জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

শেখ হাসিনার উন্নয়ন-সাফল্য এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ

সালাম জুবায়ের

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আদর্শবাদী রাজনীতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং রাষ্ট্র শাসনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজকের অবস্থানে এসেছেন। ’৭৫-এ পিতা-মাতাসহ পরিবার সদস্যদের হারানো, দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর প্রবাসে অনিশ্চিত জীবনযাপন, পাহাড়সম বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে ’৮১ তে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসকদের পতন এবং ’৯৬-এ দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের সরকার গঠন- সব ছিল শেখ হাসিনার জন্য কঠোর চ্যালেঞ্জ। অস্বাভাবিক ধৈর্য, মনোবল, রাজনৈতিক সাহস ও প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি জয় করেছেন এ সব বাধা-বিঘ্ন। এরপর দু’দফায় প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০২০ সাল দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার মৃত্যু ও হত্যার ঝুঁকিতে কাটিয়ে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা। আর এ দীর্ঘ কর্মপ্রয়াসের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অসাধারণ নেত্রী এবং আপসহীন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি দীপ্যমান।

’৯৬-এ ক্ষমতায় এসে একের পর এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, উন্নয়নের ধারায় প্রবল গতি সঞ্চার করে দেশকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন তবে তিনি থেমে নেই, এগোচ্ছেন প্রতিনিয়তÑ বাধা-বিঘœ, প্রতিকূলতা, মৃত্যুভয়Ñ এসব জয় করেই তার এগিয়ে যাওয়া চলছেই।

এই যে অসাধারণ নেত্রী এবং আপসহীন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার দীর্ঘ পথ চলাÑ এ সময়কালকে নানাজন নানাভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারেন। তবে সব বিশ্লেষণেই এ সত্য বেরিয়ে আসে যে, শেখ হাসিনা আগের সব রাষ্ট্রনায়কদের পেছনে ফেলে দেশকে নতুন মাত্রায় এবং উন্নত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারঙ্গম ভূমিকা পালন করেছেন। আগের রাষ্ট্র নায়করা যে চেষ্টা করেননি তা বলা যাবে না। চেষ্টা করেও তারা দেশের উন্নয়নের কাক্সিক্ষত উচ্চতায় পৌঁছতে পারেননি। শেখ হাসিনা শুধু পেরেছেন তাই নয়, আকাক্সক্ষার চেয়ে বেশি সফল হয়েছেন, যা অন্য কারও পক্ষেই সম্ভব হয়নি।

শেখ হাসিনাকে নিয়ে, বিশেষ করে তার রাজনীতি এবং দেশ পরিচালনায় তার সাফল্য নিয়ে আলেচনা করতে হলে শুধু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিলেই হবে না, এ উপমহাদেশের দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ চাহিদা এবং রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ের যে আকাক্সক্ষা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে বিরাজমান এবং তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য তারা কোন কৌশল অবলম্বন করছেন তা বিবেচনায় নিতে হবে। দ্বিতীয়ত বিবেচনায় নিতে হবে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ। বাংলাদেশের বিরোধী দলের একমাত্র লক্ষ্য থাকে কিভাবে ক্ষমতায় যাবে সে কৌশল নির্ধারণ করে রাজনীতি করা। এতে দেশের কোন ক্ষতি হলো কি হলো না সেদিকে নজর দেয়ার সময় থাকে না বিরোধী দলের হাতে। আর এ কারণে দেশের উন্নয়নের চেষ্টা করার পাশাপাশি সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় বিরোধী দলের অগণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলার কৌশল খুঁজে বের করার। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা পুরোপুরি সাফল্য হাতের মুঠোয় আনতে পেরেছেন শুধু তার অপরিমেয় দেশপ্রেম, সাহস এবং পরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশলের কারণে। শেখ হাসিনাকে তার শাসনামলে যে বৈরী এবং প্রতিকূল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে তা শুধু বিস্ময়করই নয় প্রায় অভাবনীয়ও বলা যায়। কিন্তু তারপরও পিছু হটেননি শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার সাফল্যের কথা তিনি নিজে এবং তার সরকার ও দলের লোকেরা যতটা না বলেছেন তার চেয়ে বেশি বলেছেন বিদেশিরা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। যে সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সব কিছুতেই ভালো-মন্দের চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করে সার্টিফিকেট দেয়, অংক কষে বিভিন্ন দেশের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান প্রকাশ করে, যেমন জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউনিসেফ, আইএলও, আইএমওসহ আরও অনেক সংস্থা, তাদের নানা প্রতিবেদন ও মূল্যায়নপত্রে নানা সময়ে নানাভাবে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সাফল্যের অগ্রযাত্রার আশা জাগানিয়া বার্তা। তারা এও বলেছে যে, বাংলাদেশ থেমে নেই, এগিয়ে যাচ্ছে, যতটা এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় তার চেয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ যে অন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে বাংলাদেশের সাফল্যগাঁথা, সে সাফল্যের সব কৃতিত্বই শেখ হাসিনার বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ যেসব সাফল্য বিদেশি সংস্থাগুলো বিশ্বকে জানিয়েছে তার সবই হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, তার সরকারের আমলে।

