জনভাবনায় গুলিস্তান : ঢাকার ‘মগের মুল্লুক’

সালাম জুবায়ের

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে হকারদের জুতার দোকানে দোকানে ঘুরছিলেন আজিমপুর থেকে আসা আসাদ হোসেন। চারপাশে ঘুরে ঘুরে তিনি দেখছিলেন সড়কে চট এবং টুকরি বিছিয়ে সাজানো জুতার দোকানগুলো। আমি পল্টনে সংবাদ অফিসে আসার জন্য রিকশা খুঁজছিলাম। এ সময় চোখ পড়ে তার দিকে। কেন তিনি একের পর এক জুতার দোকানে ঘুরছেন? কৌতুহল মেটাতে তার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে প্রশ্ন করলাম- আপনি একের পর এক জুতার দোকানে ঘুরছেন, পছন্দের জুতা খুঁজছেন? আসাদ হোসেন কিছুটা বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, জি জুতা খুঁজছি, আমার জুতা। আপনার জুতা মানে? এরপর তিনি যে কথা বললেন তা একটি মজার গল্পে মতোই।

দিন দুই আগে আসাদ হোসেন আজিমপুরে একটি মার্কেটে কাপড়ের দোকানে শাড়ি কিনতে ঢুকেছিলেন। পায়ের জুতা খুলে বাইরে রেখে দোকানে ঢোকেন, কিন্তু বের হওয়ার পর দেখেন দোকানের বাইরে তার জুতাজোড়া নেই। পাড়ার কোন ছিঁচকে চোর জুতাজোড়া নিয়ে পালিয়ে গেছে। জুতা হারিয়ে অসহায় বোধ করছিলেন আসাদ হোসেন। তারপর ঘটলো আরও মজার ঘটনা। পাড়ারই আরেক তরুণ এসে আসাদকে জানালেন, তার জুতা এক ভবঘুরে নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাকে ধরতে হলে একটু পরই চলে যান গুলিস্তানে ফুটপাতের জুতার দোকানে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, মিলাদ মাহফিল, বিয়েবাড়ি বা বিভিন্ন দোকান থেকে জুতা চুরি করে ছিঁচকে চোর বা ভবঘুরে চোর সেই জুতা বিক্রি করতে সোজা চলে যায় গুলিস্তানে। সেখানে একদল হকার ফুটপাতে জুতার দোকান সাজিয়ে বসে। নতুন জুতার সঙ্গে সঙ্গে তারা পুরান অর্থাৎ অন্য লোকের ব্যবহার করা জুতা বিক্রি করেন। এসব জুতার দোকানের হকারদের সঙ্গে বিভিন্ন মহল্লার ছিঁচকে চোর, মাদকাসক্তসহ ছোট অপরাধীদের গোপন যোগাযোগ থাকে। এসব চোররা কোথাও থেকে জুতা চুরি করলে সরাসরি জুতার হকারদের কাছে নিয়ে আসে। হকাররা সেসব চুরিকরা জুতা ভালো করে কালি মেখে ফুটপাতে বিক্রি করেন। ফুটপাতের এসব দোকানে অনেকেই, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষÑ রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিক, ছোট দোকানদার, কাজের লোক, ফুটপাতের হকার- বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এখানে আসেন কম দামে জুতা কিনতে। জুতা কেনার সময় কেউ জানতে চায় না এসব জুতা সত্যিকার ব্যবহারকারীর কাছ থেকে নেয়া নাকি পাড়ার ছিঁচকে চোরের চুরি করা জুতা। আর কিছু সরল-সোজা প্রকৃতির লোক এখানে আসেন তার হারিয়ে যাওয়া, আসলে চুরি হওয়া জুতা খুঁজতে। যেমন আজিমপুর থেকে এসেছেন আসাদ হোসেন। তবে গুলিস্তানে যত জুতার দোকান আছে, তাদের সবাই চুরি করা জুতার ব্যবসা করেন তা কিন্তু নয়।

