কনসালটেন্ট নিয়োগে পাওয়ার সেলকে দায়িত্ব দেয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা ‘পাওয়ার সেল’। জ্বালানি খাতের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পেট্রোবাংলার পূর্ব অভিজ্ঞাতা কাজে না লাগিয়ে বিপিসি’র পরামর্শে বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্থাকে যুক্ত করায় সংশ্লিষ্ট মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) টার্মিনাল নির্মাণের কাজ তরান্বিত করার লক্ষ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে গত ১৯ নভেম্বর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ বিপিসিকে একটি চিঠি দেয়। মাতাবাড়ীতে ল্যান্ড বেইজ এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে অভিজ্ঞ পেট্রোবাংলা বা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লি. (আরপিজিসিএল) যেভাবে কনসালটেন্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে, বিপিসিকেও অনুরূপ কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেয়া হয় চিঠিতে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি বিভাগের পরামর্শকে পাশ কাটিয়ে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলকে দেয়ার প্রস্তাব করে গত ২ ডিসেম্বর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ফিরতি চিঠি দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি থেকে টার্মিনাল ডেভেলপার সিলেকশন পর্যন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন পাওয়ার সেলকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিপিসির চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আবু বকর ছিদ্দীক জ্বালানি বিভাগকে পাঠানো চিঠিতে বলেন, ‘মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ তরান্বিত করতে জ্বালানি বিভাগ পেট্রোবাংলার ল্যান্ড বেইজ এলএনজি টার্মিনালের অনুরূপ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনে পরামর্শক নিয়োগের অনুরোধ জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অধিনস্থ পাওয়ার সেলের অনেক অভিজ্ঞতা ও ‘এক্সপার্টিজ’ রয়েছে।’ প্রস্তাবিত এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে বিপিসির নিজস্ব ‘এক্সপার্টিজ’ না থাকায় ফিজিবিলিটি স্টাডি থেকে টার্মিণাল ডেভেলপার সিলেকশন পর্যন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের পরামর্শক নিয়োগের কাজটি পাওয়ার সেলকে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। বিপিসির প্রস্তাব অনুযায়ী পাওয়ার সেলকে দায়িত্ব দিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকতা সংবাদকে বলেন, সাধারণত বিদ্যুৎ বিভাগের কোন প্রজেক্টে কনসালটেন্ট নিয়োগে পাওয়ার সেলের অভিজ্ঞতা এবং মতামত কাজে লাগানো হয়ে থাকে। অন্যদিকে জ্বালানি বিভাগের কোন প্রজেক্টে কনসালটেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা বা হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মতামত চাওয়া হয়ে থাকে। কারণ, জ্বালানিসংক্রান্ত যেকোন প্রজেক্টে তাদেরই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে। এক্ষেত্রে তারাই বিশেষজ্ঞ মতামত দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংক্রান্ত টেকনিক্যাল বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা। তবে জ্বালানি বিষয়ে অনভিজ্ঞ পাওয়ার সেলকে কেন এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব¡ দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম সংবাদকে বলেন, ‘বিষয়টা আমি এখনও জানি না। তবে যেটুকু আপনার কাছে শুনলাম, তাতে এতটুকু বলা যায়, পেট্রোলিয়াম পণ্য এলপি গ্যাসের টার্মিনাল নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগে বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্থা পাওয়ার সেলকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক নয়। কারণ পাওয়ার সেল বিদ্যুৎ খাতের জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান।’

বিপিসি’র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, কক্সবাজারের মহেশখালী-মাতারবাড়ী এলাকায় নির্মিতব্য বৃহৎ এলপিজি টার্মিনালটি হবে রেফ্রিজারেটেড মাদার টার্মিনাল। এ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন এলপিজি কোম্পানির কাছে বাল্ক আকারে এলপি গ্যাস বিক্রি করা হবে। বার্ষিক দশ থেকে বারো লাখ মেট্রিক টন ক্ষমতার এই টার্মিনালের জেটিতে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার রেফ্রিজারেটেড এলপি গ্যাসবাহী জাহাজ এখানে নোঙর করতে পারবে। টার্মিনালে ক্ষমতা হবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। টার্মিনাল হতে দেড় থেকে চার হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজে বাল্ক এলপি গ্যাস দেশি কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করা হবে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে একটি বৃহৎ এলপিজি টার্মিনাল স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করে ইতোমধ্যে তিনটি জাপানি কোম্পানির নেতৃত্বে তিনটি পৃথক কনসোর্টিয়াম স্ব স্ব প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এ প্রস্তাবগুলো মূল্যায়নের জন্যই কসসালটেন্ট নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ীর বহুমুখী ব্যবহারের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখানে গড়ে তোলা হবে তিনটি পৃথক টার্মিনাল। এগুলো হচ্ছেÑ কয়লা আমদানির জন্য কয়লা টার্মিনাল, এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির জন্য এলএনজি টার্মিনাল এবং এলপিজি আমদানির জন্য এলপিজি টার্মিনাল। জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং এর টার্মিনালগুলো নির্মিত হবে। বাংলাদেশ সরকার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয় জ্বালানি বিভাগের অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় তেল আমদানিকারক সংস্থা বিপিসিকে।

