সাক্ষাৎকার

এন ডি চঞ্চল, সংস্কার নাট্যদলের দলপ্রধান। অভিনয় জীবন, দল গঠন, নাটকের মঞ্চায়ন, দলের আগামীর পরিকল্পনাসহ নাটকের বিভিন্ন বিষয়

নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রত্যয়

একক অভিনয়ের নাটক নিয়ে ভাবছি

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কেমন করে যুক্ত হলেন?

আমার জন্ম, শৈশব যেহেতু গোপালগঞ্জের কোটালী পাড়ায় ফলে ধানের মাঠ, পাটের ক্ষেত, উত্তাল নদীর সান্নিধ্যেই আমার দুরন্ত শৈশব। শৈশবেই দেখেছি বাবাকে উঠানে বসে কিসসা গান, ভানু মতির পালা, পাঁচালি পাঠ অত্যন্ত সুললিত কণ্ঠে ও যতেœর সঙ্গে গাইতো। আমার ছোট ভাই শ্যামল তো সব সময় গাজীর গান, পদাবলী যাত্রা, পালা গান নিয়ে মেতে থাকে। ফলে অভিনয়ের একটা প্রস্তুতি আমার তখন থেকেই। এক সময় আমি আমার গ্রামের যাত্রা পালায় অংশগ্রহণ করা শুরু করি। ‘একটি পয়সা’ পালায় ছেলের চরিত্র, ‘জেল থেকে বলছি’ পালায় কৌতুক পরিবেশনকারী, ‘শশী বাবুর সংসার’ পালায় ভাই প্রভৃতি চরিত্রে রূপদান করি। পালার অভিজ্ঞতায় বুজেছি যাত্রাপালা মূলত সমাজের দর্পণ, অগণিত দর্শকের জন্য উচ্চৈঃস্বরে সংলাপ প্রক্ষেপণ সবিশেষ প্রয়োজন, প্রম্পটের সুবিধা থাকলেও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংলাপ মুখস্ত এবং আত্মস্থ থাকাটা সাবলিল অভিনয়ে স্ববিশেষ অনুরণন। যাত্রাপালার সমান্তরাল কলেজ জীবনে আমার প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলীওয়ালা” নাটকে কাবুলীওয়ালা চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে।

ঢাকার নগরকেন্দ্রিক নাট্যচর্চার শুরু কীভাবে?

এক সময় কর্মের সুবাধে ঢাকায় আসি এবং ব্যবসায়িক কাজে নিমগ্ন হই। সব কাজ সম্পন্ন করে সন্ধ্যার পর নিয়মিত মহিলা সমিতি মঞ্চে নাটক দেখতাম। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, বিষাদ সিন্ধু, ইঙ্গিত, কোর্ট মার্শাল, দেওয়ান গাজীর কিসসা, বনপাংশুলসহ নানা নাটক দেখতাম আর ভাবতাম যদি পারতাম আমরাও তবে ঢাকার মঞ্চে নাটক করতাম, অভিনয় করতাম। সেই স্বপ্ন, সেই ভাবনা আর নিজেরা নিজেদের মতো করে নাটক করব এই চিন্তার জায়গা থেকে এক সময় মিজানুর রহমান সুরুজের অনুপ্রেরণায় দল গঠন করলাম সংস্কার।

আপনার রচিত প্রথম নাটক নিয়ে বলেন

প্রথম নাটক শূন্যলতা। লতা দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং কঞ্চিকে আশ্রয় করে, অবলম্বন করে সে ফুল-ফল ধারণ করে। কিন্তু যদি আশ্রয়ের জায়গা, অবলম্বনের জায়গা হয় শূন্য তবে জীবন যেভাবে ধরা দেয় আমার রচিত নাটক শূন্যলতা ও তেমনি। এক চরিত্রের জন্ম পরিচয় নেই আবার অপর চরিত্রের সন্তান নেই। এক যাত্রাভিনেত্রী মানুষকে বিনোদিত করে অথচ তার ব্যক্তি জীবন বিনোদনহীন। মানুষের অসহায়তা নিয়েই আমার নাটক শূন্যলতা।

বর্তমান দলীয় প্রযোজনা নিয়ে বলেন

উৎপল দত্তের আজকের সাজাহান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভুল স্বর্গ, বশীকরণ; রুবায়েৎ আহমেদের রূপান্তরে মহাপতঙ্গ, নয়ান চাঁদ ঘোষের গীতি চন্দ্রাবতী প্রভৃতি। একক অভিনয়ের নাটক নিয়ে ভাবছি। পাণ্ডলিপি নির্বাচন চলছে। ইউসুফ হাসান অর্ক স্যার সম্মতি প্রকাশ করলে তিনিই নির্দেশনা দেবেন।

নাটকের সমালোচনাকে কীভাবে দেখেন

প্রযোজনা অধিকর্তা হিসেবে নাটক মঞ্চায়নের নির্মা মূহুর্তে পড়ি বঙ্কিমের সাহিত্য। নাটক মঞ্চায়নের প্রশান্ত সময়ে পড়ি শরৎচন্দ্র। জীবনের আশ্রয় সাহিত্যে। ফলে নাট্য সমালোচনায় সাহিত্য পেলে ভালো লাগে। এই কাজটি অনেকটা রেফারির মতো যে শৃঙ্খলতা ধরে রাখতে ভূমিকা রাখে। নাট্য সমালোচনায় আমরা অনুপ্রাণিত হই।

বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১১ মহররম ১৪৪২, ১২ আশ্বিন ১৪২৭

সাক্ষাৎকার

বিনোদন প্রতিবেদক |

image

এন ডি চঞ্চল, সংস্কার নাট্যদলের দলপ্রধান। অভিনয় জীবন, দল গঠন, নাটকের মঞ্চায়ন, দলের আগামীর পরিকল্পনাসহ নাটকের বিভিন্ন বিষয়

নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রত্যয়

একক অভিনয়ের নাটক নিয়ে ভাবছি

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কেমন করে যুক্ত হলেন?

