বিখ্যাত ‘ডাবল এজেন্ট’ জর্জ ব্লেকের মৃত্যু

স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের বিখ্যাত গুপ্তচর জর্জ ব্লেক মারা গেছেন। যিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্সের হয়ে কাজ করলেও আসলে ছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘ডাবল এজেন্ট’। ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থায় থেকেই তিনি সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিকে গোপনে তথ্য পাচার করতেন। তিনি শতাধিক পশ্চিমা এজেন্টের পরিচয় ফাঁস করে দিয়েছিলেন। যে কারণে রাশিয়া তাকে নায়কের মর্যাদা দেয়। ডয়চে ভেলে

রাশিয়ার গণমাধ্যমে ব্লেকের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। জর্জ ব্লেকের আসল নাম জর্জ বেহার। তার জন্ম ১৯২২ সালে নেদারল্যান্ডসের রটরডামে। তার বাবা একজন স্প্যানিশ ইহুদি, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে লড়াই করেছিলেন। পরে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান। অন্যদিকে ব্লেক নিজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাজ করেন নেদারল্যান্ডসের প্রতিরোধ আন্দোলনের হয়ে। তারপর তিনি ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত ভূখ- জিব্রাল্টারে পালিয়ে যান। কিছুদিন তিনি ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে কাজ করেন। জীবনের নানাবিধ অভিজ্ঞতার কারণে পরে তাকে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থায় যোগদানের প্রস্তাব দেয়া হয়। ওই প্রস্তাব লুফে নিয়ে ১৯৪৪ সালে তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। তারপর প্রায় নয় বছর ধরে তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য পাচার করেছেন।

বিবিসি জানায়, ১৯৬০ সালে লন্ডনে তিনি গ্রেপ্তার হন। কিন্তু খুব বেশি দিন তাকে কারাগারে আটকে রাখা যায়নি। ১৯৬৬ সালে তিনি কারাগার থেকে পালিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে চলে যেতে সক্ষম হন। তিনি নিজের নাম পাল্টে জর্জি ইভানোভিচ রাখেন। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা তাকে পুরস্কার হিসেবে কর্নেল র‌্যাঙ্ক প্রদান করে এবং তারপর থেকে রাশিয়াতেই তিনি অবসর জীবনযাপন করেন। প্রাক্তন কেজিবি এজেন্ট রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ২০০৭ সালে নিজে ব্লেককে মেডেল পরিয়ে সম্মানিত করেন। ব্লেকের মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর পুতিন ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করেছেন। ১৯৯০ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার ব্লেক বলেছিলেন, তিনি স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাঁচ শতাধিক পশ্চিমা গুপ্তচরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই ওই এজেন্টদের মধ্যে ৪২ জনকে প্রাণ হারাতে হয়। ব্লেক অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেছিলেন। ব্লেক নিজেও ধরা পড়েছিলেন আরেক ‘ডাবল এজেন্টের’ কারণেই। মাইকেল গোলেনিয়েস্কি নামে ওই গুপ্তচর তার এক রক্ষিতাসহ পক্ষত্যাগ করে পশ্চিমা পক্ষে যোগ দেন।

তিনিই জানিয়ে দেন যে, ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থার ভেতরে একজন ‘সোভিয়েত গুপ্তচর’ লুকিয়ে আছেন।

ব্লেককে তখন লন্ডনে ডেকে এনে গ্রেপ্তার করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে তথ্য পাচার করার পাঁচটি অভিযোগ তিনি স্বীকার করেন এবং তার ৪২ বছরের কারাদ-ের সাজা হয়েছিল।

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৪ পৌষ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

বিখ্যাত ‘ডাবল এজেন্ট’ জর্জ ব্লেকের মৃত্যু

image

স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের বিখ্যাত গুপ্তচর জর্জ ব্লেক মারা গেছেন। যিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্সের হয়ে কাজ করলেও আসলে ছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘ডাবল এজেন্ট’। ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থায় থেকেই তিনি সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিকে গোপনে তথ্য পাচার করতেন। তিনি শতাধিক পশ্চিমা এজেন্টের পরিচয় ফাঁস করে দিয়েছিলেন। যে কারণে রাশিয়া তাকে নায়কের মর্যাদা দেয়। ডয়চে ভেলে

রাশিয়ার গণমাধ্যমে ব্লেকের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। জর্জ ব্লেকের আসল নাম জর্জ বেহার। তার জন্ম ১৯২২ সালে নেদারল্যান্ডসের রটরডামে। তার বাবা একজন স্প্যানিশ ইহুদি, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে লড়াই করেছিলেন। পরে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান। অন্যদিকে ব্লেক নিজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাজ করেন নেদারল্যান্ডসের প্রতিরোধ আন্দোলনের হয়ে। তারপর তিনি ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত ভূখ- জিব্রাল্টারে পালিয়ে যান। কিছুদিন তিনি ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে কাজ করেন। জীবনের নানাবিধ অভিজ্ঞতার কারণে পরে তাকে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থায় যোগদানের প্রস্তাব দেয়া হয়। ওই প্রস্তাব লুফে নিয়ে ১৯৪৪ সালে তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। তারপর প্রায় নয় বছর ধরে তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য পাচার করেছেন।

বিবিসি জানায়, ১৯৬০ সালে লন্ডনে তিনি গ্রেপ্তার হন। কিন্তু খুব বেশি দিন তাকে কারাগারে আটকে রাখা যায়নি। ১৯৬৬ সালে তিনি কারাগার থেকে পালিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে চলে যেতে সক্ষম হন। তিনি নিজের নাম পাল্টে জর্জি ইভানোভিচ রাখেন। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা তাকে পুরস্কার হিসেবে কর্নেল র‌্যাঙ্ক প্রদান করে এবং তারপর থেকে রাশিয়াতেই তিনি অবসর জীবনযাপন করেন। প্রাক্তন কেজিবি এজেন্ট রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ২০০৭ সালে নিজে ব্লেককে মেডেল পরিয়ে সম্মানিত করেন। ব্লেকের মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর পুতিন ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করেছেন। ১৯৯০ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার ব্লেক বলেছিলেন, তিনি স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাঁচ শতাধিক পশ্চিমা গুপ্তচরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই ওই এজেন্টদের মধ্যে ৪২ জনকে প্রাণ হারাতে হয়। ব্লেক অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেছিলেন। ব্লেক নিজেও ধরা পড়েছিলেন আরেক ‘ডাবল এজেন্টের’ কারণেই। মাইকেল গোলেনিয়েস্কি নামে ওই গুপ্তচর তার এক রক্ষিতাসহ পক্ষত্যাগ করে পশ্চিমা পক্ষে যোগ দেন।

তিনিই জানিয়ে দেন যে, ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থার ভেতরে একজন ‘সোভিয়েত গুপ্তচর’ লুকিয়ে আছেন।

ব্লেককে তখন লন্ডনে ডেকে এনে গ্রেপ্তার করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে তথ্য পাচার করার পাঁচটি অভিযোগ তিনি স্বীকার করেন এবং তার ৪২ বছরের কারাদ-ের সাজা হয়েছিল।