সুবর্ণজয়ন্তীতে উড়াল দেবে রেল

সকাল ৮টা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়। হালকা কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে মেট্রোরেলের শ্রমিক সুমন। কাছে যেতেই বললেন, ‘ভাই ভিতরে ঢুকা যাবে না। এখানে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলছে।’ মাঝ সড়কে প্রাচীর ঘেরা অনেকটা জায়গা নিয়ে। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল-৬ মেগা প্রকল্পটি। প্রকল্পের ১৩ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৫৪ শতাংশ।

প্রতিদিন দুই দফায় ১২ ঘণ্টা করে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে নির্মাণ শ্রমিকরা। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ২০০-২৫০ শ্রমিক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকে। আবার রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টার পালায় একই সংখ্যার অন্য শ্রমিকরা একই কাজ করেন। দেশীয় শ্রমিকের পাশাপাশি জাপান, চীন, ভারত ও থাইল্যান্ডের টেকনিশিয়ান ও শ্রমিকরাও এ প্রকল্পে কাজ করছে। করোনার কারণে গত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৩ মাস কাজের গতি কিছুটা কম থাকলেও এখন পুরোদমেই চলছে নির্মাণ কাজ। কিন্তু করোনার কারণে কিছুটা শ্রমিক সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ ২০২১ এর ডিসেম্বরে সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ। তাই এখন দ্রুত দিনরাত কাজ চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণ শ্রমিক সংবাদকে বলেন, তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল। গত ১ নভেম্বর থেকে মেট্রোরেলের কাজে যোগ দিয়েছেন। ‘কাজের আবেদন করেছি গত জুন মাসে। তারপর সেপ্টেম্বরে আমাকে ডাকা হয়। এরপর ১৫-৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১ নভেম্বর কাজে যোগ দেই। প্রতিদিন ৫০০ টাকা। মাসে ১৫-১৭ হাজার টাকা তাদের বেতন দেয়া হয়। কাজে যোগ দেয়ার পর বাড়ি যেতে দেয়া হয় না। বিভিন্ন স্থানে প্রকল্পের মেসে ১২ জন করে শ্রমিকদের রাখা হয়।’

রাজধানীর প্রেসক্লাব মোড়ে ৫৮০ নম্বর পিয়ার নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেছে ৫-৭ জন শ্রমিককে। কাছে যেতেই একজন বললেন, ‘ভাই ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। ফরেনাররা দেখলে বকা দেয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শ্রমিক বলেন, ‘একটি পিয়ার তৈরি করতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে। পিয়ারের চারটি অংশ থাকে। প্রথমে পাইলিং করা হয়। তারপর সিসি-বেইজ তৈরি করা হয়। এরপর কলাম ও পিয়ার হেড নির্মাণ করা হয়। প্রেসক্লাব এলাকায় একটি স্টেশন ও ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।’

প্রকল্প সূত্র জানায়, উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। ২০১৬ সালে ২৬ জুন এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসের মতো বড় কোন দুর্যোগ না ঘটলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা-মতিঝিল অংশ খুলে দেয়া হবে।

ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন

একটি ট্রেনের ৬টি করে কোচ থাকবে। প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে। প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটারে ৯টি স্টেশন থাকবে। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাকি ৮ দশমিক ৪ কিলোমিটারে স্টেশন থাকবে ৭টি। এগুলো হলো- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এবং মতিঝিলে (বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে)। কমলাপুর অংশের এখনও নকশা চূড়ান্ত না হওয়ার স্টেশনের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোও হবে তিনতলাবিশিষ্ট। টিকিট কাউন্টার এবং অন্যান্য সুবিধাদি থাকবে দ্বিতীয় তলায়। আর ট্রেনে ওঠার জন্য প্ল্যাটফর্ম থাকবে তৃতীয় তলায়। স্টেশনগুলোতে ওঠার জন্য সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি থাকবে লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি। টিকিট দিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের ব্যবস্থা হবে স্বয়ংক্রিয়। নিরাপত্তার জন্য স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা বেষ্টনী বা প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর স্থাপন করা হবে।

৮ প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেট্রোরেল

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মাণ করা হচ্ছে এই মেট্রোরেল-৬ প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে মতিঝিল পর্যন্ত পিয়ার (খুঁটি) নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আর কমলাপুর অংশের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে নকশা তৈরির কাজ চলছে। ৮টি প্যাকেজে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রকল্পটি।

১ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-১) আওতায় দিয়াবাড়ি এলাকায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে এ প্যাকেজের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে এ প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়। ২ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-২) আওতায় ডিপোর পূর্ত কাজ চলছে। ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এ প্যাকেজের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এ পর্যন্ত এ অংশের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। যদিও গত বছর জুনের মধ্যে এ অংশের নির্মাণ করার কথা ছিল। প্রকল্প এলাকায় ডিপো থেকে উড়ালপথে ট্রেন ওঠার পথ তৈরির কাজ চলছে। পাথর-বালুর মিশ্রণে সাববেইজের কাজ শেষ। সাববেইজের উপর থাকবে পাথর, পাথরের উপর সিøúার আর পাত বসানো হবে। মেট্রোরেল পরিচালনা করা হবে ডিপো থেকে। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। ডিপোর ছাউনির জন্য ইস্পাতের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। এখানে রেলের টেস্ট ট্র্যাক বেড, কোচ আনলোডিং এরিয়া, জ্যাক পিট, বগি টার্ন টেবল, বগি ওয়াশ প¬ান্টসহ অন্যান্য অংশের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা, জলাধার, প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, মেডিকেল সেন্টারসহ অন্যান্য স্থাপনাও নির্মাণ হচ্ছে।

প্রকল্পটির ৩ ও ৪ নম্বর (সিপি-৩ ও ৪) প্যাকেজের আওতায় উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) ও উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও এলাকায় ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট এ প্যাকেজের কাজ শুরু হয়। নভেম্বর পর্যন্ত এ প্যাকেজের অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এই তিনটি প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে থাইল্যান্ডের ঠিকারদার প্রতিষ্ঠান ইটাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। তবে সিপি-২এ ইটাল থাইয়ের সহযোগী হিসেবে আছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন।

৫ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-৫) আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং বিজয় সরণি, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকায় তিনটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এ অংশের কাজ যৌথভাবে করছে জাপানের টেকেন করপোরেশন, অ্যাবে নিক্কো ও বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড। এ পর্যন্ত এই অংশের অগ্রগতি ৫২ দশমিক ১১ শতাংশ। ৬ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-৬) আওতায় কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিলে চারটি স্টেশনও নির্মাণ করা হবে। এ অংশের কাজ যৌথভাবে করছে জাপানের সুমিতোমা মিতসুই কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও ইটাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। এ পর্যন্ত এই অংশের অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

৭ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-৭) আওতায় মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো ওঠানামার জন্য চলন্ত সিঁড়ি ও লিফট, প্রায় ২০ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক, স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায় ব্যবস্থাপনা, ১৩২ কেভি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ও ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম, প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর ইত্যাদি স্থাপন করা হবে। এর কাজ করছে জাপানের মারুবিনি করপোরেশন ও ভারতের এলঅ্যান্ডটি (লারসন অ্যান্ড তুবরো)। ২০১৮ সালের ১১ জুলাই প্যাকেজটির কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত এই অংশের অগ্রগতি ৫২ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্যাকেজের আওতায় থাকা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জাপানসহ বিভিন্ন দেশে তৈরি করা হচ্ছে। ৮ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-৮) আওতায় মেট্রোরেলের জন্য রোলিং স্টক (ইঞ্জিন-কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম। এর মধ্যে ২৪ সেট ট্রেন এবং ডিপো ইকুইপমেন্ট ছাড়াও ট্রেন সিমুলেটর, খুচরা যন্ত্রাংশ ও সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এ প্যাকেজের বাস্তব কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত এই অংশের অগগ্রতি ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

কি বলছে কর্তৃপক্ষ

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক সংবাদকে বলেন, ‘প্রাথামিকভাবে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশটি খুলে দেয়া হবে। এছাড়া কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার অংশটির বাস্তবায়নে আরও ৬ মাস সময় লাগতে পারে। করোনার কারণে জাপানি নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। বর্তমানে সবাই চলে এসেছে। প্রকল্প এলাকায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রকল্প এলাকার কাজ জাপানে বসে মনিটরিং করবে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে শ্রমিকদের কাজে নেয়া হচ্ছে। করোনা চিকিৎসার জন্য প্রকল্প এলাকায় দুটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করছেন শ্রমিকরা।’

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ঢাকা ও আশপাশের জেলার যানজট নিরসনে নির্মাণ করা হচ্ছে ৫টি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল। ইতিমধ্যে রাজধানীর উত্তরা (উত্তর) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি-৬’র নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া পাতাল ও উড়াল রেলপথের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হবে বাকি ৪টি মেট্রোরেল। এমআরটি ১, ২, ৪ ও ৫ লাইনে ১০৯ কিলোমিটার রুট চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি-১ নির্মাণ করা হবে দুটি অংশে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত একটি অংশ। অপরটি নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত। গাবতলী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মাণ করা হবে এমআরটি-২। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এমআরটি-৫ (উত্তর), গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি-৫ (দক্ষিণ), কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এমআরটি-৪ লাইন চূড়ান্ত হয়েছে বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পূর্ণ দ্রুতগতির এই মেট্রোরেল নির্মাণ করা হলে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় যানজট নিরসন হবে জানান সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ১০ রবিউস সানি ১৪৪২

