এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ

ভারতে পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরা পড়ে সাইফুর ও অর্জুন

বাকি চারজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে

সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীর কাছ থেকে তুলে নিয়ে তরুণী গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি সাইফুরসহ ছাত্রলীগের দুই ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা দু’জনই সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এদের মধ্যে সাইফুরকে সুনামগঞ্জের ছাতক ও অর্জুন লস্করকে হবিগঞ্জের মাধাবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনার পর শুধু মহানগর পুলিশই নয়, সিলেট রেঞ্জের প্রতিটি জেলার পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক টিম ছাত্রলীগের এই ধর্ষকদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে। তবে বার বার স্থান পরিবর্তন করায় কিছুটা বিলম্ব হলেও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দুই ক্যাডারকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্ত বাকি চারজনকেও গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে, ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার প্রতিবাদে ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছ। এমনকি নিজ দল ছাত্রলীগই মানববন্ধন করে এর বিচার দাবি করে। সেইসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ পদত্যাগ দাবি করেছে কলেজটির অধ্যক্ষ ও তত্ত্বাবধায়কের। অন্যদিকে আদালতে ঘটনার জবানবন্দি দিয়েছেন ধর্ষিতা গৃহবধূ। তবে গ্রেফতারকৃত দু’জনকে রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত আদালতে তোলা হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, তাদের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।

সূত্র জানায়, ধর্ষণের এ ঘটনার পর পরই মহানগর পুলিশ ছাড়াও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদের নির্দেশে বিভাগের চারটি জেলার পুলিশও তৎপর হয়ে ওঠে। নজর বৃদ্ধি করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তির সহায়তায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্তে সাইফুরের অবস্থান নিশ্চিত করে পুলিশ। রোববার ভোর ৬টার দিকে সে ছাতক নোয়ারাই এলাকায় সুরমা নদীর খেয়াঘাটে যায়। পরে সেখানে যান ছাতক সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বিল্লাল হোসেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ছবিতে সাইফুরের দাঁড়ি ছিল। কিন্তু সে দাঁড়ি কেটে মুখে মাস্ক লাগিয়ে খেয়াঘাটে যায়। পরনে ছিল টি-শার্ট ও প্যান্ট। ভোরে সীমান্ত এলাকায় পৌঁছায়। এর আগ থেকেই ছাতক থানার এসআই হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সুরমা নদীর খেয়াঘাট এলাকায় নজরদারি করছিল। সাইফুরকে ভোর ছয়টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা খেয়াঘাট পার হয়ে অপেক্ষা করতে দেখে তাদের সন্দেহ হয়। তার কাছে যেতেই বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সাইফুরের ছবির সঙ্গে তার মিল পাওয়া যায়। তখন তাকে নাম জিজ্ঞেস করলে সে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাকে আটক করে থানায় নেয়া হয়। থানায় তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, প্রযুক্তির সহায়তায় সীমান্ত এলাকার দিকে আসামি সাইফুর রহমানের অবস্থান নিশ্চিতের পরই একটি পুলিশ দল নোয়ারাই খেয়াঘাট থেকে তাকে গ্রফতার করে। গ্রেফতারকৃত সাইফুর রহমান সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সোনাপুরের চান্দাইপাড়ার মো. তাহিদ মিয়ার ছেলে। ধর্ষণ ঘটনার পর ছাত্রাবাসে তার কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার মামলার আসামিও সে। মামলার এজাহারে তার বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ‘ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো’। ছাত্রাবাসে ২০৫ নম্বর কক্ষটি দখল করে থাকতো সাইফুর।

এদিকে একইদিন ভোর ৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মনতলা নামক এলাকায় মামলার চার নম্বর আসামি ক্যাডার অর্জুন সরকারকে গ্রেফতার করে সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সে ওই সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিল বলে পুলিশ জানায়।

হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম দস্তগির জানান, উপজেলার সীমান্তবর্তী মনতলা এলাকার দূর্লভপুর গ্রাম থেকে সিলেটের একদল ডিবি পুলিশ অর্জুনকে গ্রেফতার করে। এরপরই তাকে সিলেট নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে সাইফুর ও অর্জুনকে ছাতক ও মাধবপুর থেকে কড়া পাহারায় সিলেটে নেয়ার পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিল বলে জানা গেছে। মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন, তাদের রোববার আদালতে তোলা হয়নি।

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৯ মহররম ১৪৪২, ১০ আশ্বিন ১৪২৭