গুলিস্তান ঘুুরে আরেকটি চোরাই জিনিসের বেচা-কেনার সন্ধান পাওয়া যায়। সেটি হচ্ছে মোবাইল ফোন। গুলিস্তান এবং এর আশপাশের এলাকা চোরাই জুতার মতো চোরাই মোবাইল ফোনের ‘ওপেন মার্কেট’। আসাদ হোসেন যেমন তার চুরি হওয়া জুতা খুঁজতে গুলিস্তানে এসেছেন, তেমনি নিজের সখের মোবাইল ফোন চুরি গেলে অনেকে খুঁজতে আসেন গুলিস্তানে। এখানে সবসময়ই বিক্রি হয় চোরাই মোবাইল ফোন। গুলিস্তান এলাকায় মোবাইল ফোনসেট মেরামতের এক হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে নতুন মোবাইল ফোন বিক্রি-মেরামতের পাশাপাশি চোরাই ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনসেট বিক্রি হয়। সব দোকানই চোরাই মোবাইল কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত না হলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীই অধিক লাভের আশায় এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। গুলিস্তানে যারা ব্যবসা-চাকরি বা অন্য কোন উদ্দেশে সব সময় অবস্থান করেন তাদের সবারই জানা চোরাই ফোন সেট বিক্রি হওয়ার বিষয়টি। চোরাই জুতার মতোই চোরাই মোবাইল ফোন বিক্রির জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের নিজস্ব শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্যরা মোবাইল ফোন সেট চুরি বা ছিনতাই করে আগে থেকে চুক্তিবদ্ধ দোকানে বিক্রি করে। এভাবে শুধু চোরাই পণ্য বিক্রির জন্যই গুলিস্তান একটি বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছে।

আসাদ হোসেন তার চুরি হওয়া জুতাজোড়া খুঁজে পাননি। মনখারাপ করে ফিরে যান তিনি। তবে তিনি ফেরে গেছেন এক বুক বিস্ময় নিয়ে। তার বিস্ময় গুলিস্তানের এই অরাজক অবস্থা দেখে। গুলিস্তান খুব জনবহুল এলাকা, অসংখ্য মানুষ সব সময় এখানে ভিড় করে থাকে- কেউ প্রয়োজনে, কেউ অপ্রয়োজনে, আবার কেউ কেনাকাটা করতে, কেউবা নিরেট তামাশা দেখতে আসে গুলিস্তানে। অনেকে আশপাশের জেলা শহর থেকে ঢাকায় এসে প্রথম পদার্পন করেন গুলিস্তানে। সেখান থেকে শহরের অন্যকোথাও যাওয়ার বাস-টেক্সি-রিকশা ধরেন। গুলিস্তানে যারা আসেন, গুলিস্তান হয়ে যারা শহরের বিভিন্ন স্থানে, নিজ কর্মস্থল, অফিস-আদালত বা কেনাকাটা করতে যানÑ তাদের সবার কাছেই গুলিস্তান এলাকার একটি বিশেষ পরিচয় হচ্ছে ঢাকার ‘মগের মুল্লুক’। কেন এ নামে অনেকে গুলিস্তাকে ডাকেন তার উত্তর জানা নেই। তবে অনেকে মনে করেন মগের মুল্লুকে যেমন কোন নিয়ম নীতি মানা হয় না, যে যেভাবে ইচ্ছে চলতে পারে, যা ইচ্ছে করতে পারে, এজন্য কাউকে তোয়াক্কা করতে হয় না, গুলিস্তানও অনেকটা সে রকম। এখানে সরকারের জারি করা অনেক নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন না মানলেও চলে। না মানলে কেউ যে এসে ধরে জেলে পুরে দেবে তা নয়। এখানে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- পুলিশ, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কিন্তু তাদের কেউ পরোয়া করে বলে মনে হয় না।

