নতুন করে ওসিসহ বিভিন্ন পদে পদায়ন শুরু

বাবা সিন্ডিকেট বন্ধ হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে : হোটেল ব্যবসায়ী

কক্সবাজারে ক্লিনিক ইমেজের পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ও গতকাল থেকে জেলার বিভিন্ন থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মতকর্তা (ওসি) ও ইন্সপেক্টর তদন্তসহ অন্যান্য পদে কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। তাদের কাজে যোগদানের আগেই গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। জেলার সব ধরনের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর নতুন করে পদায়নকৃত পুলিশ কর্মকর্তারা যাতে জনস্বার্থকে প্রধান্য দেয় ও পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে কাজ করে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন এ জন্য তাদের গাইডলাইন দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, পর্যটন জেলা কক্সবাজারের টেকনাফে মাদকের মূল রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে। নতুন করে সমুদ্রপথে মাদক বহন করে আনা হয়। সরকার মাদককে না বলার জন্য জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরণ করে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে। ককক্সবাজারের টেকনাফ ও মেরিন ড্রাইভ সড়কসহ বিভিন্ন পথে প্রায় মাদক নিয়ে বন্দুকযুদ্ধ (ক্রসফায়ার) ঘটনা অহরহ ঘটছে। এরপরও নানাভাবে মাদক দেশে ঢুকছে। সর্বশেষ একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা ও ওসি প্রদীপ কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। খোদ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা ঘরে বাইরে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এরপর স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডিআইজি অফিস থেকে জেলার এসপি ও থানার ওসিসহ বিভিন্ন পদে প্রায় ১৩শর বেশি পুলিশ কর্মকতা ও সদস্যকে কক্সবাজার থেকে বদলি ও চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে অনত্র সরিয়ে দেয়া হয়। টার্গেট কক্সবাজারের পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও জনবান্ধব পুলিশ তৈরি করা। কিভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার বা আচরণ করা যায় তার গাইডলাইন দিয়ে নতুন করে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পদায়ন করা হচ্ছে। গতকাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ডিবি কর্মকর্তা, এসবি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদায়নের ইন্টারনাল প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে। এ প্রক্রিয়া কিছুদিন চলমান থাকবে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, জনস্বার্থ প্রধান্য দিয়ে নতুন করে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। কক্সবাজারের সব দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য যা করার দরকার সবই করা হবে। এখন ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। আশা পরিবর্তন অবশ্যই আসবে। সাধারণ মানুষ যাতে পুলিশের উপর আস্থা রাখে তার জন্য পুলিশকে জনমুখী হতে হবে এবং সেবার মান বাড়াতে হবে।

এদিকে গতকাল বিকেলে কক্সবাজার থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হত্যার পর পুলিশের উপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল। গণবদলির কারণে এখন পুলিশের উপর ক্ষোভ কিছুটা হলেও কমছে। নতুন করে ওসিরা যোগদান শুরু করেছেন। সামনে তাদের কার্যকলাপ থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না কি আবারও খারাপ হবে তা জানা যাবে। আর কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালী ক্রাইম জোন। সেখানে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে বেশি সমস্যা হয়। ইয়াবা বন্ধ ও মহেশখালীর অস্ত্র বন্ধ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

পুলিশের একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, কক্সবাজারে নতুন পদায়নের ফলে আপাতত দুর্নীতি কমবে। কারণ এখন ককক্সবাজারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনিটরিং জোরদার আছে। কেউ হঠাৎ করে গিয়ে অপকর্ম করতে সাহস পাবে না। আর নতুন করে যাদের পদায়ন করা হয়েছে তাদের রাস্তা চিনতেও সময় লাগবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগে কিছুটা সময় লাগবে। মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া আগের মতো হবে না। আগের মতো কেউ বেপরোয়া হয়ে অপকর্ম করবে না। করতে সময় লাগবে। ফলে সাধারণ মানুষ এ গণবদলিকে সমর্থন করেছে। তাদের মধ্যে পুলিশবিরোধী ক্ষোভ কিছুটা হলেও কমছে। এটা একটা ভালো লক্ষণ। যে সব পুলিশ আগে বিভিন্ন স্পট থেকে চাঁদাবাজি করতো। এখন নতুনরা তা করতে চিন্তা ভাবনা করবে।

কক্সবাজারের একজন হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, গণবদলির কারণে কক্সবাজারের পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বাবা সিন্ডিকেট (ইয়াবা) বন্ধ হবে। প্রশাসন চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি করতে হবে। একটি ইয়াবাও কক্সবাজারে ঢুকবে না ও ঢাকায় যাবে না। সবই সম্ভব। আর নতুনরা ইচ্ছা করলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। আর বদলিকৃতদের মধ্যে যারা ঘুরেফিরে কক্সবাজার ছিল তারা তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন মাদক স্পটে যেত। সুসম্পর্ক ছিল। তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতো বলে ব্যবসায়ীরা মন্তব্য করেন।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৮ মহররম ১৪৪২, ০৯ আশ্বিন ১৪২৭

কক্সবাজারে দুর্নীতি ঠেকাতে হার্ডলাইনে প্রশাসন

নতুন করে ওসিসহ বিভিন্ন পদে পদায়ন শুরু

বাবা সিন্ডিকেট বন্ধ হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে : হোটেল ব্যবসায়ী

বাকিবিল্লাহ |

কক্সবাজারে ক্লিনিক ইমেজের পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ও গতকাল থেকে জেলার বিভিন্ন থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মতকর্তা (ওসি) ও ইন্সপেক্টর তদন্তসহ অন্যান্য পদে কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। তাদের কাজে যোগদানের আগেই গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। জেলার সব ধরনের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর নতুন করে পদায়নকৃত পুলিশ কর্মকর্তারা যাতে জনস্বার্থকে প্রধান্য দেয় ও পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে কাজ করে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন এ জন্য তাদের গাইডলাইন দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, পর্যটন জেলা কক্সবাজারের টেকনাফে মাদকের মূল রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে। নতুন করে সমুদ্রপথে মাদক বহন করে আনা হয়। সরকার মাদককে না বলার জন্য জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরণ করে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে। ককক্সবাজারের টেকনাফ ও মেরিন ড্রাইভ সড়কসহ বিভিন্ন পথে প্রায় মাদক নিয়ে বন্দুকযুদ্ধ (ক্রসফায়ার) ঘটনা অহরহ ঘটছে। এরপরও নানাভাবে মাদক দেশে ঢুকছে। সর্বশেষ একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা ও ওসি প্রদীপ কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। খোদ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা ঘরে বাইরে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এরপর স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডিআইজি অফিস থেকে জেলার এসপি ও থানার ওসিসহ বিভিন্ন পদে প্রায় ১৩শর বেশি পুলিশ কর্মকতা ও সদস্যকে কক্সবাজার থেকে বদলি ও চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে অনত্র সরিয়ে দেয়া হয়। টার্গেট কক্সবাজারের পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও জনবান্ধব পুলিশ তৈরি করা। কিভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার বা আচরণ করা যায় তার গাইডলাইন দিয়ে নতুন করে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পদায়ন করা হচ্ছে। গতকাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ডিবি কর্মকর্তা, এসবি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদায়নের ইন্টারনাল প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে। এ প্রক্রিয়া কিছুদিন চলমান থাকবে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, জনস্বার্থ প্রধান্য দিয়ে নতুন করে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। কক্সবাজারের সব দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য যা করার দরকার সবই করা হবে। এখন ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। আশা পরিবর্তন অবশ্যই আসবে। সাধারণ মানুষ যাতে পুলিশের উপর আস্থা রাখে তার জন্য পুলিশকে জনমুখী হতে হবে এবং সেবার মান বাড়াতে হবে।

এদিকে গতকাল বিকেলে কক্সবাজার থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হত্যার পর পুলিশের উপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল। গণবদলির কারণে এখন পুলিশের উপর ক্ষোভ কিছুটা হলেও কমছে। নতুন করে ওসিরা যোগদান শুরু করেছেন। সামনে তাদের কার্যকলাপ থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না কি আবারও খারাপ হবে তা জানা যাবে। আর কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালী ক্রাইম জোন। সেখানে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে বেশি সমস্যা হয়। ইয়াবা বন্ধ ও মহেশখালীর অস্ত্র বন্ধ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

পুলিশের একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, কক্সবাজারে নতুন পদায়নের ফলে আপাতত দুর্নীতি কমবে। কারণ এখন ককক্সবাজারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনিটরিং জোরদার আছে। কেউ হঠাৎ করে গিয়ে অপকর্ম করতে সাহস পাবে না। আর নতুন করে যাদের পদায়ন করা হয়েছে তাদের রাস্তা চিনতেও সময় লাগবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগে কিছুটা সময় লাগবে। মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া আগের মতো হবে না। আগের মতো কেউ বেপরোয়া হয়ে অপকর্ম করবে না। করতে সময় লাগবে। ফলে সাধারণ মানুষ এ গণবদলিকে সমর্থন করেছে। তাদের মধ্যে পুলিশবিরোধী ক্ষোভ কিছুটা হলেও কমছে। এটা একটা ভালো লক্ষণ। যে সব পুলিশ আগে বিভিন্ন স্পট থেকে চাঁদাবাজি করতো। এখন নতুনরা তা করতে চিন্তা ভাবনা করবে।

কক্সবাজারের একজন হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, গণবদলির কারণে কক্সবাজারের পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বাবা সিন্ডিকেট (ইয়াবা) বন্ধ হবে। প্রশাসন চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি করতে হবে। একটি ইয়াবাও কক্সবাজারে ঢুকবে না ও ঢাকায় যাবে না। সবই সম্ভব। আর নতুনরা ইচ্ছা করলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। আর বদলিকৃতদের মধ্যে যারা ঘুরেফিরে কক্সবাজার ছিল তারা তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন মাদক স্পটে যেত। সুসম্পর্ক ছিল। তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতো বলে ব্যবসায়ীরা মন্তব্য করেন।