পর্যাপ্ত মজুদেও সারাদেশে বাড়ছে চালের দাম

অঘ্রাণী ধান উঠার মৌসুমে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও বাড়ছে চালের দাম। এক সপ্তাহ আগে যে চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৮ টাকা। গতকাল সেই চাল বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায়। অর্থাৎ গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ থেকে ৭ টাকা। ধান উঠার মৌসুমে কেন চালের দাম বাড়ল- তা জানতে চাওয়া হলে উত্তর জানা নেই বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে তাই দাম বৃদ্ধির কোন কারণ নেই বলেন তিনি। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার চালের সিন্ডিকেটকে কোনভাবেই ভাঙতে পারছে না। এই সিন্ডিকেট ধান-চাল মজুদ করে রেখে দাম বৃদ্ধি করছে। রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে খোঁজখবর নিয়ে এসব জানা গেছে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৮-৫০ টাকা। চিনিগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। বাসমতি চাল গত সপ্তাহে ছিল ৬৬ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকা। মিনিকেট গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫৭-৫৯ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে ৬৪-৬৫ টাকা। নাজিরশাইল গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে।

মহাখালী কাঁচাবাজারের জাকির ট্রেডার্সের মালিক নূর হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগেও আমরা ৫৮ টাকা করে রশিদের মিনিকেট বিক্রি করেছি। এখন ৬৪ টাকা করে বিক্রি করছি। প্রায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চাল কেজিতে ৬ থেকে ৭ টাকার মতো বেড়েছে। আড়ৎদারদের বরাতে তিনি জানান, বাজারে এখন চালের সংকট চলছে। তাই দাম বেড়েছে। এই মৌসুমে সব সময় চালের বাড়তি দাম থাকে। নতুন চাল বাজারে না আসলে এই দাম কমবে না।’

শিমুল রাইস এজেন্সির একজন বিক্রেতা সংবাদকে বলেন, ‘আমরা মিলারদের থেকে বেশি দামে চাল কিনে আনি। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে চাল নেই। কদিন আগে বাজারে পাইজাম চাল একেবারেই ছিল না। এখন এসেছে।’

বাংলাদেশে চালের কোন সংকট নেই জানিয়ে বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট একেএম খোরশেদ আলম খান সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ধান-চাল রয়েছে তাকে দাম বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই। তারপরও যদি বৃদ্ধি হয় তাহলে জানতে হবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ধান চাল মজুদ করে দাম বৃদ্ধি করছে।’

বাজার জিম্মি করে রেখেছে কয়েকটি সিন্ডিকেট

গোপন একটি সূত্র সংবাদকে জানায়, ‘ধান-চালসহ পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এরা এমন ক্ষমতাধর যে, সরকারও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, ‘কিছু আড়তদারের হাতে যে পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে, তাতে সারাদেশ ছয় মাস চলবে। শুধু ঢাকাতেই এতো পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে। আর কিছু মিলারদের হাতেও ধান-চাল মজুদ রয়েছে। তবে কোন এক রহস্যজনক কারণে তাদের তদন্ত করে বের করছে না সরকার। আমাদের যে পরিমাণ চালের চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে মজুদ আছে অনেক বেশি। তারপরও সংকট হচ্ছে কেন? খাদ্যমন্ত্রীর এলাকা নওগাঁয় বিল্লাল, ইরফান, এসিআই ইত্যাদির গোডাউনে প্রচুর ধান-চাল মজুদ আছে। তাদের ধরা হচ্ছে না। অথচ যেসব ছোট ব্যবসায়ী, যাদের গোডাউনে মাত্র ৫শ বা ৬শ মেট্রিকটন চাল রয়েছে, তাদের ধরা হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে লোক দেখানোর জন্য। অর্থাৎ ছোট ব্যবসায়ীদের আড়তে রেট দিয়ে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু রাঘব বোয়ালদের ধরছে না কোন রহস্যজনক কারণে।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও পরিচিত ব্যবসায়ী রশিদের কাছে প্রচুর পরিমাণ ধান ও চাল মজুদ আছে জানিয়ে গোপন সূত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের চাল সিডিকেটের এক নম্বর হোতা রশিদের প্রায় ৫০টা গোপন গোডাউন আছে। এসব গোডাউনে প্রচুর পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে। এসব গোডাউনের তথ্য অনেকেই জানে না। তার মূল গোডাউনের তথ্য মানুষ জানে। যখন রেট হয় তখন মূল গোডাউনে রেট হয়। তখন সেখানে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। অনেক সময় লোক দেখানো রেটও করা হয়। এই রেটে সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়। অথচ তার গোপন এসব গোডাউনের তদন্ত হয় না কোন এক রহস্যজনক কারণে।’ এছাড়া মিল মালিক হান্নানের কথা উল্লেখ করে সূত্র জানায়, ‘হান্নানের প্রায় ১০০ গোপন গোডাউন আছে। অথচ সেসব গোডাউনের খবরও নাকি সরকার জানে না। মজুমদার ও আকবর শেখের গোডাউনেও প্রচুর পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে।’

