ছোট উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দিচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও

হতাশ বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বড় উদ্যোক্তাদের যতটা গুরুত্ব দিচ্ছে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না ছোট উদ্যোক্তাদের প্রতি। করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বড় শিল্প খাতের জন্য ৩৩ হাজার কোটি টাকা ও ছোট শিল্প খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এই প্রণোদনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। কিন্তু বড় শিল্পের জন্য ঘোষিত প্যাকেজের ৬৭ শতাংশ অর্থ ছাড় দিলেও ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে ছাড় করেছে মাত্র ৩ শতাংশ। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য দেখা গেছে।

জানা যায়, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত ৩৩ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১০১ কোটি টাকা। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এ প্যাকেজের ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে বড়দের এ প্যাকেজে লক্ষ্যমাত্রার ৬৬ দশমিক ৮৯ শতাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে। বিপরীতে এ ব্যাংকগুলো কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য বরাদ্দকৃত প্যাকেজের মাত্র ৩ শতাংশ অর্থ বিতরণ করতে পেরেছে। সিএমএসএমই খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এ অর্জনে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

করোনাভাইরাস সৃষ্ট আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা আয়োজন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় ভার্চুয়ালের মাধ্যমে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ও দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানান, সরকার ঘোষিত ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে আটটি প্যাকেজের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি যুক্ত। এই আটটি প্যাকেজের আওতায় ৮৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বিতরণ হওয়ার কথা। এরমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৩৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজের মধ্যে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এ খাতে সোনালী ব্যাংকের অর্জন ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি এরই মধ্যে ৪৫৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক ৬৮২ কোটি টাকা (৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ), রূপালী ব্যাংক ৩০৩ কোটি টাকা (৩৭ দশমিক ১৩ শতাংশ) ও বেসিক ব্যাংক ৩৪ কোটি টাকা (৩২ শতাংশ) বিতরণ করেছে।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, বড় শিল্পের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকলেও সিএমএসএমই খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অর্জন হতাশাব্যঞ্জক। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ব্যাংকগুলো এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩ শতাংশ অর্থ বিতরণ করতে পেরেছে। সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা বক্তব্য রাখেন। প্রত্যেকে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে নিজ ব্যাংকের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন।

সভাপতির বক্তব্যে সিএমএসএমই খাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নির্দেশ দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তবে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে অর্থনীতির স্বার্থে এ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি। সিএমএসএমই খাতের গ্রাহকদের চিহ্নিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইডি কার্ডভিত্তিক একটি তথ্যভা-ার তৈরির নির্দেশনা দেন আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য খারাপ গ্রাহকদের চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে জোর দিতে হবে। এছাড়া ঋণ ব্যবস্থাপনায় জামানত/মর্টগেজের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা নির্দিষ্ট করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৯ মহররম ১৪৪২, ১০ আশ্বিন ১৪২৭

ছোট উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দিচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও

হতাশ বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বড় উদ্যোক্তাদের যতটা গুরুত্ব দিচ্ছে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না ছোট উদ্যোক্তাদের প্রতি। করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বড় শিল্প খাতের জন্য ৩৩ হাজার কোটি টাকা ও ছোট শিল্প খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এই প্রণোদনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। কিন্তু বড় শিল্পের জন্য ঘোষিত প্যাকেজের ৬৭ শতাংশ অর্থ ছাড় দিলেও ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে ছাড় করেছে মাত্র ৩ শতাংশ। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য দেখা গেছে।

জানা যায়, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত ৩৩ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১০১ কোটি টাকা। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এ প্যাকেজের ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে বড়দের এ প্যাকেজে লক্ষ্যমাত্রার ৬৬ দশমিক ৮৯ শতাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে। বিপরীতে এ ব্যাংকগুলো কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য বরাদ্দকৃত প্যাকেজের মাত্র ৩ শতাংশ অর্থ বিতরণ করতে পেরেছে। সিএমএসএমই খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এ অর্জনে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

করোনাভাইরাস সৃষ্ট আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা আয়োজন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় ভার্চুয়ালের মাধ্যমে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ও দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানান, সরকার ঘোষিত ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে আটটি প্যাকেজের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি যুক্ত। এই আটটি প্যাকেজের আওতায় ৮৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বিতরণ হওয়ার কথা। এরমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৩৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজের মধ্যে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এ খাতে সোনালী ব্যাংকের অর্জন ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি এরই মধ্যে ৪৫৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক ৬৮২ কোটি টাকা (৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ), রূপালী ব্যাংক ৩০৩ কোটি টাকা (৩৭ দশমিক ১৩ শতাংশ) ও বেসিক ব্যাংক ৩৪ কোটি টাকা (৩২ শতাংশ) বিতরণ করেছে।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, বড় শিল্পের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকলেও সিএমএসএমই খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অর্জন হতাশাব্যঞ্জক। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ব্যাংকগুলো এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩ শতাংশ অর্থ বিতরণ করতে পেরেছে। সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা বক্তব্য রাখেন। প্রত্যেকে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে নিজ ব্যাংকের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন।

সভাপতির বক্তব্যে সিএমএসএমই খাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নির্দেশ দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তবে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে অর্থনীতির স্বার্থে এ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি। সিএমএসএমই খাতের গ্রাহকদের চিহ্নিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইডি কার্ডভিত্তিক একটি তথ্যভা-ার তৈরির নির্দেশনা দেন আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য খারাপ গ্রাহকদের চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে জোর দিতে হবে। এছাড়া ঋণ ব্যবস্থাপনায় জামানত/মর্টগেজের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা নির্দিষ্ট করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।