কিশোরগঞ্জে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ : নির্বিকার মানুষ

সম্প্রতি দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রণ ভয়াবহরূপে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও বাড়ছে, বাড়ছে কিশোরগঞ্জেও। বৃটেনসহ কয়েকটি দেশে দ্রুত সংক্রমণশীল করোনার নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও নতুন প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন মহল থেকে মাস্ক ব্যহারের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালনসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও মানুষের মাঝে এক ধরনের নির্বিকার মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মাঝে মাস্কের ব্যবহার একেবারেই কমে গিয়েছিল। শতকরা ৫ ভাগ মানুষও মাস্ক পরত না। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার লক্ষ্যে প্রচারণা এবং এনফোর্সমেন্ট জোরদার করার ফলে মাস্কের ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে। তারপরও কোন কোন হাটবাজারে নাজুক চিত্র দেখা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে জেলা শহরের বড়বাজারের পাইকারি সবজির হাটে গিয়ে দেখা গেছে শত শত ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। অথচ কারও মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি! সবাই গায়ে গা লাগিয়ে কেনাবেচা করছেন। দেশে যে করোনা সংক্রমণ চলছে, দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে, বড়বাজারের দিকে তাকালে তা বোঝার কোন উপায়ই নেই।

কিশোরগঞ্জে এক সময় একদিনে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা প্রায় অর্ধসহ¯্র হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সচেতনতামূলক কর্মসূচির কারণে সেই অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হচ্ছিল। সংক্রমণ কমতে কমতে অর্ধশতের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। দৈনিক চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমতে কমতে গত ৩ ডিসেম্বর থেকে টানা ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭০ এর নিচে চলে এসেছিল। ১৩ ডিসেম্বর বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ জনে উন্নীত হয়ে আবার ১৪,১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর ৭০ এর নিচে নেমে আসে। এরপর ১৭ ডিসেম্বর থেকে ৭০ অতিক্রম করে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ ডিসেম্বর নতুন ৬ জনসহ চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১ তে! এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার ১৩ উপজেলায় মোট সংক্রমিত হয়েছে ৩ হাজার ৪০১ জন, মারা গেছে ৫৯ জন, আর সুস্থ হয়েছে ৩ হাজার ২৬১ জন।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ করার পর সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়। সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমানের চাহিদার কারণে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর ১৫ লাখ টাকা সংস্থানের ফলে এখানে ৪টি হাইফ্লোনেজাল ক্যানুলা স্থাপন করা হয়েছে। এরপরই এর চিকিৎসা ব্যবস্থা অধুনিক রূপ নেয় এবং দ্রুততার সঙ্গে ব্যাপক হারে করোনা রোগী সুস্থ হতে থাকে। এই মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাবও স্থাপন করা হয়েছে। তবে ২৫ ডিসেম্বর জেলায় ৮১ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ছিল ৪৩ জন আর ভৈরবে ছিল ১৩ জন। এদিন পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী, ইটনা আর মিঠামইন ছিল রোগীশূণ্য। অপর ৭টি উপজেলার প্রতিটিতে এদিন চিকিৎসাধীন রোগি ছিল সিঙ্গেল ডিজিটে। কোথাও মাত্র একজন। ফলে দেশের অনেক জেলা থেকে এখনও কিশোরগঞ্জের অবস্থা স্বস্তিদায়ক হলেও মানুষের সচেতনতার অভাবে সেই চিত্র দিন দিন খারাপের দিকে যেতে পারে বলে সবাই মনে করছেন।

রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ , ১২ পৌষ ১৪২৭, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

কিশোরগঞ্জে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ : নির্বিকার মানুষ

মোস্তফা কামাল, কিশোরগঞ্জ

সম্প্রতি দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রণ ভয়াবহরূপে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও বাড়ছে, বাড়ছে কিশোরগঞ্জেও। বৃটেনসহ কয়েকটি দেশে দ্রুত সংক্রমণশীল করোনার নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও নতুন প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন মহল থেকে মাস্ক ব্যহারের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালনসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও মানুষের মাঝে এক ধরনের নির্বিকার মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মাঝে মাস্কের ব্যবহার একেবারেই কমে গিয়েছিল। শতকরা ৫ ভাগ মানুষও মাস্ক পরত না। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার লক্ষ্যে প্রচারণা এবং এনফোর্সমেন্ট জোরদার করার ফলে মাস্কের ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে। তারপরও কোন কোন হাটবাজারে নাজুক চিত্র দেখা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে জেলা শহরের বড়বাজারের পাইকারি সবজির হাটে গিয়ে দেখা গেছে শত শত ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। অথচ কারও মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি! সবাই গায়ে গা লাগিয়ে কেনাবেচা করছেন। দেশে যে করোনা সংক্রমণ চলছে, দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে, বড়বাজারের দিকে তাকালে তা বোঝার কোন উপায়ই নেই।

কিশোরগঞ্জে এক সময় একদিনে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা প্রায় অর্ধসহ¯্র হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সচেতনতামূলক কর্মসূচির কারণে সেই অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হচ্ছিল। সংক্রমণ কমতে কমতে অর্ধশতের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। দৈনিক চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমতে কমতে গত ৩ ডিসেম্বর থেকে টানা ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭০ এর নিচে চলে এসেছিল। ১৩ ডিসেম্বর বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ জনে উন্নীত হয়ে আবার ১৪,১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর ৭০ এর নিচে নেমে আসে। এরপর ১৭ ডিসেম্বর থেকে ৭০ অতিক্রম করে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ ডিসেম্বর নতুন ৬ জনসহ চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১ তে! এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার ১৩ উপজেলায় মোট সংক্রমিত হয়েছে ৩ হাজার ৪০১ জন, মারা গেছে ৫৯ জন, আর সুস্থ হয়েছে ৩ হাজার ২৬১ জন।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ করার পর সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়। সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমানের চাহিদার কারণে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর ১৫ লাখ টাকা সংস্থানের ফলে এখানে ৪টি হাইফ্লোনেজাল ক্যানুলা স্থাপন করা হয়েছে। এরপরই এর চিকিৎসা ব্যবস্থা অধুনিক রূপ নেয় এবং দ্রুততার সঙ্গে ব্যাপক হারে করোনা রোগী সুস্থ হতে থাকে। এই মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাবও স্থাপন করা হয়েছে। তবে ২৫ ডিসেম্বর জেলায় ৮১ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ছিল ৪৩ জন আর ভৈরবে ছিল ১৩ জন। এদিন পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী, ইটনা আর মিঠামইন ছিল রোগীশূণ্য। অপর ৭টি উপজেলার প্রতিটিতে এদিন চিকিৎসাধীন রোগি ছিল সিঙ্গেল ডিজিটে। কোথাও মাত্র একজন। ফলে দেশের অনেক জেলা থেকে এখনও কিশোরগঞ্জের অবস্থা স্বস্তিদায়ক হলেও মানুষের সচেতনতার অভাবে সেই চিত্র দিন দিন খারাপের দিকে যেতে পারে বলে সবাই মনে করছেন।