২৪ পৌরসভায় ভোট আজ লড়াই নৌকা-ধানের শীষের

প্রথম ধাপে দেশের আট বিভাগের ২২ জেলার ২৪টি পৌরসভায় মেয়র-কাউন্সিলর পদে ভোট আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এসব পৌরসভায় একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে। তবে নির্দলীয় কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ করা প্রতীকে। প্রথম ধাপে মেয়র পদে একমাত্র নারী প্রার্থী জাকিয়া খাতুন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে পঞ্চগড় পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। ২৪ পৌরসভায় মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২১৫ জন। এরমধ্যে মেয়র পদে ৯০ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৪৮ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ্যা ২৭৭ জন। প্রথম ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অধিকাংশ মেয়র প্রার্থীই পেশায় ব্যবসায়ী। তবে শিক্ষক, কৃষক, আইনজীবী, ঠিকাদার, পল্লী চিকিৎসক, সাংবাদিক এবং অন্য পেশার লোকও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। ত্রিশ শতাংশ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক সমমান। অবশিষ্টদের অধিকাংশ স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। তথ্যানুযায়ী, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ বিএনপির প্রার্থীদের তুলনায় বেশি। আবার মামলার দিক থেকে এগিয়ে বিএনপির প্রার্থীরা।

তবে হলফনামায় প্রার্থীরা সম্পদ ও অন্য তথ্যের যে বিবরণ দেন, তার সত্যতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। হলফনামার তথ্য যাচাই করার জন্য নির্বাচনী বিশ্লেষকরা অনেক দিন যাবত বলে আসছেন তবে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাধারণত তা যাচাই করে না।

নির্বচানী বিশ্লেষক এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, আদালত প্রার্থীদের হলফনামা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে ভোটাররা সব দেখে যোগ্য প্রার্থী বেছে নেয়ার সুযোগ পান। তবে হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য ইসি যাচাই করে না। ফলে প্রার্থীরা অনেক তথ্য গোপন করলেও তা ধরা পড়ে না। তাই এসব হলফনামার বিশ্বাসযোগ্যতা কম।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সবগুলো পৌরসভায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৮টিতে, জাতীয় পার্টি ৪টিতে এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ১টি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। বাকি যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন তাদের কারও কারও আবার আওয়ামী লীগ বা বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা রয়েছে। ইসির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিবন্ধিত ৪১ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৫টি দল প্রথম ধাপে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে। বাকি ৩৬ দলের কোন প্রার্থী নেই। অথচ ২০১৫ সালে আইন সংশোধনের পর দলীয় প্রতীকে পৌর ভোটে ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।

বেশিরভাগ এলকায় ভোটের আগে প্রচার-প্রচারণার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের প্রচার নিয়ে দু’একটি এলাকায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।

প্রথম ধাপে মেয়র প্রার্থীদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘গত পৌর নির্বাচনেও দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সম্পদ বেশি আর বিএনপি প্রার্থীদের নামে মামলা বেশি।’ এটা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন তৃণমূলের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তৃণমূলে সহিংসতা বেড়েছে, মনোনয়ন বাণিজ্যও বেড়েছে। এর ফলে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি কলুষিত হয়ে গেছে।’

ইসির যুগ্মসচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, ভোটারদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথম ধাপের ২৪টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ইভিএমের ‘মক ভোটিং’ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরাও নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১১ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।’

বিজিবিতে প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন সদস্য থাকে জানিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে ১০ হাজারের কম ভোটারের পৌরসভার জন্য এক প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ১০ হাজারের বেশি ভোটারের পৌরসভার জন্য দুই প্লাটুন এবং ৫০ হাজারের বেশি ভোটারের জন্য তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়।’

যেসব পৌরসভায় ভোট আজ

কুষ্টিয়ার খোকসা, কুড়িগ্রাম সদর, খুলনার চালনা, চট্টগ্রামের সীতাকু-, চুয়াডাঙ্গা সদর, রংপুরের পীরগঞ্জ, ঢাকার ধামরাই, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর, মানিকগঞ্জ সদর, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, নেত্রকোনার মদন, পঞ্চগড় সদর, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, পাবনার চাটমোহর, বরগুনার বেতাগী, রংপুরের বদরগঞ্জ, রাজশাহীর কাটাখালী ও পুটিয়া, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, সুনামগঞ্জের দিরাই ও হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার সংখ্যা ২৫৯টি। ইতোমধ্যে তিন ধাপে ১৫০টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি ৬১টি পৌরসভায় এবং তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ৬৪টি পৌরসভায় ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএমে আর ৩২টি পৌরসভায় ব্যালট পেপারে এবং তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভার সবগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চতুর্থ ধাপে অবশিষ্ট পৌরসভাগুলোতে ভোট হবে।

আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করতে হয়। আজ প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি মনোনীত এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নতুন তারিখ অনুযায়ী শ্রীপুরে ভোট হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি।

উল্লেখ্য, দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে পৌরনির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নিজ নিজ প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য ইস্ত্রি, কম্পিউটার, ক্যারামবোর্ড, চামচ, জগ, টাইসহ সংরক্ষিত ১২টি পৃথক প্রতীক, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের জন্য অটোরিকশা, আনারস, আংটি, চশমা, জবা ফুলসহ সংরক্ষিত ১০টি পৃথক প্রতীক এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণ কাউন্সিলরদের জন্য উটপাখি, গাজর, টিউব লাইট, টেবিল ল্যাম্প, ডালিমসহ সংরক্ষিত ১২টি পৃথক প্রতীক রয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের দিন প্রার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী অথবা একই প্রতীক প্রত্যাশী একাধিক হলে লটারির মাধ্যমে তা বরাদ্দ দেয়া হয়।

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৩ পৌষ ১৪২৭, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