অনেকে মুখে হাসি যোগানোর জন্য পরিহাস করেন এই বলে যে, কেউ যদি বলে আমি গুলিস্তানে প্রধান সড়কের মাঝে দোকান বসাবো, সে বসাতে পারবে। যদি বলেন, কেউ ইচ্ছে হলো গুলিস্তানের প্রধান সড়কে এক বস্তা ময়লা এনে ফেলে রাখবে, সে তা করতে পারবে। যদি বলেন, আমি আমার রিকশা, সাইকেল বা প্রাইভেট কার সড়কের অনেকটা জুড়ে পার্ক করে রাখবো, আপনি তা পারবেন। আপনি যদি মনে করেন, মূল সড়কে যেখানে গণপরিবহন চলাচল করার কথা সেখানে আপনি একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে পুরো এলাকা যানজটে ফেলে দেবেন, আপনি তাও পারবেন। এখানে যেসব কথা বললাম তা যে সত্যি তা বুঝতে হলে আপনাকে কোন কষ্ট করতে হবে না। আপনি যদি গুলিস্তানে গিয়ে যেকোন পয়েন্টে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন তবে হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে যাবেন। এসব অপকর্ম যে সেখানে হচ্ছে তা নিয়ে কোন রাখঢাক নেই, যা হচ্ছে, যে যা করছে সবকিছুই সবার সামনে প্রকাশ্যে করছে। আপনি হয়তো সামনে তাকিয়ে দেখবেন এক দল পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছে, কিন্তু তারা আসলে কিছুই দেখছেন না, কিছু শুনছেন না। যদি দেখতেন, যদি শুনতেন তবে তার বিরুদ্ধে তো কোন না কোন ব্যবস্থা নিতেন, কিন্তু কেউ সেই অনিয়মগুলোর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। কেন তাকাচ্ছেন না তাও কারও বোধগম্য হয় না।

যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত সড়কটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল সড়কের একটি। এখানে যানজট নিত্যদিনের ব্যাপার ছিল। সে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান-চানখারপুল পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। এ ফ্লাইওভার নির্মাণের পর যাত্রাবাড়ী দিক থেকে আসা যানবাহনের যাত্রী-চালক সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল। আমি নিজে সে ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করি। ঘড়ি ধরে মেপে দেখেছি, বাস-প্রাইভেট কারে যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান আসতে ৪ থেকে ৫ মিনিট সময় লাগে। আগের সড়কে এই পথটুকু পার হতে ঠিক দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় নষ্ট হতো। সবাই ভেবেছিলেন ফ্লাইওভার নির্মাণের পর সে দুর্ভোগ লাঘব হবে। হয়েছিলও। কিন্তু সে স্বস্তি টিকে ছিল মাত্র বছর খানেক। এখন আবার ফিরে এসেছে আগের যানজট। তবে আগের মতো তত তীব্রভাবে নয়। আগে দুই/আড়াই ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো, এখন থাকতে হয় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এ যানজট হয় ফ্লাইওভারের উপরে এবং এজন্য সিংহভাগ দায়ী গুলিস্তানের ফুটপাতে সেই চোরাই জুতার দোকানগুলো। এ দোকানগুলো এমন একটা স্থান দখল করে রাখে- যে স্থান দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে আসা বাসসহ সব ধরনের যানবাহন ফ্লাইওভার থেকে নেমে বাইতুল মোকাররমের দিকে মোড় নেয়। সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে জুতার দোকান বসায় গাড়িগুলো সহজে মোড় নিতে পারে না। জুতার দোকানের সঙ্গে সেখানে প্রধান সড়ক দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে গুলিস্তান-মাওয়া রুটের বেসরকারি মালিকানাধীন বাসগুলো। আর সেখানে দায়িত্ব পালনরত সবাই (পুলিশ, বাস কোম্পানির কর্মী) সেই বাসগুলেকে ভালোভাবে দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ করে দেয়। ফলে বাসসহ সব যানবাহনকে ফ্লাইওভার থেকে নেমেই জুতার দোকানগুলোর মুখে এসে থমকে দাঁড়াতে হয়। এজন্য পিছনের গাড়িগুলো ফ্লাইওভার থেকে নামতে পারে না, প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়। এ সময় টোলপ্লাজাও অকার্যকর থাকে। যানবাহন এগুতেও পারে না পিছুতেও পারে না। একই কারণে সকালে অফিস সময়ে যখন বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য বাস-যানবাহন একই সময়ে রাজধানীতে ঢোকার চেষ্টা করে সেগুলোকে ফ্লাইওভারের উপর প্রায় দুই কিলোমিটার লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় নিচে নামার সুযোগ পাওয়ার জন্য। এতো গেল সকালে অফিস সময়ের কথা, কিন্তু রাতে, গভীর রাতেও সে ফ্লাইওভারে তীব্র যানজট লেগে থাকেÑ তার কি কারণ? আমি নিজে দেখেছি, রাত যত বাড়ে ফ্লাইওভারে যানজট তত তীব্র হয়। অনেক দিন রাত ১২টায় ফ্লাইওভার দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়ার সময় দেখেছি, যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে আসা গাড়িগুলো ফ্লাইওভারে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার জট পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি এর কারণ তা নিয়ে অনেকেই মুখ খুলতে চান না। মুখ খুললেই সবাই দাবি করবে ‘প্রমাণ দিন’। ‘অব দি রেকর্ড’ কথা হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ তখন ঢাকার বাইরে থেকে আসা মালবোঝাই ট্রাকগুলো থেকে চাঁদা তোলে। পুলিশের নিয়োজিত লোক চাঁদা নেয়ার সময় প্রতি ট্রাক থেকে ৩/৪ মিনিট সময় লাগলে পিছনের গাড়িকে তো দাঁড়িয়ে থাকতেই হবে। তার নিশ্চিত ফল দীর্ঘ যানজট।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে ফ্লাইওভারের উপর এমন অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে তা নিরসনের জন্য ট্রাফিক পুলিশ কী করছে? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ নয়। পুলিশ অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, সড়কে গাড়ি বেশি, গাড়ি চালক, পথচারী, ফুটপাতের দোকানদার- কেউ নিয়ম মানে না। ফলে অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ছে। এ নিয়ে পত্রিপত্রিকায় অসংখ্য রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি, হচ্ছে না। এ সম্পর্কে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কিছু অংশ তুলে দেয়া হলো- “অব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতির কারণে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারে ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। সকাল থেকেই ফ্লাইওভারের গুলিস্তান ও ঢাকা মেডিকেল পয়েন্টে নামতে গিয়ে আটকে থাকছে শত শত গাড়ি। এতে করে ফ্লাইওভারের উপরে যানজট সায়েদাবাদ ছাড়িয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় এসে ঠেকেছে। যানজটের কারণে অনেক গাড়ি উল্টো দিকে ঘুরতে গিয়ে ফ্লাইওভারের উপরেও জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল ১০টার পর থেকে ফ্লাইওভার অতিক্রম করতেই দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগেছে বলে ভুক্তভোগিরা জানান।” অন্যদিকে, ঢাকা মেডিকেলে নামতে গিয়েও ফ্লাইওভারের শত শত গাড়ি আটকে থাকছে। র‌্যাম্প থেকে শুরু করে গাড়ির সারি গুলিস্তান টোলবক্স পার হয়ে গুলিস্তানের যানজটের সঙ্গে মিলেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগিরা জানান, গুলিস্তানে নামতে গিয়ে গাড়িগুলো এলোমেলোভাবে ডান দিকে মোড় ঘুরতে গিয়ে জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। যে সব গাড়ি সামনের দিকে যাবে সেগুলোও এগুতে পারছে না। কারণ গুলিস্তান চত্বর থেকে সুন্দরবন মার্কেট পর্যস্ত রাস্তার অনেকাংশ দখল করে বসেছে হকাররা। এর মধ্যে কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় তো আছেই। ভুক্তভোগিরা গুলিস্তান ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে জানান, ফ্লাইওভার থেকে গাড়িগুলো যাতে নির্বিঘেœ নামতে পারে সে দিকে ট্রাফিক পুলিশের কোন নজর নেই। তারা সকাল থেকেই হাল ছেড়ে বসে আছেন। আবার ফুটপাতসহ রাস্তা দখল করে হকার বসার কারণে গাড়িগুলো চলতে পারছে না। সেদিকেও পুলিশের কোন নজর নেই। পুলিশ একটু তৎপর হলে অব্যবস্থাপনা কেটে যেতো।

এতকিছুর পর গুলিস্তানকে ঢাকার ‘মগের মুল্লুক’ বলা হলে খুব কি বাড়িয়ে বলা হয়?