আমার জন্ম, শৈশব যেহেতু গোপালগঞ্জের কোটালী পাড়ায় ফলে ধানের মাঠ, পাটের ক্ষেত, উত্তাল নদীর সান্নিধ্যেই আমার দুরন্ত শৈশব। শৈশবেই দেখেছি বাবাকে উঠানে বসে কিসসা গান, ভানু মতির পালা, পাঁচালি পাঠ অত্যন্ত সুললিত কণ্ঠে ও যতেœর সঙ্গে গাইতো। আমার ছোট ভাই শ্যামল তো সব সময় গাজীর গান, পদাবলী যাত্রা, পালা গান নিয়ে মেতে থাকে। ফলে অভিনয়ের একটা প্রস্তুতি আমার তখন থেকেই। এক সময় আমি আমার গ্রামের যাত্রা পালায় অংশগ্রহণ করা শুরু করি। ‘একটি পয়সা’ পালায় ছেলের চরিত্র, ‘জেল থেকে বলছি’ পালায় কৌতুক পরিবেশনকারী, ‘শশী বাবুর সংসার’ পালায় ভাই প্রভৃতি চরিত্রে রূপদান করি। পালার অভিজ্ঞতায় বুজেছি যাত্রাপালা মূলত সমাজের দর্পণ, অগণিত দর্শকের জন্য উচ্চৈঃস্বরে সংলাপ প্রক্ষেপণ সবিশেষ প্রয়োজন, প্রম্পটের সুবিধা থাকলেও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংলাপ মুখস্ত এবং আত্মস্থ থাকাটা সাবলিল অভিনয়ে স্ববিশেষ অনুরণন। যাত্রাপালার সমান্তরাল কলেজ জীবনে আমার প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলীওয়ালা” নাটকে কাবুলীওয়ালা চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে।

ঢাকার নগরকেন্দ্রিক নাট্যচর্চার শুরু কীভাবে?

এক সময় কর্মের সুবাধে ঢাকায় আসি এবং ব্যবসায়িক কাজে নিমগ্ন হই। সব কাজ সম্পন্ন করে সন্ধ্যার পর নিয়মিত মহিলা সমিতি মঞ্চে নাটক দেখতাম। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, বিষাদ সিন্ধু, ইঙ্গিত, কোর্ট মার্শাল, দেওয়ান গাজীর কিসসা, বনপাংশুলসহ নানা নাটক দেখতাম আর ভাবতাম যদি পারতাম আমরাও তবে ঢাকার মঞ্চে নাটক করতাম, অভিনয় করতাম। সেই স্বপ্ন, সেই ভাবনা আর নিজেরা নিজেদের মতো করে নাটক করব এই চিন্তার জায়গা থেকে এক সময় মিজানুর রহমান সুরুজের অনুপ্রেরণায় দল গঠন করলাম সংস্কার।

আপনার রচিত প্রথম নাটক নিয়ে বলেন

প্রথম নাটক শূন্যলতা। লতা দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং কঞ্চিকে আশ্রয় করে, অবলম্বন করে সে ফুল-ফল ধারণ করে। কিন্তু যদি আশ্রয়ের জায়গা, অবলম্বনের জায়গা হয় শূন্য তবে জীবন যেভাবে ধরা দেয় আমার রচিত নাটক শূন্যলতা ও তেমনি। এক চরিত্রের জন্ম পরিচয় নেই আবার অপর চরিত্রের সন্তান নেই। এক যাত্রাভিনেত্রী মানুষকে বিনোদিত করে অথচ তার ব্যক্তি জীবন বিনোদনহীন। মানুষের অসহায়তা নিয়েই আমার নাটক শূন্যলতা।

বর্তমান দলীয় প্রযোজনা নিয়ে বলেন

উৎপল দত্তের আজকের সাজাহান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভুল স্বর্গ, বশীকরণ; রুবায়েৎ আহমেদের রূপান্তরে মহাপতঙ্গ, নয়ান চাঁদ ঘোষের গীতি চন্দ্রাবতী প্রভৃতি। একক অভিনয়ের নাটক নিয়ে ভাবছি। পাণ্ডলিপি নির্বাচন চলছে। ইউসুফ হাসান অর্ক স্যার সম্মতি প্রকাশ করলে তিনিই নির্দেশনা দেবেন।

নাটকের সমালোচনাকে কীভাবে দেখেন

প্রযোজনা অধিকর্তা হিসেবে নাটক মঞ্চায়নের নির্মা মূহুর্তে পড়ি বঙ্কিমের সাহিত্য। নাটক মঞ্চায়নের প্রশান্ত সময়ে পড়ি শরৎচন্দ্র। জীবনের আশ্রয় সাহিত্যে। ফলে নাট্য সমালোচনায় সাহিত্য পেলে ভালো লাগে। এই কাজটি অনেকটা রেফারির মতো যে শৃঙ্খলতা ধরে রাখতে ভূমিকা রাখে। নাট্য সমালোচনায় আমরা অনুপ্রাণিত হই।