তুলে নিয়ে গণধর্ষণের পর তরুণীর আত্মহত্যা

থানা মামলা গ্রহণ না করায় ট্রাইব্যুনালে মামলা

নোয়াখালীর সুধারামের রামহরি তালুকে নানার বাড়ি থেকে তরুণীকে তুলে পার্শ্ববর্তী স্কুলে নিয়ে চার যুবক উপর্যুপরি ধর্ষণ করেছে। পরদিন লজ্জায় তরুণী দাদার বাড়ির একটি কক্ষে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ব্যাপারে থানা মামলা গ্রহণ না করায় ওই যুবতীর পিতা নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা করেন। মামলা নং ১৯৭/২০২০। মামলা করার পর থেকে প্রভাবশালীদের হুমকি-ধামকিতে আতঙ্কিত মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এখন ধর্ষকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ভিকটিমের পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

গতকাল ভিকটিমের পিতা আলমগীর নোয়াখালী প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন যে, তার মেয়ে আঁখি আলমগীর স্বর্নাকে বিগত আড়াই বছর আগে তার নিজ গ্রামের আমিনুল হকের পুত্র মঈনউদ্দীনের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের আগে থেকেই এলাকার আবুল কালাম কালার ছেলে মো. রাকিব, আবদুল মজিদের ছেলে মঈন, পরান ব্যাপারীর ছেলে রায়হান, বেল্লাল হোসেনের ছেলে জনিসহ কয়েকজন বখাটে প্রায় উত্ত্যাক্ত করত এবং বাজে প্রস্তাব দিত। এ অবস্থা দেখে সে আড়াই বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন।

গত ৯-৭-২০২০ তার স্ত্রীর সঙ্গে তার মেয়ে নানার বাড়ি হুগলির বেপারী বাড়িতে বেড়াতে যায়। ১১-৭-২০২০ ইং তারিখে সন্ধ্যা ৭.৩০টায় মেয়ে আঁখি আলমগীর ঘরের বাইরে গেলে আগ থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী স্কুলে নিয়ে যায় এবং তার হাত মুখ বেঁধে রাকিব, মঈন, রায়হান ও জনি উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তার মুখের বাঁধন খুলে গেলে সে জোরে চিৎকার করে। তখন স্থানীয় খলিফার হাট বাজারের চৌকিদার বেলাল টের পেয়ে স্কুলের দিকে টর্সলাইটের আলো ছড়িয়ে এগিয়ে গেলে ধর্ষকরা আঁখিকে ফেলে চলে যায়। তখন চৌকিদার তাকে উদ্ধার করে তার দাদার বাড়ি পৌঁছে দেয়। আঁখি চৌকিদার ও দাদার বাড়ির লোক জনদের জানায় ওই চারজন তার সর্বনাশ করেছে।

পরদিন লজ্জায় সে তার দাদার ঘরের একটি কক্ষের শিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি জড়িয়ে আত্মহত্যা করে।

আত্মহত্যার পরপরই সে থানায় তার মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যা অভিযোগে মামলা করতে এলে ডিউটি অফিসার তার মামলা গ্রহণ না করে থানায় টাইপ করা অপমৃত্য মামলার কাগজে সই করিয়ে নেন। এরপর কয়েকবার থানায় গেলে ও পুলিশ তার মামলা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় সে ২৭-৮-২০২০ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১ এ মামলা করলে আদালত পিবিআই নোয়াখালীকে মামলা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এরপর থেকে ৪ আসামি ও তাদের পরিবার পরিজন এবং দলীয় ক্যাডাররা তাকে ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছে এবং মামলা না তুললে তাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছে আর ধর্ষকরা প্রকাশ্যে ঘুরছে।

এ ব্যাপারে সুধারাম থানার ওসি নবির হোসেন বলেন, ভিকটিমের পিতা অপমৃত্য মামলা করার পর আর তার সঙ্গে দেখা করেনি বা কেন মামলা ও করেনি। এ ব্যাপারে কোর্টে মামলার খবর ও তিনি জানেন না। তবে তাকে বা তার পরিবার-পরিজনকে কেউ হুমকি দিলে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে আইন মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৮ মহররম ১৪৪২, ০৯ আশ্বিন ১৪২৭