সূত্র আরও জানায়, দেশের বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানি বর্তমানে চালের ব্যবসা শুরু করেছে। অথচ আমরা অনেকেই তা জানি না। এসব গ্রুপ সব ধরনের পণ্য উৎপাদন করে। এমন একটি গ্রুপ হলো সিটি গ্রুপ। এসিআইও এমন একটি গ্রুপ। সিটি গ্রুপের প্রতি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সিটি গ্রুপ সোয়াবিন তেল ও সরিষার তেল উৎপাদন করে। এর সঙ্গে তারা ব্যাংকের মালিক। তাদের হাসপাতালও আছে। গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল মিলও আছে। এখন সর্বশেষ তারা রাইসমিল দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে তাদের এতো বড় রাইসমিল আছে যে একটা মানুষ সকালে রাইসমিলে ঢুকলে পুরোটা ঘুরে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সেই মিলে যে পরিমাণ মজুদ আছে তাতেই তো সারা বাংলাদেশ কয়েক মাস চালানো সম্ভব। এগুলো কেউ ধরে না। সিটি গ্রুপের মালিককে ফোন দিয়ে কথা বলার সাহস খাদ্যমন্ত্রীও নেই। এরা এতোটাই প্রভাবশালী যে, মন্ত্রীদেরও তারা পাত্তা দেয় না। এই সাহস যদি মন্ত্রী আমলারা না দেখাতে পারেন, তাহলে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না।’

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আড়তদার বা মিলমালিকরা সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করছে এটা সরকার জানে। তাহলে সরকার চাইলেই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারে। এখন কেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে না তা সরকারই ভালো বলতে পারবে। অর্থনীতির এটা একটা নিয়ম। সাপ্লাই কমলে দাম বেড়ে যায়। এখন এই সমস্যা দুইভাবে সমাধান করা যায়। প্রথমটি হলো- সরকার নিজে চাল কিনতে পারে এবং ভোক্তার কাছে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারে। এভাবে প্রতিটি জেলায়, থানায় সরকার নিজস্ব বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। এখানে সরকারের বাড়তি টাকা খরচ হবে না। কারণ সরকারও ব্যবসা করবে। সরকার যখন এটি করবে তখন সিন্ডিকেটের কাছে একটা ম্যাসেজ যাবে, তারা যদি পণ্য স্টক করে তাহলে একটা সময় তা নষ্ট হয়ে যাবে তবুও ভোক্তা বেশি দামে কিনবে না। কারণ ভোক্তা তখন বিকল্প হিসেবে সরকারের বাজার থেকে কিনবে। আর দ্বিতীয় সমাধান হলো- যখন সংকট দেখা দেবে তখন পণ্য আমদানি করতে হবে।’

কারণ জানেন না কৃষিমন্ত্রীও

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক স্বীকার করেছেন এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ তিনিও জানেন না। গতকাল ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট (কেআইবি)-এ আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি বলেন, ‘চালের দাম কেন এতো বাড়বে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। ১-২ টাকা বাড়াও কিন্তু অনেক বাড়া। সেখানে ৩২-৩৩ টাকার মোটা চাল ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারণগুলো কি? চলতি বছর দুই দফা বন্যার কারণে আউশ ও আমন ফলনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎপাদনের যে পরিসংখ্যান সরকারের হাতে আছে, তাতে চালের এত ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। অথচ আজকে সরকারের ঘরে চাল নেই। আমাদের চাল আমদানি করতে হচ্ছে। কখনও তাও আমদানি করতে পারি না। কিছু ভুলভ্রান্তি আমাদের আছে। কিন্তু চালের দাম কেন এতো বাড়বে?

