কলমাকান্দায় স্বেচ্ছাশ্রমে ৪ কিমি. রাস্তা নির্মাণ

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা গত ২০ ডিসেম্বর সকাল থেকে উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের পূর্ব জিগাতলা গ্রামের মণ্ডলের বাড়ি হতে গোয়াতলা হয়ে রাধানগর গ্রাম পর্যন্ত এই রাস্তার মাটি কাটা কাজ শুরু হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, লেংগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে এলাকার প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমে সকাল থেকে মাটি কাটার কাজ শুরু করেছেন। গ্রামীণ এই কাঁচা রাস্তাটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে ওই ইউনিয়নের পূর্ব জিগাতলা, রাধানগর, গোয়াতলা, শিবপুর, পেছাইয়া, জয়নগর, রাজনগর, মানিকপুর এ সকল গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দারা যাতায়াতের সুফল ভোগ করবেন।

ছয় ফুট প্রশস্থ ও তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট উচ্চতায় রাস্তাটি নির্মাণ হলে যাতায়াত ব্যবস্থায় যোগ হবে এক নতুন মাত্রা। এ সকল গ্রামের বাসিন্দারা এতদিন বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ক্ষেতের আইল দিয়ে যাতায়াত করতেন। রাস্তাটি নির্মাণের ফলে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরবাইক নিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন। গ্রামের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে সুবিধা পাবেন। গ্রামের অসুস্থ রোগী ও গর্ভবতী নারীরাও চিকিৎসা যান চড়ে কেন্দ্রে আসতে পারবেন সংযোগস্থল পাকা রাস্তা পর্যন্ত। গ্রামবাসীরা অধীর আগ্রহের সহিত নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে আসা রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা মইজুদ্দিন, যুবক নিজাম উদ্দীন ও পূর্ব জিগাতলার আনোয়ারা আক্তারসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে নিজের রাস্তাটি নির্মাণে মাটি কাটার কাজ করছি। চেয়ারম্যানের অনুপ্রেরণায় আমরা এলাকাবাসী উদ্বুদ্ধ হয়ে মাটি কাটার কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অতীতে এলাকাবাসী পায়ে হাঁটা ছাড়া যান বাহনে চড়ে যাতায়াত করতে পারছিল না। এখন থেকে গাড়িতে করে অনেক গ্রামের মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা ও স্কুলে শিক্ষার্থীর বেশি উপকৃত হবে।

লেংগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়া স্বেচ্ছাশ্রমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন-পূর্ব জিগাতলা, রাধানগর, গোয়াতলা, শিবপুর, পেছাইয়া, জয়নগর, রাজনগর, মানিকপুরসহ অনেকগুলো গ্রামের মানুষ অবহেলিত ও তাদের চলাফেরা করতে হয় কষ্ট করে। সাড়ে চার কি.মি. ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীদের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এসকল এলাকার মানুষ বারবার অনেকের কাছে ঘোরাঘুরি করেও রাস্তাটি নির্মান করতে পারেনি। চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমার কাছে অসংখ্য বার এ সকল গ্রামবাসীদের দাবি রাস্তা করে দেয়ার জন্য। বরাদ্দ না থাকায় চেষ্টা করেও তাদের দাবি মেটাতে পারিনি। অবশেষে এলাকার নারী ও পুরুষদের উদ্বুদ্ধ করে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি নির্মাণে কাজ শুরু করি। এ রাস্তা নির্মাণ হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের মূল্য আগে ৫০০-১০০০ টাকা পেলে এখন আরও ১০০ টাকা বেশি পাবে এবং যানে করে গ্রামগুলোর বাসিন্দারা নির্বিঘেœ যাতায়াত সুবিধা পাবে। এলাকাবাসীদের সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আশাকরি আগামী সাতদিনের মধ্যে রাস্তাটি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ১০ রবিউস সানি ১৪৪২

