লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম বিতরণ হয়েছে কৃষিঋণ

চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছিল। সেই বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর প্রতিমাসে গড়ে ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বিতরণ করার কথা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮.৪৩ শতাংশ কম বিতরণ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি বিতরণ হয়েছে ঋণ। জুলাই-নভেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৫৯ শতাংশ বা ৬৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জুলাই-নভেম্বর মাসে ৮৯৩৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, আগের বছরের একই সময়ে কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছিল ৮৩০৫ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রথম দুই মাস খুবই ভালো ছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমবারের মতো ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো ২৪১২৪ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ বিতরণ করতে ব্যাংকগুলোতে কঠোর নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কৃষিখাত যেহেতু দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই করোনা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কৃষি প্রধান অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে কৃষি ঋণ বিতরণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশের কর্মশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি সরাসরি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, জুনে সারাদেশে বন্যার ফলে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিশাল জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিতে জড়িত বলে ব্যাংকগুলোকে খামার ঋণ বিতরণে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, বন্যাকবলিত খামারিদের জন্য ঝামেলামুক্ত এবং সময়োপযোগী ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে চলতি বছরের ২৩ জুলাই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষকদের ঋণ সুবিধা দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছিল। যাতে তারা হাঁস-মুরগি পালন ও গবাদি পশু পালন ও খাদ উৎপাদনের মতো কার্যক্রম শুরু করতে পারে।

করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক, গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্তরের কৃষকরা ফুল, ফল, শস্য, মাছ, হাঁস-মুরগি, দুগ্ধ খামার এবং প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের জন্য পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে বিশেষ ঋণ পাওয়ার যোগ্য। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি খাতের জন্য ৫ শতাংশ সুদে এই তহবিল ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে উপকারভোগীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ঋণের সুদ ৪ শতাংশ নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বিশেষ প্রণোদনা তহবিলের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক হতে নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। জুলাই শেষে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ৪৩টি ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতায় ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ৩ হাজার ১৯৫ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করার কথা। অন্যদিকে বিশেষায়িত দুটি ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) বিতরণ করবে ৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ৪১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৩৯টির জন্য ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি খাতের ৯টি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭শ’ ১ কোটি টাকা।

রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ , ১২ পৌষ ১৪২৭, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম বিতরণ হয়েছে কৃষিঋণ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছিল। সেই বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর প্রতিমাসে গড়ে ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বিতরণ করার কথা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮.৪৩ শতাংশ কম বিতরণ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি বিতরণ হয়েছে ঋণ। জুলাই-নভেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৫৯ শতাংশ বা ৬৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জুলাই-নভেম্বর মাসে ৮৯৩৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, আগের বছরের একই সময়ে কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছিল ৮৩০৫ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রথম দুই মাস খুবই ভালো ছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমবারের মতো ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো ২৪১২৪ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ বিতরণ করতে ব্যাংকগুলোতে কঠোর নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কৃষিখাত যেহেতু দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই করোনা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কৃষি প্রধান অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে কৃষি ঋণ বিতরণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশের কর্মশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি সরাসরি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, জুনে সারাদেশে বন্যার ফলে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিশাল জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিতে জড়িত বলে ব্যাংকগুলোকে খামার ঋণ বিতরণে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, বন্যাকবলিত খামারিদের জন্য ঝামেলামুক্ত এবং সময়োপযোগী ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে চলতি বছরের ২৩ জুলাই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষকদের ঋণ সুবিধা দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছিল। যাতে তারা হাঁস-মুরগি পালন ও গবাদি পশু পালন ও খাদ উৎপাদনের মতো কার্যক্রম শুরু করতে পারে।

করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক, গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্তরের কৃষকরা ফুল, ফল, শস্য, মাছ, হাঁস-মুরগি, দুগ্ধ খামার এবং প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের জন্য পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে বিশেষ ঋণ পাওয়ার যোগ্য। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি খাতের জন্য ৫ শতাংশ সুদে এই তহবিল ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে উপকারভোগীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ঋণের সুদ ৪ শতাংশ নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বিশেষ প্রণোদনা তহবিলের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক হতে নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। জুলাই শেষে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ৪৩টি ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতায় ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ৩ হাজার ১৯৫ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করার কথা। অন্যদিকে বিশেষায়িত দুটি ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) বিতরণ করবে ৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ৪১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৩৯টির জন্য ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি খাতের ৯টি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭শ’ ১ কোটি টাকা।