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণা থেকে দেখা গেছে, পরপর চার দফা বন্যায় এবার ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল কম উৎপাদন হতে পারে। কিন্তু তারপরও যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হবে, তা দিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়েও কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা।

কমানো হলো আদমানি শুল্ক

এই পরিস্থিতিতে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘সরকারিভাবে ৪ লাখ মেট্রিক টন, জিটুজি পদ্ধতিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন এবং বেসরকারিভাবেও চাল আমদানি করা হবে। বৈধ লাইসেন্সধারীরা ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করতে পারবেন। মন্ত্রণালয় কাকে কতটুকু ছাড়পত্র দেবে সেটার এলসি হবে। সেটা আমরা মনিটরিং করব। বেসরকারিভাবে এই চাল আমদানি করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেই আমরা বেসরকারিভাবে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, এখন ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’

সিন্ডিকেটের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কারও হুমকিতে মাথানত করে না। আমরা মিলারদের চুক্তির জন্য পীড়াপিড়ি করিনি। তারা তাদের হুমকি নিয়ে থাকুক। প্রয়োজনে আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান বেশি করে কিনব যেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দরকার হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল কিনব। বোরো ধান ওঠার আগে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার আমরা করব। বোরো মৌসুমে এ অবস্থা থাকলে আবার আমদানি করব। আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করেছি। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্য মণপ্রতি ১০৪০ টাকা, কিন্তু বাইরে কৃষকরা ধান বিক্রি করে বেনিফিট হলে সরকারের কাছে বিক্রি করে না। কারণ আজকেও বাইরে ১২০০ টাকা মণ দাম আছে।

দাম বাড়ছে সারাদেশে

নওগাঁ : নওগাঁয় হঠাৎ করেই কেজি প্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। ব্যবসায়ীদের সিন্ডকেটের কারণে ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ কৃষক নেতাদের। আর ব্যবসায়ী নেতাদেরও দাবি, ধানের সংকটে দাম বেড়েছে বাজারে। তবে শুধু মোটা চালই নয়, সব ধরনের চালের দামই গত বছরের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। নওগাঁর বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্বর্ণা-৫ আগে বিক্রি হতো ৪২ টাকা কেজিতে, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা কেজিতে। ৪০ টাকা কেজির গুটি স্বর্ণা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা কেজিতে। ৫২ টাকার মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫৮ টাকা, ৫৫ টাকার স্বম্পা কাটারি ৬২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৫২ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন সংবাদকে বলেন, কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ পরপর কয়েক দফা বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি। এখন বাজারে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। দাম বেশি হওয়ায় চালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এসব কারণেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সরকার ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব চাল হয়তো সরকার বিভিন্ন বাহিনীসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ব্যয় করবে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমদানি বাড়াতে হবে। আমদানি শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি করা হলে চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

রংপুর : রংপুরে মোটা চাল ৪১ টাকা, চিকন স্বর্ণা ৪৫ টাকা এবং মিনিকেট চাল ৫৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের অন্যতম চালের বড় মোকাম মাহিগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ধানের দাম বস্তা প্রতি ৫০ টাকা কমেছে। কয়েকদিন আগে মোটা চাল যেখানে ১ হাজার একশ টাকা বস্তা ছিল এখন তা ৫০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার পঞ্চাশ টাকা। একইভাবে মোটা চাল ৪১ টাকা কেজি, ৫০ কেজির এক বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০ টাকায়। অন্যদিকে চিকন স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকা, কেজি হচ্ছে ৪৫ টাকা। অন্যদিকে মিনিকেট চাল প্রতিবস্তা ২ হাজার ৮৫০ টাকা, প্রতি কেজি ৫৭ টাকা। চালকল মালিক সমিতির সহসভাপতি রিপন সরকার জানান, ধানের দাম কয়েকদিনের মধ্যে আরও কমবে। তখন চালের দামও কমবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, বড় বড় চালকল মালিকরা বিপুল পরিমাণ ধান গুদামজাত করে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন।

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৩ পৌষ ১৪২৭, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

