শিক্ষার মানোন্নয়নে সেক্টর প্ল্যান প্রস্তুত

অভিগম্যতায় দেশ এখনও পিছিয়ে

প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার মানোন্নয়নে পাঁচ বছরের ‘সেক্টর প্ল্যান’ প্রস্তুত করেছে সরকার। এটি গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনে (জিপিই) জমা দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১-২০২২ থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর পর্যন্ত সমন্বিত এই পরিকল্পনা গত ১০ ডিসেম্বর জিপিইতে জমা দেয়া হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জিপিই বাংলাদেশকে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে। তবে শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষায় অভিগম্যতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও ভৌগলিক অবস্থান, পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা, শারীরিক অবস্থার কারণে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

সংস্থাটি বাংলাদেশে করোনাকালীন সময়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর ক্ষতি পোষাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ১৫ মিলিয়ন বা প্রায় ১২৬ কোটি টাকা দিয়েছে। জিপিইর কাছে জমা দেয়া পাঁচ বছরের পরিকল্পনায় শিক্ষার উন্নয়নে তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলো হলো- সমতার ভিত্তিতে শিক্ষায় অভিগম্যতা (Access & Equity) নিশ্চিত করা, শিক্ষার প্রাসঙ্গিক ও মান (Quality & Relevance) নিশ্চিত করা এবং সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা (Governance & Management) উন্নয়ন করা।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষায় অভিগম্যতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা, শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এখনও অনেকে পিছিয়ে রয়েছে। একইভাবে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে দরিদ্র, হতদরিদ্র ও অসহায় নারীপ্রধান পরিবার এবং নিম্ন আয়ের মানুষও পিছিয়ে রয়েছে।

পাঁচ বছরের সেক্টর প্ল্যানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ বছরের সেক্টর প্ল্যানের বিপরীতে শিক্ষার উন্নয়নে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন এই টাকা দেবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প তৈরি করেছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশিরভাগ অর্থ খরচ হবে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে। উন্নয়ন সহযোগীরা পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করেছে।’

গণসাক্ষরতা অভিযানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, শিক্ষায় সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করা, শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-৪ অর্জিত হবে, অর্থাৎ সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

জিপিইতে বলা হয়েছে, সরকারের নেতৃত্বে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে, বিশেষ করে কারিকুলাম, শিক্ষাপোকরণ ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। তবে প্রশিক্ষণ, ক্লাসরুমের ঘাটতিসহ প্রাক-প্রাথমিকের জন্য অনেক বিদ্যালয়েই পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ নেই। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর মান নিশ্চিত করার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন, যা সব স্কুলকেই অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে।

প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পরিকল্পনায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও অর্জনযোগ্য সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি প্রণয়নে সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী এবং নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করছে।

রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ , ১২ পৌষ ১৪২৭, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

শিক্ষার মানোন্নয়নে সেক্টর প্ল্যান প্রস্তুত

অভিগম্যতায় দেশ এখনও পিছিয়ে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার মানোন্নয়নে পাঁচ বছরের ‘সেক্টর প্ল্যান’ প্রস্তুত করেছে সরকার। এটি গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনে (জিপিই) জমা দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১-২০২২ থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর পর্যন্ত সমন্বিত এই পরিকল্পনা গত ১০ ডিসেম্বর জিপিইতে জমা দেয়া হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জিপিই বাংলাদেশকে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে। তবে শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষায় অভিগম্যতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও ভৌগলিক অবস্থান, পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা, শারীরিক অবস্থার কারণে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

সংস্থাটি বাংলাদেশে করোনাকালীন সময়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর ক্ষতি পোষাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ১৫ মিলিয়ন বা প্রায় ১২৬ কোটি টাকা দিয়েছে। জিপিইর কাছে জমা দেয়া পাঁচ বছরের পরিকল্পনায় শিক্ষার উন্নয়নে তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলো হলো- সমতার ভিত্তিতে শিক্ষায় অভিগম্যতা (Access & Equity) নিশ্চিত করা, শিক্ষার প্রাসঙ্গিক ও মান (Quality & Relevance) নিশ্চিত করা এবং সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা (Governance & Management) উন্নয়ন করা।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষায় অভিগম্যতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা, শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এখনও অনেকে পিছিয়ে রয়েছে। একইভাবে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে দরিদ্র, হতদরিদ্র ও অসহায় নারীপ্রধান পরিবার এবং নিম্ন আয়ের মানুষও পিছিয়ে রয়েছে।

পাঁচ বছরের সেক্টর প্ল্যানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ বছরের সেক্টর প্ল্যানের বিপরীতে শিক্ষার উন্নয়নে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন এই টাকা দেবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প তৈরি করেছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশিরভাগ অর্থ খরচ হবে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে। উন্নয়ন সহযোগীরা পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করেছে।’

গণসাক্ষরতা অভিযানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, শিক্ষায় সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করা, শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-৪ অর্জিত হবে, অর্থাৎ সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

জিপিইতে বলা হয়েছে, সরকারের নেতৃত্বে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে, বিশেষ করে কারিকুলাম, শিক্ষাপোকরণ ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। তবে প্রশিক্ষণ, ক্লাসরুমের ঘাটতিসহ প্রাক-প্রাথমিকের জন্য অনেক বিদ্যালয়েই পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ নেই। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর মান নিশ্চিত করার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন, যা সব স্কুলকেই অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে।

প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পরিকল্পনায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও অর্জনযোগ্য সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি প্রণয়নে সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী এবং নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করছে।