কলমাকান্দায় স্বেচ্ছাশ্রমে ৪ কিমি. রাস্তা নির্মাণ

প্রতিনিধি, কলমাকান্দা, (নেত্রকোনা)

image

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা গত ২০ ডিসেম্বর সকাল থেকে উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের পূর্ব জিগাতলা গ্রামের মণ্ডলের বাড়ি হতে গোয়াতলা হয়ে রাধানগর গ্রাম পর্যন্ত এই রাস্তার মাটি কাটা কাজ শুরু হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, লেংগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে এলাকার প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমে সকাল থেকে মাটি কাটার কাজ শুরু করেছেন। গ্রামীণ এই কাঁচা রাস্তাটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে ওই ইউনিয়নের পূর্ব জিগাতলা, রাধানগর, গোয়াতলা, শিবপুর, পেছাইয়া, জয়নগর, রাজনগর, মানিকপুর এ সকল গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দারা যাতায়াতের সুফল ভোগ করবেন।

ছয় ফুট প্রশস্থ ও তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট উচ্চতায় রাস্তাটি নির্মাণ হলে যাতায়াত ব্যবস্থায় যোগ হবে এক নতুন মাত্রা। এ সকল গ্রামের বাসিন্দারা এতদিন বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ক্ষেতের আইল দিয়ে যাতায়াত করতেন। রাস্তাটি নির্মাণের ফলে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরবাইক নিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন। গ্রামের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে সুবিধা পাবেন। গ্রামের অসুস্থ রোগী ও গর্ভবতী নারীরাও চিকিৎসা যান চড়ে কেন্দ্রে আসতে পারবেন সংযোগস্থল পাকা রাস্তা পর্যন্ত। গ্রামবাসীরা অধীর আগ্রহের সহিত নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে আসা রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা মইজুদ্দিন, যুবক নিজাম উদ্দীন ও পূর্ব জিগাতলার আনোয়ারা আক্তারসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে নিজের রাস্তাটি নির্মাণে মাটি কাটার কাজ করছি। চেয়ারম্যানের অনুপ্রেরণায় আমরা এলাকাবাসী উদ্বুদ্ধ হয়ে মাটি কাটার কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অতীতে এলাকাবাসী পায়ে হাঁটা ছাড়া যান বাহনে চড়ে যাতায়াত করতে পারছিল না। এখন থেকে গাড়িতে করে অনেক গ্রামের মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা ও স্কুলে শিক্ষার্থীর বেশি উপকৃত হবে।

লেংগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়া স্বেচ্ছাশ্রমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন-পূর্ব জিগাতলা, রাধানগর, গোয়াতলা, শিবপুর, পেছাইয়া, জয়নগর, রাজনগর, মানিকপুরসহ অনেকগুলো গ্রামের মানুষ অবহেলিত ও তাদের চলাফেরা করতে হয় কষ্ট করে। সাড়ে চার কি.মি. ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীদের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এসকল এলাকার মানুষ বারবার অনেকের কাছে ঘোরাঘুরি করেও রাস্তাটি নির্মান করতে পারেনি। চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমার কাছে অসংখ্য বার এ সকল গ্রামবাসীদের দাবি রাস্তা করে দেয়ার জন্য। বরাদ্দ না থাকায় চেষ্টা করেও তাদের দাবি মেটাতে পারিনি। অবশেষে এলাকার নারী ও পুরুষদের উদ্বুদ্ধ করে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি নির্মাণে কাজ শুরু করি। এ রাস্তা নির্মাণ হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের মূল্য আগে ৫০০-১০০০ টাকা পেলে এখন আরও ১০০ টাকা বেশি পাবে এবং যানে করে গ্রামগুলোর বাসিন্দারা নির্বিঘেœ যাতায়াত সুবিধা পাবে। এলাকাবাসীদের সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আশাকরি আগামী সাতদিনের মধ্যে রাস্তাটি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।