জাপানি কোম্পানি মিতসুই অ্যান্ড কোং লিমিটেডের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম বিল্ড-ওউন-অপারেট (বিওইউ) ভিত্তিতে মাতারবাড়ী এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। এই কনসোর্টিয়ামে যুক্ত করা হয় এসকে গ্যাস নামে একটি কোরিয়ান কোম্পানিকে, যারা বৃহদাকার গ্যাস ক্যারিয়ারের (ভিএলজিসি) মালিক। স্থানীয় পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয় ইস্ট কোস্ট গ্রুপকে। মিতসুই গ্রুপের সঙ্গে প্রায় দেড় বছর আলোচনার চুক্তি করার আগে জাপানের আরেকটি সংস্থা মারুবেনি করপোরেশনের কাছ থেকেও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব পায় জ্বালানি বিভাগ। তারা ভিটল নামে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ কোন সুপরিশ বা মতামত না দিয়েই সিদ্ধান্তের জন্য মিতসুই এবং মারুবেনির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফাইল ফেরত পাঠিয়ে প্রস্তাব দুটি তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে এ ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগকারী নির্ধারণের জন্য কোন নীতিমালা না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রস্তাব দুটির তুলনামূলক মূল্যায়নে সমস্যার সম্মুখীন হন। সম্প্রতি সুমিতোমো নামে আরেকটি জাপানি কোম্পানি এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এখন প্রকল্পের কাজ পেতে জাপানেরই তিন প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা চলছে।

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপিসির উচিত প্রথমে সম্ভাব্যতা যাচাই করা। এরপর একটি সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া বা উদ্যোক্তা নির্বাচন নীতিমালা তৈরি করা। এসব সম্পন্ন হওয়ার পর টার্মিনাল নির্মাণের কাজে হাত দেয়া উচিত।

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৪ পৌষ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

মাতারবাড়ী এলপিজি টার্মিনাল

কনসালটেন্ট নিয়োগে পাওয়ার সেলকে দায়িত্ব দেয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন

ফয়েজ আহমেদ তুষার

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা ‘পাওয়ার সেল’। জ্বালানি খাতের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পেট্রোবাংলার পূর্ব অভিজ্ঞাতা কাজে না লাগিয়ে বিপিসি’র পরামর্শে বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্থাকে যুক্ত করায় সংশ্লিষ্ট মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) টার্মিনাল নির্মাণের কাজ তরান্বিত করার লক্ষ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে গত ১৯ নভেম্বর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ বিপিসিকে একটি চিঠি দেয়। মাতাবাড়ীতে ল্যান্ড বেইজ এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে অভিজ্ঞ পেট্রোবাংলা বা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লি. (আরপিজিসিএল) যেভাবে কনসালটেন্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে, বিপিসিকেও অনুরূপ কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেয়া হয় চিঠিতে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি বিভাগের পরামর্শকে পাশ কাটিয়ে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলকে দেয়ার প্রস্তাব করে গত ২ ডিসেম্বর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ফিরতি চিঠি দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি থেকে টার্মিনাল ডেভেলপার সিলেকশন পর্যন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন পাওয়ার সেলকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিপিসির চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আবু বকর ছিদ্দীক জ্বালানি বিভাগকে পাঠানো চিঠিতে বলেন, ‘মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ তরান্বিত করতে জ্বালানি বিভাগ পেট্রোবাংলার ল্যান্ড বেইজ এলএনজি টার্মিনালের অনুরূপ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনে পরামর্শক নিয়োগের অনুরোধ জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অধিনস্থ পাওয়ার সেলের অনেক অভিজ্ঞতা ও ‘এক্সপার্টিজ’ রয়েছে।’ প্রস্তাবিত এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে বিপিসির নিজস্ব ‘এক্সপার্টিজ’ না থাকায় ফিজিবিলিটি স্টাডি থেকে টার্মিণাল ডেভেলপার সিলেকশন পর্যন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের পরামর্শক নিয়োগের কাজটি পাওয়ার সেলকে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। বিপিসির প্রস্তাব অনুযায়ী পাওয়ার সেলকে দায়িত্ব দিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকতা সংবাদকে বলেন, সাধারণত বিদ্যুৎ বিভাগের কোন প্রজেক্টে কনসালটেন্ট নিয়োগে পাওয়ার সেলের অভিজ্ঞতা এবং মতামত কাজে লাগানো হয়ে থাকে। অন্যদিকে জ্বালানি বিভাগের কোন প্রজেক্টে কনসালটেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা বা হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মতামত চাওয়া হয়ে থাকে। কারণ, জ্বালানিসংক্রান্ত যেকোন প্রজেক্টে তাদেরই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে। এক্ষেত্রে তারাই বিশেষজ্ঞ মতামত দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংক্রান্ত টেকনিক্যাল বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা। তবে জ্বালানি বিষয়ে অনভিজ্ঞ পাওয়ার সেলকে কেন এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে কনসালটেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব¡ দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম সংবাদকে বলেন, ‘বিষয়টা আমি এখনও জানি না। তবে যেটুকু আপনার কাছে শুনলাম, তাতে এতটুকু বলা যায়, পেট্রোলিয়াম পণ্য এলপি গ্যাসের টার্মিনাল নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগে বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্থা পাওয়ার সেলকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক নয়। কারণ পাওয়ার সেল বিদ্যুৎ খাতের জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান।’

বিপিসি’র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, কক্সবাজারের মহেশখালী-মাতারবাড়ী এলাকায় নির্মিতব্য বৃহৎ এলপিজি টার্মিনালটি হবে রেফ্রিজারেটেড মাদার টার্মিনাল। এ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন এলপিজি কোম্পানির কাছে বাল্ক আকারে এলপি গ্যাস বিক্রি করা হবে। বার্ষিক দশ থেকে বারো লাখ মেট্রিক টন ক্ষমতার এই টার্মিনালের জেটিতে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার রেফ্রিজারেটেড এলপি গ্যাসবাহী জাহাজ এখানে নোঙর করতে পারবে। টার্মিনালে ক্ষমতা হবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। টার্মিনাল হতে দেড় থেকে চার হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজে বাল্ক এলপি গ্যাস দেশি কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করা হবে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে একটি বৃহৎ এলপিজি টার্মিনাল স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করে ইতোমধ্যে তিনটি জাপানি কোম্পানির নেতৃত্বে তিনটি পৃথক কনসোর্টিয়াম স্ব স্ব প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এ প্রস্তাবগুলো মূল্যায়নের জন্যই কসসালটেন্ট নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ীর বহুমুখী ব্যবহারের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখানে গড়ে তোলা হবে তিনটি পৃথক টার্মিনাল। এগুলো হচ্ছেÑ কয়লা আমদানির জন্য কয়লা টার্মিনাল, এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির জন্য এলএনজি টার্মিনাল এবং এলপিজি আমদানির জন্য এলপিজি টার্মিনাল। জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং এর টার্মিনালগুলো নির্মিত হবে। বাংলাদেশ সরকার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয় জ্বালানি বিভাগের অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় তেল আমদানিকারক সংস্থা বিপিসিকে।

জাপানি কোম্পানি মিতসুই অ্যান্ড কোং লিমিটেডের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম বিল্ড-ওউন-অপারেট (বিওইউ) ভিত্তিতে মাতারবাড়ী এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। এই কনসোর্টিয়ামে যুক্ত করা হয় এসকে গ্যাস নামে একটি কোরিয়ান কোম্পানিকে, যারা বৃহদাকার গ্যাস ক্যারিয়ারের (ভিএলজিসি) মালিক। স্থানীয় পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয় ইস্ট কোস্ট গ্রুপকে। মিতসুই গ্রুপের সঙ্গে প্রায় দেড় বছর আলোচনার চুক্তি করার আগে জাপানের আরেকটি সংস্থা মারুবেনি করপোরেশনের কাছ থেকেও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব পায় জ্বালানি বিভাগ। তারা ভিটল নামে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ কোন সুপরিশ বা মতামত না দিয়েই সিদ্ধান্তের জন্য মিতসুই এবং মারুবেনির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফাইল ফেরত পাঠিয়ে প্রস্তাব দুটি তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে এ ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগকারী নির্ধারণের জন্য কোন নীতিমালা না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রস্তাব দুটির তুলনামূলক মূল্যায়নে সমস্যার সম্মুখীন হন। সম্প্রতি সুমিতোমো নামে আরেকটি জাপানি কোম্পানি এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এখন প্রকল্পের কাজ পেতে জাপানেরই তিন প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা চলছে।

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপিসির উচিত প্রথমে সম্ভাব্যতা যাচাই করা। এরপর একটি সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া বা উদ্যোক্তা নির্বাচন নীতিমালা তৈরি করা। এসব সম্পন্ন হওয়ার পর টার্মিনাল নির্মাণের কাজে হাত দেয়া উচিত।