বাংলাদেশের পানি প্রবাহের ৯২ শতাংশের উৎস হিমালয়

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যত পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়ে সাগরে পড়ে তার ৯২ শতাংশই হিমালয় সৃষ্ট নদীগুলো থেকে আসা বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, বাকি ৮ শতাংশ পানি অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাতের ফলে আসে। এই হিসাব থেকেই বোঝা যায় আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর পানির হিস্যা সঠিকভাবে নিরূপণ করা এবং নদীকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পানির উৎসগুলো সমন্বয় করতে হবে। নদীগুলোর ভারতের অংশ এবং বাংলাদেশের অংশ সচল রাখতে হবে। নদী ভাঙন, তলদেশে পলি জমা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি নদীর বৈরী আচরণ এবং নদী খননের সময় পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নদী ভাঙনের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যাসহ সঠিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এগিয়ে এলেও আমলাতন্ত্র বাধা তৈরি করে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বিশ^ নদী দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল ওয়ার্কার্স পার্টির অনলাইনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ আন্তঃদেশীয় নদী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান খলীকুজ্জমান।

ড. খলীকুজ্জমান বলেন, নদীর আরেক বড় সমস্যা হচ্ছে- এগুলো দখল করে অবকাঠামো গড়ে তোলা, যার ফলশ্রুতিতে নদীর মৃত্যু ঘটে। নদী দখলকারীরা আমাদের বেশ পরিচিতজন। সরকারি হিসাবে ৪২ হাজার ৪৫৩ জন নদী দখলকারীর তালিকা পাওয়া গেছে। এর ফলে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্র একধাপ এগিয়ে গেছে। এখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা বা কতটুকু নেওয়া হবে সেটাই ভাবনার বিষয়। আন্তর্জাতিক নদীগুলো ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক হলেও সেগুলো বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এগিয়ে আসলেও ভারতের ব্যুরেক্র্যাসি অদ্ভূতভাবে এই ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৩ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আসার পর তিস্তা নিয়ে সমঝোতা চুক্তি হল। পরে আবার নেপালে নদী নিয়ে আঞ্চলিক সামিটে ভারতের একজন প্রভাবশালী আমলা আমাকে বললেন মনোমহনের সফরে কী চুক্তি হয়েছি সেটা আমরা জানি না, সেই বিষয়টি বিবেচনায়ও নেওয়া যাচ্ছে না। গবেষণার ক্ষেত্রে নদীর নাম নিয়েও তারা ঝামেলা করে। তিস্তা বানান করতে টি এর পরে দুটো ই যুক্ত করা হবে নাকি আই যুক্ত করা হবে সেটা নিয়েও তারা ঝামেলা করে। দ্বিপক্ষীয় নদীগুলোর বিষয়ে এভাবেই সমঝোতা বাধাগ্রস্ত হয়।’

ভৌগোলিকভাবে ভাটি অঞ্চলে থাকা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে শত শত নদী ও শাখা নদী বঙ্গোপসাগরের দিকে গড়িয়ে গেছে তার অধিকাংশই হিমালয় থেকে উৎপত্তি হওয়ার পর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত হয়ে নেমেছে। সে কারণে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়েই থাকে গঙ্গা নদীর পানিচুক্তি, তিস্তার পানিবন্টন কিংবা ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর নির্মিত ব্যারেজগুলো নিয়ে। সম্প্রতি তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের খনন ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রকল্পে অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে চীন এগিয়ে আসার পর ভারতের বিভিন্ন মহলে এনিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৯ মহররম ১৪৪২, ১০ আশ্বিন ১৪২৭

বিশ্ব নদী দিবসের আলোচনা সভা

বাংলাদেশের পানি প্রবাহের ৯২ শতাংশের উৎস হিমালয়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যত পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়ে সাগরে পড়ে তার ৯২ শতাংশই হিমালয় সৃষ্ট নদীগুলো থেকে আসা বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, বাকি ৮ শতাংশ পানি অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাতের ফলে আসে। এই হিসাব থেকেই বোঝা যায় আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর পানির হিস্যা সঠিকভাবে নিরূপণ করা এবং নদীকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পানির উৎসগুলো সমন্বয় করতে হবে। নদীগুলোর ভারতের অংশ এবং বাংলাদেশের অংশ সচল রাখতে হবে। নদী ভাঙন, তলদেশে পলি জমা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি নদীর বৈরী আচরণ এবং নদী খননের সময় পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নদী ভাঙনের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যাসহ সঠিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এগিয়ে এলেও আমলাতন্ত্র বাধা তৈরি করে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বিশ^ নদী দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল ওয়ার্কার্স পার্টির অনলাইনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ আন্তঃদেশীয় নদী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান খলীকুজ্জমান।

ড. খলীকুজ্জমান বলেন, নদীর আরেক বড় সমস্যা হচ্ছে- এগুলো দখল করে অবকাঠামো গড়ে তোলা, যার ফলশ্রুতিতে নদীর মৃত্যু ঘটে। নদী দখলকারীরা আমাদের বেশ পরিচিতজন। সরকারি হিসাবে ৪২ হাজার ৪৫৩ জন নদী দখলকারীর তালিকা পাওয়া গেছে। এর ফলে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্র একধাপ এগিয়ে গেছে। এখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা বা কতটুকু নেওয়া হবে সেটাই ভাবনার বিষয়। আন্তর্জাতিক নদীগুলো ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক হলেও সেগুলো বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এগিয়ে আসলেও ভারতের ব্যুরেক্র্যাসি অদ্ভূতভাবে এই ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৩ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আসার পর তিস্তা নিয়ে সমঝোতা চুক্তি হল। পরে আবার নেপালে নদী নিয়ে আঞ্চলিক সামিটে ভারতের একজন প্রভাবশালী আমলা আমাকে বললেন মনোমহনের সফরে কী চুক্তি হয়েছি সেটা আমরা জানি না, সেই বিষয়টি বিবেচনায়ও নেওয়া যাচ্ছে না। গবেষণার ক্ষেত্রে নদীর নাম নিয়েও তারা ঝামেলা করে। তিস্তা বানান করতে টি এর পরে দুটো ই যুক্ত করা হবে নাকি আই যুক্ত করা হবে সেটা নিয়েও তারা ঝামেলা করে। দ্বিপক্ষীয় নদীগুলোর বিষয়ে এভাবেই সমঝোতা বাধাগ্রস্ত হয়।’

ভৌগোলিকভাবে ভাটি অঞ্চলে থাকা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে শত শত নদী ও শাখা নদী বঙ্গোপসাগরের দিকে গড়িয়ে গেছে তার অধিকাংশই হিমালয় থেকে উৎপত্তি হওয়ার পর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত হয়ে নেমেছে। সে কারণে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়েই থাকে গঙ্গা নদীর পানিচুক্তি, তিস্তার পানিবন্টন কিংবা ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর নির্মিত ব্যারেজগুলো নিয়ে। সম্প্রতি তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের খনন ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রকল্পে অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে চীন এগিয়ে আসার পর ভারতের বিভিন্ন মহলে এনিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।