প্রণোদনার কৃষি ঋণ বিতরণের সময় বাড়লো

করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণের সময়সীমা আবারও বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছরের (২০২১ সালের) ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ প্যাকেজ থেকে ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। গতকাল এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে বলা হয়েছে, কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের সময়সীমা ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো। এর আগে ১৩ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষি ঋণ বিতরণের সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। কৃষি ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারায় নতুন করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর আজ নতুন করে সময় বাড়ানো হলো।

চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছিল। সেই বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর প্রতিমাসে গড়ে ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বিতরণ করার কথা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮.৪৩ শতাংশ কম বিতরণ করেছে।

তবে পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৫৯ শতাংশ বা ৬৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জুলাই-নভেম্বর মাসে ৮৯৩৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, আগের বছরের একই সময়ে কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছিল ৮৩০৫ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রথম দুই মাস খুবই ভালো ছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমবারের মতো ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো ২৪১২৪ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ বিতরণ করতে ব্যাংকগুলোতে কঠোর নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কৃষি খাত যেহেতু দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই করোনা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কৃষি প্রধান অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে কৃষি ঋণ বিতরণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশের কর্মশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি সরাসরি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, জুনে সারাদেশে বন্যার ফলে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিশাল জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিতে জড়িত বলে ব্যাংকগুলোকে খামার ঋণ বিতরণে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, বন্যাকবলিত খামারিদের জন্য ঝামেলামুক্ত এবং সময়োপযোগী ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে চলতি বছরের ২৩ জুলাই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষকদের ঋণ সুবিধা দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছিল যাতে তারা হাঁস-মুরগি পালন ও গবাদি পশু পালন ও খাদ উৎপাদনের মতো কার্যক্রম শুরু করতে পারে।

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

প্রণোদনার কৃষি ঋণ বিতরণের সময় বাড়লো

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণের সময়সীমা আবারও বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছরের (২০২১ সালের) ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ প্যাকেজ থেকে ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। গতকাল এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে বলা হয়েছে, কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের সময়সীমা ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো। এর আগে ১৩ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষি ঋণ বিতরণের সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। কৃষি ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারায় নতুন করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর আজ নতুন করে সময় বাড়ানো হলো।

চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছিল। সেই বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর প্রতিমাসে গড়ে ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বিতরণ করার কথা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮.৪৩ শতাংশ কম বিতরণ করেছে।

তবে পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৫৯ শতাংশ বা ৬৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জুলাই-নভেম্বর মাসে ৮৯৩৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, আগের বছরের একই সময়ে কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছিল ৮৩০৫ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রথম দুই মাস খুবই ভালো ছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমবারের মতো ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো ২৪১২৪ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ বিতরণ করতে ব্যাংকগুলোতে কঠোর নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কৃষি খাত যেহেতু দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই করোনা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কৃষি প্রধান অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে কৃষি ঋণ বিতরণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশের কর্মশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি সরাসরি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, জুনে সারাদেশে বন্যার ফলে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিশাল জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিতে জড়িত বলে ব্যাংকগুলোকে খামার ঋণ বিতরণে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, বন্যাকবলিত খামারিদের জন্য ঝামেলামুক্ত এবং সময়োপযোগী ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে চলতি বছরের ২৩ জুলাই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষকদের ঋণ সুবিধা দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছিল যাতে তারা হাঁস-মুরগি পালন ও গবাদি পশু পালন ও খাদ উৎপাদনের মতো কার্যক্রম শুরু করতে পারে।