মাকে হত্যা, লাশ গুম ও পুড়িয়ে ফেলার লোমহর্ষক কাহিনী

অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা, স্বীকারোক্তি ছেলে আকাশকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় হাসি রানী পান্ডে নামে একজন অসুস্থ নারীকে তার কিশোর ছেলে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে গত ২৭ জুন রাত ১০টার দিকে। এরপর লাশ গুম করতে কিশোর ছেলে সাজিয়েছে নানা কাহিনী। এক পর্যায়ে মায়ের লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, মাকে খুঁজতে বাবার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে যায়। থানায় গিয়ে মা নিখোঁজের বিষয়ে ৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রথমে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।

পুলিশের তদন্তের এক পর্যায়ে কিশোর ছেলের আচরণ সন্দেহ হলে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কাহিনী। সে মাকে হত্যা ও লাশ গুমের দায় স্বীকার করে। গোপালগঞ্জ জেলা এসপি অফিস থেকে এ কাহিনী জানা গেছে। গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন জানান, মা হাসি রানী পান্ডে হত্যামামলা তদন্তের এক পর্যায়ে ছেলে আকাশ পান্ডেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে নিজেকে জড়িয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ শিকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঘটনার পর কোটালীপাড়া ভাংগারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে টানা অভিযান চালানো হয়। গত ২৪ সেপ্টম্বর রাতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কেরোসিনের বোতলসহ একমাত্র হত্যাকারী আকাশ পান্ডেকে গ্রেফতার করা হয়। সে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এরপর বিজ্ঞ আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত আকাশ পান্ডে কোটালীপাড়া স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তার মা হাসি রানী পান্ডে একজন মানসিক রোগী। গত ২৭ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে অভিযুক্ত ছেলে আকাশ পান্ডে বাসায় ঢুকে মায়ের কাছে রাতের খাবার চাইলে তা মা হঠাৎ খাবারের প্লেট ছুড়ে মারে এবং ভাত ফেলে দেয়। আকাশ কারণ জিজ্ঞেস করে থামাতে গেলে মা তাকে বটি দিয়ে আঘাত করতে চায়। তখন আকাশ রান্না করার কাঠ দিয়ে মায়ের মাথার আঘাত করলে তা মাথার পেছনে লাগে। মারাত্মক অবস্থায় মা মাটিতে লুটে পড়ে মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর আকাশ প্রথমে বাসার (ঘরের) বাইরে গিয়ে চারপাশে কেউ আছে কিনা দেখে। এরপর পাটখড়ি, কেরোসিন এবং গ্যাসলাইটসহ মায়ের মৃতদেহ নিয়ে নৌকাযোগে ৫শ’ থেকে ৬শ’ মিটার দূরে নিয়ে যায়। সেখানে শুকনো কাঠের লাড়কির ওপর মায়ের লাশ রেখে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। লাশ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে ওই ছাই পানিতে ফেলে বাড়ি গিয়ে গোসল করে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন আকাশের বাবা মা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আকাশ বলে, তার নানা হয়তো মাকে নানাবাড়ি নিয়ে গেছেন। কিংবা মা কোথায়ও চলে গেছে আবার ফিরে আসবে। কারণ এর আগে আকাশের মা দুই থেকে তিনবার বাসা থেকে বাইরে চলে গেছে। এরপর আকাশ তার বাবার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় মাকে খুঁজতে যায়। আবার থানায় গিয়ে মা নিখোঁজের বিষয় বাবাকে গিয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রথমে অভিযোগ ও পরে জিডি করে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সন্দেহ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এরপর আকাশের নানা জুয়ান বাড়ৈ ক্ষুব্ধ হয়ে যৌতুকের জন্য মারপিট করে হত্যা করা হয়েছে বলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ভিকটিম হাসি রানীর ছেলে আকাশের আচরণ সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মাকে খুন, লাশ গুম ও পুড়িয়ে ফেলার লোমহর্ষক কাহিনী বেরিয়ে আসে।

মামলার তদন্তকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, ঘটনায় তদন্ত শেষে ছেলেকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্প্রতি চার্জশিট দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, কিশোর ছেলে শ্মশানে বাবার সঙ্গে মৃতদেহ পোড়াতে সহায়তা করত। সেই দেখে তার সাহস হয়েছে। আর তা অনুসরণ করে মায়ের লাশ পুড়িয়ে ফেলছে। ফেলার আগে কখনও নানা আবার কখনও বাবাকে হত্যাকাণ্ডে জড়ানোর চেষ্টা করেছিল। পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ক্লু বেরিয়ে আসে।

আরও খবর
আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে পেরেছে বলে মানুষ সুফল পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী
একাদশ সংসদ নির্বাচনের দু’বছর পূর্তি আজ
২০২১ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের সব বই স্কুল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে
ভাওয়াইয়া কিংবদন্তি আব্বাসউদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংকলন ‘বিজয় চিরন্তন’
‘বধ্যভূমিতে একদিন’ এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী
দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর কাল উদ্বোধন
নিখোঁজের একদিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার
আয়কর রিটার্ন জমার শেষ দিন আজ
থার্টিফার্স্টে আতশবাজি মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ
তুরাগ তীরে ৪৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
করোনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে মির্জা ফখরুল