বাংলাদেশে যোগাযোগ ক্ষেত্রে যে অসাধারণ উন্নতি হয়েছে তা আর বলে বোঝানোর দরকার নেই। সবাই দেখছে, সুফল পাচ্ছে এ সাফল্যের। বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্রনায়ক কি এমন কথা কখনও ঘোষণা করেছিলেন যে, আমরা যদি আবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পাই তবে বাংলাদেশের সব নদীতেই সেতু তৈরি করব, এক স্থান থেকে লোকদের অন্য স্থানে যেতে আর ফেরিতে যানবাহন পার করতে হবে না, গাড়ি থেকে নামতেও হবে না? শেখ হাসিনা এমন ঘোষণা করেছিলেন এবং তিনি সফলও হয়েছেন। শেখ হাসিনা দেশের সব নদীতে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন মোল্লারহাটে একটি সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সেতু উদ্বোধনের পর বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সব নদীতে সেতু নির্মাণে তার স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। মাওয়ায় পদ্মা নদী ছাড়া বাংলাদেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম- সবদিকে যেতে এখন ফেরি পার হতে হয় না। টেকনাফ থেকে গাড়িতে চড়ে তেঁতুলিয়া যেতে একবারও ফেরি পারাপারের জন্য গাড়ি থেকে নামতে হয় না। মাওয়ায় পদ্মা নদী এবং পাটুরিয়ায় সেতু নির্মাণ শেষ হয়ে গেলে বড় কোন নদীর নামই আর কেউ মনে করতে পারবে না যেখানে সেতু নেই। শেখ হাসিনাই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি একটি স্বপ্নের কথা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন করেছেন।

বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্রনায়ক কি স্বপ্ন দেখেছিলেন তার শাসনামলে বাংলাদেশ হবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় থাকবে? শেখ হাসিনা সে স্বপ্ন দেখেছেন, দেশবাসীকে তার স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। এখন বাংলাদেশে কম্পিউটার চালাতে জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পেতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এক বাড়িতে বাবা-মা, ভাইবোন, এমন কি বাসার গৃহকর্মীও কম্পিউটার চালাতে জানেন, কম্পিউটার মানুষকে কতটা উপকার করতে পারে তা সবাই জানেন। বিশ্বের কম্পিউটার সুপার হাইওয়েতে সমপর্যায়ের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন সারা বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে। একই কথা বলা যায় মোবাইল ফোন সহজলভ্য করার ক্ষেত্রেও। শেখ হাসিনা সরকার গঠনের আগে যে মোবাইলের দাম ছিল এক লাখ বিশ হাজার টাকা, তিনি ক্ষমতায় এসে তার দাম নামিয়ে এনেছেন মাত্র ৫ হাজার টাকায়। এখন সুরম্য বহুতল অট্টালিকা থেকে অজগ্রামের কুঁড়েঘর- সব খানেই সবার হাতে মোবাইল ফোন। বাড়ির মালিক, কাজের লোক সবার হাতেই মোবাইল ফোন। এসব সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার স্ব^প্ন এবং সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কারণে।

