কুড়িগ্রামের রাজারহাটে

চাকিরপশার নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ দাবিতে সমাবেশ

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় চাকিরপশার নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, অবৈধ ইজারা বাতিল এবং সেতুবিহীন সড়কে সেতু স্থাপনের দাবিতে গতকাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজারহাট চাকিরপাশা নদী সুরক্ষা কমিটি, রিভারাইন পিপল এবং গণকমিটির আয়োজনে রাজারহাট রেলস্টেশন চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, রিভারাইন পিপলের পরিচালক এবং নদী সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়ক ড. তুহিন ওয়াদুদু। সংগঠনের আহ্বায়ক খন্দকার আরিফের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান, গণকমিটির সাবেক কেন্দ্র্রীয় সভাপতি নাহিদ হাসান, চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির সদস্যসচিব তারেক আহমেদ, সংগঠক গজেন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ।

খন্দকার আরিফ বলেন, দীর্ঘদিনে আমাদের চাকিরপশার নদী স্থানীয় কিছু লোকজন দখল করেছে। এই দখল উচ্ছেদে যত বিলম্ব হবে ততই ভুক্তভোগী মানুষের ক্ষতি চলতে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, চাকিরপশার নদীর উৎপত্তিস্থল কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইটাকুড়ি নামক নিম্নাঞ্চল (দোলা)। ছাটমল্লিকবেগ, দিনা, নাটুয়ামহল, পুটিকাটা, পুনকর, চেতনা, দেবীচরণ, দক্ষিণ প্রাণপতি মৌজার নিম্নাঞ্চলের পানি মিলে এই নদীর প্রবাহের সূত্রপাত করেছে। লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কিছু কিছু স্থানের পানিও ইটাকুড়িতে নেমে আসে। নদীটি বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত।

উজানে নদীটির নাম চাকিরপশার। ভাটিতে সুকদেব এলাকায় এ নদীটি মরাতিস্তা নামে পরিচিত। তারও ভাটিতে নাজিমখান ইউনিয়নে নদীটির নাম বুড়িতিস্তা। এ নদী মূলত উলিপুর দিয়ে প্রবাহিত বুড়িতিস্তার উজানের অংশ। প্রায় ৪০ বছর আগে নদীটি বিভিন্ন নামে প্রবাহিত হয়ে উলিপুর উপজেলার কাচকোল নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হতো। উলিপুরের থেতরাই নামক স্থানে তিস্তা নদী ভেঙে এ নদীর অনেকটাই ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন বুড়িতিস্তা দুই ভাগ হয়। থেতরাই থেকে বুড়িতিস্তা (উলিপুর) তিস্তা নদীর শাখা নদীতে পরিণত হয়। অন্যদিকে উজানের বুড়িতিস্তা (রাজারহাট) তিস্তা নদীর উপনদীতে পরিণত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেনÑ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদী রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। অভৈধভাবে দখল হওয়া নদী যদি দ্রুতই উচ্ছেদ করা না যায়, তাহলে কৃষির ওপর যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে তা দূর করা যাবে না। অনতিবিলম্বে দখল এবং বেআইনি ইজারা বাতিল করতে হবে।

ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, সরকারি অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা এবং কিছু মানুষের দখলের কারণে নদীটি অস্তিত্ব হারাচ্ছে। তৈরি হয়েছে জলাবব্ধতা। এ নদীর জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে, বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধ বন্দোবস্ত বাতিল করতে হবে, বিজ্ঞানসম্মত খনন করতে হবে, পানির প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।

‘সফিয়ার রহমান বলেন, ‘যারা নদীর অবৈধ দখলদার তারা দেশের শত্রু। রাজাকারের মতো এসব নদীর দখলদারদেরও তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।’

নাহিদ হাসান বলেন, নদী উদ্ধারের আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে। অবৈধভাবে যারা নদী দখল করে আছে তারা অপরাধী। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

গজেন্দ্রনাথ রায় বলেন- ‘আমরা কোন হুমকির কাছে মাথা নত করি না করব না। জলাবব্ধতার কারণে আমরা ফসল ঘরে তুলতে পারি না আর কয়েকজন দখলদারের কারণে হাজার হাজার একর জমির ফসল বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা অতিদ্রুত নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে দিতে চাই। নদী বাঁচলে কৃষিক বাঁচবে, মৎসজীবী বাঁচবে।

রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ , ১২ পৌষ ১৪২৭, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে

চাকিরপশার নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ দাবিতে সমাবেশ

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

image

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় চাকিরপশার নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, অবৈধ ইজারা বাতিল এবং সেতুবিহীন সড়কে সেতু স্থাপনের দাবিতে গতকাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজারহাট চাকিরপাশা নদী সুরক্ষা কমিটি, রিভারাইন পিপল এবং গণকমিটির আয়োজনে রাজারহাট রেলস্টেশন চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, রিভারাইন পিপলের পরিচালক এবং নদী সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়ক ড. তুহিন ওয়াদুদু। সংগঠনের আহ্বায়ক খন্দকার আরিফের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান, গণকমিটির সাবেক কেন্দ্র্রীয় সভাপতি নাহিদ হাসান, চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির সদস্যসচিব তারেক আহমেদ, সংগঠক গজেন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ।

খন্দকার আরিফ বলেন, দীর্ঘদিনে আমাদের চাকিরপশার নদী স্থানীয় কিছু লোকজন দখল করেছে। এই দখল উচ্ছেদে যত বিলম্ব হবে ততই ভুক্তভোগী মানুষের ক্ষতি চলতে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, চাকিরপশার নদীর উৎপত্তিস্থল কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইটাকুড়ি নামক নিম্নাঞ্চল (দোলা)। ছাটমল্লিকবেগ, দিনা, নাটুয়ামহল, পুটিকাটা, পুনকর, চেতনা, দেবীচরণ, দক্ষিণ প্রাণপতি মৌজার নিম্নাঞ্চলের পানি মিলে এই নদীর প্রবাহের সূত্রপাত করেছে। লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কিছু কিছু স্থানের পানিও ইটাকুড়িতে নেমে আসে। নদীটি বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত।

উজানে নদীটির নাম চাকিরপশার। ভাটিতে সুকদেব এলাকায় এ নদীটি মরাতিস্তা নামে পরিচিত। তারও ভাটিতে নাজিমখান ইউনিয়নে নদীটির নাম বুড়িতিস্তা। এ নদী মূলত উলিপুর দিয়ে প্রবাহিত বুড়িতিস্তার উজানের অংশ। প্রায় ৪০ বছর আগে নদীটি বিভিন্ন নামে প্রবাহিত হয়ে উলিপুর উপজেলার কাচকোল নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হতো। উলিপুরের থেতরাই নামক স্থানে তিস্তা নদী ভেঙে এ নদীর অনেকটাই ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন বুড়িতিস্তা দুই ভাগ হয়। থেতরাই থেকে বুড়িতিস্তা (উলিপুর) তিস্তা নদীর শাখা নদীতে পরিণত হয়। অন্যদিকে উজানের বুড়িতিস্তা (রাজারহাট) তিস্তা নদীর উপনদীতে পরিণত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেনÑ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদী রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। অভৈধভাবে দখল হওয়া নদী যদি দ্রুতই উচ্ছেদ করা না যায়, তাহলে কৃষির ওপর যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে তা দূর করা যাবে না। অনতিবিলম্বে দখল এবং বেআইনি ইজারা বাতিল করতে হবে।

ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, সরকারি অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা এবং কিছু মানুষের দখলের কারণে নদীটি অস্তিত্ব হারাচ্ছে। তৈরি হয়েছে জলাবব্ধতা। এ নদীর জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে, বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধ বন্দোবস্ত বাতিল করতে হবে, বিজ্ঞানসম্মত খনন করতে হবে, পানির প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।

‘সফিয়ার রহমান বলেন, ‘যারা নদীর অবৈধ দখলদার তারা দেশের শত্রু। রাজাকারের মতো এসব নদীর দখলদারদেরও তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।’

নাহিদ হাসান বলেন, নদী উদ্ধারের আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে। অবৈধভাবে যারা নদী দখল করে আছে তারা অপরাধী। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

গজেন্দ্রনাথ রায় বলেন- ‘আমরা কোন হুমকির কাছে মাথা নত করি না করব না। জলাবব্ধতার কারণে আমরা ফসল ঘরে তুলতে পারি না আর কয়েকজন দখলদারের কারণে হাজার হাজার একর জমির ফসল বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা অতিদ্রুত নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে দিতে চাই। নদী বাঁচলে কৃষিক বাঁচবে, মৎসজীবী বাঁচবে।