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

মাকে হত্যা, লাশ গুম ও পুড়িয়ে ফেলার লোমহর্ষক কাহিনী

অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা, স্বীকারোক্তি ছেলে আকাশকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট

বাকিবিল্লাহ |

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় হাসি রানী পান্ডে নামে একজন অসুস্থ নারীকে তার কিশোর ছেলে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে গত ২৭ জুন রাত ১০টার দিকে। এরপর লাশ গুম করতে কিশোর ছেলে সাজিয়েছে নানা কাহিনী। এক পর্যায়ে মায়ের লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, মাকে খুঁজতে বাবার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে যায়। থানায় গিয়ে মা নিখোঁজের বিষয়ে ৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রথমে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।

পুলিশের তদন্তের এক পর্যায়ে কিশোর ছেলের আচরণ সন্দেহ হলে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কাহিনী। সে মাকে হত্যা ও লাশ গুমের দায় স্বীকার করে। গোপালগঞ্জ জেলা এসপি অফিস থেকে এ কাহিনী জানা গেছে। গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন জানান, মা হাসি রানী পান্ডে হত্যামামলা তদন্তের এক পর্যায়ে ছেলে আকাশ পান্ডেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে নিজেকে জড়িয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ শিকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঘটনার পর কোটালীপাড়া ভাংগারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে টানা অভিযান চালানো হয়। গত ২৪ সেপ্টম্বর রাতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কেরোসিনের বোতলসহ একমাত্র হত্যাকারী আকাশ পান্ডেকে গ্রেফতার করা হয়। সে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এরপর বিজ্ঞ আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত আকাশ পান্ডে কোটালীপাড়া স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তার মা হাসি রানী পান্ডে একজন মানসিক রোগী। গত ২৭ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে অভিযুক্ত ছেলে আকাশ পান্ডে বাসায় ঢুকে মায়ের কাছে রাতের খাবার চাইলে তা মা হঠাৎ খাবারের প্লেট ছুড়ে মারে এবং ভাত ফেলে দেয়। আকাশ কারণ জিজ্ঞেস করে থামাতে গেলে মা তাকে বটি দিয়ে আঘাত করতে চায়। তখন আকাশ রান্না করার কাঠ দিয়ে মায়ের মাথার আঘাত করলে তা মাথার পেছনে লাগে। মারাত্মক অবস্থায় মা মাটিতে লুটে পড়ে মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর আকাশ প্রথমে বাসার (ঘরের) বাইরে গিয়ে চারপাশে কেউ আছে কিনা দেখে। এরপর পাটখড়ি, কেরোসিন এবং গ্যাসলাইটসহ মায়ের মৃতদেহ নিয়ে নৌকাযোগে ৫শ’ থেকে ৬শ’ মিটার দূরে নিয়ে যায়। সেখানে শুকনো কাঠের লাড়কির ওপর মায়ের লাশ রেখে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। লাশ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে ওই ছাই পানিতে ফেলে বাড়ি গিয়ে গোসল করে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন আকাশের বাবা মা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আকাশ বলে, তার নানা হয়তো মাকে নানাবাড়ি নিয়ে গেছেন। কিংবা মা কোথায়ও চলে গেছে আবার ফিরে আসবে। কারণ এর আগে আকাশের মা দুই থেকে তিনবার বাসা থেকে বাইরে চলে গেছে। এরপর আকাশ তার বাবার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় মাকে খুঁজতে যায়। আবার থানায় গিয়ে মা নিখোঁজের বিষয় বাবাকে গিয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রথমে অভিযোগ ও পরে জিডি করে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সন্দেহ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এরপর আকাশের নানা জুয়ান বাড়ৈ ক্ষুব্ধ হয়ে যৌতুকের জন্য মারপিট করে হত্যা করা হয়েছে বলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ভিকটিম হাসি রানীর ছেলে আকাশের আচরণ সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মাকে খুন, লাশ গুম ও পুড়িয়ে ফেলার লোমহর্ষক কাহিনী বেরিয়ে আসে।

মামলার তদন্তকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, ঘটনায় তদন্ত শেষে ছেলেকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্প্রতি চার্জশিট দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, কিশোর ছেলে শ্মশানে বাবার সঙ্গে মৃতদেহ পোড়াতে সহায়তা করত। সেই দেখে তার সাহস হয়েছে। আর তা অনুসরণ করে মায়ের লাশ পুড়িয়ে ফেলছে। ফেলার আগে কখনও নানা আবার কখনও বাবাকে হত্যাকাণ্ডে জড়ানোর চেষ্টা করেছিল। পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ক্লু বেরিয়ে আসে।