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৩ পৌষ ১৪২৭, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

রিপোর্টারের সাতকাহন

জনভাবনায় গুলিস্তান : ঢাকার ‘মগের মুল্লুক’

সালাম জুবায়ের

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে হকারদের জুতার দোকানে দোকানে ঘুরছিলেন আজিমপুর থেকে আসা আসাদ হোসেন। চারপাশে ঘুরে ঘুরে তিনি দেখছিলেন সড়কে চট এবং টুকরি বিছিয়ে সাজানো জুতার দোকানগুলো। আমি পল্টনে সংবাদ অফিসে আসার জন্য রিকশা খুঁজছিলাম। এ সময় চোখ পড়ে তার দিকে। কেন তিনি একের পর এক জুতার দোকানে ঘুরছেন? কৌতুহল মেটাতে তার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে প্রশ্ন করলাম- আপনি একের পর এক জুতার দোকানে ঘুরছেন, পছন্দের জুতা খুঁজছেন? আসাদ হোসেন কিছুটা বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, জি জুতা খুঁজছি, আমার জুতা। আপনার জুতা মানে? এরপর তিনি যে কথা বললেন তা একটি মজার গল্পে মতোই।

দিন দুই আগে আসাদ হোসেন আজিমপুরে একটি মার্কেটে কাপড়ের দোকানে শাড়ি কিনতে ঢুকেছিলেন। পায়ের জুতা খুলে বাইরে রেখে দোকানে ঢোকেন, কিন্তু বের হওয়ার পর দেখেন দোকানের বাইরে তার জুতাজোড়া নেই। পাড়ার কোন ছিঁচকে চোর জুতাজোড়া নিয়ে পালিয়ে গেছে। জুতা হারিয়ে অসহায় বোধ করছিলেন আসাদ হোসেন। তারপর ঘটলো আরও মজার ঘটনা। পাড়ারই আরেক তরুণ এসে আসাদকে জানালেন, তার জুতা এক ভবঘুরে নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাকে ধরতে হলে একটু পরই চলে যান গুলিস্তানে ফুটপাতের জুতার দোকানে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, মিলাদ মাহফিল, বিয়েবাড়ি বা বিভিন্ন দোকান থেকে জুতা চুরি করে ছিঁচকে চোর বা ভবঘুরে চোর সেই জুতা বিক্রি করতে সোজা চলে যায় গুলিস্তানে। সেখানে একদল হকার ফুটপাতে জুতার দোকান সাজিয়ে বসে। নতুন জুতার সঙ্গে সঙ্গে তারা পুরান অর্থাৎ অন্য লোকের ব্যবহার করা জুতা বিক্রি করেন। এসব জুতার দোকানের হকারদের সঙ্গে বিভিন্ন মহল্লার ছিঁচকে চোর, মাদকাসক্তসহ ছোট অপরাধীদের গোপন যোগাযোগ থাকে। এসব চোররা কোথাও থেকে জুতা চুরি করলে সরাসরি জুতার হকারদের কাছে নিয়ে আসে। হকাররা সেসব চুরিকরা জুতা ভালো করে কালি মেখে ফুটপাতে বিক্রি করেন। ফুটপাতের এসব দোকানে অনেকেই, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষÑ রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিক, ছোট দোকানদার, কাজের লোক, ফুটপাতের হকার- বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এখানে আসেন কম দামে জুতা কিনতে। জুতা কেনার সময় কেউ জানতে চায় না এসব জুতা সত্যিকার ব্যবহারকারীর কাছ থেকে নেয়া নাকি পাড়ার ছিঁচকে চোরের চুরি করা জুতা। আর কিছু সরল-সোজা প্রকৃতির লোক এখানে আসেন তার হারিয়ে যাওয়া, আসলে চুরি হওয়া জুতা খুঁজতে। যেমন আজিমপুর থেকে এসেছেন আসাদ হোসেন। তবে গুলিস্তানে যত জুতার দোকান আছে, তাদের সবাই চুরি করা জুতার ব্যবসা করেন তা কিন্তু নয়।