সুধারামে

তুলে নিয়ে গণধর্ষণের পর তরুণীর আত্মহত্যা

থানা মামলা গ্রহণ না করায় ট্রাইব্যুনালে মামলা

প্রতিনিধি, নোয়াখালী

নোয়াখালীর সুধারামের রামহরি তালুকে নানার বাড়ি থেকে তরুণীকে তুলে পার্শ্ববর্তী স্কুলে নিয়ে চার যুবক উপর্যুপরি ধর্ষণ করেছে। পরদিন লজ্জায় তরুণী দাদার বাড়ির একটি কক্ষে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ব্যাপারে থানা মামলা গ্রহণ না করায় ওই যুবতীর পিতা নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা করেন। মামলা নং ১৯৭/২০২০। মামলা করার পর থেকে প্রভাবশালীদের হুমকি-ধামকিতে আতঙ্কিত মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এখন ধর্ষকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ভিকটিমের পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

গতকাল ভিকটিমের পিতা আলমগীর নোয়াখালী প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন যে, তার মেয়ে আঁখি আলমগীর স্বর্নাকে বিগত আড়াই বছর আগে তার নিজ গ্রামের আমিনুল হকের পুত্র মঈনউদ্দীনের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের আগে থেকেই এলাকার আবুল কালাম কালার ছেলে মো. রাকিব, আবদুল মজিদের ছেলে মঈন, পরান ব্যাপারীর ছেলে রায়হান, বেল্লাল হোসেনের ছেলে জনিসহ কয়েকজন বখাটে প্রায় উত্ত্যাক্ত করত এবং বাজে প্রস্তাব দিত। এ অবস্থা দেখে সে আড়াই বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন।

গত ৯-৭-২০২০ তার স্ত্রীর সঙ্গে তার মেয়ে নানার বাড়ি হুগলির বেপারী বাড়িতে বেড়াতে যায়। ১১-৭-২০২০ ইং তারিখে সন্ধ্যা ৭.৩০টায় মেয়ে আঁখি আলমগীর ঘরের বাইরে গেলে আগ থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী স্কুলে নিয়ে যায় এবং তার হাত মুখ বেঁধে রাকিব, মঈন, রায়হান ও জনি উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তার মুখের বাঁধন খুলে গেলে সে জোরে চিৎকার করে। তখন স্থানীয় খলিফার হাট বাজারের চৌকিদার বেলাল টের পেয়ে স্কুলের দিকে টর্সলাইটের আলো ছড়িয়ে এগিয়ে গেলে ধর্ষকরা আঁখিকে ফেলে চলে যায়। তখন চৌকিদার তাকে উদ্ধার করে তার দাদার বাড়ি পৌঁছে দেয়। আঁখি চৌকিদার ও দাদার বাড়ির লোক জনদের জানায় ওই চারজন তার সর্বনাশ করেছে।

পরদিন লজ্জায় সে তার দাদার ঘরের একটি কক্ষের শিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি জড়িয়ে আত্মহত্যা করে।

আত্মহত্যার পরপরই সে থানায় তার মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যা অভিযোগে মামলা করতে এলে ডিউটি অফিসার তার মামলা গ্রহণ না করে থানায় টাইপ করা অপমৃত্য মামলার কাগজে সই করিয়ে নেন। এরপর কয়েকবার থানায় গেলে ও পুলিশ তার মামলা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় সে ২৭-৮-২০২০ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১ এ মামলা করলে আদালত পিবিআই নোয়াখালীকে মামলা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এরপর থেকে ৪ আসামি ও তাদের পরিবার পরিজন এবং দলীয় ক্যাডাররা তাকে ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছে এবং মামলা না তুললে তাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছে আর ধর্ষকরা প্রকাশ্যে ঘুরছে।

এ ব্যাপারে সুধারাম থানার ওসি নবির হোসেন বলেন, ভিকটিমের পিতা অপমৃত্য মামলা করার পর আর তার সঙ্গে দেখা করেনি বা কেন মামলা ও করেনি। এ ব্যাপারে কোর্টে মামলার খবর ও তিনি জানেন না। তবে তাকে বা তার পরিবার-পরিজনকে কেউ হুমকি দিলে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে আইন মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে।