যশোরের ১৯৩ মিল মালিকের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে

গত বোরো মৌসুমে সরকারের সাথে চুক্তি করার পরও চাল না দেওয়া যশোরের একশ’ ৯৩ মিল মালিকের লাইসেন্স স্থগিত হতে পারে। তাদের তালিকা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

যশোরে বোরো মৌসুমে ২৭ হাজার তিনশ’ ১২ মেট্রিকটন চাল দিবে বলে চুক্তি করেন তিনশ’ ৬১ জন রাইচমিল মালিক। অথচ ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দিয়েছে মাত্র ১৫ হাজার একশ’ পাঁচ মেট্রিকটন। এসব রাইচমিল মালিকের মধ্যে ৮১ জন মিলার একেবারেই চাল দেননি। আংশিক চাল দিয়েছেন একশ’ ১১ জন। আর সম্পূর্ণ চাল দিয়েছেন একশ’ ৪৫ জন মিল মালিক।

২৪ জন অটো মিল মালিকের মধ্যে একজন একেবারেই চাল দেননি। ১৩ জন মিলার আংশিক দিয়েছেন। আর চুক্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ চাল দিয়েছের ১০ জন অটো রাইচমিল মালিক। বাজারে ধানের দাম বেশির কথা বলে সুবিধাবাদী রাইচমিল মালিকরা সরকারকে ‘একহাত’ দেখে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা খোলা বাজারে চাল বিক্রি করে অধিকমাত্রায় লাভবান হয়েছেন। গত বছর এসব মিল মালিক কেজিতে সর্বোচ্চ নয় টাকা পর্যন্ত লাভ করেছিলেন বলে খাদ্য ও কৃষি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

চুক্তিভঙ্গ করা রাইচমিল মালিকরা মনে করেছে তারা চুক্তিভঙ্গ করলেও কিছুই হবে না! পার পেয়ে যাবেন অবলীলায়। কিন্তু সেই সুযোগ চুক্তিভঙ্গকারীরা পাবেন না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, যশোরে কোন মিলার কী পরিমাণ চাল দিয়েছেন সেই তালিকা চেয়ে পাঠায় খাদ্য অধিদপ্তর। নির্দিষ্ট ছকে তথ্য চাওয়া হয় অধিদপ্তর থেকে। সেই অনুযায়ী, মিলারদের তথ্য পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যারা চুক্তি করার পরও কোনো চাল দেয়নি তাদের মিলের লাইসেন্স স্থগিত করা হতে পারে। লাইসেন্স স্থগিত হওয়ার তালিকায় আংশিক চাল প্রদানকারী রাইচমিল মালিকরাও পড়তে পারে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। এ বছর বোরো মৌসুমে যশোরে ১০ লাখ ৩০ হাজার সাতশ’ ৬৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। আর চাল উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ ৮০ হাজার তিনশ’ ছয় মেট্রিকটন। অথচ খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহের চিত্র হতাশাজনক। দাম বৃদ্ধির অজুহাতে একশ’ ৯৩ জন মিলার চুক্তি অনুযায়ী চাল দেননি। এ কারণে ২৭ হাজার তিনশ’ ১২ মেট্রিকটনের জায়গায় সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার একশ’ পাঁচ মেট্রিকটন চাল।

বোরো মৌসুমে চাল দেওয়ার জন্যে যশোরে তিনশ’ ৬১ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হন। তারা ২৭ হাজার তিনশ’ ১২ মেট্রিকটন চাল দিবেন বলে চুক্তি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তির প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন মিলাররা। ধানের দাম বেশি উল্লেখ করে পুরোপুরি চাল দেননি অধিকাংশ মিলার। অথচ চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেক মিলারের চাল দেওয়া বাধ্যতামূলক। যশোরে এ বছর ২৪ টি অটো রাইচমিল এবং তিনশ’ ৩৭ টি হাসকিং মিল মালিক চাল দিবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হন। যশোর সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের কাছে সংগ্রহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোরো মৌসুমে তার গুদামে তিন হাজার আটশ’ ৫৮ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল ও ছয়শ’ ৭৩ মেট্রিকটন আতপ চাল কেনা হয়েছে। সংগ্রহ নিয়ে খুশি তিনি। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, ধানের দাম বেশির কথা বলে চুক্তিবদ্ধ মিলারদের অনেকেই পুরোপুরি চাল দেননি। এমনকি ৮১ জন মিলার কোনো চাল দেননি বলে জানান তিনি। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দু’জন মিলারের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে চাল দেওয়ার জন্যে অনুনয় বিনয় করা হয়। কিন্তু কোনো কথা শোনেননি। চুক্তিভঙ্গ করা মিলারদের তালিকা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মি. রহমান।

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৯ মহররম ১৪৪২, ১০ আশ্বিন ১৪২৭

