এমসি কলেজে ১২৮ বছরের ইতিহাসে কলঙ্কিত ঘটনা

১২৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক কা-ে এমসি কলেজকে কলঙ্কিত করলো ছাত্রলীগ। ইতোপূর্বে দেশের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটির কিছু সংখ্যক ক্যাডার টেন্ডারবাজি, খুনখারাবি, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ করলেও শুক্রবার ধর্ষণের ঘটনায় গোটা সিলেটবাসী লজ্জিত ও মর্মাহত। এর আগে ২০১২ সালে ছাত্রাবাস আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় শিরোনাম হয়েছিল ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে থাকা এই প্রাচীনতম কলেজটি।

১৮৯২ সালে নগরের টিলাগড় এলাকায় ৬০০ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এমসি কলেজ। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম ঘরানার স্থাপত্যরীতির ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের জের ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষ। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর পুনর্নির্মিত ছাত্রাবাস উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে ছাত্রলীগই এককভাবে ছাত্রাবাসে আবাসিক ছাত্রদের বসবাস নিয়ন্ত্রণ করছে। যদিও এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই। সিলেটে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিও কেন্দ্র থেকে স্থগিত রয়েছে। তবে ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেই ঘটনার পর থেকে ৭ নম্বর ব্লকের কক্ষটি ‘ছাত্রলীগের’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রাবাস খোলার পর থেকে ওই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের একাধিক পক্ষের সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই দুই পক্ষে আধিপত্য বিস্তারে ছাত্রাবাসে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। তখন প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ রাখার পর ওই বছরের ২৯ জুলাই ছাত্রাবাস খোলা হয়। গত বছরের ৬ আগস্ট রাতে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের কয়েকটি কক্ষ ও নতুন ভবন দখল তৎপরতার মুখে সর্বশেষ ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে কলেজ বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাস খোলা ছিল।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদের দাবি, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল। তবে শুনেছি ছাত্রলীগ নেতারা সেখানে ছিল। এর বাইরে আর কিছু আমি জানি না’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অতীতে এমসি কলেজে অনেক সন্ত্রাসী কর্মকা- আমরা দেখেছি। কলেজের ঐতিহ্যবাহী ও সুপ্রাচীন হোস্টেল জ্বালিয়ে দেবার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটে গেলো। অতীতের সব ঘটনার বিচার হলে এমনটি হতো না।

তিনি বলেন, আগে এমসি কলেজ মেধাবীদের বাগান ছিল, এখন পরিণত হয়েছে খুনিদের অভয়ারণ্যে। অতীতে আমাদের মুরব্বীরা ছিলেন। তারা কোন ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক পরিদর্শন করে সেটি নিষ্পত্তি করে দিতেন। এখন আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৮ মহররম ১৪৪২, ০৯ আশ্বিন ১৪২৭

এমসি কলেজে ১২৮ বছরের ইতিহাসে কলঙ্কিত ঘটনা

প্রতিনিধি, সিলেট

১২৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক কা-ে এমসি কলেজকে কলঙ্কিত করলো ছাত্রলীগ। ইতোপূর্বে দেশের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটির কিছু সংখ্যক ক্যাডার টেন্ডারবাজি, খুনখারাবি, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ করলেও শুক্রবার ধর্ষণের ঘটনায় গোটা সিলেটবাসী লজ্জিত ও মর্মাহত। এর আগে ২০১২ সালে ছাত্রাবাস আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় শিরোনাম হয়েছিল ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে থাকা এই প্রাচীনতম কলেজটি।

১৮৯২ সালে নগরের টিলাগড় এলাকায় ৬০০ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এমসি কলেজ। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম ঘরানার স্থাপত্যরীতির ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের জের ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষ। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর পুনর্নির্মিত ছাত্রাবাস উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে ছাত্রলীগই এককভাবে ছাত্রাবাসে আবাসিক ছাত্রদের বসবাস নিয়ন্ত্রণ করছে। যদিও এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই। সিলেটে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিও কেন্দ্র থেকে স্থগিত রয়েছে। তবে ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেই ঘটনার পর থেকে ৭ নম্বর ব্লকের কক্ষটি ‘ছাত্রলীগের’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রাবাস খোলার পর থেকে ওই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের একাধিক পক্ষের সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই দুই পক্ষে আধিপত্য বিস্তারে ছাত্রাবাসে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। তখন প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ রাখার পর ওই বছরের ২৯ জুলাই ছাত্রাবাস খোলা হয়। গত বছরের ৬ আগস্ট রাতে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের কয়েকটি কক্ষ ও নতুন ভবন দখল তৎপরতার মুখে সর্বশেষ ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে কলেজ বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাস খোলা ছিল।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদের দাবি, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল। তবে শুনেছি ছাত্রলীগ নেতারা সেখানে ছিল। এর বাইরে আর কিছু আমি জানি না’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অতীতে এমসি কলেজে অনেক সন্ত্রাসী কর্মকা- আমরা দেখেছি। কলেজের ঐতিহ্যবাহী ও সুপ্রাচীন হোস্টেল জ্বালিয়ে দেবার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটে গেলো। অতীতের সব ঘটনার বিচার হলে এমনটি হতো না।

তিনি বলেন, আগে এমসি কলেজ মেধাবীদের বাগান ছিল, এখন পরিণত হয়েছে খুনিদের অভয়ারণ্যে। অতীতে আমাদের মুরব্বীরা ছিলেন। তারা কোন ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক পরিদর্শন করে সেটি নিষ্পত্তি করে দিতেন। এখন আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি।