সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে

গৃহবধূকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের গণধর্ষণ

দুই গার্ড বরখাস্ত য় তদন্ত কমিটি য় বিব্রত আ’লীগ বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ছাত্রলীগ বেপরোয়া : সুজন

দেশের প্রচীনতম বিদ্যাপীঠ সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গত শুক্রবার রাতে এক তরুণী গৃহবধূকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করেছে ছাত্রলীগ ক্যডাররা। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছাত্রাবাসে একটি কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।

কলেজটির ক্যাম্পাসে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এই গৃহবধূকে ফিল্মি কায়দায় তুলে নিয়ে যায় ক্যাডাররা। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে সিলেটজুড়ে। বিভিন্ন কলেজের শীক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বন্ধ থাকা ছাত্রাবাস আবারও বন্ধের নির্দেশ দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। বরখাস্ত করা হয়েছে ছাত্রাবাসের দুই গার্ডকে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতারাও এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও র‌্যাব জানিয়েছে, এদের গ্রেফতারে একাধিক টিম কাজ করছে। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ বা তার স্বামী ধর্ষকদের পূর্ব পরিচিত বা তাদের সঙ্গে কোন বিরোধ ছিল কিনা তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি কেউ। যদিও ধর্ষিতার স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের কয়েকজনকে এর আগেও তিনি কলেজে ও ছাত্রাবাস এলাকায় দেখেছেন।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কলেজ বন্ধ থাকলেও কী করে ছাত্রাবাস খোলা ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশ গৃহবধূকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেছে। সেখানে তিনি মানসিকভাবে আতঙ্কিত বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, গৃহবধূর (২০) বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। স্বামীর সঙ্গে নিজেদের গাড়িতে করে গত শুক্রবার বিকেলে এমসি কলেজ এলাকায় বেড়াতে যান। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তার স্বামী। সন্ধ্যার পর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গাড়িটি রেখে একটি দোকান থেকে তারা কেনাকাটা করেন। পরে ফিরে গাড়িতে বসে গল্প করছিলেন তারা। রাত আটটার দিকে পাঁচজন ক্যাডার তাদের গাড়িটি ঘিরে ধরে স্বামী ও স্ত্রীকে জোর করে গাড়ি থেকে নামায়। এদের মধ্যে তিনজন তরুণীকে টেনে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে নিয়ে যায়। স্বামীকে তখন গাড়িতে আটকে রেখেছিল দু’জন। ঘণ্টাখানেক পর স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হলে তিনি এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে গিয়ে স্ত্রীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পান।

এদিকে, ঘটনার সময় স্বামীর চিৎকার শুনে বালুচর এলাকা থেকে কিছু লোক এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের দিকে নজর রাখছিলেন। একপর্যায়ে নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনে ছাত্রাবাস পার্শ্ববর্তী স্টাফ কোয়ার্টার থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে দেখতে পান। ছাত্রাবাস ফটকের সামনে তখন তাদের গাড়িটি ছিল। একপাশে একটি মোটরসাইকেল রাখা দেখে স্থানীয় লোকজন শাহপরান থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্বামী-স্ত্রী তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।

এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান তাকে দেখতে যান। তিনি বলেন, তরুণীর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে গতকাল সকালে ওসিসিতে গিয়েছিলেন। তার শারীরিক কোন ঝুঁকি নেই। তবে মানসিকভাবে তিনি কিছুটা আতঙ্কিত। ওসিসির মাধ্যমে তার শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। এরমধ্যে একটি পরীক্ষা ঢাকায় করানো হতে পারে। সেজন্য নমুনা পাঠানো হবে। পরে সবগুলো প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বিভাগে হস্তান্তর করা হবে।

