শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতিমালা হচ্ছে

অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা পেতে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার পরিধি বাড়াতে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ণ করতে যাচ্ছে সরকার। ইতেমাধ্যে ‘মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম পরিচালনা নীতিমালা, ২০২০’ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংস্কৃতি নীতি সংশোধনের উদ্যোগের পর দেশের অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া সব ধরনের মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চার সুনির্দিষ্ট কাঠামো দাঁড় করাতে এই নীতিমালা করছে সরকার। দেশের সব মাদ্রাসাও এ নীতিমালা অনুসরণ করবে- এমন পরিকল্পনা করছে সরকার।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০ হাজারের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে সরকার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করবে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের সংগীত চর্চা করানো হবে। সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলোর প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে প্রতি বছর উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে বলেও খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর ‘মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম পরিচালনা নীতিমালা, ২০২০’ খসড়াটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। খসড়া নীতিমালায় অংশীজনসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১৭ জানুয়ারির মধ্যে মতামত দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা পেতে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার পরিধি বাড়াতে ২০০৬ সালের ‘জাতীয় সংস্কৃতি নীতি’ সংশোধন করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক চর্চায় একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করাতে নীতিমালা করা হচ্ছে। আগে থেকেই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের চর্চা অব্যাহত রয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই নিয়মে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে নীতিমালা করা হচ্ছে।

খসড়া নীতিমালার পটভূমিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সংস্কৃতিমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘সাংস্কৃতিক চর্চা’ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃতি চর্চার উদ্দেশ্য তুলে ধরে নীতিমালায় বলা হয়, দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম চালু করা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সুস্থ ও দেশীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশে উৎসাহিত করা এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমে ভবিষ্যতে শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনে উৎসাহিত করা। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমে উপযুক্ত শিক্ষক ও শিল্পী গড়ে তোলা। নীতিমালায় বলা হয়, সংস্কৃতি চর্চা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি বিদ্যালয়কে প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত হারে একটি হারমোনিয়াম ও একসেট তবলা কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। জেলা প্রশাসক জেলা কমিটির সুপারিশে প্রশিক্ষক ও তবলা বাদককে নিয়োজিত করবেন।

বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চার প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য প্রশিক্ষক এবং তবলা বাদককে (তবলা সঙ্গতকারী) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক মঞ্জুরি খাত থেকে নির্ধারিত হারে মাসিক সম্মানী দেয়া হবে। সাংস্কৃতিক চর্চায় অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে উৎসাহ সঞ্চার করতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলোতে একুশে পদক, নজরুল জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী, রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী বা অন্য কোন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উৎসবসহ বিভিন্ন বছর কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজয়ী প্রশিক্ষণার্থীদের পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ১০ রবিউস সানি ১৪৪২

শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতিমালা হচ্ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা পেতে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার পরিধি বাড়াতে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ণ করতে যাচ্ছে সরকার। ইতেমাধ্যে ‘মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম পরিচালনা নীতিমালা, ২০২০’ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংস্কৃতি নীতি সংশোধনের উদ্যোগের পর দেশের অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া সব ধরনের মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চার সুনির্দিষ্ট কাঠামো দাঁড় করাতে এই নীতিমালা করছে সরকার। দেশের সব মাদ্রাসাও এ নীতিমালা অনুসরণ করবে- এমন পরিকল্পনা করছে সরকার।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০ হাজারের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে সরকার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করবে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের সংগীত চর্চা করানো হবে। সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলোর প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে প্রতি বছর উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে বলেও খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর ‘মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম পরিচালনা নীতিমালা, ২০২০’ খসড়াটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। খসড়া নীতিমালায় অংশীজনসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১৭ জানুয়ারির মধ্যে মতামত দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা পেতে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার পরিধি বাড়াতে ২০০৬ সালের ‘জাতীয় সংস্কৃতি নীতি’ সংশোধন করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক চর্চায় একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করাতে নীতিমালা করা হচ্ছে। আগে থেকেই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের চর্চা অব্যাহত রয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই নিয়মে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে নীতিমালা করা হচ্ছে।

খসড়া নীতিমালার পটভূমিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সংস্কৃতিমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘সাংস্কৃতিক চর্চা’ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃতি চর্চার উদ্দেশ্য তুলে ধরে নীতিমালায় বলা হয়, দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম চালু করা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সুস্থ ও দেশীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশে উৎসাহিত করা এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমে ভবিষ্যতে শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনে উৎসাহিত করা। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমে উপযুক্ত শিক্ষক ও শিল্পী গড়ে তোলা। নীতিমালায় বলা হয়, সংস্কৃতি চর্চা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি বিদ্যালয়কে প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত হারে একটি হারমোনিয়াম ও একসেট তবলা কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। জেলা প্রশাসক জেলা কমিটির সুপারিশে প্রশিক্ষক ও তবলা বাদককে নিয়োজিত করবেন।

বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চার প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য প্রশিক্ষক এবং তবলা বাদককে (তবলা সঙ্গতকারী) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক মঞ্জুরি খাত থেকে নির্ধারিত হারে মাসিক সম্মানী দেয়া হবে। সাংস্কৃতিক চর্চায় অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে উৎসাহ সঞ্চার করতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলোতে একুশে পদক, নজরুল জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী, রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী বা অন্য কোন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উৎসবসহ বিভিন্ন বছর কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজয়ী প্রশিক্ষণার্থীদের পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।