পর্যাপ্ত মজুদেও সারাদেশে বাড়ছে চালের দাম

রেজাউল করিম

image

অঘ্রাণী ধান উঠার মৌসুমে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও বাড়ছে চালের দাম। এক সপ্তাহ আগে যে চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৮ টাকা। গতকাল সেই চাল বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায়। অর্থাৎ গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ থেকে ৭ টাকা। ধান উঠার মৌসুমে কেন চালের দাম বাড়ল- তা জানতে চাওয়া হলে উত্তর জানা নেই বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে তাই দাম বৃদ্ধির কোন কারণ নেই বলেন তিনি। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার চালের সিন্ডিকেটকে কোনভাবেই ভাঙতে পারছে না। এই সিন্ডিকেট ধান-চাল মজুদ করে রেখে দাম বৃদ্ধি করছে। রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে খোঁজখবর নিয়ে এসব জানা গেছে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৮-৫০ টাকা। চিনিগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। বাসমতি চাল গত সপ্তাহে ছিল ৬৬ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকা। মিনিকেট গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫৭-৫৯ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে ৬৪-৬৫ টাকা। নাজিরশাইল গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে।

মহাখালী কাঁচাবাজারের জাকির ট্রেডার্সের মালিক নূর হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগেও আমরা ৫৮ টাকা করে রশিদের মিনিকেট বিক্রি করেছি। এখন ৬৪ টাকা করে বিক্রি করছি। প্রায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চাল কেজিতে ৬ থেকে ৭ টাকার মতো বেড়েছে। আড়ৎদারদের বরাতে তিনি জানান, বাজারে এখন চালের সংকট চলছে। তাই দাম বেড়েছে। এই মৌসুমে সব সময় চালের বাড়তি দাম থাকে। নতুন চাল বাজারে না আসলে এই দাম কমবে না।’

শিমুল রাইস এজেন্সির একজন বিক্রেতা সংবাদকে বলেন, ‘আমরা মিলারদের থেকে বেশি দামে চাল কিনে আনি। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে চাল নেই। কদিন আগে বাজারে পাইজাম চাল একেবারেই ছিল না। এখন এসেছে।’

বাংলাদেশে চালের কোন সংকট নেই জানিয়ে বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট একেএম খোরশেদ আলম খান সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ধান-চাল রয়েছে তাকে দাম বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই। তারপরও যদি বৃদ্ধি হয় তাহলে জানতে হবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ধান চাল মজুদ করে দাম বৃদ্ধি করছে।’

বাজার জিম্মি করে রেখেছে কয়েকটি সিন্ডিকেট

গোপন একটি সূত্র সংবাদকে জানায়, ‘ধান-চালসহ পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এরা এমন ক্ষমতাধর যে, সরকারও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, ‘কিছু আড়তদারের হাতে যে পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে, তাতে সারাদেশ ছয় মাস চলবে। শুধু ঢাকাতেই এতো পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে। আর কিছু মিলারদের হাতেও ধান-চাল মজুদ রয়েছে। তবে কোন এক রহস্যজনক কারণে তাদের তদন্ত করে বের করছে না সরকার। আমাদের যে পরিমাণ চালের চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে মজুদ আছে অনেক বেশি। তারপরও সংকট হচ্ছে কেন? খাদ্যমন্ত্রীর এলাকা নওগাঁয় বিল্লাল, ইরফান, এসিআই ইত্যাদির গোডাউনে প্রচুর ধান-চাল মজুদ আছে। তাদের ধরা হচ্ছে না। অথচ যেসব ছোট ব্যবসায়ী, যাদের গোডাউনে মাত্র ৫শ বা ৬শ মেট্রিকটন চাল রয়েছে, তাদের ধরা হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে লোক দেখানোর জন্য। অর্থাৎ ছোট ব্যবসায়ীদের আড়তে রেট দিয়ে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু রাঘব বোয়ালদের ধরছে না কোন রহস্যজনক কারণে।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও পরিচিত ব্যবসায়ী রশিদের কাছে প্রচুর পরিমাণ ধান ও চাল মজুদ আছে জানিয়ে গোপন সূত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের চাল সিডিকেটের এক নম্বর হোতা রশিদের প্রায় ৫০টা গোপন গোডাউন আছে। এসব গোডাউনে প্রচুর পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে। এসব গোডাউনের তথ্য অনেকেই জানে না। তার মূল গোডাউনের তথ্য মানুষ জানে। যখন রেট হয় তখন মূল গোডাউনে রেট হয়। তখন সেখানে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। অনেক সময় লোক দেখানো রেটও করা হয়। এই রেটে সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়। অথচ তার গোপন এসব গোডাউনের তদন্ত হয় না কোন এক রহস্যজনক কারণে।’ এছাড়া মিল মালিক হান্নানের কথা উল্লেখ করে সূত্র জানায়, ‘হান্নানের প্রায় ১০০ গোপন গোডাউন আছে। অথচ সেসব গোডাউনের খবরও নাকি সরকার জানে না। মজুমদার ও আকবর শেখের গোডাউনেও প্রচুর পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে।’

সূত্র আরও জানায়, দেশের বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানি বর্তমানে চালের ব্যবসা শুরু করেছে। অথচ আমরা অনেকেই তা জানি না। এসব গ্রুপ সব ধরনের পণ্য উৎপাদন করে। এমন একটি গ্রুপ হলো সিটি গ্রুপ। এসিআইও এমন একটি গ্রুপ। সিটি গ্রুপের প্রতি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সিটি গ্রুপ সোয়াবিন তেল ও সরিষার তেল উৎপাদন করে। এর সঙ্গে তারা ব্যাংকের মালিক। তাদের হাসপাতালও আছে। গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল মিলও আছে। এখন সর্বশেষ তারা রাইসমিল দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে তাদের এতো বড় রাইসমিল আছে যে একটা মানুষ সকালে রাইসমিলে ঢুকলে পুরোটা ঘুরে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সেই মিলে যে পরিমাণ মজুদ আছে তাতেই তো সারা বাংলাদেশ কয়েক মাস চালানো সম্ভব। এগুলো কেউ ধরে না। সিটি গ্রুপের মালিককে ফোন দিয়ে কথা বলার সাহস খাদ্যমন্ত্রীও নেই। এরা এতোটাই প্রভাবশালী যে, মন্ত্রীদেরও তারা পাত্তা দেয় না। এই সাহস যদি মন্ত্রী আমলারা না দেখাতে পারেন, তাহলে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না।’

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আড়তদার বা মিলমালিকরা সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করছে এটা সরকার জানে। তাহলে সরকার চাইলেই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারে। এখন কেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে না তা সরকারই ভালো বলতে পারবে। অর্থনীতির এটা একটা নিয়ম। সাপ্লাই কমলে দাম বেড়ে যায়। এখন এই সমস্যা দুইভাবে সমাধান করা যায়। প্রথমটি হলো- সরকার নিজে চাল কিনতে পারে এবং ভোক্তার কাছে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারে। এভাবে প্রতিটি জেলায়, থানায় সরকার নিজস্ব বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। এখানে সরকারের বাড়তি টাকা খরচ হবে না। কারণ সরকারও ব্যবসা করবে। সরকার যখন এটি করবে তখন সিন্ডিকেটের কাছে একটা ম্যাসেজ যাবে, তারা যদি পণ্য স্টক করে তাহলে একটা সময় তা নষ্ট হয়ে যাবে তবুও ভোক্তা বেশি দামে কিনবে না। কারণ ভোক্তা তখন বিকল্প হিসেবে সরকারের বাজার থেকে কিনবে। আর দ্বিতীয় সমাধান হলো- যখন সংকট দেখা দেবে তখন পণ্য আমদানি করতে হবে।’

কারণ জানেন না কৃষিমন্ত্রীও

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক স্বীকার করেছেন এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ তিনিও জানেন না। গতকাল ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট (কেআইবি)-এ আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি বলেন, ‘চালের দাম কেন এতো বাড়বে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। ১-২ টাকা বাড়াও কিন্তু অনেক বাড়া। সেখানে ৩২-৩৩ টাকার মোটা চাল ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারণগুলো কি? চলতি বছর দুই দফা বন্যার কারণে আউশ ও আমন ফলনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎপাদনের যে পরিসংখ্যান সরকারের হাতে আছে, তাতে চালের এত ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। অথচ আজকে সরকারের ঘরে চাল নেই। আমাদের চাল আমদানি করতে হচ্ছে। কখনও তাও আমদানি করতে পারি না। কিছু ভুলভ্রান্তি আমাদের আছে। কিন্তু চালের দাম কেন এতো বাড়বে?

