প. প. বিভাগকে আইনি নোটিশ, ফুঁসছে স্থানীয়রা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রব ও এসএসিএমও আসমা বেগমের অবহেলার কারণে লিপি আক্তার (৩৫) নামের এক দরিদ্র অসহায় সেবাগ্রহিতা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের দীর্ঘ সময় পার হলেও ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে মৃৃত্যুর ঘটনায় পরিদর্শকের প্রতিবেদন জমা থাকা স্বত্ত্বেও উদাসীন রয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর। এই ঘটনায় দৈনিক ‘সংবাদ’ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে উচ্চ আদালতের এক আইনজীবী স্ব-প্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনি নোটিস দিয়েছেন। এদিকে সেবা গ্রহিতার মৃত্যুর কারণে ডা. রব ও এসএসিএমওর শাস্তিসহ অপসারণ দাবিতে ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা। উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউপির গাবতলী এলাকার ভুক্তভোগী নাজমা, রুপা, মাধবী, আয়েশা আক্তারসহ এলাকাবাসী তাদের ধারণকৃত কথায় জানা যায়, স্থানীয় হতদরিদ্র কৃষক মজিবুর রহমানের ২য় স্ত্রী লিপি আক্তার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রবের কাছে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদী (৩ বছর) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (ইমপ্লান্ট) গ্রহণ করেন। ইমপ্লান্ট নেয়ার ৫ মাসের মাথায় জুলাই মাসে তার শারীরিক গুরুতর সমস্যার কারণে ডা. আ. রব ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও) আসমা বেগম মুন্নীর কাছে তার জীবন বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে একাধিকবার ইমপ্লান্ট পদ্ধতি খুলে দিতে বলেন। আ. রব ভুক্তভোগীর বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে তাকে সকাল বিকেল সুখী পিল সেবন করতে বলে ধমকিয়ে বিদায় করেন। ইমপ্লান্ট গ্রহণে ভুক্তভোগীর শরীরে পানি জমে ফুলে ও অনবরত রক্তক্ষরণের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বৈদ্যেরবাজার ইউপির ‘ক’ ইউনিটের পরিবার কল্যাণ সহকারী (এসএসিএমও) সুুফিয়া আক্তারের কাছে গেলে তিনি চাকরির নিয়মের অজুহাতে ‘রোগীর জীবনের চাইতে তার চাকরির মূল্য বেশি’ বলে দুর্ব্যবহার করে ফিরিয়ে দেন। বিষয়টি আসমা বেগম মুন্নির ধারণকৃত বক্তব্যেও স্পষ্ট। অথচ প. প. বিভাগ সূত্র জানায়, ইমপ্লান্ট গ্রহণকারীর সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার তা খুলে দেবেন বলে নির্দেশনা দেয়া আছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবা গ্রহিতার মৃত্যুর ঘটনায় গত অক্টোবর মাসে স্থানীয় মাঠকর্মী সুফিয়া বেগম ও নভেম্বর মাসের ১ তারিখে পরিদর্শক মাজেদুল ইসলাম তার প্রতিবেদনে ইমপ্লান্ট গ্রহিতার মৃত্যু হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন। দীর্ঘমেয়াদী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে মৃৃত্যুর ঘটনায় পরিদর্শকের প্রতিবেদন জমা থাকা স্বত্ত্বেও তদন্ত করে ব্যবস্থা না নিয়ে উদাসীন রয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর।

এদিকে গত ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ইমপ্লান্ট গ্রহিতার মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হলে স্ব-প্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. বশির আহম্মেদের পক্ষে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগকে ঘটনার তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাঈল গত ২১ ডিসেম্বর আইনী নোটিস দিয়েছেন। এই বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ডা. আ. রবের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ও আইনী নোটিস জেলা অফিসারকে জানানো এবং প্রতিবেদনটি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলা উপ-পরিচালক সারোয়ার আলম দায়সারা ভাব নিয়ে জানান, উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করবেন। প.প. বিভাগীয় পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব শরিফুল ইসলাম সংবাদ প্রতিবেদকের তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান। এদিকে ইমপ্লান্ট সেবা গ্রহিতার মৃত্যুর কারণে ডা.রব ও এসএসিএমওর শাস্তিসহ অপসারণ দাবিতে ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা। যদি ডা. রব ও আসমা বেগম মুন্নির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা না নেয় কর্তৃপক্ষ তাহলে তারা মানববন্ধনসহ যেকোন আন্দোলন করার কথাও জানান।

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৪ পৌষ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