সুবর্ণজয়ন্তীতে উড়াল দেবে রেল

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

সকাল ৮টা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়। হালকা কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে মেট্রোরেলের শ্রমিক সুমন। কাছে যেতেই বললেন, ‘ভাই ভিতরে ঢুকা যাবে না। এখানে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলছে।’ মাঝ সড়কে প্রাচীর ঘেরা অনেকটা জায়গা নিয়ে। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল-৬ মেগা প্রকল্পটি। প্রকল্পের ১৩ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৫৪ শতাংশ।

প্রতিদিন দুই দফায় ১২ ঘণ্টা করে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে নির্মাণ শ্রমিকরা। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ২০০-২৫০ শ্রমিক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকে। আবার রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টার পালায় একই সংখ্যার অন্য শ্রমিকরা একই কাজ করেন। দেশীয় শ্রমিকের পাশাপাশি জাপান, চীন, ভারত ও থাইল্যান্ডের টেকনিশিয়ান ও শ্রমিকরাও এ প্রকল্পে কাজ করছে। করোনার কারণে গত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৩ মাস কাজের গতি কিছুটা কম থাকলেও এখন পুরোদমেই চলছে নির্মাণ কাজ। কিন্তু করোনার কারণে কিছুটা শ্রমিক সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ ২০২১ এর ডিসেম্বরে সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ। তাই এখন দ্রুত দিনরাত কাজ চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণ শ্রমিক সংবাদকে বলেন, তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল। গত ১ নভেম্বর থেকে মেট্রোরেলের কাজে যোগ দিয়েছেন। ‘কাজের আবেদন করেছি গত জুন মাসে। তারপর সেপ্টেম্বরে আমাকে ডাকা হয়। এরপর ১৫-৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১ নভেম্বর কাজে যোগ দেই। প্রতিদিন ৫০০ টাকা। মাসে ১৫-১৭ হাজার টাকা তাদের বেতন দেয়া হয়। কাজে যোগ দেয়ার পর বাড়ি যেতে দেয়া হয় না। বিভিন্ন স্থানে প্রকল্পের মেসে ১২ জন করে শ্রমিকদের রাখা হয়।’

রাজধানীর প্রেসক্লাব মোড়ে ৫৮০ নম্বর পিয়ার নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেছে ৫-৭ জন শ্রমিককে। কাছে যেতেই একজন বললেন, ‘ভাই ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। ফরেনাররা দেখলে বকা দেয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শ্রমিক বলেন, ‘একটি পিয়ার তৈরি করতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে। পিয়ারের চারটি অংশ থাকে। প্রথমে পাইলিং করা হয়। তারপর সিসি-বেইজ তৈরি করা হয়। এরপর কলাম ও পিয়ার হেড নির্মাণ করা হয়। প্রেসক্লাব এলাকায় একটি স্টেশন ও ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।’

প্রকল্প সূত্র জানায়, উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। ২০১৬ সালে ২৬ জুন এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসের মতো বড় কোন দুর্যোগ না ঘটলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা-মতিঝিল অংশ খুলে দেয়া হবে।

ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন

একটি ট্রেনের ৬টি করে কোচ থাকবে। প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে। প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটারে ৯টি স্টেশন থাকবে। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাকি ৮ দশমিক ৪ কিলোমিটারে স্টেশন থাকবে ৭টি। এগুলো হলো- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এবং মতিঝিলে (বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে)। কমলাপুর অংশের এখনও নকশা চূড়ান্ত না হওয়ার স্টেশনের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোও হবে তিনতলাবিশিষ্ট। টিকিট কাউন্টার এবং অন্যান্য সুবিধাদি থাকবে দ্বিতীয় তলায়। আর ট্রেনে ওঠার জন্য প্ল্যাটফর্ম থাকবে তৃতীয় তলায়। স্টেশনগুলোতে ওঠার জন্য সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি থাকবে লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি। টিকিট দিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের ব্যবস্থা হবে স্বয়ংক্রিয়। নিরাপত্তার জন্য স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা বেষ্টনী বা প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর স্থাপন করা হবে।

৮ প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেট্রোরেল

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মাণ করা হচ্ছে এই মেট্রোরেল-৬ প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে মতিঝিল পর্যন্ত পিয়ার (খুঁটি) নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আর কমলাপুর অংশের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে নকশা তৈরির কাজ চলছে। ৮টি প্যাকেজে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রকল্পটি।

১ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-১) আওতায় দিয়াবাড়ি এলাকায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে এ প্যাকেজের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে এ প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়। ২ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-২) আওতায় ডিপোর পূর্ত কাজ চলছে। ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এ প্যাকেজের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এ পর্যন্ত এ অংশের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। যদিও গত বছর জুনের মধ্যে এ অংশের নির্মাণ করার কথা ছিল। প্রকল্প এলাকায় ডিপো থেকে উড়ালপথে ট্রেন ওঠার পথ তৈরির কাজ চলছে। পাথর-বালুর মিশ্রণে সাববেইজের কাজ শেষ। সাববেইজের উপর থাকবে পাথর, পাথরের উপর সিøúার আর পাত বসানো হবে। মেট্রোরেল পরিচালনা করা হবে ডিপো থেকে। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। ডিপোর ছাউনির জন্য ইস্পাতের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। এখানে রেলের টেস্ট ট্র্যাক বেড, কোচ আনলোডিং এরিয়া, জ্যাক পিট, বগি টার্ন টেবল, বগি ওয়াশ প¬ান্টসহ অন্যান্য অংশের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা, জলাধার, প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, মেডিকেল সেন্টারসহ অন্যান্য স্থাপনাও নির্মাণ হচ্ছে।

প্রকল্পটির ৩ ও ৪ নম্বর (সিপি-৩ ও ৪) প্যাকেজের আওতায় উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) ও উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও এলাকায় ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট এ প্যাকেজের কাজ শুরু হয়। নভেম্বর পর্যন্ত এ প্যাকেজের অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এই তিনটি প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে থাইল্যান্ডের ঠিকারদার প্রতিষ্ঠান ইটাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। তবে সিপি-২এ ইটাল থাইয়ের সহযোগী হিসেবে আছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন।

৫ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-৫) আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং বিজয় সরণি, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকায় তিনটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এ অংশের কাজ যৌথভাবে করছে জাপানের টেকেন করপোরেশন, অ্যাবে নিক্কো ও বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড। এ পর্যন্ত এই অংশের অগ্রগতি ৫২ দশমিক ১১ শতাংশ। ৬ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-৬) আওতায় কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিলে চারটি স্টেশনও নির্মাণ করা হবে। এ অংশের কাজ যৌথভাবে করছে জাপানের সুমিতোমা মিতসুই কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও ইটাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। এ পর্যন্ত এই অংশের অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

৭ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-৭) আওতায় মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো ওঠানামার জন্য চলন্ত সিঁড়ি ও লিফট, প্রায় ২০ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক, স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায় ব্যবস্থাপনা, ১৩২ কেভি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ও ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম, প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর ইত্যাদি স্থাপন করা হবে। এর কাজ করছে জাপানের মারুবিনি করপোরেশন ও ভারতের এলঅ্যান্ডটি (লারসন অ্যান্ড তুবরো)। ২০১৮ সালের ১১ জুলাই প্যাকেজটির কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত এই অংশের অগ্রগতি ৫২ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্যাকেজের আওতায় থাকা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জাপানসহ বিভিন্ন দেশে তৈরি করা হচ্ছে। ৮ নম্বর প্যাকেজের (সিপি-৮) আওতায় মেট্রোরেলের জন্য রোলিং স্টক (ইঞ্জিন-কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম। এর মধ্যে ২৪ সেট ট্রেন এবং ডিপো ইকুইপমেন্ট ছাড়াও ট্রেন সিমুলেটর, খুচরা যন্ত্রাংশ ও সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এ প্যাকেজের বাস্তব কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত এই অংশের অগগ্রতি ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

কি বলছে কর্তৃপক্ষ

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক সংবাদকে বলেন, ‘প্রাথামিকভাবে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশটি খুলে দেয়া হবে। এছাড়া কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার অংশটির বাস্তবায়নে আরও ৬ মাস সময় লাগতে পারে। করোনার কারণে জাপানি নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। বর্তমানে সবাই চলে এসেছে। প্রকল্প এলাকায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রকল্প এলাকার কাজ জাপানে বসে মনিটরিং করবে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে শ্রমিকদের কাজে নেয়া হচ্ছে। করোনা চিকিৎসার জন্য প্রকল্প এলাকায় দুটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করছেন শ্রমিকরা।’

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ঢাকা ও আশপাশের জেলার যানজট নিরসনে নির্মাণ করা হচ্ছে ৫টি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল। ইতিমধ্যে রাজধানীর উত্তরা (উত্তর) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি-৬’র নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া পাতাল ও উড়াল রেলপথের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হবে বাকি ৪টি মেট্রোরেল। এমআরটি ১, ২, ৪ ও ৫ লাইনে ১০৯ কিলোমিটার রুট চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি-১ নির্মাণ করা হবে দুটি অংশে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত একটি অংশ। অপরটি নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত। গাবতলী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মাণ করা হবে এমআরটি-২। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এমআরটি-৫ (উত্তর), গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি-৫ (দক্ষিণ), কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এমআরটি-৪ লাইন চূড়ান্ত হয়েছে বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পূর্ণ দ্রুতগতির এই মেট্রোরেল নির্মাণ করা হলে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় যানজট নিরসন হবে জানান সংশ্লিষ্টরা।