তরুণীর স্বামী পুলিশকে বলেছেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা সংখ্যায় পাঁচ থেকে ছয়জন ছিলেন। এর মধ্যে দু’জনকে তিনি এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে আগেও দেখেছেন। এই দু’জন তাকে গাড়িতে আটকে রেখেছিলেন। তিন থেকে চারজন তার সামনে স্ত্রীকে টেনে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকে নিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পর ওই তিন যুবক দৌড়ে চলে যাওয়ার সময় তাকে জিম্মি করে রাখা দুই যুবকও পালিয়ে যান।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, রাতে শাহপরান থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ছাত্রাবাসে প্রবেশের অনুমতি চায়। তিনি তখন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কসহ স্টাফ কোয়াটারে বসবাসরত দুজন শিক্ষককে সঙ্গে কথা বলে পুলিশকে ছাত্রাবাস এলাকায় প্রবেশ করার অনুমতি দেন। কিছুক্ষণ পর জানানো হয়, সেখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমান (২৮), তারেকুল ইসলাম (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), অর্জুন লঙ্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুমের (২৫) নাম এসেছে। তাদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত। বাকিরা এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র। গতকাল তাদের নামসহ সঙ্গে আরও তিনজন সহযোগী ছিল উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন ধর্ষিতার স্বামী। মামলার এজাহারে সাইফুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে ও বর্তমান ঠিকানা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো, শাহ মাহবুবুর রহমানের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনিপাড়া ও বর্তমান ঠিকানা ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ২০৫ নম্বর কক্ষ, মাহফুজুর রহমানের বাড়ি কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জগদল গ্রামে, অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জের আটগ্রাম এবং তারেকের বাড়ি সুনামগঞ্জ শহরের নিসর্গ আবাসিক এলাকায় (হাসননগর) উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন, রাজন আহমদ কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র এবং অন্যরা বহিরাগত।

শাহপরান থানার ওসি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, গতকাল ভোর রাতে ওই ছাত্রাবাসে তল্লাশি করে সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ছাড়াও অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে।

এদিকে, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। তিনি বলেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতারের পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলে।

অপরদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গতকাল দুপুরে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেনÑ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ (শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসের হোস্টেল সুপার) ও অপর হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে কলেজের প্রধান ফটকের দারোয়ান রাসেল মিয়া ও সবুজ আহমদ রুহানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারা মাস্টাররোলে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রাবাস বন্ধের ঘোষণা দিয়ে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। অথচ করােনা পরিস্থিতে আগেই কলেজ বন্ধ ছিল। এরপরও সেখানে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা অবস্থান করে তাদের অপকর্ম চালিয়ে আসছিল।

ধর্ষণের প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এমসি ও সরকারি কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ থাকার পরেও ছাত্রাবাস কিভাবে খোলা রাখেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা ধর্ষণে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। অন্যথায় তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান।

চলতো মদ জুয়া ও অস্ত্রবাজি

করোনা সংক্রমণের কারণে ১৭ মার্চ থেকে এমসি কলেজও বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাস খোলা কেন এ নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এই ছাত্রাবাসেই শুক্রবার রাতে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। ঘটনার আগে স্বামীকে নিয়ে তিনি সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কলেজ অধ্যক্ষ বলছেন, দরিদ্র ছাত্রদের কথা বিবেচনা করেই ছাত্রাবাস খোলা রাখা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্ধের পর ছাত্রাবাসে বেশির ভাগ ছাত্রলীগের ক্যাডাররাই থাকতাে। মুলত তাদের সুবিধার জন্যই ছাত্রাবাসটি চালু রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য এ ঘটনার পর শনিবার ছাত্রাবাসটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর কয়েকজনকে হল ত্যাগ করতে দেখা যায়।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের দখলে। ছাত্রদের পাশপাশি অনেক অছাত্রও এখানে আস্তানা গেড়েছিল। ছাত্রাবাসের ভেতরে নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলে কিছু ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশ্রয়ে ছাত্রাবাসে তারা মাদক সেবন ও ব্যবসা, জুয়ার আসর বসানোসহ বিভিন্ন অপকর্ম চলে আসিছল। এর বিভিন্ন কক্ষে অস্ত্রের মজুদও ছিল।

এই অপকর্ম অব্যাহত রাখতেই বন্ধের সময়েও ছাত্রাবাস ছাড়তে রাজি হয়নি ছাত্রলীগ। কলেজ প্রশাসনকেও তাদের ছাত্রাবাস ছাড়ার জোর তৎপরতা চালাতে দেখা যায়নি। ছাত্রলীগের এসব অপকর্মের সঙ্গে কলেজ প্রশাসনের কেউ কেউ জড়িত বলে অভিযোগ উঠছে।

তবে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, কলেজের গরির ও মেধাবী ছাত্রদের সুবিধার জন্য ছাত্রাবাস খোলা ছিল। যারা কিনা টিউশনি ও ছোটখাটো চাকরি করে তাদের পড়াশোনার খরচ যোগাচ্ছে। তবে কলেজের ছাত্রাবাস খোলা থাকলেও হোস্টেলের ক্যান্টিন বন্ধ ছিল।

ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই ছাত্রলীগ বেপোরোয়া : সুজন

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই সিলেটে ছাত্রলীগ বেপোরোয়া হয়ে ওঠেছে এবং একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেট।

