ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারেজ চলছে পাথরবোঝাই ট্রাক

ভারি যানবাহন চলাচলের অনুমতি না থাকলেও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা ব্যারেজের ওপর দিয়ে প্রতিদিনই চলছে পাথরবোঝাই ট্রাক। ফলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পটি আবারও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিনশ’ ট্রাক ব্যারেজের উপর দিয়ে চলাচল করছে। প্রতিটি ট্রাকের ধারণক্ষমতা ২৩ থেকে ২৫ টন পাথর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পরও কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন ব্যারেজের উপকারভোগীরা। মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে ট্রাক চলাচল করতে দেয়ায় হুমকিতে পড়েছে দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত এক বছর তিস্তা ব্যারেজের উপর দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। গত এক মাস ধরে আবারও পাথরবোঝাই ট্রাক চলতে শুরু করেছে। অজানা কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ট্রাক চলাচল বন্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

দোয়ানী এলাকার বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, তিস্তা ব্যারেজের উপর দিয়ে রাত-দিন সব সময় পাথরবোঝাই ট্রাক চলছে। কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। একটি চক্র সাড়ে তিনশ’ থেকে পাচঁশ’ টাকার বিনিময়ে এই সুবিধা করে দিচ্ছে। তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস করে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, আমরা অসহায়। কারণ সরকারদলীয় নেতাদের চাপের কারণে আমরা ট্রাক বন্ধ করতে পারছি না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

ট্রাকচালক শাহাআলী বলেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে তিস্তা ব্যারেজ কাছে এবং সময় বাঁচে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা সড়ক সেতু হয়ে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর যেতে প্রায় একশ’ কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়। সাড়ে তিনশ’ থেকে পাচঁশ’ টাকা দিলেই ব্যারেজ পার হওয়া যায়। এটাই বড় সুবিধা। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশেই চলছে পাথর বোঝাই ট্রাক। তাই প্রশাসনের হয়রানিও হচ্ছে না।

তিস্তা সড়ক সেতুর টোল ইজারাদার সুমন খান বলেন, ‘তিস্তা ব্যারেজের উপর দিয়ে পাথরবোঝাই ট্রাক চলায় টোল আদায় কমেছে। একটি চক্র চালকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে পাথরবোঝাই ট্রাক চলার সুযোগ করে দিচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট যেমন ব্যবসায় মার খাচ্ছে ঠিক তেমনি দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজও ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

তিস্তা ব্যারেজে পানি উন্নয়র বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) একেএম শামসুজ্জোহা বলেন, তিস্তা ব্যারেজের উপর দিয়ে শুধু হালকা যান চলাচলের অনুমতি রয়েছে। মাঝে মাঝে ভুট্টা ও ধানবোঝাই কিছু ট্রাক চলে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারীরা তা নজরদারি করছেন প্রতিনিয়ত। পাথরবোঝাই ট্রাক হয়ত রাতের আঁধারে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলতে পারে। বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ১০ রবিউস সানি ১৪৪২

ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারেজ চলছে পাথরবোঝাই ট্রাক

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

ভারি যানবাহন চলাচলের অনুমতি না থাকলেও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা ব্যারেজের ওপর দিয়ে প্রতিদিনই চলছে পাথরবোঝাই ট্রাক। ফলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পটি আবারও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিনশ’ ট্রাক ব্যারেজের উপর দিয়ে চলাচল করছে। প্রতিটি ট্রাকের ধারণক্ষমতা ২৩ থেকে ২৫ টন পাথর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পরও কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন ব্যারেজের উপকারভোগীরা। মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে ট্রাক চলাচল করতে দেয়ায় হুমকিতে পড়েছে দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত এক বছর তিস্তা ব্যারেজের উপর দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। গত এক মাস ধরে আবারও পাথরবোঝাই ট্রাক চলতে শুরু করেছে। অজানা কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ট্রাক চলাচল বন্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

দোয়ানী এলাকার বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, তিস্তা ব্যারেজের উপর দিয়ে রাত-দিন সব সময় পাথরবোঝাই ট্রাক চলছে। কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। একটি চক্র সাড়ে তিনশ’ থেকে পাচঁশ’ টাকার বিনিময়ে এই সুবিধা করে দিচ্ছে। তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস করে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, আমরা অসহায়। কারণ সরকারদলীয় নেতাদের চাপের কারণে আমরা ট্রাক বন্ধ করতে পারছি না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

ট্রাকচালক শাহাআলী বলেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে তিস্তা ব্যারেজ কাছে এবং সময় বাঁচে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা সড়ক সেতু হয়ে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর যেতে প্রায় একশ’ কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়। সাড়ে তিনশ’ থেকে পাচঁশ’ টাকা দিলেই ব্যারেজ পার হওয়া যায়। এটাই বড় সুবিধা। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশেই চলছে পাথর বোঝাই ট্রাক। তাই প্রশাসনের হয়রানিও হচ্ছে না।

তিস্তা সড়ক সেতুর টোল ইজারাদার সুমন খান বলেন, ‘তিস্তা ব্যারেজের উপর দিয়ে পাথরবোঝাই ট্রাক চলায় টোল আদায় কমেছে। একটি চক্র চালকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে পাথরবোঝাই ট্রাক চলার সুযোগ করে দিচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট যেমন ব্যবসায় মার খাচ্ছে ঠিক তেমনি দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজও ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

তিস্তা ব্যারেজে পানি উন্নয়র বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) একেএম শামসুজ্জোহা বলেন, তিস্তা ব্যারেজের উপর দিয়ে শুধু হালকা যান চলাচলের অনুমতি রয়েছে। মাঝে মাঝে ভুট্টা ও ধানবোঝাই কিছু ট্রাক চলে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারীরা তা নজরদারি করছেন প্রতিনিয়ত। পাথরবোঝাই ট্রাক হয়ত রাতের আঁধারে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলতে পারে। বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।