নহেলা কাষ্টগাড়ি আশ্রয়ণের পুকুর জলমহাল দেখিয়ে লিজ

আয়-রোজগার না থাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়ছেন বাসিন্দারা

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নহেলা কাষ্টগাড়ী বিলে আশ্রয়ন প্রকল্পে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের পূর্বে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশক্রমে ৫২ একর বিলের খাস জমি শ্রেণী পরিবর্তন করে ভিটা জমিতে রূপান্তর করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা হয়। পরবর্তীতে ওই ৫২ একর বিলের মধ্যে ৩৬ একর এখনও জলাশয় বিদ্যামান রয়েছে দেখিয়ে নীতিমালা উপেক্ষা করে লিজ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী মানুষরা।

আবাসন প্রকল্পে বসবাসকৃত লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, আবাসানে পুনর্বাসিত করার আগে সরকারি নানা সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয়েছিল আবাসনে বসবাসকৃত লোকজনদের। এ পর্যন্ত তারা আবাসনে বসবাস করে কোনো সুযোগ সুবিধা পায়নি।

নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করে বিল বা জলাশয়ে আবাসন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু জলাশয়ে বসবাস যোগ্য নয় এজন্যই তৎকালীন ইউএনওর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সাবেক জেলা প্রশাসক মোছা. নাজমানারা খানমের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী নহেলাকাষ্টগারী, পূর্ববনগ্রাম হাস্তা বিলসহ উপজেলার কিসমত পাঁচ ঘড়িয়া বিল ও মাহমুদ বিলা বিল সম্পূর্ণ রূপে বিলের শ্রেণী পরিবর্তন করে ভিটা জমিতে রূপান্তর করা হয় বলে উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুনর্বাসিত আজিজুল, সফির, আসমা, আলমগীর, সেফালি, সাত্তার, রাশেদা অভিযোগ করে বলেন, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমাদের নেই কোনো কর্মসংস্থান। আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সুদৃষ্টি নেই আমাদের প্রতি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে নহেলা কাষ্টগাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১ম ফেইজে ১৯টি টিনের ব্যারাক নির্মাণ করা হয় সেখানে ৯৫টি পরিবারকে ২য় ফেইজে ইটের ১২টি ব্যারাক নির্মাণ করে আরও ৬০টি ভূমিহীন পরিবারকে বসবাসের জন্য দেয়া হয়। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর নহেলা কাষ্টগাড়ীসহ উপজেলোর ৪টি বিল মন্ত্রনালয়ের আদেশক্রমে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বিলের শ্রেণী পরিবর্তন করে ভিটা জমিতে রূপান্তরিত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আশ্রয়ণের ওই পুকুরটি বসবাসকৃত সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে কাষ্টগাড়ী মৎসজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ফরহাদ হোসেনের নামে বাংলা ১৪২৪ সাল হইতে ১৪২৯ সাল পর্যন্ত ৬ বছর মেয়াদে আশ্রয়ণের পুকুরটি লিজ দেয়া হয়েছে। আশ্রয়ণের সুবিধাভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, লিজ দেয়ার পূর্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিভিন্ন মহলে লিখিতভাবে আবেদন দিয়ে কোন সহযোগিতা পায়নি তারা।

জানা যায়, আবাসন প্রকল্পে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভূমিহীনদের তালিকা প্রণয়ন করে প্রথমে ঐ ১৯টি টিনের ব্যারাকে ৯৫টি পরিবারকে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘর বরাদ্দ করে ৯৫টি পরিবারকে এই আবাসনে পুনর্বাসন করা হয়। পরে ২য় ফেইজে আবারো ১২টি ইটের ব্যারাক নির্মাণ করে ৬০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। পুনর্বাসিত পরিবাররা প্রথমদিকে আনন্দের সংগে ওই ঘরগুলোতে বসবাস শুরু করলেও ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০% ব্যারাক যেন ফাঁকা হয়ে যায়। তারা তাদের বরাদ্ধকৃত আবাসন ঘরে তালা ঝুলিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। বর্তমানে ওই আবাসন প্রকল্পে মাত্র ৮৫ থেকে ৯৫টি পরিবার বসবাস করছে যা শুরু থেকেই আছে।

আরো দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা বেগতিক হারে ভেঙে পড়ছে পুকুরে। ভাঙন ঠেকাতে পুকুরেরপাড় স্থায়ীভাবে প্রটেকশন না দিলে আশ্রয়ণের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহা. আবু তাহির বলেন, জলমহাল ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে লিজ দেয়া হয়েছে। এখানে আমার কিছু বলার থাকে না। তবে আর যেন লিজ দেয়া না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না যে, আশ্রয়ণের পুকুরটি মন্ত্রণালয় থেকে লিজ দিয়েছে। তবে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