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণা থেকে দেখা গেছে, পরপর চার দফা বন্যায় এবার ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল কম উৎপাদন হতে পারে। কিন্তু তারপরও যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হবে, তা দিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়েও কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা।

কমানো হলো আদমানি শুল্ক

এই পরিস্থিতিতে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘সরকারিভাবে ৪ লাখ মেট্রিক টন, জিটুজি পদ্ধতিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন এবং বেসরকারিভাবেও চাল আমদানি করা হবে। বৈধ লাইসেন্সধারীরা ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করতে পারবেন। মন্ত্রণালয় কাকে কতটুকু ছাড়পত্র দেবে সেটার এলসি হবে। সেটা আমরা মনিটরিং করব। বেসরকারিভাবে এই চাল আমদানি করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেই আমরা বেসরকারিভাবে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, এখন ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’

সিন্ডিকেটের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কারও হুমকিতে মাথানত করে না। আমরা মিলারদের চুক্তির জন্য পীড়াপিড়ি করিনি। তারা তাদের হুমকি নিয়ে থাকুক। প্রয়োজনে আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান বেশি করে কিনব যেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দরকার হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল কিনব। বোরো ধান ওঠার আগে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার আমরা করব। বোরো মৌসুমে এ অবস্থা থাকলে আবার আমদানি করব। আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করেছি। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্য মণপ্রতি ১০৪০ টাকা, কিন্তু বাইরে কৃষকরা ধান বিক্রি করে বেনিফিট হলে সরকারের কাছে বিক্রি করে না। কারণ আজকেও বাইরে ১২০০ টাকা মণ দাম আছে।

দাম বাড়ছে সারাদেশে

নওগাঁ : নওগাঁয় হঠাৎ করেই কেজি প্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। ব্যবসায়ীদের সিন্ডকেটের কারণে ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ কৃষক নেতাদের। আর ব্যবসায়ী নেতাদেরও দাবি, ধানের সংকটে দাম বেড়েছে বাজারে। তবে শুধু মোটা চালই নয়, সব ধরনের চালের দামই গত বছরের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। নওগাঁর বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্বর্ণা-৫ আগে বিক্রি হতো ৪২ টাকা কেজিতে, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা কেজিতে। ৪০ টাকা কেজির গুটি স্বর্ণা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা কেজিতে। ৫২ টাকার মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫৮ টাকা, ৫৫ টাকার স্বম্পা কাটারি ৬২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৫২ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন সংবাদকে বলেন, কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ পরপর কয়েক দফা বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি। এখন বাজারে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। দাম বেশি হওয়ায় চালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এসব কারণেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সরকার ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব চাল হয়তো সরকার বিভিন্ন বাহিনীসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ব্যয় করবে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমদানি বাড়াতে হবে। আমদানি শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি করা হলে চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

রংপুর : রংপুরে মোটা চাল ৪১ টাকা, চিকন স্বর্ণা ৪৫ টাকা এবং মিনিকেট চাল ৫৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের অন্যতম চালের বড় মোকাম মাহিগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ধানের দাম বস্তা প্রতি ৫০ টাকা কমেছে। কয়েকদিন আগে মোটা চাল যেখানে ১ হাজার একশ টাকা বস্তা ছিল এখন তা ৫০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার পঞ্চাশ টাকা। একইভাবে মোটা চাল ৪১ টাকা কেজি, ৫০ কেজির এক বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০ টাকায়। অন্যদিকে চিকন স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকা, কেজি হচ্ছে ৪৫ টাকা। অন্যদিকে মিনিকেট চাল প্রতিবস্তা ২ হাজার ৮৫০ টাকা, প্রতি কেজি ৫৭ টাকা। চালকল মালিক সমিতির সহসভাপতি রিপন সরকার জানান, ধানের দাম কয়েকদিনের মধ্যে আরও কমবে। তখন চালের দামও কমবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, বড় বড় চালকল মালিকরা বিপুল পরিমাণ ধান গুদামজাত করে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন।