দ্বিতীয় দফায়

আরও ১৫শ রোহিঙ্গার ভাসানচর যাত্রা

কক্সবাজার থেকে ২য় দফায় ভাসানচর যাত্রা করেছেন ১৫০০ রোহিঙ্গা। গতকাল বেলা ১২টার দিকে উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ১৩টি, বিকেলে ১০টি ও সন্ধ্যায় আরও ৭টি বাস ভাসানচরের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। রাতে তারা চট্টগ্রামে বোট ক্লাবে অবস্থান করবেন বলে জানাগেছে। সেখান থেকে আজ সরকারি ব্যবস্থাপনায় নৌবাহিনীর জাহাজে করে তাদের জলপথে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।

রোহিঙ্গাদের বহনকারী বাসগুলোর সামনে ও পেছনে র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে। তবে বাসগুলোতে কতজন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া হচ্ছে, সেই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলেননি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দ্বিতীয় দফায় ৭০০ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের পরিকল্পনা থাকলেও ১৫০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে রওনা হয়েছে। তাদের নৌবাহিনীর জাহাজে করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২য় দফায় ৭ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে সম্মতি জানিয়েছেন। যারা বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসযোগে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে শুরু করেছে। এসব রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামী কয়েক দিন এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে উদ্যোগী হয়েছে। এ কারণে সকাল থেকে উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় ভাসানচরে যাওয়ার তোড়জোড়। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসে করে নিয়ে এসে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে। সেখান থেকে তারা বাসযোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়।

পরিবারসহ ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রাকালে টেকনাফ শালাপুরের জাহেদ হোসাইন বলেন, কেউ আমাদের জোর করেনি। নিজেদের ইচ্ছায় আমরা পুরো পরিবার ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। তাছাড়া ভাসানচরে যারা আছে তারা অনেক ভালো আছেন বলে ফোনে জানিয়েছেন। তাই আমরা উন্নত জীবনের আশায় সেখানে যাচ্ছি।

এর আগে প্রথম ধাপে ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে ভাসানচরে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা হাসি মুখে পৌঁছেছিল।

এ বিষয়ে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে ২য় দফায় ১৩টি বাস ভাসানচরে যাত্রা করেছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত এসব বাসে প্রায় ৬শ’ রোহিঙ্গা বাসে উঠেছেন। এরপর বিকেল ৩টায় আরও ১০টি বাসে রোহিঙ্গারা রওনা হন। বিকেল ও সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসে চেপেছেন ১৫০০ জন রোহিঙ্গা।

সোমবার সকাল ৮টার দিকে ক্যাম্পে বাস আসে। সিআইসি কার্যালয়ে প্রক্রিয়া শেষে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় তাদের স্বজনরা আশপাশে ভিড় করে। এর আগে তাদের মধ্যে অনেকের স্বজন প্রথম দফায় ভাসানচরে পৌঁছেছিল। পরে বাসে করে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট ও কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাটে প্রক্রিয়া শেষ করে তারা ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই ক্যাম্প থেকে ১০০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এর প্রতিনিধি এবং টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) নওশের ইবনে হালিম বলেন, তার শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ১০০ রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। সকালে তারা ক্যাম্প থেকে উখিয়ায় রওনা দিয়েছেন। এর আগে এ শিবির থেকে ২১ পরিবার ভাসানচরে পৌঁছেছিল।

টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কালাম জানান, তার শিবির থেকে ২৫ পরিবারের ১০০ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া রওনা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাদের ভাসানচরে পৌঁছার কথা রয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

উল্লেখ্য, মায়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৪ পৌষ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

দ্বিতীয় দফায়

আরও ১৫শ রোহিঙ্গার ভাসানচর যাত্রা

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার/ নুরুল হক, টেকনাফ

image

কক্সবাজার থেকে ২য় দফায় ভাসানচর যাত্রা করেছেন ১৫০০ রোহিঙ্গা। গতকাল বেলা ১২টার দিকে উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ১৩টি, বিকেলে ১০টি ও সন্ধ্যায় আরও ৭টি বাস ভাসানচরের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। রাতে তারা চট্টগ্রামে বোট ক্লাবে অবস্থান করবেন বলে জানাগেছে। সেখান থেকে আজ সরকারি ব্যবস্থাপনায় নৌবাহিনীর জাহাজে করে তাদের জলপথে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।

রোহিঙ্গাদের বহনকারী বাসগুলোর সামনে ও পেছনে র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে। তবে বাসগুলোতে কতজন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া হচ্ছে, সেই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলেননি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দ্বিতীয় দফায় ৭০০ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের পরিকল্পনা থাকলেও ১৫০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে রওনা হয়েছে। তাদের নৌবাহিনীর জাহাজে করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২য় দফায় ৭ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে সম্মতি জানিয়েছেন। যারা বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসযোগে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে শুরু করেছে। এসব রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামী কয়েক দিন এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে উদ্যোগী হয়েছে। এ কারণে সকাল থেকে উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় ভাসানচরে যাওয়ার তোড়জোড়। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসে করে নিয়ে এসে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে। সেখান থেকে তারা বাসযোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়।

পরিবারসহ ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রাকালে টেকনাফ শালাপুরের জাহেদ হোসাইন বলেন, কেউ আমাদের জোর করেনি। নিজেদের ইচ্ছায় আমরা পুরো পরিবার ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। তাছাড়া ভাসানচরে যারা আছে তারা অনেক ভালো আছেন বলে ফোনে জানিয়েছেন। তাই আমরা উন্নত জীবনের আশায় সেখানে যাচ্ছি।

এর আগে প্রথম ধাপে ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে ভাসানচরে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা হাসি মুখে পৌঁছেছিল।

এ বিষয়ে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে ২য় দফায় ১৩টি বাস ভাসানচরে যাত্রা করেছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত এসব বাসে প্রায় ৬শ’ রোহিঙ্গা বাসে উঠেছেন। এরপর বিকেল ৩টায় আরও ১০টি বাসে রোহিঙ্গারা রওনা হন। বিকেল ও সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসে চেপেছেন ১৫০০ জন রোহিঙ্গা।

সোমবার সকাল ৮টার দিকে ক্যাম্পে বাস আসে। সিআইসি কার্যালয়ে প্রক্রিয়া শেষে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় তাদের স্বজনরা আশপাশে ভিড় করে। এর আগে তাদের মধ্যে অনেকের স্বজন প্রথম দফায় ভাসানচরে পৌঁছেছিল। পরে বাসে করে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট ও কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাটে প্রক্রিয়া শেষ করে তারা ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই ক্যাম্প থেকে ১০০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এর প্রতিনিধি এবং টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) নওশের ইবনে হালিম বলেন, তার শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ১০০ রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। সকালে তারা ক্যাম্প থেকে উখিয়ায় রওনা দিয়েছেন। এর আগে এ শিবির থেকে ২১ পরিবার ভাসানচরে পৌঁছেছিল।

টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কালাম জানান, তার শিবির থেকে ২৫ পরিবারের ১০০ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া রওনা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাদের ভাসানচরে পৌঁছার কথা রয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

উল্লেখ্য, মায়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।