তার বড় মাপের সাফল্যের আরেকটি উদাহরণ পদ্মা সেতু নির্মাণ। এ সেতু আসলেই নির্মিত হবে এমন চিন্তা অনেকেই করতে পারেননি। কিন্তু শেখ হাসিনা ঠিকই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিলেন, মনের জোর থাকলে চরম বৈরী পরিবেশেও অনেক বড় কিছু করা সম্ভব। পদ্মা সেতু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অনমনীয় চেতনার ফসল। উন্নয়নের ক্ষেত্রে টাকা দিতে বিশ্বব্যাংক তাদের ইচ্ছেমতো শর্ত চাপিয়ে দিয়ে অনেক দেশকে ‘পথের ফকির’ বানিয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো তো দূরের কথা, টুঁ শব্দটিও করতে পারেনি ছোট অর্থনীতির দেশগুলো। তাদের সামনে বিশ্বব্যাংকের ঋণ না পাওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে তারা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখে না। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে শেখ হাসিনাই একমাত্র সরকার প্রধান যিনি বিশ্বব্যাংককে রুখে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বীরদর্পে যে কোন মূল্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন, বাস্তবায়নও করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে উন্নয়নের নতুন নজির সৃষ্টি হয়েছিল সেই শুরুর বছর ১৯৯৬ সাল থেকেই। এ সময় দেশের চাহিদা মেটাতে খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদন যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে সে তথ্য বাংলাদেশ সরকারের যেমন তেমনি বিশ্ব সংস্থাগুলোরও। এরপর গঙ্গার পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ১০ হাজার টাকা করা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরির কোটা প্রবর্তন, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা প্রবর্তন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম গ্রহণ, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়ন, ভারতের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, ভারতের সঙ্গে ৬৮ বছর ধরে ঝুলে থাকা সীমানা চিহ্নিতকরণ চুক্তি বাস্তবায়ন, ছিটমহল বিনিময়, ভারতের কাছ থেকে তিন দফায় প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, কর্মসংস্থান, সামাজিক সহায়তা কার্যক্রম, অবকাঠামো উন্নয়ন- এমন কোন খাত নেই যেখানে শেখ হাসিনা হাত দেননি, উন্নয়নের বান ডাকেননি।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিতেই ঘোষণা করেন ‘রূপকল্প ২০২১’। তার ঘোষিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০২১ সালে তিনি আমাদের দেশটিকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চান। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে ঘোষণা দেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি নিরন্তন কাজ করে চলছেন। দেশকে এভাবে পর্যায়ক্রমে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পিত পরিকল্পনা এর আগে কোন রাষ্ট্রনায়ক করেছেনÑ এমন তথ্য কারও কাছে নেই। এখন হয়তো অনেকে বলবেন, আমরাও এমন চিন্তা করেছিলাম কিন্তু সময় পাইনি বলে করতে পারিনি। এখানেই শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য। তিনি বহুমুখী উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নও নিজেই করে দেখান।

’৭৫-এর পর দীর্ঘ ২১ বছর কেটে গেলেও জাতির পিতা হত্যার বিচার করার কথা কেউ চিন্তা করেনি। সারা বিশ্বে জাতির পিতার হত্যা এবং তার বিচার না করার কলঙ্ক জগদ্দল পাথরের মতো চেপে ছিল বাংলাদেশের ললাটে। শেখ হাসিনা সেই কলঙ্কের দায় থেকে মুক্ত করেছেন বাংলাদেশকে।

একই কথা বলা যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গেও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়ে রায় ঘোষণা এবং শাস্তি ভোগ করাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতাসীন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুধু বন্ধই করেননি, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতার শীর্ষ পদেও বসিয়েছিলেন। ধারাবাহিকভাবে জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকারÑ সব সরকারই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উল্টো কাজ করেছেন। এসব অপকর্ম করে তারা যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মানুষের বীরত্বের গৌরবকে ধুলায় লুটিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের মানুষের সেই দাবি বাস্তবায়ন করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করার জন্য দেশের ভেতর থেকে যেমন তেমিন বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো থেকেও চরম হুমকি দেয়া হয়েছে শেখ হাসিনাকে। কারা হুমকি দিয়ে শেখ হাসিনাকে ফোন করেছেন তা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তেমন শক্তিধর দেশের নেতাদের ফোন পেয়ে ভিত না হওয়া মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। শেখ হাসিনা ব্যক্তিক্রম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। হুমকি, ফোন সব কিছুর সামনে মেরুদ- সোজা করে দাঁড়িয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কোন ভয় আর হুমকির কাছে মাথানত না করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, গৌরবে সিক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা এমন শক্ত অবস্থান না নিলেও বাংলাদেশের মানুষের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বপ্ন কখনোই সফল হতো না।

শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন দেশকে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচনের পথে এগিয়ে নিতে গিয়ে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে চরম অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল সারা দেশে। একাধিক রাজনৈতিক দল হুমকি দিয়েছিল যে, সরকার যদি পদত্যাগ না করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে তবে সরকারকে উৎখাত করা হবে। সরকার উৎখাত করতে না পেরে তারা নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তখন নির্বাচন করা ছিল সাংবিধানিক বাধ্যকতা। শেখ হাসিনা সাংবিধানিক পথেই হাঁটলেন। বিরোধী দল তখন চরম ধ্বংসাত্মক পথে গিয়ে দেশ অচল করার ষড়যন্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। তারা সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াওসহ নানাভাবে চরম অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। বিরোধী দল সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে দিনের পর দিন অবরোধ ডেকে, বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা করে, আগুন লাগিয়ে চরম অরাজক অবস্থায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের ফলে সারা দেশে পেট্রলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হয়, ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেল গাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়। এক সময় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে নির্বাচন থেকে সরে আসার চিন্তা করতে শুরু করেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমী আপসহীন অবস্থান গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তার সিদ্ধান্ত; যে কোন ভাবেই হোক দেশকে গণতান্ত্রিক পথে রাখতে হবে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন হবেই, নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় যাবে তারাই দেশ পরিচালনা করবে। ষড়যন্ত্রের পাহাড় ডিঙিয়ে এগিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার ফল ভোগ করছে দেশের মানুষ, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে সরকার।

শেখ হাসিনা সম্পর্কে সবচেয়ে জোর দিয়ে যে কথাটি বলা প্রয়োজন তা হলো; শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে পাল্টে দিয়েছেন, উন্নয়ন স্বপ্নের মহাসড়কে বাংলাদেশকে তুলে এনেছেন। বাংলাদেশ এখন বিশ্বসভায় নানামুখী উন্নয়নের রোল মডেল, বাংলাদেশ দিনে দিনে দক্ষিণ এশিয়ার অসাম্প্রদায়িক আধুনিক রাষ্ট্রের মডেল হয়ে উঠেছে। মানব উন্নয়ন জরিপে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সমৃদ্ধশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩তম। এক জরিপে পাকিস্তানকে ২৯ ধাপ পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। বিশ্বের উন্নয়ন প্রত্যাশী মানুষের কাছে বাংলাদেশের আজকের অগ্রগতি ‘বিশ্বের বিস্ময়’।

বাংলাদেশের ইতিহাসে যেমন বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হিসেবে ইতিহাসের অংশ নয় ইতিহাসের স্রষ্টা হয়ে আছেন, তেমনি তার কন্যা শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার হিসেবে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, সে ইতিহাস বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সাফল্যের ইতিহাস।

তবে শেখ হাসিনাকে সামনের দিনগুলোতে উন্নয়নের মহাসড়ক এবং সুশাসনের পথ ধরে তার নিজস্ব পরিকল্পনার শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছানো পর্যন্ত আরও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসনের ঘাটতি এবং সামাজিক দুর্নীতি অপসারণ করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে প্রচলিত নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর রাজনীতিক ও ভোটারদের আস্থা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করে নির্বাচনের প্রতি গণমানুষের আস্থা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনাও একটি চ্যালেঞ্জ। সরকারের সব মহল থেকে দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা এবং পরিকল্পনার কথা বারবার বলা হচ্ছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ করতে না পারলে বর্তমান সরকারের অনেক সাফল্যই না চাইলেও ম্লান হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সেদিকে সবাইকে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে, প্রখর দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের মানুষের, যারা শুধু মুখে নয়, প্রকৃত অর্থে দেশকে ভালোবাসেন, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতনভাবে অপশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, সরকারকে সাহস জোগাতে হবে, মানুষের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা পথে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে।

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন। তিনি আরও দীর্ঘজীবী হবেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আরও অবদান রাখবেন, মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ করে আরও এগিয়ে যাবেন সে প্রত্যাশায় তাকে জন্মদিনের অকৃত্রিম শুভেচ্ছা।

