তোমার কর্মে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু

অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার

বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা। ৭৩ বা ৭৪ বছর একজন মানুষের জন্য সন্তোষজনক বয়স। কিন্তু কালের বা জাতীয় জীবনে এটা তেমন কোনো বয়স নয়। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্ধশত বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ‘কোবিড-১৯’ গত ১০০ বছরের মাঝে সবচেয়ে মারাত্মক সংকট হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থিত হয়েছে। মানবজাতি নতুনভাবে বিশ্ব ব্যবস্থার পরিকল্পনার কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যবসা বা শিল্পকারখানায় মুনাফার জন্য বেশি বিনিয়োগ নয়। প্রকৃতিকে রক্ষা করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বেশি বিনেয়োগ করবেন- সেই প্রশ্নের উত্তর শুধু বিশ্ব নেতারাই নয়, সাধারণ মানুষও এখন জানে। বিশ্ব ব্যবস্থার এ আধুনিকায়নের যুগে কোন দেশ বা জাতি বিচ্ছিন্নভাবে কোন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে নিজ দেশে সীমাবদ্ধ রাখতে পারবে না, এর প্রভাব বিশে্ব ছড়িয়ে পড়ছে; যার উদাহরণ আমরা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দেখতে পাচ্ছি।

বাংলাদেশ গত এক দশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশে^ একটি সমীহ জাগানো জায়গায় উত্তীণ হতে সক্ষম হয়েছে। এটি শুধু ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বা মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতির অন্যান্য অনেক সূচকেই বাংলাদেশের অর্জন লক্ষ্যণীয়ভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক করোনা সংকটে অর্থনীতির মন্দাভাব স্পর্শ করেনি- এমন জাতি বিশে্ব একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশেও নানাদিক থেকে সেই আঘাত এসেছে। বৈদেশিক শ্রমবাজার, তৈরি পোশাক রফতানি, চামড়া ও অন্যান্য রফতানি পণ্যের বাজার সংকট, পণ্য উৎপাদনের সংকট উল্লেখযোগ্য।

এই বৈশি্বক সংকটে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকেও আমরা দেখেছি দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। আবার অনেক বড় বড় দেশের নেতাদের ব্যর্থতাও আমাদের চোখে পড়েছে। যুদ্ধ বা জাতীয় অথবা আন্তর্জাতিক সংকটের সময় যথাযথ নেতৃত্ব দেয়াই প্রকৃত দেশপ্রেমিক জনদরদী সৎ ও যোগ্য নেতার কর্তব্য।

’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেমন সাড়ে সাত কোটি নিরস্ত্র বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; তেমনি তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে জাতির এ দুর্যোগের সময় সাফল্যের যাত্রা অব্যাহত রেখে চলেছেন। খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার বিষয়টি বিশ^জুড়ে আলোচিত হচ্ছে- তিনি মৌসুমি ফসল রক্ষা করার জন্য খুবই সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ বিষয়টি দেশে এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একটি ব্যতিক্রমী কল্যাণকর উদাহরণ হয়ে থাকবে। কিন্তু আমরা দেখলাম স্বাস্থ্যবিধি মেনে উত্তরবঙ্গ এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে কৃষি শ্রমিকদের ভাটি অঞ্চলে ধান সংগ্রহের জন্য পাঠানো হলো। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে ফসল কাটার কাজে অংশগ্রহণ করল। এই খাদ্যশস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় করোনা সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পায়নি। উপরন্তু জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসমূহ আসন্ন বিশ^ খাদ্য সংকটেও বাংলাদেশের ভালো অবস্থানের প্রশংসা করেন। তৈরি পোশাক খাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কাজে লাগানো বিশেষ করে করোনাকালে মাস্ক এবং পিপিই তৈরি ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির বিষয়ে উৎসাহিত করেন।

বর্তমান সরকার শিল্প ও ব্যবসা খাতে প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে করেছে। সরকারি দল, ১৪ দলের শরিক, সরকারি, বেসরকারি এবং বিরোধী রাজনৈতিক অনেক তাত্ত্বিকের অযৌক্তিক সমালোচনার মধ্যেও তিনি অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হচ্ছেন।

করোনা সংকটের মাঝে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তিনি গরিব ও সাধারণ মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা কর্মসূচিসমূহ বাড়িয়ে দেন। একদিকে অর্থের জোগান কম, উৎপাদন ব্যাহত, সরবরাহের ঘাটতিÑ অন্যদিকে চাহিদা বৃদ্ধির সংকটে তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সাহসী পদক্ষেপে তা মোকাবেলা করে চলেছেন।

দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সৃষ্ট সংকটটি আসলে বৈশি^ক সংকটের অংশ। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও তিনি কিছু পরিবর্তন পরিবর্ধনের মাধ্যমে এটি মোকাবেলার চেষ্টা করে চলেছেন। সেক্ষেত্রেও দেশবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখেছেন। তিনি জাতীয় সংসদে দেশবাসীকে জানিয়েছেন ‘কোভিড-১৯’ এর ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সরকার কাজ করছে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় আমাদের দেশের পরিসংখ্যানকে আন্তর্জাতিক উপাত্তের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনায় আনলে পরে তাকে হতাশাব্যঞ্জক বলা যাবে না। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত বা পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশের চেয়েও ভালো আমাদের দেশের পরিসংখ্যান। সেক্ষেত্রেও দেশের মানুষের আস্থা বা ভরসার জায়গা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; যেখানে বাংলাদেশের মানুষ তার নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর দাঁড়িয়ে নিজের ভাগ্য নির্মাণ করতে পারবে। অপসংস্কৃতি, কুপম-ুকতা গোড়ামী, পশ্চাৎপদতা, ক্ষুদ্র স্বার্থের আদর্শহীন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি সৎ, উদার, অগ্রসরমান, অসাম্প্রদায়িক, উন্নতসমৃদ্ধ মানবিক সমাজ গড়ে তুলবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্নও ছিল একই। আজ ১৭ কোটি বাঙালির প্রত্যাশাও ঠিক তেমনি। শহীদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানো, কোটি কোটি বাঙালির আত্মত্যাগ হারিয়ে যেতে পারে না। আমরা দেখেছি ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের চাকাকে পেছনে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে অনেক দিন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে না এলে বাংলাদেশের আজকের ইতিহাস হয়ত অন্যরকম হতো। অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সামাজিক, স্বাস্থ্য খাত, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের এই যে এত অগ্রসরতা অথবা আজকে বাংলাদেশ যে বিশ^দরবারে সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছেছে- এটি বঙ্গবন্ধু কন্যার দক্ষতা ও নেতৃত্বের ফসল। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, এটি মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, এটি ১৭ কোটি বাঙালির স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণে তিনি নিরন্তর কাজ করে চলেছেন- নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ, আর এই আরাধ্য দেশ নির্মাণই বাঁচিয়ে রাখবে বঙ্গবন্ধুকে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে অনন্তকাল ধরে। এজন্য প্রয়োজন বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বের চলমান কল্যাণধর্মী, মমতাময়ী ও সাহসী নেতৃত্ব।

শুভ হোক জন্মদিন, নির্মিত হোক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের-মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ।

[লেখক : সাবেক উপ-উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়]

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৯ মহররম ১৪৪২, ১০ আশ্বিন ১৪২৭

তোমার কর্মে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু

অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার

image

বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা। ৭৩ বা ৭৪ বছর একজন মানুষের জন্য সন্তোষজনক বয়স। কিন্তু কালের বা জাতীয় জীবনে এটা তেমন কোনো বয়স নয়। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্ধশত বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ‘কোবিড-১৯’ গত ১০০ বছরের মাঝে সবচেয়ে মারাত্মক সংকট হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থিত হয়েছে। মানবজাতি নতুনভাবে বিশ্ব ব্যবস্থার পরিকল্পনার কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যবসা বা শিল্পকারখানায় মুনাফার জন্য বেশি বিনিয়োগ নয়। প্রকৃতিকে রক্ষা করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বেশি বিনেয়োগ করবেন- সেই প্রশ্নের উত্তর শুধু বিশ্ব নেতারাই নয়, সাধারণ মানুষও এখন জানে। বিশ্ব ব্যবস্থার এ আধুনিকায়নের যুগে কোন দেশ বা জাতি বিচ্ছিন্নভাবে কোন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে নিজ দেশে সীমাবদ্ধ রাখতে পারবে না, এর প্রভাব বিশে্ব ছড়িয়ে পড়ছে; যার উদাহরণ আমরা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দেখতে পাচ্ছি।

বাংলাদেশ গত এক দশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশে^ একটি সমীহ জাগানো জায়গায় উত্তীণ হতে সক্ষম হয়েছে। এটি শুধু ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বা মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতির অন্যান্য অনেক সূচকেই বাংলাদেশের অর্জন লক্ষ্যণীয়ভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক করোনা সংকটে অর্থনীতির মন্দাভাব স্পর্শ করেনি- এমন জাতি বিশে্ব একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশেও নানাদিক থেকে সেই আঘাত এসেছে। বৈদেশিক শ্রমবাজার, তৈরি পোশাক রফতানি, চামড়া ও অন্যান্য রফতানি পণ্যের বাজার সংকট, পণ্য উৎপাদনের সংকট উল্লেখযোগ্য।

এই বৈশি্বক সংকটে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকেও আমরা দেখেছি দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। আবার অনেক বড় বড় দেশের নেতাদের ব্যর্থতাও আমাদের চোখে পড়েছে। যুদ্ধ বা জাতীয় অথবা আন্তর্জাতিক সংকটের সময় যথাযথ নেতৃত্ব দেয়াই প্রকৃত দেশপ্রেমিক জনদরদী সৎ ও যোগ্য নেতার কর্তব্য।

’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেমন সাড়ে সাত কোটি নিরস্ত্র বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; তেমনি তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে জাতির এ দুর্যোগের সময় সাফল্যের যাত্রা অব্যাহত রেখে চলেছেন। খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার বিষয়টি বিশ^জুড়ে আলোচিত হচ্ছে- তিনি মৌসুমি ফসল রক্ষা করার জন্য খুবই সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ বিষয়টি দেশে এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একটি ব্যতিক্রমী কল্যাণকর উদাহরণ হয়ে থাকবে। কিন্তু আমরা দেখলাম স্বাস্থ্যবিধি মেনে উত্তরবঙ্গ এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে কৃষি শ্রমিকদের ভাটি অঞ্চলে ধান সংগ্রহের জন্য পাঠানো হলো। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে ফসল কাটার কাজে অংশগ্রহণ করল। এই খাদ্যশস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় করোনা সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পায়নি। উপরন্তু জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসমূহ আসন্ন বিশ^ খাদ্য সংকটেও বাংলাদেশের ভালো অবস্থানের প্রশংসা করেন। তৈরি পোশাক খাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কাজে লাগানো বিশেষ করে করোনাকালে মাস্ক এবং পিপিই তৈরি ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির বিষয়ে উৎসাহিত করেন।

বর্তমান সরকার শিল্প ও ব্যবসা খাতে প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে করেছে। সরকারি দল, ১৪ দলের শরিক, সরকারি, বেসরকারি এবং বিরোধী রাজনৈতিক অনেক তাত্ত্বিকের অযৌক্তিক সমালোচনার মধ্যেও তিনি অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হচ্ছেন।

করোনা সংকটের মাঝে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তিনি গরিব ও সাধারণ মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা কর্মসূচিসমূহ বাড়িয়ে দেন। একদিকে অর্থের জোগান কম, উৎপাদন ব্যাহত, সরবরাহের ঘাটতিÑ অন্যদিকে চাহিদা বৃদ্ধির সংকটে তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সাহসী পদক্ষেপে তা মোকাবেলা করে চলেছেন।

দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সৃষ্ট সংকটটি আসলে বৈশি^ক সংকটের অংশ। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও তিনি কিছু পরিবর্তন পরিবর্ধনের মাধ্যমে এটি মোকাবেলার চেষ্টা করে চলেছেন। সেক্ষেত্রেও দেশবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখেছেন। তিনি জাতীয় সংসদে দেশবাসীকে জানিয়েছেন ‘কোভিড-১৯’ এর ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সরকার কাজ করছে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় আমাদের দেশের পরিসংখ্যানকে আন্তর্জাতিক উপাত্তের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনায় আনলে পরে তাকে হতাশাব্যঞ্জক বলা যাবে না। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত বা পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশের চেয়েও ভালো আমাদের দেশের পরিসংখ্যান। সেক্ষেত্রেও দেশের মানুষের আস্থা বা ভরসার জায়গা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; যেখানে বাংলাদেশের মানুষ তার নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর দাঁড়িয়ে নিজের ভাগ্য নির্মাণ করতে পারবে। অপসংস্কৃতি, কুপম-ুকতা গোড়ামী, পশ্চাৎপদতা, ক্ষুদ্র স্বার্থের আদর্শহীন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি সৎ, উদার, অগ্রসরমান, অসাম্প্রদায়িক, উন্নতসমৃদ্ধ মানবিক সমাজ গড়ে তুলবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্নও ছিল একই। আজ ১৭ কোটি বাঙালির প্রত্যাশাও ঠিক তেমনি। শহীদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানো, কোটি কোটি বাঙালির আত্মত্যাগ হারিয়ে যেতে পারে না। আমরা দেখেছি ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের চাকাকে পেছনে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে অনেক দিন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে না এলে বাংলাদেশের আজকের ইতিহাস হয়ত অন্যরকম হতো। অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সামাজিক, স্বাস্থ্য খাত, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের এই যে এত অগ্রসরতা অথবা আজকে বাংলাদেশ যে বিশ^দরবারে সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছেছে- এটি বঙ্গবন্ধু কন্যার দক্ষতা ও নেতৃত্বের ফসল। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, এটি মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, এটি ১৭ কোটি বাঙালির স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণে তিনি নিরন্তর কাজ করে চলেছেন- নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ, আর এই আরাধ্য দেশ নির্মাণই বাঁচিয়ে রাখবে বঙ্গবন্ধুকে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে অনন্তকাল ধরে। এজন্য প্রয়োজন বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বের চলমান কল্যাণধর্মী, মমতাময়ী ও সাহসী নেতৃত্ব।

শুভ হোক জন্মদিন, নির্মিত হোক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের-মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ।

[লেখক : সাবেক উপ-উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়]