করোনায় একদিনে

আরও ৩৬ জনের মৃত্যু শনাক্ত ১১০৬

দেশে করোনা সংক্রমণ কমলেও মৃত্যু বেড়েছে। করোনা আক্রান্তে দৈনিক কমবেশি ৩০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৬ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৫ ও নারী ১১ জন। ৩৬ জনের মধ্যে হাসপাতালে ৩৫ জন ও বা?ড়ি?তে একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ হাজার ১২৯ জনে। করোনা সংক্রমণের শুরুতে মানুষ করোনা সুরক্ষাসামগ্রী নিয়মিত মেনে চলতেন। এখন দৈনিক প্রায় ৩০ জনের মৃত্যু হলেও করোনা সুরক্ষাসামগ্রী পড়ছেন না অনেক মানুষ।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাসবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

করোনাভাইরাস শনাক্তে একদিনে ১০৪টি পরীক্ষাগারে ১০ হাজার ৬৮০টি নমুনা সংগ্রহ হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৭৬৫টি। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ১০৬ জন। ফলে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৩ জনে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭৫টি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৭৫৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৭ জন হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার হার ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭৫ দশমিক ১০ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৩ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৩৬ জনের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও নারী ১১ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিভাগে ২৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে আট জন, সিলেট বিভাগে দুইজন। এছাড়া খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে তিনজন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালেই মারা গেছেন ৩৫ জন, বাড়িতে একজন।

মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ২১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আট জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাত জন রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ২১৩ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৫৪ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন ৮০ হাজার ৪৯৮ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৬৪ হাজার ৬২৮ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৫ হাজার ৮৭০ জন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, দেশে যখন করোনা রোগী শনাক্ত হয় তখন এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উল্টোপথে চলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমেরিকায় যখন প্রথম করোনার নমুনা পরীক্ষায় করে তখন টাকা নির্ধারণ করে দেয় সেখানকার সরকার। কিন্তু যখন করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে তখন নমুনা পরীক্ষা ফ্রি করে দেয় আমেরিকার সরকার। আর আমাদের দেশে উল্টো ঘটনা ঘটেছে। করোনার নমুনা পরীক্ষায় ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে পরে অবশ্য যখন মানুষ নমুনা পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত হয় তখন ১০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার। এতে গত ছয় মাসে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। এখন যে নেয়া হচ্ছে সেটিও ফি বাতিল করতে হবে। সারাদেশে কতজন মানুষ করোনা সংক্রমিত সঠিক তথ্য আসছে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সারোয়ার আলী সংবাদকে বলেন, দেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু মানুষ কেন করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে আসছেন না, সেটি বের করতে হবে। যত বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে ততই মানুষের জন্য ভালো। প্রয়োজনে মানুষের কাছে গিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। যেসমস্ত দেশ করোনার থাবা থেকে রক্ষা পেয়েছে, তারা বেশি বেশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করেছে। আমাদের দেশে করোনা রোগী যে পরিসংখ্যান প্রকাশ হয়েছে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যানের পর করোনা নমুনা পরীক্ষায় খামখেয়ালি করলে ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিশ্বে মোট মৃতের সংখ্যা ৯ লাখ ৮৭ হাজার পেরিয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভারত ও পাকিস্তানে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে মোট মৃত্যু ৯৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, পাকিস্তানে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজারের বেশি মানুষের।

বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ২৪ লাখ ছাড়িয়েছে। আর সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ২৩ লাখ মানুষ। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৮তম অবস্থানে।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৮ মহররম ১৪৪২, ০৯ আশ্বিন ১৪২৭

করোনায় একদিনে

আরও ৩৬ জনের মৃত্যু শনাক্ত ১১০৬

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

দেশে করোনা সংক্রমণ কমলেও মৃত্যু বেড়েছে। করোনা আক্রান্তে দৈনিক কমবেশি ৩০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৬ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৫ ও নারী ১১ জন। ৩৬ জনের মধ্যে হাসপাতালে ৩৫ জন ও বা?ড়ি?তে একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ হাজার ১২৯ জনে। করোনা সংক্রমণের শুরুতে মানুষ করোনা সুরক্ষাসামগ্রী নিয়মিত মেনে চলতেন। এখন দৈনিক প্রায় ৩০ জনের মৃত্যু হলেও করোনা সুরক্ষাসামগ্রী পড়ছেন না অনেক মানুষ।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাসবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

করোনাভাইরাস শনাক্তে একদিনে ১০৪টি পরীক্ষাগারে ১০ হাজার ৬৮০টি নমুনা সংগ্রহ হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৭৬৫টি। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ১০৬ জন। ফলে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৩ জনে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭৫টি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৭৫৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৭ জন হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার হার ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭৫ দশমিক ১০ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৩ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৩৬ জনের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও নারী ১১ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিভাগে ২৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে আট জন, সিলেট বিভাগে দুইজন। এছাড়া খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে তিনজন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালেই মারা গেছেন ৩৫ জন, বাড়িতে একজন।

মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ২১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আট জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাত জন রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ২১৩ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৫৪ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন ৮০ হাজার ৪৯৮ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৬৪ হাজার ৬২৮ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৫ হাজার ৮৭০ জন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, দেশে যখন করোনা রোগী শনাক্ত হয় তখন এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উল্টোপথে চলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমেরিকায় যখন প্রথম করোনার নমুনা পরীক্ষায় করে তখন টাকা নির্ধারণ করে দেয় সেখানকার সরকার। কিন্তু যখন করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে তখন নমুনা পরীক্ষা ফ্রি করে দেয় আমেরিকার সরকার। আর আমাদের দেশে উল্টো ঘটনা ঘটেছে। করোনার নমুনা পরীক্ষায় ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে পরে অবশ্য যখন মানুষ নমুনা পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত হয় তখন ১০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার। এতে গত ছয় মাসে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। এখন যে নেয়া হচ্ছে সেটিও ফি বাতিল করতে হবে। সারাদেশে কতজন মানুষ করোনা সংক্রমিত সঠিক তথ্য আসছে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সারোয়ার আলী সংবাদকে বলেন, দেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু মানুষ কেন করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে আসছেন না, সেটি বের করতে হবে। যত বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে ততই মানুষের জন্য ভালো। প্রয়োজনে মানুষের কাছে গিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। যেসমস্ত দেশ করোনার থাবা থেকে রক্ষা পেয়েছে, তারা বেশি বেশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করেছে। আমাদের দেশে করোনা রোগী যে পরিসংখ্যান প্রকাশ হয়েছে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যানের পর করোনা নমুনা পরীক্ষায় খামখেয়ালি করলে ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিশ্বে মোট মৃতের সংখ্যা ৯ লাখ ৮৭ হাজার পেরিয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভারত ও পাকিস্তানে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে মোট মৃত্যু ৯৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, পাকিস্তানে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজারের বেশি মানুষের।

বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ২৪ লাখ ছাড়িয়েছে। আর সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ২৩ লাখ মানুষ। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৮তম অবস্থানে।