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৯ মহররম ১৪৪২, ১০ আশ্বিন ১৪২৭

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

শেখ হাসিনার উন্নয়ন-সাফল্য এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ

সালাম জুবায়ের

image

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আদর্শবাদী রাজনীতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং রাষ্ট্র শাসনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজকের অবস্থানে এসেছেন। ’৭৫-এ পিতা-মাতাসহ পরিবার সদস্যদের হারানো, দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর প্রবাসে অনিশ্চিত জীবনযাপন, পাহাড়সম বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে ’৮১ তে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসকদের পতন এবং ’৯৬-এ দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের সরকার গঠন- সব ছিল শেখ হাসিনার জন্য কঠোর চ্যালেঞ্জ। অস্বাভাবিক ধৈর্য, মনোবল, রাজনৈতিক সাহস ও প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি জয় করেছেন এ সব বাধা-বিঘ্ন। এরপর দু’দফায় প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০২০ সাল দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার মৃত্যু ও হত্যার ঝুঁকিতে কাটিয়ে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা। আর এ দীর্ঘ কর্মপ্রয়াসের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অসাধারণ নেত্রী এবং আপসহীন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি দীপ্যমান।

’৯৬-এ ক্ষমতায় এসে একের পর এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, উন্নয়নের ধারায় প্রবল গতি সঞ্চার করে দেশকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন তবে তিনি থেমে নেই, এগোচ্ছেন প্রতিনিয়তÑ বাধা-বিঘœ, প্রতিকূলতা, মৃত্যুভয়Ñ এসব জয় করেই তার এগিয়ে যাওয়া চলছেই।

এই যে অসাধারণ নেত্রী এবং আপসহীন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার দীর্ঘ পথ চলাÑ এ সময়কালকে নানাজন নানাভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারেন। তবে সব বিশ্লেষণেই এ সত্য বেরিয়ে আসে যে, শেখ হাসিনা আগের সব রাষ্ট্রনায়কদের পেছনে ফেলে দেশকে নতুন মাত্রায় এবং উন্নত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারঙ্গম ভূমিকা পালন করেছেন। আগের রাষ্ট্র নায়করা যে চেষ্টা করেননি তা বলা যাবে না। চেষ্টা করেও তারা দেশের উন্নয়নের কাক্সিক্ষত উচ্চতায় পৌঁছতে পারেননি। শেখ হাসিনা শুধু পেরেছেন তাই নয়, আকাক্সক্ষার চেয়ে বেশি সফল হয়েছেন, যা অন্য কারও পক্ষেই সম্ভব হয়নি।

শেখ হাসিনাকে নিয়ে, বিশেষ করে তার রাজনীতি এবং দেশ পরিচালনায় তার সাফল্য নিয়ে আলেচনা করতে হলে শুধু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিলেই হবে না, এ উপমহাদেশের দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ চাহিদা এবং রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ের যে আকাক্সক্ষা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে বিরাজমান এবং তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য তারা কোন কৌশল অবলম্বন করছেন তা বিবেচনায় নিতে হবে। দ্বিতীয়ত বিবেচনায় নিতে হবে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ। বাংলাদেশের বিরোধী দলের একমাত্র লক্ষ্য থাকে কিভাবে ক্ষমতায় যাবে সে কৌশল নির্ধারণ করে রাজনীতি করা। এতে দেশের কোন ক্ষতি হলো কি হলো না সেদিকে নজর দেয়ার সময় থাকে না বিরোধী দলের হাতে। আর এ কারণে দেশের উন্নয়নের চেষ্টা করার পাশাপাশি সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় বিরোধী দলের অগণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলার কৌশল খুঁজে বের করার। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা পুরোপুরি সাফল্য হাতের মুঠোয় আনতে পেরেছেন শুধু তার অপরিমেয় দেশপ্রেম, সাহস এবং পরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশলের কারণে। শেখ হাসিনাকে তার শাসনামলে যে বৈরী এবং প্রতিকূল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে তা শুধু বিস্ময়করই নয় প্রায় অভাবনীয়ও বলা যায়। কিন্তু তারপরও পিছু হটেননি শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার সাফল্যের কথা তিনি নিজে এবং তার সরকার ও দলের লোকেরা যতটা না বলেছেন তার চেয়ে বেশি বলেছেন বিদেশিরা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। যে সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সব কিছুতেই ভালো-মন্দের চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করে সার্টিফিকেট দেয়, অংক কষে বিভিন্ন দেশের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান প্রকাশ করে, যেমন জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউনিসেফ, আইএলও, আইএমওসহ আরও অনেক সংস্থা, তাদের নানা প্রতিবেদন ও মূল্যায়নপত্রে নানা সময়ে নানাভাবে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সাফল্যের অগ্রযাত্রার আশা জাগানিয়া বার্তা। তারা এও বলেছে যে, বাংলাদেশ থেমে নেই, এগিয়ে যাচ্ছে, যতটা এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় তার চেয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ যে অন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে বাংলাদেশের সাফল্যগাঁথা, সে সাফল্যের সব কৃতিত্বই শেখ হাসিনার বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ যেসব সাফল্য বিদেশি সংস্থাগুলো বিশ্বকে জানিয়েছে তার সবই হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, তার সরকারের আমলে।

বাংলাদেশে যোগাযোগ ক্ষেত্রে যে অসাধারণ উন্নতি হয়েছে তা আর বলে বোঝানোর দরকার নেই। সবাই দেখছে, সুফল পাচ্ছে এ সাফল্যের। বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্রনায়ক কি এমন কথা কখনও ঘোষণা করেছিলেন যে, আমরা যদি আবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পাই তবে বাংলাদেশের সব নদীতেই সেতু তৈরি করব, এক স্থান থেকে লোকদের অন্য স্থানে যেতে আর ফেরিতে যানবাহন পার করতে হবে না, গাড়ি থেকে নামতেও হবে না? শেখ হাসিনা এমন ঘোষণা করেছিলেন এবং তিনি সফলও হয়েছেন। শেখ হাসিনা দেশের সব নদীতে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন মোল্লারহাটে একটি সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সেতু উদ্বোধনের পর বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সব নদীতে সেতু নির্মাণে তার স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। মাওয়ায় পদ্মা নদী ছাড়া বাংলাদেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম- সবদিকে যেতে এখন ফেরি পার হতে হয় না। টেকনাফ থেকে গাড়িতে চড়ে তেঁতুলিয়া যেতে একবারও ফেরি পারাপারের জন্য গাড়ি থেকে নামতে হয় না। মাওয়ায় পদ্মা নদী এবং পাটুরিয়ায় সেতু নির্মাণ শেষ হয়ে গেলে বড় কোন নদীর নামই আর কেউ মনে করতে পারবে না যেখানে সেতু নেই। শেখ হাসিনাই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি একটি স্বপ্নের কথা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন করেছেন।

বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্রনায়ক কি স্বপ্ন দেখেছিলেন তার শাসনামলে বাংলাদেশ হবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় থাকবে? শেখ হাসিনা সে স্বপ্ন দেখেছেন, দেশবাসীকে তার স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। এখন বাংলাদেশে কম্পিউটার চালাতে জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পেতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এক বাড়িতে বাবা-মা, ভাইবোন, এমন কি বাসার গৃহকর্মীও কম্পিউটার চালাতে জানেন, কম্পিউটার মানুষকে কতটা উপকার করতে পারে তা সবাই জানেন। বিশ্বের কম্পিউটার সুপার হাইওয়েতে সমপর্যায়ের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন সারা বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে। একই কথা বলা যায় মোবাইল ফোন সহজলভ্য করার ক্ষেত্রেও। শেখ হাসিনা সরকার গঠনের আগে যে মোবাইলের দাম ছিল এক লাখ বিশ হাজার টাকা, তিনি ক্ষমতায় এসে তার দাম নামিয়ে এনেছেন মাত্র ৫ হাজার টাকায়। এখন সুরম্য বহুতল অট্টালিকা থেকে অজগ্রামের কুঁড়েঘর- সব খানেই সবার হাতে মোবাইল ফোন। বাড়ির মালিক, কাজের লোক সবার হাতেই মোবাইল ফোন। এসব সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার স্ব^প্ন এবং সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কারণে।

তার বড় মাপের সাফল্যের আরেকটি উদাহরণ পদ্মা সেতু নির্মাণ। এ সেতু আসলেই নির্মিত হবে এমন চিন্তা অনেকেই করতে পারেননি। কিন্তু শেখ হাসিনা ঠিকই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিলেন, মনের জোর থাকলে চরম বৈরী পরিবেশেও অনেক বড় কিছু করা সম্ভব। পদ্মা সেতু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অনমনীয় চেতনার ফসল। উন্নয়নের ক্ষেত্রে টাকা দিতে বিশ্বব্যাংক তাদের ইচ্ছেমতো শর্ত চাপিয়ে দিয়ে অনেক দেশকে ‘পথের ফকির’ বানিয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো তো দূরের কথা, টুঁ শব্দটিও করতে পারেনি ছোট অর্থনীতির দেশগুলো। তাদের সামনে বিশ্বব্যাংকের ঋণ না পাওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে তারা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখে না। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে শেখ হাসিনাই একমাত্র সরকার প্রধান যিনি বিশ্বব্যাংককে রুখে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বীরদর্পে যে কোন মূল্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন, বাস্তবায়নও করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে উন্নয়নের নতুন নজির সৃষ্টি হয়েছিল সেই শুরুর বছর ১৯৯৬ সাল থেকেই। এ সময় দেশের চাহিদা মেটাতে খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদন যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে সে তথ্য বাংলাদেশ সরকারের যেমন তেমনি বিশ্ব সংস্থাগুলোরও। এরপর গঙ্গার পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ১০ হাজার টাকা করা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরির কোটা প্রবর্তন, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা প্রবর্তন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম গ্রহণ, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়ন, ভারতের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, ভারতের সঙ্গে ৬৮ বছর ধরে ঝুলে থাকা সীমানা চিহ্নিতকরণ চুক্তি বাস্তবায়ন, ছিটমহল বিনিময়, ভারতের কাছ থেকে তিন দফায় প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, কর্মসংস্থান, সামাজিক সহায়তা কার্যক্রম, অবকাঠামো উন্নয়ন- এমন কোন খাত নেই যেখানে শেখ হাসিনা হাত দেননি, উন্নয়নের বান ডাকেননি।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিতেই ঘোষণা করেন ‘রূপকল্প ২০২১’। তার ঘোষিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০২১ সালে তিনি আমাদের দেশটিকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চান। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে ঘোষণা দেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি নিরন্তন কাজ করে চলছেন। দেশকে এভাবে পর্যায়ক্রমে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পিত পরিকল্পনা এর আগে কোন রাষ্ট্রনায়ক করেছেনÑ এমন তথ্য কারও কাছে নেই। এখন হয়তো অনেকে বলবেন, আমরাও এমন চিন্তা করেছিলাম কিন্তু সময় পাইনি বলে করতে পারিনি। এখানেই শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য। তিনি বহুমুখী উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নও নিজেই করে দেখান।

’৭৫-এর পর দীর্ঘ ২১ বছর কেটে গেলেও জাতির পিতা হত্যার বিচার করার কথা কেউ চিন্তা করেনি। সারা বিশ্বে জাতির পিতার হত্যা এবং তার বিচার না করার কলঙ্ক জগদ্দল পাথরের মতো চেপে ছিল বাংলাদেশের ললাটে। শেখ হাসিনা সেই কলঙ্কের দায় থেকে মুক্ত করেছেন বাংলাদেশকে।

একই কথা বলা যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গেও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়ে রায় ঘোষণা এবং শাস্তি ভোগ করাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতাসীন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুধু বন্ধই করেননি, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতার শীর্ষ পদেও বসিয়েছিলেন। ধারাবাহিকভাবে জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকারÑ সব সরকারই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উল্টো কাজ করেছেন। এসব অপকর্ম করে তারা যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মানুষের বীরত্বের গৌরবকে ধুলায় লুটিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের মানুষের সেই দাবি বাস্তবায়ন করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করার জন্য দেশের ভেতর থেকে যেমন তেমিন বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো থেকেও চরম হুমকি দেয়া হয়েছে শেখ হাসিনাকে। কারা হুমকি দিয়ে শেখ হাসিনাকে ফোন করেছেন তা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তেমন শক্তিধর দেশের নেতাদের ফোন পেয়ে ভিত না হওয়া মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। শেখ হাসিনা ব্যক্তিক্রম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। হুমকি, ফোন সব কিছুর সামনে মেরুদ- সোজা করে দাঁড়িয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কোন ভয় আর হুমকির কাছে মাথানত না করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, গৌরবে সিক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা এমন শক্ত অবস্থান না নিলেও বাংলাদেশের মানুষের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বপ্ন কখনোই সফল হতো না।

শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন দেশকে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচনের পথে এগিয়ে নিতে গিয়ে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে চরম অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল সারা দেশে। একাধিক রাজনৈতিক দল হুমকি দিয়েছিল যে, সরকার যদি পদত্যাগ না করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে তবে সরকারকে উৎখাত করা হবে। সরকার উৎখাত করতে না পেরে তারা নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তখন নির্বাচন করা ছিল সাংবিধানিক বাধ্যকতা। শেখ হাসিনা সাংবিধানিক পথেই হাঁটলেন। বিরোধী দল তখন চরম ধ্বংসাত্মক পথে গিয়ে দেশ অচল করার ষড়যন্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। তারা সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াওসহ নানাভাবে চরম অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। বিরোধী দল সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে দিনের পর দিন অবরোধ ডেকে, বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা করে, আগুন লাগিয়ে চরম অরাজক অবস্থায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের ফলে সারা দেশে পেট্রলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হয়, ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেল গাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়। এক সময় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে নির্বাচন থেকে সরে আসার চিন্তা করতে শুরু করেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমী আপসহীন অবস্থান গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তার সিদ্ধান্ত; যে কোন ভাবেই হোক দেশকে গণতান্ত্রিক পথে রাখতে হবে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন হবেই, নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় যাবে তারাই দেশ পরিচালনা করবে। ষড়যন্ত্রের পাহাড় ডিঙিয়ে এগিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার ফল ভোগ করছে দেশের মানুষ, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে সরকার।

শেখ হাসিনা সম্পর্কে সবচেয়ে জোর দিয়ে যে কথাটি বলা প্রয়োজন তা হলো; শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে পাল্টে দিয়েছেন, উন্নয়ন স্বপ্নের মহাসড়কে বাংলাদেশকে তুলে এনেছেন। বাংলাদেশ এখন বিশ্বসভায় নানামুখী উন্নয়নের রোল মডেল, বাংলাদেশ দিনে দিনে দক্ষিণ এশিয়ার অসাম্প্রদায়িক আধুনিক রাষ্ট্রের মডেল হয়ে উঠেছে। মানব উন্নয়ন জরিপে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সমৃদ্ধশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩তম। এক জরিপে পাকিস্তানকে ২৯ ধাপ পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। বিশ্বের উন্নয়ন প্রত্যাশী মানুষের কাছে বাংলাদেশের আজকের অগ্রগতি ‘বিশ্বের বিস্ময়’।

বাংলাদেশের ইতিহাসে যেমন বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হিসেবে ইতিহাসের অংশ নয় ইতিহাসের স্রষ্টা হয়ে আছেন, তেমনি তার কন্যা শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার হিসেবে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, সে ইতিহাস বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সাফল্যের ইতিহাস।

তবে শেখ হাসিনাকে সামনের দিনগুলোতে উন্নয়নের মহাসড়ক এবং সুশাসনের পথ ধরে তার নিজস্ব পরিকল্পনার শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছানো পর্যন্ত আরও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসনের ঘাটতি এবং সামাজিক দুর্নীতি অপসারণ করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে প্রচলিত নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর রাজনীতিক ও ভোটারদের আস্থা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করে নির্বাচনের প্রতি গণমানুষের আস্থা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনাও একটি চ্যালেঞ্জ। সরকারের সব মহল থেকে দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা এবং পরিকল্পনার কথা বারবার বলা হচ্ছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ করতে না পারলে বর্তমান সরকারের অনেক সাফল্যই না চাইলেও ম্লান হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সেদিকে সবাইকে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে, প্রখর দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের মানুষের, যারা শুধু মুখে নয়, প্রকৃত অর্থে দেশকে ভালোবাসেন, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতনভাবে অপশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, সরকারকে সাহস জোগাতে হবে, মানুষের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা পথে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে।

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন। তিনি আরও দীর্ঘজীবী হবেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আরও অবদান রাখবেন, মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ করে আরও এগিয়ে যাবেন সে প্রত্যাশায় তাকে জন্মদিনের অকৃত্রিম শুভেচ্ছা।