সরকারের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ

যশোরের ১৯৩ মিল মালিকের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে

যশোর অফিস

গত বোরো মৌসুমে সরকারের সাথে চুক্তি করার পরও চাল না দেওয়া যশোরের একশ’ ৯৩ মিল মালিকের লাইসেন্স স্থগিত হতে পারে। তাদের তালিকা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

যশোরে বোরো মৌসুমে ২৭ হাজার তিনশ’ ১২ মেট্রিকটন চাল দিবে বলে চুক্তি করেন তিনশ’ ৬১ জন রাইচমিল মালিক। অথচ ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দিয়েছে মাত্র ১৫ হাজার একশ’ পাঁচ মেট্রিকটন। এসব রাইচমিল মালিকের মধ্যে ৮১ জন মিলার একেবারেই চাল দেননি। আংশিক চাল দিয়েছেন একশ’ ১১ জন। আর সম্পূর্ণ চাল দিয়েছেন একশ’ ৪৫ জন মিল মালিক।

২৪ জন অটো মিল মালিকের মধ্যে একজন একেবারেই চাল দেননি। ১৩ জন মিলার আংশিক দিয়েছেন। আর চুক্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ চাল দিয়েছের ১০ জন অটো রাইচমিল মালিক। বাজারে ধানের দাম বেশির কথা বলে সুবিধাবাদী রাইচমিল মালিকরা সরকারকে ‘একহাত’ দেখে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা খোলা বাজারে চাল বিক্রি করে অধিকমাত্রায় লাভবান হয়েছেন। গত বছর এসব মিল মালিক কেজিতে সর্বোচ্চ নয় টাকা পর্যন্ত লাভ করেছিলেন বলে খাদ্য ও কৃষি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

চুক্তিভঙ্গ করা রাইচমিল মালিকরা মনে করেছে তারা চুক্তিভঙ্গ করলেও কিছুই হবে না! পার পেয়ে যাবেন অবলীলায়। কিন্তু সেই সুযোগ চুক্তিভঙ্গকারীরা পাবেন না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, যশোরে কোন মিলার কী পরিমাণ চাল দিয়েছেন সেই তালিকা চেয়ে পাঠায় খাদ্য অধিদপ্তর। নির্দিষ্ট ছকে তথ্য চাওয়া হয় অধিদপ্তর থেকে। সেই অনুযায়ী, মিলারদের তথ্য পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যারা চুক্তি করার পরও কোনো চাল দেয়নি তাদের মিলের লাইসেন্স স্থগিত করা হতে পারে। লাইসেন্স স্থগিত হওয়ার তালিকায় আংশিক চাল প্রদানকারী রাইচমিল মালিকরাও পড়তে পারে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। এ বছর বোরো মৌসুমে যশোরে ১০ লাখ ৩০ হাজার সাতশ’ ৬৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। আর চাল উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ ৮০ হাজার তিনশ’ ছয় মেট্রিকটন। অথচ খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহের চিত্র হতাশাজনক। দাম বৃদ্ধির অজুহাতে একশ’ ৯৩ জন মিলার চুক্তি অনুযায়ী চাল দেননি। এ কারণে ২৭ হাজার তিনশ’ ১২ মেট্রিকটনের জায়গায় সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার একশ’ পাঁচ মেট্রিকটন চাল।

বোরো মৌসুমে চাল দেওয়ার জন্যে যশোরে তিনশ’ ৬১ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হন। তারা ২৭ হাজার তিনশ’ ১২ মেট্রিকটন চাল দিবেন বলে চুক্তি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তির প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন মিলাররা। ধানের দাম বেশি উল্লেখ করে পুরোপুরি চাল দেননি অধিকাংশ মিলার। অথচ চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেক মিলারের চাল দেওয়া বাধ্যতামূলক। যশোরে এ বছর ২৪ টি অটো রাইচমিল এবং তিনশ’ ৩৭ টি হাসকিং মিল মালিক চাল দিবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হন। যশোর সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের কাছে সংগ্রহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোরো মৌসুমে তার গুদামে তিন হাজার আটশ’ ৫৮ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল ও ছয়শ’ ৭৩ মেট্রিকটন আতপ চাল কেনা হয়েছে। সংগ্রহ নিয়ে খুশি তিনি। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, ধানের দাম বেশির কথা বলে চুক্তিবদ্ধ মিলারদের অনেকেই পুরোপুরি চাল দেননি। এমনকি ৮১ জন মিলার কোনো চাল দেননি বলে জানান তিনি। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দু’জন মিলারের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে চাল দেওয়ার জন্যে অনুনয় বিনয় করা হয়। কিন্তু কোনো কথা শোনেননি। চুক্তিভঙ্গ করা মিলারদের তালিকা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মি. রহমান।