প্রথম ধাপ : ইভিএমে

২৪ পৌরসভায় ভোট আজ লড়াই নৌকা-ধানের শীষের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

প্রথম ধাপে দেশের আট বিভাগের ২২ জেলার ২৪টি পৌরসভায় মেয়র-কাউন্সিলর পদে ভোট আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এসব পৌরসভায় একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে। তবে নির্দলীয় কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ করা প্রতীকে। প্রথম ধাপে মেয়র পদে একমাত্র নারী প্রার্থী জাকিয়া খাতুন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে পঞ্চগড় পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। ২৪ পৌরসভায় মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২১৫ জন। এরমধ্যে মেয়র পদে ৯০ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৪৮ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ্যা ২৭৭ জন। প্রথম ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অধিকাংশ মেয়র প্রার্থীই পেশায় ব্যবসায়ী। তবে শিক্ষক, কৃষক, আইনজীবী, ঠিকাদার, পল্লী চিকিৎসক, সাংবাদিক এবং অন্য পেশার লোকও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। ত্রিশ শতাংশ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক সমমান। অবশিষ্টদের অধিকাংশ স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। তথ্যানুযায়ী, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ বিএনপির প্রার্থীদের তুলনায় বেশি। আবার মামলার দিক থেকে এগিয়ে বিএনপির প্রার্থীরা।

তবে হলফনামায় প্রার্থীরা সম্পদ ও অন্য তথ্যের যে বিবরণ দেন, তার সত্যতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। হলফনামার তথ্য যাচাই করার জন্য নির্বাচনী বিশ্লেষকরা অনেক দিন যাবত বলে আসছেন তবে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাধারণত তা যাচাই করে না।

নির্বচানী বিশ্লেষক এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, আদালত প্রার্থীদের হলফনামা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে ভোটাররা সব দেখে যোগ্য প্রার্থী বেছে নেয়ার সুযোগ পান। তবে হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য ইসি যাচাই করে না। ফলে প্রার্থীরা অনেক তথ্য গোপন করলেও তা ধরা পড়ে না। তাই এসব হলফনামার বিশ্বাসযোগ্যতা কম।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সবগুলো পৌরসভায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৮টিতে, জাতীয় পার্টি ৪টিতে এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ১টি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। বাকি যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন তাদের কারও কারও আবার আওয়ামী লীগ বা বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা রয়েছে। ইসির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিবন্ধিত ৪১ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৫টি দল প্রথম ধাপে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে। বাকি ৩৬ দলের কোন প্রার্থী নেই। অথচ ২০১৫ সালে আইন সংশোধনের পর দলীয় প্রতীকে পৌর ভোটে ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।

বেশিরভাগ এলকায় ভোটের আগে প্রচার-প্রচারণার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের প্রচার নিয়ে দু’একটি এলাকায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।

প্রথম ধাপে মেয়র প্রার্থীদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘গত পৌর নির্বাচনেও দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সম্পদ বেশি আর বিএনপি প্রার্থীদের নামে মামলা বেশি।’ এটা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন তৃণমূলের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তৃণমূলে সহিংসতা বেড়েছে, মনোনয়ন বাণিজ্যও বেড়েছে। এর ফলে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি কলুষিত হয়ে গেছে।’

ইসির যুগ্মসচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, ভোটারদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথম ধাপের ২৪টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ইভিএমের ‘মক ভোটিং’ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরাও নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১১ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।’

বিজিবিতে প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন সদস্য থাকে জানিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে ১০ হাজারের কম ভোটারের পৌরসভার জন্য এক প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ১০ হাজারের বেশি ভোটারের পৌরসভার জন্য দুই প্লাটুন এবং ৫০ হাজারের বেশি ভোটারের জন্য তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়।’

যেসব পৌরসভায় ভোট আজ

কুষ্টিয়ার খোকসা, কুড়িগ্রাম সদর, খুলনার চালনা, চট্টগ্রামের সীতাকু-, চুয়াডাঙ্গা সদর, রংপুরের পীরগঞ্জ, ঢাকার ধামরাই, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর, মানিকগঞ্জ সদর, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, নেত্রকোনার মদন, পঞ্চগড় সদর, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, পাবনার চাটমোহর, বরগুনার বেতাগী, রংপুরের বদরগঞ্জ, রাজশাহীর কাটাখালী ও পুটিয়া, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, সুনামগঞ্জের দিরাই ও হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার সংখ্যা ২৫৯টি। ইতোমধ্যে তিন ধাপে ১৫০টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি ৬১টি পৌরসভায় এবং তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ৬৪টি পৌরসভায় ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএমে আর ৩২টি পৌরসভায় ব্যালট পেপারে এবং তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভার সবগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চতুর্থ ধাপে অবশিষ্ট পৌরসভাগুলোতে ভোট হবে।

আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করতে হয়। আজ প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি মনোনীত এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নতুন তারিখ অনুযায়ী শ্রীপুরে ভোট হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি।

উল্লেখ্য, দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে পৌরনির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নিজ নিজ প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য ইস্ত্রি, কম্পিউটার, ক্যারামবোর্ড, চামচ, জগ, টাইসহ সংরক্ষিত ১২টি পৃথক প্রতীক, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের জন্য অটোরিকশা, আনারস, আংটি, চশমা, জবা ফুলসহ সংরক্ষিত ১০টি পৃথক প্রতীক এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণ কাউন্সিলরদের জন্য উটপাখি, গাজর, টিউব লাইট, টেবিল ল্যাম্প, ডালিমসহ সংরক্ষিত ১২টি পৃথক প্রতীক রয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের দিন প্রার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী অথবা একই প্রতীক প্রত্যাশী একাধিক হলে লটারির মাধ্যমে তা বরাদ্দ দেয়া হয়।