নহেলা কাষ্টগাড়ি আশ্রয়ণের পুকুর জলমহাল দেখিয়ে লিজ

আয়-রোজগার না থাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়ছেন বাসিন্দারা

image

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নহেলা কাষ্টগাড়ী বিলে আশ্রয়ন প্রকল্পে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের পূর্বে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশক্রমে ৫২ একর বিলের খাস জমি শ্রেণী পরিবর্তন করে ভিটা জমিতে রূপান্তর করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা হয়। পরবর্তীতে ওই ৫২ একর বিলের মধ্যে ৩৬ একর এখনও জলাশয় বিদ্যামান রয়েছে দেখিয়ে নীতিমালা উপেক্ষা করে লিজ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী মানুষরা।

আবাসন প্রকল্পে বসবাসকৃত লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, আবাসানে পুনর্বাসিত করার আগে সরকারি নানা সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয়েছিল আবাসনে বসবাসকৃত লোকজনদের। এ পর্যন্ত তারা আবাসনে বসবাস করে কোনো সুযোগ সুবিধা পায়নি।

নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করে বিল বা জলাশয়ে আবাসন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু জলাশয়ে বসবাস যোগ্য নয় এজন্যই তৎকালীন ইউএনওর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সাবেক জেলা প্রশাসক মোছা. নাজমানারা খানমের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী নহেলাকাষ্টগারী, পূর্ববনগ্রাম হাস্তা বিলসহ উপজেলার কিসমত পাঁচ ঘড়িয়া বিল ও মাহমুদ বিলা বিল সম্পূর্ণ রূপে বিলের শ্রেণী পরিবর্তন করে ভিটা জমিতে রূপান্তর করা হয় বলে উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুনর্বাসিত আজিজুল, সফির, আসমা, আলমগীর, সেফালি, সাত্তার, রাশেদা অভিযোগ করে বলেন, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমাদের নেই কোনো কর্মসংস্থান। আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সুদৃষ্টি নেই আমাদের প্রতি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে নহেলা কাষ্টগাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১ম ফেইজে ১৯টি টিনের ব্যারাক নির্মাণ করা হয় সেখানে ৯৫টি পরিবারকে ২য় ফেইজে ইটের ১২টি ব্যারাক নির্মাণ করে আরও ৬০টি ভূমিহীন পরিবারকে বসবাসের জন্য দেয়া হয়। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর নহেলা কাষ্টগাড়ীসহ উপজেলোর ৪টি বিল মন্ত্রনালয়ের আদেশক্রমে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বিলের শ্রেণী পরিবর্তন করে ভিটা জমিতে রূপান্তরিত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আশ্রয়ণের ওই পুকুরটি বসবাসকৃত সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে কাষ্টগাড়ী মৎসজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ফরহাদ হোসেনের নামে বাংলা ১৪২৪ সাল হইতে ১৪২৯ সাল পর্যন্ত ৬ বছর মেয়াদে আশ্রয়ণের পুকুরটি লিজ দেয়া হয়েছে। আশ্রয়ণের সুবিধাভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, লিজ দেয়ার পূর্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিভিন্ন মহলে লিখিতভাবে আবেদন দিয়ে কোন সহযোগিতা পায়নি তারা।

জানা যায়, আবাসন প্রকল্পে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভূমিহীনদের তালিকা প্রণয়ন করে প্রথমে ঐ ১৯টি টিনের ব্যারাকে ৯৫টি পরিবারকে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘর বরাদ্দ করে ৯৫টি পরিবারকে এই আবাসনে পুনর্বাসন করা হয়। পরে ২য় ফেইজে আবারো ১২টি ইটের ব্যারাক নির্মাণ করে ৬০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। পুনর্বাসিত পরিবাররা প্রথমদিকে আনন্দের সংগে ওই ঘরগুলোতে বসবাস শুরু করলেও ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০% ব্যারাক যেন ফাঁকা হয়ে যায়। তারা তাদের বরাদ্ধকৃত আবাসন ঘরে তালা ঝুলিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। বর্তমানে ওই আবাসন প্রকল্পে মাত্র ৮৫ থেকে ৯৫টি পরিবার বসবাস করছে যা শুরু থেকেই আছে।

আরো দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা বেগতিক হারে ভেঙে পড়ছে পুকুরে। ভাঙন ঠেকাতে পুকুরেরপাড় স্থায়ীভাবে প্রটেকশন না দিলে আশ্রয়ণের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহা. আবু তাহির বলেন, জলমহাল ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে লিজ দেয়া হয়েছে। এখানে আমার কিছু বলার থাকে না। তবে আর যেন লিজ দেয়া না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না যে, আশ্রয়ণের পুকুরটি মন্ত্রণালয় থেকে লিজ দিয়েছে। তবে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।