বাড়ির ছাদে সবজির আবাদ

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

ইদানীংকালে ছাদে বিভিন্ন ফুল, ফল, শাকসবজি ইত্যাদির আবাদ এখন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে দিন দিন। একে ‘ছাদকৃষি’ হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। ছাদকৃষির কিছু সুবিধা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে যেটা বসতবাড়ির বাগান বলা হয়ে থাকে, শহরে স্থানিক গুরুত্ব বিবেচনায় সেটিকেই ছাদকৃষি বলা হয়। ছাদকৃষির মাধ্যমে একদিকে যেমন একজন বাড়িওয়ালার বাগান করার শখ মেটানো যায়, অপরদিকে এর মাধ্যমে উৎপাদিত শাকসবজির মাধ্যমে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ও শখের গার্ডেনিংয়ের মাধ্যমে ছাদকৃষি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, ধনে পাতা, মরিচ, লেটুসপাতা, লাউশাক, শিম, লালশাক, পাটশাক ইত্যাদি স্বল্প পরিসরে আবাদ করা যেতে পারে। এসব শাকসবজি ছাদে আবাদের জন্য ছাদে মাটির ব্যবস্থা করে নিতে হবে। ছোট-বড় প্লাস্টিকের পাত্র, টিনের কৌটা, ড্রাম, পট অথবা ছাদের মেঝেতে চারিদিকে ইটের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে মাটির স্তূপ বসিয়ে সেখানে সবজি চাষের জন্য মাটিকে উপযুক্ত করে নিতে হবে। শীতকালে আবাদ করতে হলে সেচ দিতে হবে নিয়মিত। সেজন্য ছাদে পানির ব্যবস্থা হিসেবে একটি কল ও ফিতা পাইপের সংস্থান করলেই যথেষ্ট। সংগৃহীত মাটিকে ভালোভাবে গুঁড়া করে নিতে হবে। সেই গুঁড়ো মাটির সঙ্গে শুকনো গোবর, প্রয়োজনমতো জৈবসার, রাসায়নিক সার ইত্যাদি মিশ্রিত করে সবজি চাষের উপযোগী করে নিতে হবে।

এরপর টমেটো, বেগুন, মরিচ, ফুলকপি, লেটুসপাতা ইত্যাদির চারা লাগাতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য আইটেম যেমন ধনে পাতা, লাউশাক, শিম, লালশাক, পাটশাক ইত্যাদির বীজ বুনে দিতে হবে। এগুলো লাগানোর পর সকাল ও বিকাল তার নিয়মিত যতœ নিতে হবে। নিয়মিত যতেœর মাধ্যমে এসব শাকসবজির সতেজ-সবল বাড়-বাড়তি যে কাউকেই আরও বেশি যতœশীল ও আগ্রহী হিসেবে গড়ে তুলবে। নিজের হাতে ও নিজের যতেœ উৎপাদিত শাকসবজির স্বাদই আলাদা। নিজের ছাদে উৎপাদিত সবজি যখন তোলা হয় তখন শরীর ও মনে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। তাছাড়া এসব শাকসবজিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বিধায় সেগুলো জৈবিক শাকসবজি খেতে খুবই সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত।

করোনা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি গুরুত্ব বিষয়। সেখানে শাকসবজি খাদ্যের মধ্যে সেই সুষমতা বিধান করে থাকে। অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে করোনায় কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা না রাখার তাগিদ দিয়েছেন। সেদিক থেকেও ছাদে শীতকালীন শাকসবজি আবাদ অত্যন্ত সময়োপযোগী। কাজেই স্বাভাবিক কৃষির পাশাপাশি ছাদকৃষির মাধ্যমে শীতকালীন শাকসবজির আবাদের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সুষম পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত উৎপাদিত শাকসবজি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, গরিব-দুঃখীদেরকে বিলিয়ে দেয়া যায়। সেইসঙ্গে আরও অতিরিক্ত হলে তা বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কাজেই সার্বিক কৃষির উৎপাদন বাড়াতে এখন আমাদের এভাবেই ভাবতে হবে।

[লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়] kbdhumayun08@gmail.com

image
আরও খবর

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

বাড়ির ছাদে সবজির আবাদ

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

image

ইদানীংকালে ছাদে বিভিন্ন ফুল, ফল, শাকসবজি ইত্যাদির আবাদ এখন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে দিন দিন। একে ‘ছাদকৃষি’ হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। ছাদকৃষির কিছু সুবিধা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে যেটা বসতবাড়ির বাগান বলা হয়ে থাকে, শহরে স্থানিক গুরুত্ব বিবেচনায় সেটিকেই ছাদকৃষি বলা হয়। ছাদকৃষির মাধ্যমে একদিকে যেমন একজন বাড়িওয়ালার বাগান করার শখ মেটানো যায়, অপরদিকে এর মাধ্যমে উৎপাদিত শাকসবজির মাধ্যমে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ও শখের গার্ডেনিংয়ের মাধ্যমে ছাদকৃষি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, ধনে পাতা, মরিচ, লেটুসপাতা, লাউশাক, শিম, লালশাক, পাটশাক ইত্যাদি স্বল্প পরিসরে আবাদ করা যেতে পারে। এসব শাকসবজি ছাদে আবাদের জন্য ছাদে মাটির ব্যবস্থা করে নিতে হবে। ছোট-বড় প্লাস্টিকের পাত্র, টিনের কৌটা, ড্রাম, পট অথবা ছাদের মেঝেতে চারিদিকে ইটের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে মাটির স্তূপ বসিয়ে সেখানে সবজি চাষের জন্য মাটিকে উপযুক্ত করে নিতে হবে। শীতকালে আবাদ করতে হলে সেচ দিতে হবে নিয়মিত। সেজন্য ছাদে পানির ব্যবস্থা হিসেবে একটি কল ও ফিতা পাইপের সংস্থান করলেই যথেষ্ট। সংগৃহীত মাটিকে ভালোভাবে গুঁড়া করে নিতে হবে। সেই গুঁড়ো মাটির সঙ্গে শুকনো গোবর, প্রয়োজনমতো জৈবসার, রাসায়নিক সার ইত্যাদি মিশ্রিত করে সবজি চাষের উপযোগী করে নিতে হবে।

এরপর টমেটো, বেগুন, মরিচ, ফুলকপি, লেটুসপাতা ইত্যাদির চারা লাগাতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য আইটেম যেমন ধনে পাতা, লাউশাক, শিম, লালশাক, পাটশাক ইত্যাদির বীজ বুনে দিতে হবে। এগুলো লাগানোর পর সকাল ও বিকাল তার নিয়মিত যতœ নিতে হবে। নিয়মিত যতেœর মাধ্যমে এসব শাকসবজির সতেজ-সবল বাড়-বাড়তি যে কাউকেই আরও বেশি যতœশীল ও আগ্রহী হিসেবে গড়ে তুলবে। নিজের হাতে ও নিজের যতেœ উৎপাদিত শাকসবজির স্বাদই আলাদা। নিজের ছাদে উৎপাদিত সবজি যখন তোলা হয় তখন শরীর ও মনে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। তাছাড়া এসব শাকসবজিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বিধায় সেগুলো জৈবিক শাকসবজি খেতে খুবই সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত।

করোনা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি গুরুত্ব বিষয়। সেখানে শাকসবজি খাদ্যের মধ্যে সেই সুষমতা বিধান করে থাকে। অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে করোনায় কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা না রাখার তাগিদ দিয়েছেন। সেদিক থেকেও ছাদে শীতকালীন শাকসবজি আবাদ অত্যন্ত সময়োপযোগী। কাজেই স্বাভাবিক কৃষির পাশাপাশি ছাদকৃষির মাধ্যমে শীতকালীন শাকসবজির আবাদের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সুষম পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত উৎপাদিত শাকসবজি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, গরিব-দুঃখীদেরকে বিলিয়ে দেয়া যায়। সেইসঙ্গে আরও অতিরিক্ত হলে তা বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কাজেই সার্বিক কৃষির উৎপাদন বাড়াতে এখন আমাদের এভাবেই ভাবতে হবে।

[লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়] kbdhumayun08@gmail.com