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ

ভারতে পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরা পড়ে সাইফুর ও অর্জুন

বাকি চারজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে

বিশেষ প্রতিনিধি

image

সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীর কাছ থেকে তুলে নিয়ে তরুণী গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি সাইফুরসহ ছাত্রলীগের দুই ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা দু’জনই সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এদের মধ্যে সাইফুরকে সুনামগঞ্জের ছাতক ও অর্জুন লস্করকে হবিগঞ্জের মাধাবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনার পর শুধু মহানগর পুলিশই নয়, সিলেট রেঞ্জের প্রতিটি জেলার পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক টিম ছাত্রলীগের এই ধর্ষকদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে। তবে বার বার স্থান পরিবর্তন করায় কিছুটা বিলম্ব হলেও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দুই ক্যাডারকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্ত বাকি চারজনকেও গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে, ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার প্রতিবাদে ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছ। এমনকি নিজ দল ছাত্রলীগই মানববন্ধন করে এর বিচার দাবি করে। সেইসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ পদত্যাগ দাবি করেছে কলেজটির অধ্যক্ষ ও তত্ত্বাবধায়কের। অন্যদিকে আদালতে ঘটনার জবানবন্দি দিয়েছেন ধর্ষিতা গৃহবধূ। তবে গ্রেফতারকৃত দু’জনকে রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত আদালতে তোলা হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, তাদের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।

সূত্র জানায়, ধর্ষণের এ ঘটনার পর পরই মহানগর পুলিশ ছাড়াও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদের নির্দেশে বিভাগের চারটি জেলার পুলিশও তৎপর হয়ে ওঠে। নজর বৃদ্ধি করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তির সহায়তায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্তে সাইফুরের অবস্থান নিশ্চিত করে পুলিশ। রোববার ভোর ৬টার দিকে সে ছাতক নোয়ারাই এলাকায় সুরমা নদীর খেয়াঘাটে যায়। পরে সেখানে যান ছাতক সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বিল্লাল হোসেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ছবিতে সাইফুরের দাঁড়ি ছিল। কিন্তু সে দাঁড়ি কেটে মুখে মাস্ক লাগিয়ে খেয়াঘাটে যায়। পরনে ছিল টি-শার্ট ও প্যান্ট। ভোরে সীমান্ত এলাকায় পৌঁছায়। এর আগ থেকেই ছাতক থানার এসআই হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সুরমা নদীর খেয়াঘাট এলাকায় নজরদারি করছিল। সাইফুরকে ভোর ছয়টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা খেয়াঘাট পার হয়ে অপেক্ষা করতে দেখে তাদের সন্দেহ হয়। তার কাছে যেতেই বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সাইফুরের ছবির সঙ্গে তার মিল পাওয়া যায়। তখন তাকে নাম জিজ্ঞেস করলে সে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাকে আটক করে থানায় নেয়া হয়। থানায় তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, প্রযুক্তির সহায়তায় সীমান্ত এলাকার দিকে আসামি সাইফুর রহমানের অবস্থান নিশ্চিতের পরই একটি পুলিশ দল নোয়ারাই খেয়াঘাট থেকে তাকে গ্রফতার করে। গ্রেফতারকৃত সাইফুর রহমান সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সোনাপুরের চান্দাইপাড়ার মো. তাহিদ মিয়ার ছেলে। ধর্ষণ ঘটনার পর ছাত্রাবাসে তার কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার মামলার আসামিও সে। মামলার এজাহারে তার বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ‘ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো’। ছাত্রাবাসে ২০৫ নম্বর কক্ষটি দখল করে থাকতো সাইফুর।

এদিকে একইদিন ভোর ৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মনতলা নামক এলাকায় মামলার চার নম্বর আসামি ক্যাডার অর্জুন সরকারকে গ্রেফতার করে সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সে ওই সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিল বলে পুলিশ জানায়।

হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম দস্তগির জানান, উপজেলার সীমান্তবর্তী মনতলা এলাকার দূর্লভপুর গ্রাম থেকে সিলেটের একদল ডিবি পুলিশ অর্জুনকে গ্রেফতার করে। এরপরই তাকে সিলেট নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে সাইফুর ও অর্জুনকে ছাতক ও মাধবপুর থেকে কড়া পাহারায় সিলেটে নেয়ার পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিল বলে জানা গেছে। মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন, তাদের রোববার আদালতে তোলা হয়নি।