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনিটর সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এর আগেও আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রবাস পুড়িয়ে দিয়েছে। টিলাগড় এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একের পর এক হত্যাকা- চালিয়েছে ছাত্রলীগ। কিন্তু এসবের একটিরও আজ পর্যন্ত বিচায় হয়নি। আসামিরা চিহ্নিত হয়নি। ফলে তারা দিন দিন বেপোরোয়া হয়ে ওঠেছে। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই আজকের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। কলেজ ছাত্রবাসে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেছে।

ফারুক মাহমুদ এই ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, পূর্বের ঘটনার মতো এ ঘটনাও যাতে ধামাচাপা পড়ে না যায়, আসামিরা রেহাই পেয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ধর্ষকদের অবশ্যই শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিব্রত আ’লীগ

সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণে বিব্রত আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে কলেজকে কলুষিত করা হয়েছে। ফলে এদের করো ছাড় নেই। ইতোমধ্যে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দলীয় হাইকমান্ড থেকে সিলেট আ’লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। নেতারা ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে প্রশাসনকে তাগিদ দিয়েছেন। এমনকি এদের গডফাদারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এমসি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, পৃথিবী জুড়ে সিলেটের এমসি কলেজের ঐতিহ্য রয়েছে। আজ তা ধ্বংসের পথে। এটা কোনভাবে কাম্য নয়। তিনি বলেন, ধর্ষণকরীদের কোন পরিচয় নেই। তাদের পরিচয় শুধু- তারা অপরাধী। এছাড়া এমন অপরাধীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন তাদের সম্পর্কেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে আমরা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অবগত করবো।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খাঁন বলেন, কেউ অপরাধ করলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এ ঘটনা খুবই জঘন্য এবং নিন্দনীয়। আমরা অপরাধীদের শাস্তি চাই। এ ঘটনায় কেউ যাতে পার না পায়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছি। সেই সঙ্গে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জানান, ঘটনাটি সত্যি লজ্জাজনক। এমন ঘটনায় আমরা বিব্রত। তিনি জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, এ ঘটনা আমাদের মারাত্মক ক্ষতির মুখে ফেলেছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৮ মহররম ১৪৪২, ০৯ আশ্বিন ১৪২৭

সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে

গৃহবধূকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের গণধর্ষণ

দুই গার্ড বরখাস্ত য় তদন্ত কমিটি য় বিব্রত আ’লীগ বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ছাত্রলীগ বেপরোয়া : সুজন

বিশেষ প্রতিনিধি

image

দেশের প্রচীনতম বিদ্যাপীঠ সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গত শুক্রবার রাতে এক তরুণী গৃহবধূকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করেছে ছাত্রলীগ ক্যডাররা। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছাত্রাবাসে একটি কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।

কলেজটির ক্যাম্পাসে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এই গৃহবধূকে ফিল্মি কায়দায় তুলে নিয়ে যায় ক্যাডাররা। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে সিলেটজুড়ে। বিভিন্ন কলেজের শীক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বন্ধ থাকা ছাত্রাবাস আবারও বন্ধের নির্দেশ দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। বরখাস্ত করা হয়েছে ছাত্রাবাসের দুই গার্ডকে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতারাও এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও র‌্যাব জানিয়েছে, এদের গ্রেফতারে একাধিক টিম কাজ করছে। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ বা তার স্বামী ধর্ষকদের পূর্ব পরিচিত বা তাদের সঙ্গে কোন বিরোধ ছিল কিনা তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি কেউ। যদিও ধর্ষিতার স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের কয়েকজনকে এর আগেও তিনি কলেজে ও ছাত্রাবাস এলাকায় দেখেছেন।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কলেজ বন্ধ থাকলেও কী করে ছাত্রাবাস খোলা ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশ গৃহবধূকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেছে। সেখানে তিনি মানসিকভাবে আতঙ্কিত বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, গৃহবধূর (২০) বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। স্বামীর সঙ্গে নিজেদের গাড়িতে করে গত শুক্রবার বিকেলে এমসি কলেজ এলাকায় বেড়াতে যান। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তার স্বামী। সন্ধ্যার পর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গাড়িটি রেখে একটি দোকান থেকে তারা কেনাকাটা করেন। পরে ফিরে গাড়িতে বসে গল্প করছিলেন তারা। রাত আটটার দিকে পাঁচজন ক্যাডার তাদের গাড়িটি ঘিরে ধরে স্বামী ও স্ত্রীকে জোর করে গাড়ি থেকে নামায়। এদের মধ্যে তিনজন তরুণীকে টেনে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে নিয়ে যায়। স্বামীকে তখন গাড়িতে আটকে রেখেছিল দু’জন। ঘণ্টাখানেক পর স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হলে তিনি এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে গিয়ে স্ত্রীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পান।

এদিকে, ঘটনার সময় স্বামীর চিৎকার শুনে বালুচর এলাকা থেকে কিছু লোক এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের দিকে নজর রাখছিলেন। একপর্যায়ে নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনে ছাত্রাবাস পার্শ্ববর্তী স্টাফ কোয়ার্টার থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে দেখতে পান। ছাত্রাবাস ফটকের সামনে তখন তাদের গাড়িটি ছিল। একপাশে একটি মোটরসাইকেল রাখা দেখে স্থানীয় লোকজন শাহপরান থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্বামী-স্ত্রী তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।

এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান তাকে দেখতে যান। তিনি বলেন, তরুণীর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে গতকাল সকালে ওসিসিতে গিয়েছিলেন। তার শারীরিক কোন ঝুঁকি নেই। তবে মানসিকভাবে তিনি কিছুটা আতঙ্কিত। ওসিসির মাধ্যমে তার শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। এরমধ্যে একটি পরীক্ষা ঢাকায় করানো হতে পারে। সেজন্য নমুনা পাঠানো হবে। পরে সবগুলো প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বিভাগে হস্তান্তর করা হবে।

তরুণীর স্বামী পুলিশকে বলেছেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা সংখ্যায় পাঁচ থেকে ছয়জন ছিলেন। এর মধ্যে দু’জনকে তিনি এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে আগেও দেখেছেন। এই দু’জন তাকে গাড়িতে আটকে রেখেছিলেন। তিন থেকে চারজন তার সামনে স্ত্রীকে টেনে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকে নিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পর ওই তিন যুবক দৌড়ে চলে যাওয়ার সময় তাকে জিম্মি করে রাখা দুই যুবকও পালিয়ে যান।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, রাতে শাহপরান থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ছাত্রাবাসে প্রবেশের অনুমতি চায়। তিনি তখন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কসহ স্টাফ কোয়াটারে বসবাসরত দুজন শিক্ষককে সঙ্গে কথা বলে পুলিশকে ছাত্রাবাস এলাকায় প্রবেশ করার অনুমতি দেন। কিছুক্ষণ পর জানানো হয়, সেখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমান (২৮), তারেকুল ইসলাম (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), অর্জুন লঙ্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুমের (২৫) নাম এসেছে। তাদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত। বাকিরা এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র। গতকাল তাদের নামসহ সঙ্গে আরও তিনজন সহযোগী ছিল উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন ধর্ষিতার স্বামী। মামলার এজাহারে সাইফুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে ও বর্তমান ঠিকানা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো, শাহ মাহবুবুর রহমানের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনিপাড়া ও বর্তমান ঠিকানা ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ২০৫ নম্বর কক্ষ, মাহফুজুর রহমানের বাড়ি কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জগদল গ্রামে, অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জের আটগ্রাম এবং তারেকের বাড়ি সুনামগঞ্জ শহরের নিসর্গ আবাসিক এলাকায় (হাসননগর) উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন, রাজন আহমদ কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র এবং অন্যরা বহিরাগত।

শাহপরান থানার ওসি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, গতকাল ভোর রাতে ওই ছাত্রাবাসে তল্লাশি করে সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ছাড়াও অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে।

এদিকে, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। তিনি বলেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতারের পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলে।

অপরদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গতকাল দুপুরে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেনÑ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ (শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসের হোস্টেল সুপার) ও অপর হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে কলেজের প্রধান ফটকের দারোয়ান রাসেল মিয়া ও সবুজ আহমদ রুহানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারা মাস্টাররোলে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রাবাস বন্ধের ঘোষণা দিয়ে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। অথচ করােনা পরিস্থিতে আগেই কলেজ বন্ধ ছিল। এরপরও সেখানে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা অবস্থান করে তাদের অপকর্ম চালিয়ে আসছিল।

ধর্ষণের প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এমসি ও সরকারি কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ থাকার পরেও ছাত্রাবাস কিভাবে খোলা রাখেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা ধর্ষণে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। অন্যথায় তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান।

চলতো মদ জুয়া ও অস্ত্রবাজি

করোনা সংক্রমণের কারণে ১৭ মার্চ থেকে এমসি কলেজও বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাস খোলা কেন এ নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এই ছাত্রাবাসেই শুক্রবার রাতে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। ঘটনার আগে স্বামীকে নিয়ে তিনি সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কলেজ অধ্যক্ষ বলছেন, দরিদ্র ছাত্রদের কথা বিবেচনা করেই ছাত্রাবাস খোলা রাখা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্ধের পর ছাত্রাবাসে বেশির ভাগ ছাত্রলীগের ক্যাডাররাই থাকতাে। মুলত তাদের সুবিধার জন্যই ছাত্রাবাসটি চালু রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য এ ঘটনার পর শনিবার ছাত্রাবাসটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর কয়েকজনকে হল ত্যাগ করতে দেখা যায়।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের দখলে। ছাত্রদের পাশপাশি অনেক অছাত্রও এখানে আস্তানা গেড়েছিল। ছাত্রাবাসের ভেতরে নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলে কিছু ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশ্রয়ে ছাত্রাবাসে তারা মাদক সেবন ও ব্যবসা, জুয়ার আসর বসানোসহ বিভিন্ন অপকর্ম চলে আসিছল। এর বিভিন্ন কক্ষে অস্ত্রের মজুদও ছিল।

এই অপকর্ম অব্যাহত রাখতেই বন্ধের সময়েও ছাত্রাবাস ছাড়তে রাজি হয়নি ছাত্রলীগ। কলেজ প্রশাসনকেও তাদের ছাত্রাবাস ছাড়ার জোর তৎপরতা চালাতে দেখা যায়নি। ছাত্রলীগের এসব অপকর্মের সঙ্গে কলেজ প্রশাসনের কেউ কেউ জড়িত বলে অভিযোগ উঠছে।

তবে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, কলেজের গরির ও মেধাবী ছাত্রদের সুবিধার জন্য ছাত্রাবাস খোলা ছিল। যারা কিনা টিউশনি ও ছোটখাটো চাকরি করে তাদের পড়াশোনার খরচ যোগাচ্ছে। তবে কলেজের ছাত্রাবাস খোলা থাকলেও হোস্টেলের ক্যান্টিন বন্ধ ছিল।

ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই ছাত্রলীগ বেপোরোয়া : সুজন

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই সিলেটে ছাত্রলীগ বেপোরোয়া হয়ে ওঠেছে এবং একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেট।

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনিটর সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এর আগেও আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রবাস পুড়িয়ে দিয়েছে। টিলাগড় এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একের পর এক হত্যাকা- চালিয়েছে ছাত্রলীগ। কিন্তু এসবের একটিরও আজ পর্যন্ত বিচায় হয়নি। আসামিরা চিহ্নিত হয়নি। ফলে তারা দিন দিন বেপোরোয়া হয়ে ওঠেছে। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই আজকের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। কলেজ ছাত্রবাসে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেছে।

ফারুক মাহমুদ এই ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, পূর্বের ঘটনার মতো এ ঘটনাও যাতে ধামাচাপা পড়ে না যায়, আসামিরা রেহাই পেয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ধর্ষকদের অবশ্যই শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিব্রত আ’লীগ

সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণে বিব্রত আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে কলেজকে কলুষিত করা হয়েছে। ফলে এদের করো ছাড় নেই। ইতোমধ্যে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দলীয় হাইকমান্ড থেকে সিলেট আ’লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। নেতারা ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে প্রশাসনকে তাগিদ দিয়েছেন। এমনকি এদের গডফাদারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এমসি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, পৃথিবী জুড়ে সিলেটের এমসি কলেজের ঐতিহ্য রয়েছে। আজ তা ধ্বংসের পথে। এটা কোনভাবে কাম্য নয়। তিনি বলেন, ধর্ষণকরীদের কোন পরিচয় নেই। তাদের পরিচয় শুধু- তারা অপরাধী। এছাড়া এমন অপরাধীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন তাদের সম্পর্কেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে আমরা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অবগত করবো।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খাঁন বলেন, কেউ অপরাধ করলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এ ঘটনা খুবই জঘন্য এবং নিন্দনীয়। আমরা অপরাধীদের শাস্তি চাই। এ ঘটনায় কেউ যাতে পার না পায়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছি। সেই সঙ্গে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জানান, ঘটনাটি সত্যি লজ্জাজনক। এমন ঘটনায় আমরা বিব্রত। তিনি জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, এ ঘটনা আমাদের মারাত্মক ক্ষতির মুখে ফেলেছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।