সোনারগাঁয়ে সেবাগ্রহীতার মৃত্যু

প. প. বিভাগকে আইনি নোটিশ, ফুঁসছে স্থানীয়রা

প্রতিনিধি, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রব ও এসএসিএমও আসমা বেগমের অবহেলার কারণে লিপি আক্তার (৩৫) নামের এক দরিদ্র অসহায় সেবাগ্রহিতা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের দীর্ঘ সময় পার হলেও ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে মৃৃত্যুর ঘটনায় পরিদর্শকের প্রতিবেদন জমা থাকা স্বত্ত্বেও উদাসীন রয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর। এই ঘটনায় দৈনিক ‘সংবাদ’ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে উচ্চ আদালতের এক আইনজীবী স্ব-প্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনি নোটিস দিয়েছেন। এদিকে সেবা গ্রহিতার মৃত্যুর কারণে ডা. রব ও এসএসিএমওর শাস্তিসহ অপসারণ দাবিতে ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা। উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউপির গাবতলী এলাকার ভুক্তভোগী নাজমা, রুপা, মাধবী, আয়েশা আক্তারসহ এলাকাবাসী তাদের ধারণকৃত কথায় জানা যায়, স্থানীয় হতদরিদ্র কৃষক মজিবুর রহমানের ২য় স্ত্রী লিপি আক্তার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রবের কাছে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদী (৩ বছর) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (ইমপ্লান্ট) গ্রহণ করেন। ইমপ্লান্ট নেয়ার ৫ মাসের মাথায় জুলাই মাসে তার শারীরিক গুরুতর সমস্যার কারণে ডা. আ. রব ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও) আসমা বেগম মুন্নীর কাছে তার জীবন বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে একাধিকবার ইমপ্লান্ট পদ্ধতি খুলে দিতে বলেন। আ. রব ভুক্তভোগীর বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে তাকে সকাল বিকেল সুখী পিল সেবন করতে বলে ধমকিয়ে বিদায় করেন। ইমপ্লান্ট গ্রহণে ভুক্তভোগীর শরীরে পানি জমে ফুলে ও অনবরত রক্তক্ষরণের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বৈদ্যেরবাজার ইউপির ‘ক’ ইউনিটের পরিবার কল্যাণ সহকারী (এসএসিএমও) সুুফিয়া আক্তারের কাছে গেলে তিনি চাকরির নিয়মের অজুহাতে ‘রোগীর জীবনের চাইতে তার চাকরির মূল্য বেশি’ বলে দুর্ব্যবহার করে ফিরিয়ে দেন। বিষয়টি আসমা বেগম মুন্নির ধারণকৃত বক্তব্যেও স্পষ্ট। অথচ প. প. বিভাগ সূত্র জানায়, ইমপ্লান্ট গ্রহণকারীর সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার তা খুলে দেবেন বলে নির্দেশনা দেয়া আছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবা গ্রহিতার মৃত্যুর ঘটনায় গত অক্টোবর মাসে স্থানীয় মাঠকর্মী সুফিয়া বেগম ও নভেম্বর মাসের ১ তারিখে পরিদর্শক মাজেদুল ইসলাম তার প্রতিবেদনে ইমপ্লান্ট গ্রহিতার মৃত্যু হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন। দীর্ঘমেয়াদী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে মৃৃত্যুর ঘটনায় পরিদর্শকের প্রতিবেদন জমা থাকা স্বত্ত্বেও তদন্ত করে ব্যবস্থা না নিয়ে উদাসীন রয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর।

এদিকে গত ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ইমপ্লান্ট গ্রহিতার মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হলে স্ব-প্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. বশির আহম্মেদের পক্ষে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগকে ঘটনার তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাঈল গত ২১ ডিসেম্বর আইনী নোটিস দিয়েছেন। এই বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ডা. আ. রবের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ও আইনী নোটিস জেলা অফিসারকে জানানো এবং প্রতিবেদনটি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলা উপ-পরিচালক সারোয়ার আলম দায়সারা ভাব নিয়ে জানান, উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করবেন। প.প. বিভাগীয় পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব শরিফুল ইসলাম সংবাদ প্রতিবেদকের তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান। এদিকে ইমপ্লান্ট সেবা গ্রহিতার মৃত্যুর কারণে ডা.রব ও এসএসিএমওর শাস্তিসহ অপসারণ দাবিতে ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা। যদি ডা. রব ও আসমা বেগম মুন্নির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা না নেয় কর্তৃপক্ষ তাহলে তারা মানববন্ধনসহ যেকোন আন্দোলন করার কথাও জানান।