দ্বিতীয় দফায়

১৭৭২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে

টেকনাফ থেকে ভাসানচরে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ভালো : অভিমত

রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয়দল ভাসানচরে পৌঁছেছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় নৌবাহিনীর সাতটি জাহাজে করে দ্বিতীয় দফায় ১ হাজার ৭৭২ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে আসা হয়। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে আনা হয়। এছাড়া আগে ৩০০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে অবস্থান করছে। এ নিয়ে ভাসানচরে বর্তমান রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৭১৪ জন।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের এই গুচ্ছগ্রামটি। হাতিয়ার উপজেলার চরঈশ^র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ট্রলারযোগে ভাসানচরে যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। প্রথম দফায় আসা রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থার কথা শুনে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গারা ভাসানচরে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় দফায় ৪২৭টি পরিবারের ১ হাজার ৭৭২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে। এরমধ্যে ১৩০ জনের বেশি রয়েছে প্রথম দফায় যাওয়া রোহিঙ্গাদের স্বজন। ভাসানচরে পৌঁছার পর আগে আসা রোহিঙ্গাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানায়। এ সময় আগে আসা রোহিঙ্গারা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জড়িয়ে ধরে আনন্দ করতে দেখা গেছে।

ভাসানচরে আসা আবু সাইদ নামের এক রোহিঙ্গা যুবক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম দফায় স্ত্রী-সন্তান পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এবার আমি নিজেই আসলাম। ভাসানচরে থাকা-খাওয়া কেমন হবে সেটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তাই প্রথমে যেতে রাজি হইনি। কিন্তু বৌ ও অন্যদের কাছ থেকে শুনেছি, সেখানকার থাকার অবস্থা নাকি টেকনাফের চেয়েও ভালো। তাই নতুন জায়গায় আসলাম।’

আনসার উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, তিন ছেলে-মেয়ে, আর স্ত্রীকে নিয়ে ভাসানচরে আসলাম। প্রথম দফায় ভাই, বোন ও শ্যালক আগে এসেছে। এখানে থাকা-খাওয়া ভালো অবস্থা। আগে এখানে (টেকনাফে) বাঁশের ঘরে থাকতে হতো, নতুন জায়গায় পাকা ঘর, তারা ছবি পাঠিয়েছে। সেগুলো দেখে ভালো লেগেছে বলে এবার আমিও পরিবার নিয়ে চলে এসেছি।’

স্বামী-সন্তানসহ ভাসানচরগামী রহিমা খাতুন বলেন, ‘প্রথম দফায় দুই ননদ সেখানে গেছে। তারা পৌঁছেই আমাদের বলেছে, সেখানে চলে যাওয়ার জন্য, সেখানকার অবস্থা নাকি টেকনাফের চেয়ে অনেক ভালো।’ অনেকেই জাহাজে তাদের পোষা হাঁস, মুরগিও সঙ্গে নিয়ে গেছেন। শিশুরা নিয়ে গেছে তাদের প্রিয় খেলনাগুলো। অনেকেই বৃদ্ধ বাবা-মাকে কোলে কিংবা কাঁধে নিয়ে ভাসানচরের জাহাজে উঠছেন।

গতকাল সকাল সোয়া ৯টায় চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর বোট ক্লাব সংলগ্ন জেটি থেকে রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজগুলো ভাসানচরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধারণার চেয়ে বেশি’ লোক দ্বিতীয় দফায় ভাসানচরে এসেছে। ১২ শ’র মতো লোক যাবে বলে ধারণা করলেও শেষ পর্যন্ত এক হাজার ৭৭২ জন স্বপ্রণোদিত হয়ে ভাসানচরে এসেছে। সরকার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যে আবাসন ব্যবস্থা করেছে, তা বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনা। কোন দেশের সরকার বাস্তুচ্যূত নাগরিকদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করেছে বলে আমাদের জানা নেই। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠসহ সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

দ্বিতীয় দফার স্থানান্তরের জন্য গত রোববার রাতেই রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। গত সোমবার সকালেও অনেকে আসেন। সোমবার দুপুরে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ৩০টি বাসে তাদের চট্টগ্রামে আনা হয়। এ সময় ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস এলাকা নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণ মানুষের চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। প্রথমবারের মতোই এবারও রোহিঙ্গাদের বহনকারী বাসগুলোর সামনে ও পেছনে র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা দেখা যায়।

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

দ্বিতীয় দফায়

১৭৭২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে

টেকনাফ থেকে ভাসানচরে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ভালো : অভিমত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধি, নোয়াখালী

image

রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয়দল ভাসানচরে পৌঁছেছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় নৌবাহিনীর সাতটি জাহাজে করে দ্বিতীয় দফায় ১ হাজার ৭৭২ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে আসা হয়। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে আনা হয়। এছাড়া আগে ৩০০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে অবস্থান করছে। এ নিয়ে ভাসানচরে বর্তমান রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৭১৪ জন।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের এই গুচ্ছগ্রামটি। হাতিয়ার উপজেলার চরঈশ^র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ট্রলারযোগে ভাসানচরে যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। প্রথম দফায় আসা রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থার কথা শুনে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গারা ভাসানচরে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় দফায় ৪২৭টি পরিবারের ১ হাজার ৭৭২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে। এরমধ্যে ১৩০ জনের বেশি রয়েছে প্রথম দফায় যাওয়া রোহিঙ্গাদের স্বজন। ভাসানচরে পৌঁছার পর আগে আসা রোহিঙ্গাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানায়। এ সময় আগে আসা রোহিঙ্গারা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জড়িয়ে ধরে আনন্দ করতে দেখা গেছে।

ভাসানচরে আসা আবু সাইদ নামের এক রোহিঙ্গা যুবক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম দফায় স্ত্রী-সন্তান পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এবার আমি নিজেই আসলাম। ভাসানচরে থাকা-খাওয়া কেমন হবে সেটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তাই প্রথমে যেতে রাজি হইনি। কিন্তু বৌ ও অন্যদের কাছ থেকে শুনেছি, সেখানকার থাকার অবস্থা নাকি টেকনাফের চেয়েও ভালো। তাই নতুন জায়গায় আসলাম।’

আনসার উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, তিন ছেলে-মেয়ে, আর স্ত্রীকে নিয়ে ভাসানচরে আসলাম। প্রথম দফায় ভাই, বোন ও শ্যালক আগে এসেছে। এখানে থাকা-খাওয়া ভালো অবস্থা। আগে এখানে (টেকনাফে) বাঁশের ঘরে থাকতে হতো, নতুন জায়গায় পাকা ঘর, তারা ছবি পাঠিয়েছে। সেগুলো দেখে ভালো লেগেছে বলে এবার আমিও পরিবার নিয়ে চলে এসেছি।’

স্বামী-সন্তানসহ ভাসানচরগামী রহিমা খাতুন বলেন, ‘প্রথম দফায় দুই ননদ সেখানে গেছে। তারা পৌঁছেই আমাদের বলেছে, সেখানে চলে যাওয়ার জন্য, সেখানকার অবস্থা নাকি টেকনাফের চেয়ে অনেক ভালো।’ অনেকেই জাহাজে তাদের পোষা হাঁস, মুরগিও সঙ্গে নিয়ে গেছেন। শিশুরা নিয়ে গেছে তাদের প্রিয় খেলনাগুলো। অনেকেই বৃদ্ধ বাবা-মাকে কোলে কিংবা কাঁধে নিয়ে ভাসানচরের জাহাজে উঠছেন।

গতকাল সকাল সোয়া ৯টায় চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর বোট ক্লাব সংলগ্ন জেটি থেকে রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজগুলো ভাসানচরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধারণার চেয়ে বেশি’ লোক দ্বিতীয় দফায় ভাসানচরে এসেছে। ১২ শ’র মতো লোক যাবে বলে ধারণা করলেও শেষ পর্যন্ত এক হাজার ৭৭২ জন স্বপ্রণোদিত হয়ে ভাসানচরে এসেছে। সরকার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যে আবাসন ব্যবস্থা করেছে, তা বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনা। কোন দেশের সরকার বাস্তুচ্যূত নাগরিকদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করেছে বলে আমাদের জানা নেই। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠসহ সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

দ্বিতীয় দফার স্থানান্তরের জন্য গত রোববার রাতেই রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। গত সোমবার সকালেও অনেকে আসেন। সোমবার দুপুরে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ৩০টি বাসে তাদের চট্টগ্রামে আনা হয়। এ সময় ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস এলাকা নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণ মানুষের চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। প্রথমবারের মতোই এবারও রোহিঙ্গাদের বহনকারী বাসগুলোর সামনে ও পেছনে র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা দেখা যায়।