ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণ অর্ধেকেরও কম

করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৪৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর থেকেই ব্যাংকাররা ঋণ বিতরণে গড়িমসি করছিল। এরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ঋণ বিতরণের নির্দেশনা দিয়ে কয়েক দফায় প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারপরও ঋণ বিতরণ বাড়ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৬৬ হাজার ৬১০ জন সিএমএসএমই উদ্যোক্তাকে ৯ হাজার ২৭১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। বিতরণের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে, এখনও ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বিতরণ হয়নি। সরকারি উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো মোট প্রণোদনা প্যাকেজের ৩৬ শতাংশ বিতরণ করতে পেরেছে। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ২৫৯৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯৩৯ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ইসলামী ব্যাংকগুলো ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বিতরণ করেছে। পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৫২০ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকগুলো ছাড়াও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ১০ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার মধ্যে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেছে। তবে সরকারি-বেসরকারি এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর তুলনায় বিশেষায়িত ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ভালো। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলো ৫০ শতাংশ বিতরণ করেছে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রার ২৮৮ কোটি টাকার মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো ১৯৫ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।

জানা গেছে, করোনা সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ২১টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ, নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা ঘোষণা করে সরকার। এই প্রণোদনা প্যাকেজের বড় দুটি প্যাকেজ হলো বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্পের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংগ্রহের জন্য যথাক্রমে ৩০ ও ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ। এই ঋণের প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও ব্যাংকগুলো ঋণছাড়ে গড়িমসি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ৫০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে খুবই সামান্য পরিমাণ ঋণ এখন পর্যন্ত ছাড় করেছে ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করার পরে কয়েক দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৩১ ডিসেম্বর শেষ সময় নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সিএমএসএমই খাতের জন্য ৯ শতাংশ সুদে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি দেবে এবং ৪ শতাংশ দিতে হবে গ্রাহককে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্যাংকগুলোর গ্রামীণ ও শহরের শাখাগুলো প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে সমন্বিতভাবে কাজ করেনি। সিএমএসএমই খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের উপকারভোগীদের বিবেচনা করে সেসব অঞ্চলে ব্যাংকগুলো আরও ভালো নজর দিলে প্যাকেজটি যথাসময়ে কার্যকর করতে সহায়ক হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলোকে জুলাইয়ের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের সিংহভাগ এবং বাকি অর্থ আগস্টের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৩ পৌষ ১৪২৭, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণ অর্ধেকেরও কম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৪৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর থেকেই ব্যাংকাররা ঋণ বিতরণে গড়িমসি করছিল। এরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ঋণ বিতরণের নির্দেশনা দিয়ে কয়েক দফায় প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারপরও ঋণ বিতরণ বাড়ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৬৬ হাজার ৬১০ জন সিএমএসএমই উদ্যোক্তাকে ৯ হাজার ২৭১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। বিতরণের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে, এখনও ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বিতরণ হয়নি। সরকারি উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো মোট প্রণোদনা প্যাকেজের ৩৬ শতাংশ বিতরণ করতে পেরেছে। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ২৫৯৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯৩৯ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ইসলামী ব্যাংকগুলো ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বিতরণ করেছে। পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৫২০ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকগুলো ছাড়াও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ১০ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার মধ্যে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেছে। তবে সরকারি-বেসরকারি এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর তুলনায় বিশেষায়িত ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ভালো। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলো ৫০ শতাংশ বিতরণ করেছে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রার ২৮৮ কোটি টাকার মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো ১৯৫ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।

জানা গেছে, করোনা সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ২১টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ, নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা ঘোষণা করে সরকার। এই প্রণোদনা প্যাকেজের বড় দুটি প্যাকেজ হলো বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্পের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংগ্রহের জন্য যথাক্রমে ৩০ ও ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ। এই ঋণের প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও ব্যাংকগুলো ঋণছাড়ে গড়িমসি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ৫০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে খুবই সামান্য পরিমাণ ঋণ এখন পর্যন্ত ছাড় করেছে ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করার পরে কয়েক দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৩১ ডিসেম্বর শেষ সময় নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সিএমএসএমই খাতের জন্য ৯ শতাংশ সুদে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি দেবে এবং ৪ শতাংশ দিতে হবে গ্রাহককে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্যাংকগুলোর গ্রামীণ ও শহরের শাখাগুলো প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে সমন্বিতভাবে কাজ করেনি। সিএমএসএমই খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের উপকারভোগীদের বিবেচনা করে সেসব অঞ্চলে ব্যাংকগুলো আরও ভালো নজর দিলে প্যাকেজটি যথাসময়ে কার্যকর করতে সহায়ক হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলোকে জুলাইয়ের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের সিংহভাগ এবং বাকি অর্থ আগস্টের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।