গুলিস্তান ঘুুরে আরেকটি চোরাই জিনিসের বেচা-কেনার সন্ধান পাওয়া যায়। সেটি হচ্ছে মোবাইল ফোন। গুলিস্তান এবং এর আশপাশের এলাকা চোরাই জুতার মতো চোরাই মোবাইল ফোনের ‘ওপেন মার্কেট’। আসাদ হোসেন যেমন তার চুরি হওয়া জুতা খুঁজতে গুলিস্তানে এসেছেন, তেমনি নিজের সখের মোবাইল ফোন চুরি গেলে অনেকে খুঁজতে আসেন গুলিস্তানে। এখানে সবসময়ই বিক্রি হয় চোরাই মোবাইল ফোন। গুলিস্তান এলাকায় মোবাইল ফোনসেট মেরামতের এক হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে নতুন মোবাইল ফোন বিক্রি-মেরামতের পাশাপাশি চোরাই ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনসেট বিক্রি হয়। সব দোকানই চোরাই মোবাইল কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত না হলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীই অধিক লাভের আশায় এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। গুলিস্তানে যারা ব্যবসা-চাকরি বা অন্য কোন উদ্দেশে সব সময় অবস্থান করেন তাদের সবারই জানা চোরাই ফোন সেট বিক্রি হওয়ার বিষয়টি। চোরাই জুতার মতোই চোরাই মোবাইল ফোন বিক্রির জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের নিজস্ব শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্যরা মোবাইল ফোন সেট চুরি বা ছিনতাই করে আগে থেকে চুক্তিবদ্ধ দোকানে বিক্রি করে। এভাবে শুধু চোরাই পণ্য বিক্রির জন্যই গুলিস্তান একটি বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছে।

আসাদ হোসেন তার চুরি হওয়া জুতাজোড়া খুঁজে পাননি। মনখারাপ করে ফিরে যান তিনি। তবে তিনি ফেরে গেছেন এক বুক বিস্ময় নিয়ে। তার বিস্ময় গুলিস্তানের এই অরাজক অবস্থা দেখে। গুলিস্তান খুব জনবহুল এলাকা, অসংখ্য মানুষ সব সময় এখানে ভিড় করে থাকে- কেউ প্রয়োজনে, কেউ অপ্রয়োজনে, আবার কেউ কেনাকাটা করতে, কেউবা নিরেট তামাশা দেখতে আসে গুলিস্তানে। অনেকে আশপাশের জেলা শহর থেকে ঢাকায় এসে প্রথম পদার্পন করেন গুলিস্তানে। সেখান থেকে শহরের অন্যকোথাও যাওয়ার বাস-টেক্সি-রিকশা ধরেন। গুলিস্তানে যারা আসেন, গুলিস্তান হয়ে যারা শহরের বিভিন্ন স্থানে, নিজ কর্মস্থল, অফিস-আদালত বা কেনাকাটা করতে যানÑ তাদের সবার কাছেই গুলিস্তান এলাকার একটি বিশেষ পরিচয় হচ্ছে ঢাকার ‘মগের মুল্লুক’। কেন এ নামে অনেকে গুলিস্তাকে ডাকেন তার উত্তর জানা নেই। তবে অনেকে মনে করেন মগের মুল্লুকে যেমন কোন নিয়ম নীতি মানা হয় না, যে যেভাবে ইচ্ছে চলতে পারে, যা ইচ্ছে করতে পারে, এজন্য কাউকে তোয়াক্কা করতে হয় না, গুলিস্তানও অনেকটা সে রকম। এখানে সরকারের জারি করা অনেক নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন না মানলেও চলে। না মানলে কেউ যে এসে ধরে জেলে পুরে দেবে তা নয়। এখানে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- পুলিশ, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কিন্তু তাদের কেউ পরোয়া করে বলে মনে হয় না।

অনেকে মুখে হাসি যোগানোর জন্য পরিহাস করেন এই বলে যে, কেউ যদি বলে আমি গুলিস্তানে প্রধান সড়কের মাঝে দোকান বসাবো, সে বসাতে পারবে। যদি বলেন, কেউ ইচ্ছে হলো গুলিস্তানের প্রধান সড়কে এক বস্তা ময়লা এনে ফেলে রাখবে, সে তা করতে পারবে। যদি বলেন, আমি আমার রিকশা, সাইকেল বা প্রাইভেট কার সড়কের অনেকটা জুড়ে পার্ক করে রাখবো, আপনি তা পারবেন। আপনি যদি মনে করেন, মূল সড়কে যেখানে গণপরিবহন চলাচল করার কথা সেখানে আপনি একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে পুরো এলাকা যানজটে ফেলে দেবেন, আপনি তাও পারবেন। এখানে যেসব কথা বললাম তা যে সত্যি তা বুঝতে হলে আপনাকে কোন কষ্ট করতে হবে না। আপনি যদি গুলিস্তানে গিয়ে যেকোন পয়েন্টে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন তবে হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে যাবেন। এসব অপকর্ম যে সেখানে হচ্ছে তা নিয়ে কোন রাখঢাক নেই, যা হচ্ছে, যে যা করছে সবকিছুই সবার সামনে প্রকাশ্যে করছে। আপনি হয়তো সামনে তাকিয়ে দেখবেন এক দল পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছে, কিন্তু তারা আসলে কিছুই দেখছেন না, কিছু শুনছেন না। যদি দেখতেন, যদি শুনতেন তবে তার বিরুদ্ধে তো কোন না কোন ব্যবস্থা নিতেন, কিন্তু কেউ সেই অনিয়মগুলোর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। কেন তাকাচ্ছেন না তাও কারও বোধগম্য হয় না।

যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত সড়কটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল সড়কের একটি। এখানে যানজট নিত্যদিনের ব্যাপার ছিল। সে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান-চানখারপুল পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। এ ফ্লাইওভার নির্মাণের পর যাত্রাবাড়ী দিক থেকে আসা যানবাহনের যাত্রী-চালক সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল। আমি নিজে সে ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করি। ঘড়ি ধরে মেপে দেখেছি, বাস-প্রাইভেট কারে যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান আসতে ৪ থেকে ৫ মিনিট সময় লাগে। আগের সড়কে এই পথটুকু পার হতে ঠিক দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় নষ্ট হতো। সবাই ভেবেছিলেন ফ্লাইওভার নির্মাণের পর সে দুর্ভোগ লাঘব হবে। হয়েছিলও। কিন্তু সে স্বস্তি টিকে ছিল মাত্র বছর খানেক। এখন আবার ফিরে এসেছে আগের যানজট। তবে আগের মতো তত তীব্রভাবে নয়। আগে দুই/আড়াই ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো, এখন থাকতে হয় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এ যানজট হয় ফ্লাইওভারের উপরে এবং এজন্য সিংহভাগ দায়ী গুলিস্তানের ফুটপাতে সেই চোরাই জুতার দোকানগুলো। এ দোকানগুলো এমন একটা স্থান দখল করে রাখে- যে স্থান দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে আসা বাসসহ সব ধরনের যানবাহন ফ্লাইওভার থেকে নেমে বাইতুল মোকাররমের দিকে মোড় নেয়। সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে জুতার দোকান বসায় গাড়িগুলো সহজে মোড় নিতে পারে না। জুতার দোকানের সঙ্গে সেখানে প্রধান সড়ক দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে গুলিস্তান-মাওয়া রুটের বেসরকারি মালিকানাধীন বাসগুলো। আর সেখানে দায়িত্ব পালনরত সবাই (পুলিশ, বাস কোম্পানির কর্মী) সেই বাসগুলেকে ভালোভাবে দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ করে দেয়। ফলে বাসসহ সব যানবাহনকে ফ্লাইওভার থেকে নেমেই জুতার দোকানগুলোর মুখে এসে থমকে দাঁড়াতে হয়। এজন্য পিছনের গাড়িগুলো ফ্লাইওভার থেকে নামতে পারে না, প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়। এ সময় টোলপ্লাজাও অকার্যকর থাকে। যানবাহন এগুতেও পারে না পিছুতেও পারে না। একই কারণে সকালে অফিস সময়ে যখন বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য বাস-যানবাহন একই সময়ে রাজধানীতে ঢোকার চেষ্টা করে সেগুলোকে ফ্লাইওভারের উপর প্রায় দুই কিলোমিটার লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় নিচে নামার সুযোগ পাওয়ার জন্য। এতো গেল সকালে অফিস সময়ের কথা, কিন্তু রাতে, গভীর রাতেও সে ফ্লাইওভারে তীব্র যানজট লেগে থাকেÑ তার কি কারণ? আমি নিজে দেখেছি, রাত যত বাড়ে ফ্লাইওভারে যানজট তত তীব্র হয়। অনেক দিন রাত ১২টায় ফ্লাইওভার দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়ার সময় দেখেছি, যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে আসা গাড়িগুলো ফ্লাইওভারে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার জট পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি এর কারণ তা নিয়ে অনেকেই মুখ খুলতে চান না। মুখ খুললেই সবাই দাবি করবে ‘প্রমাণ দিন’। ‘অব দি রেকর্ড’ কথা হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ তখন ঢাকার বাইরে থেকে আসা মালবোঝাই ট্রাকগুলো থেকে চাঁদা তোলে। পুলিশের নিয়োজিত লোক চাঁদা নেয়ার সময় প্রতি ট্রাক থেকে ৩/৪ মিনিট সময় লাগলে পিছনের গাড়িকে তো দাঁড়িয়ে থাকতেই হবে। তার নিশ্চিত ফল দীর্ঘ যানজট।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে ফ্লাইওভারের উপর এমন অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে তা নিরসনের জন্য ট্রাফিক পুলিশ কী করছে? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ নয়। পুলিশ অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, সড়কে গাড়ি বেশি, গাড়ি চালক, পথচারী, ফুটপাতের দোকানদার- কেউ নিয়ম মানে না। ফলে অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ছে। এ নিয়ে পত্রিপত্রিকায় অসংখ্য রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি, হচ্ছে না। এ সম্পর্কে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কিছু অংশ তুলে দেয়া হলো- “অব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতির কারণে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারে ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। সকাল থেকেই ফ্লাইওভারের গুলিস্তান ও ঢাকা মেডিকেল পয়েন্টে নামতে গিয়ে আটকে থাকছে শত শত গাড়ি। এতে করে ফ্লাইওভারের উপরে যানজট সায়েদাবাদ ছাড়িয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় এসে ঠেকেছে। যানজটের কারণে অনেক গাড়ি উল্টো দিকে ঘুরতে গিয়ে ফ্লাইওভারের উপরেও জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল ১০টার পর থেকে ফ্লাইওভার অতিক্রম করতেই দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগেছে বলে ভুক্তভোগিরা জানান।” অন্যদিকে, ঢাকা মেডিকেলে নামতে গিয়েও ফ্লাইওভারের শত শত গাড়ি আটকে থাকছে। র‌্যাম্প থেকে শুরু করে গাড়ির সারি গুলিস্তান টোলবক্স পার হয়ে গুলিস্তানের যানজটের সঙ্গে মিলেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগিরা জানান, গুলিস্তানে নামতে গিয়ে গাড়িগুলো এলোমেলোভাবে ডান দিকে মোড় ঘুরতে গিয়ে জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। যে সব গাড়ি সামনের দিকে যাবে সেগুলোও এগুতে পারছে না। কারণ গুলিস্তান চত্বর থেকে সুন্দরবন মার্কেট পর্যস্ত রাস্তার অনেকাংশ দখল করে বসেছে হকাররা। এর মধ্যে কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় তো আছেই। ভুক্তভোগিরা গুলিস্তান ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে জানান, ফ্লাইওভার থেকে গাড়িগুলো যাতে নির্বিঘেœ নামতে পারে সে দিকে ট্রাফিক পুলিশের কোন নজর নেই। তারা সকাল থেকেই হাল ছেড়ে বসে আছেন। আবার ফুটপাতসহ রাস্তা দখল করে হকার বসার কারণে গাড়িগুলো চলতে পারছে না। সেদিকেও পুলিশের কোন নজর নেই। পুলিশ একটু তৎপর হলে অব্যবস্থাপনা কেটে যেতো।

এতকিছুর পর গুলিস্তানকে ঢাকার ‘মগের মুল্লুক’ বলা হলে খুব কি বাড়িয়ে বলা হয়?