পিয়াজের পর চালের দাম বৃদ্ধি : বিপাকে মানুষ

পেয়াজের বাজারের অস্থিরতা কাটতে না কাটতেই সৈয়দপুরে চালের বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। একই সঙ্গে খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি সব ধরনের চালের দর বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। এতে বেশি দামে অন্যান্য জাতের সরু চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরু চালের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ আয়ের শ্রমজীবী মানুষ।

সরেজমিনে শহরের চাল মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের বেশি চাহিদার স্বর্ণা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। স্বর্ণা চাল বাজার থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। বাজারে স্বর্ণা চাল না পেয়ে ক্রেতারা সরু চাল কিনছেন। পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা স্বর্ণা চাল ২১০০ টাকায় উঠলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। চালের পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২৩৫০ টাকার মিনিকেট ২৬০০ টাকায়, বিআর ২৯ চাল প্রতি বস্তা ২১৩০ টাকার স্থলে ২৩০০ টাকায়, বিআর ২৮ চাল প্রতি বস্তা ২২৫০ টাকার স্থলে ২৫০০ টাকায়, পাইজাম চাল প্রতি বস্তা ২১৫০ টাকার স্থলে ২৩০০ টাকায় এবং বাসমতি চাল প্রতি বস্তা ২৬০০ টাকার স্থলে ২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পাইজাম চাল ৪৮ টাকার স্থলে ৫২ টাকায়, বাসমতি প্রতি কেজি ৫৭ টাকার স্থলে ৬০ টাকায়, বিআর২৯ চাল ৪৬ টাকার স্থলে ৪৮-৫০ টাকায়, বিআর ২৮ চাল ৫০ টাকার স্থলে ৫২ টাকায় ও মিনিকেট চাল ৫২ টাকার স্থলে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের ঊর্ধ্বমুখী দামে উদ্বেগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

বাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী খালিদ হোসেন আরমান বলেন, আমরা কম আয়ের মানুষ। পেঁয়াজের সঙ্গে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কষ্টে চলছে সংসার। প্রশাসন বাজার মনিটরিং না করার কারণে পেঁয়াজের মতো চাল দাম দফায় দফায় বাড়ছে। তিনি দাম নিয়ন্ত্রণ করতে বাজার মনিটরিং করতে প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানান।

এদিকে চালের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চালের বাজারে সিন্ডিকেট ভর করেছে। স্বর্ণা চাল গত ২ মাস থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা দর নিয়ন্ত্রণ করায় চালের বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে কেজিতে ২-৩ টাকা দাম বেড়ে গেছে।

এ ব্যাপারে চালকল মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম রেজু জানান, বৈরি আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হওয়ায় হাটে-বাজারে ধানের পর্যাপ্ত আমদানি নেই। হাটে চড়ামূল্যে ধান বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে হাটে ৭৫ কেজির প্রতি বস্তা ধান ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এছাড়াও চালের বাজার বড় বড় অটোমিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় দাম তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে অটো মিলারদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আগে স্থানীয় পর্যায়ে হাসকিং চালু থাকার কারণে চালের বাজার মূল্য প্রতিযোগিতাপূর্ণ ছিল। বর্তমানে অটো চাল কলের দাপটে হাসকিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চালের বাজারে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে বড় বড় অটোমিলগুলোর। ফলে চালের দর বৃদ্ধি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম জানান, দর বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে রয়েছে। এজন্য উপজেলা খাদ্য বিভাগকে বাজার পরিদর্শন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৮ মহররম ১৪৪২, ০৯ আশ্বিন ১৪২৭

পিয়াজের পর চালের দাম বৃদ্ধি : বিপাকে মানুষ

প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

পেয়াজের বাজারের অস্থিরতা কাটতে না কাটতেই সৈয়দপুরে চালের বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। একই সঙ্গে খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি সব ধরনের চালের দর বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। এতে বেশি দামে অন্যান্য জাতের সরু চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরু চালের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ আয়ের শ্রমজীবী মানুষ।

সরেজমিনে শহরের চাল মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের বেশি চাহিদার স্বর্ণা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। স্বর্ণা চাল বাজার থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। বাজারে স্বর্ণা চাল না পেয়ে ক্রেতারা সরু চাল কিনছেন। পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা স্বর্ণা চাল ২১০০ টাকায় উঠলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। চালের পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২৩৫০ টাকার মিনিকেট ২৬০০ টাকায়, বিআর ২৯ চাল প্রতি বস্তা ২১৩০ টাকার স্থলে ২৩০০ টাকায়, বিআর ২৮ চাল প্রতি বস্তা ২২৫০ টাকার স্থলে ২৫০০ টাকায়, পাইজাম চাল প্রতি বস্তা ২১৫০ টাকার স্থলে ২৩০০ টাকায় এবং বাসমতি চাল প্রতি বস্তা ২৬০০ টাকার স্থলে ২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পাইজাম চাল ৪৮ টাকার স্থলে ৫২ টাকায়, বাসমতি প্রতি কেজি ৫৭ টাকার স্থলে ৬০ টাকায়, বিআর২৯ চাল ৪৬ টাকার স্থলে ৪৮-৫০ টাকায়, বিআর ২৮ চাল ৫০ টাকার স্থলে ৫২ টাকায় ও মিনিকেট চাল ৫২ টাকার স্থলে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের ঊর্ধ্বমুখী দামে উদ্বেগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

বাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী খালিদ হোসেন আরমান বলেন, আমরা কম আয়ের মানুষ। পেঁয়াজের সঙ্গে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কষ্টে চলছে সংসার। প্রশাসন বাজার মনিটরিং না করার কারণে পেঁয়াজের মতো চাল দাম দফায় দফায় বাড়ছে। তিনি দাম নিয়ন্ত্রণ করতে বাজার মনিটরিং করতে প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানান।

এদিকে চালের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চালের বাজারে সিন্ডিকেট ভর করেছে। স্বর্ণা চাল গত ২ মাস থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা দর নিয়ন্ত্রণ করায় চালের বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে কেজিতে ২-৩ টাকা দাম বেড়ে গেছে।

এ ব্যাপারে চালকল মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম রেজু জানান, বৈরি আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হওয়ায় হাটে-বাজারে ধানের পর্যাপ্ত আমদানি নেই। হাটে চড়ামূল্যে ধান বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে হাটে ৭৫ কেজির প্রতি বস্তা ধান ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এছাড়াও চালের বাজার বড় বড় অটোমিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় দাম তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে অটো মিলারদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আগে স্থানীয় পর্যায়ে হাসকিং চালু থাকার কারণে চালের বাজার মূল্য প্রতিযোগিতাপূর্ণ ছিল। বর্তমানে অটো চাল কলের দাপটে হাসকিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চালের বাজারে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে বড় বড় অটোমিলগুলোর। ফলে চালের দর বৃদ্ধি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম জানান, দর বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে রয়েছে। এজন্য উপজেলা খাদ্য বিভাগকে বাজার পরিদর্শন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।