীবন যাপন করছে তিন গ্রামের কয়েক শ’ পরিবার। সরকারি খালগুলো প্রভাবশালীদের হাত থেকে দখল মুক্ত করে স্থায়ী জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পেতে গ্রামবাসীদের প্রতিবছর দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এর কোন স্থায়ী সমাধান পাচ্ছে না তারা। স্থানীয়রা বলছেন, যাদের সাধ্য আছে তাদের অনেকেই শিশুদের দুর্ঘটনায় পড়ার ভয়ে ও রান্নাবান্না না করতে পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া করে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় যদি কেউ মারা যায় তাহলে দাফন করার কোন জায়গা নেই। এছাড়া সাপের ভয়, মলমূত্র ত্যাগের সমন্যা তো রয়েছেই।

সদর ইপজেলার ৭নং চরনীলক্ষীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম রতন জানান, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। সরকারি খালগুলো দ্রুত দখলমুক্ত করে জলাবদ্ধতা দূর করা হবে।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলেও গত দুই মাসে এর কোন সমাধান করতে পারেননি। তবে তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানালেন আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতি বছরেই বর্ষা মৌসুম এলেই এ এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল সরকারি খালের মুখ ও কালবার্ড দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে মাছ চাষ করে নিজেরা লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এছাড়াও জেলা ফুলপুর, তারাকান্দাসহ বেশকিছু এলাকায় একই ধরনের জলাবদ্ধতায় স্থানীয়রা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ ব্যাপারে গত শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান জলাবদ্ধতা এলাকাগুলো পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক অনেক সমস্যা সমাধান করেছেন এবং এর স্থায়ী সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।