জানুয়ারিতেই আসছে টিকা, আশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির তৈরি টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। আগামী সোমবারই দেশটিতে এই টিকার গণব্যবহার শুরু হচ্ছে। তবে বাংলাদেশকে এই টিকা পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। তবে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে এই টিকা আসবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

‘ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া মোটামুটি শেষ। ভ্যাকসিন আসার একটা সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছিল জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তবে অনুমোদনের প্রক্রিয়া দ্রুত হওয়ায় আরও আগে পাওয়ার আশা করছে সরকার,’ গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এখন ভারত সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্রাজেনেকার টিকা। এরপর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন পেতে আবেদন করবে টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন হলেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা আনবে বাংলাদেশ।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন টিকাদান কর্মসূচিতে একটি মাইলফলক তৈরি করবে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। কারণ এই টিকা অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং এর ব্যবহারবিধি ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচির জন্য তুলনামূলক সহজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা (কোভিশিল্ড) সাধারণ ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা যায়। ব্রিটিশ ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনটি অনুমোদনের মানে হলো- এটি মানবদেহের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর, বলেছেন তারা।

বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে। এই টিকা পেতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং দেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তির আওতায় প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশে কবে নাগাদ এবং কীভাবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া যাবে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘টিকাটি গতকাল যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পেয়েছে, এখন ভারতে অনুমোদন পাবে। এরপর এই টিকার অনুমোদন পেতে ডব্লিউএইচওতে (বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা) আবেদন করবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ। ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন পেলেই আমরা টিকা আনব।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক সংবাদকে বলেন, ‘সেরামের কারখানায় টিকা প্রস্তুত হলে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। তবে বেক্সিমকো থেকে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। এরপরও টিকা গ্রহণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ এবং প্রয়োগের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’

এগুচ্ছে টিকা আমদানি ও সরবরাহ প্রক্রিয়া

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে করোনার টিকা কেনার জন্য অর্থছাড়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। টিকা দেয়ার জন্য সুই-সিরিঞ্জ ও অন্যান্য সরঞ্জাম সামগ্রী কেনার কাজও জোরদার হচ্ছে।

টিকাদান কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘টিকা আমদানির ৫০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, ৫০ ভাগ অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। বাকি কাজও চলমান রয়েছে।’

গত ২৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুষ্ঠিত এক সভার কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, সেরাম ও বেক্সিমকোর সরকারের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে দেশে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। ভারতের পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটের কারখানা থেকে টিকা প্রথমে দিল্লি বিমানবন্দর হয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবে। এরপর টিকা নেয়া হবে বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউসে, সেখান থেকে জেলা পর্যায়ে সরকারের ওয়্যারহাউসগুলোতে টিকা সরবরাহ করা যাবে।

২০২১ সালে ৩ বিলিয়ন ডোজ টিকা উৎপাদন করবে অক্সফোর্ড

অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী এক বছরে তারা পুরো বিশ্বের জন্য তিন বিলিয়ন ডোজ টিকা তৈরি করবে। তারা এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে ইতোমধ্যে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছে। ভারত সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা উৎপাদন শুরু করলে বাংলাদেশও এই টিকা পাবে। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার মতো অক্সফোর্ডের টিকারও দুটো করে ডোজ নিতে হবে। ফাইজারের ক্ষেত্রে দুই ডোজের মাঝে তিন সপ্তাহের বিরতি থাকে। তবে অক্সফোর্ডের টিকার দুই ডোজ নিতে হবে চার সপ্তাহের ব্যবধানে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাসকেল সোরিয়ট বলেছেন, ‘আমরা মনে করি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়ানোর উইনিং ফর্মুলা আমরা পেয়ে গেছি। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রকদের বেধে দেয়া মান বজায় রাখতে পেরেছি। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক প্রভাব অনেক বেশি হবে।’

দামেও সাশ্রয়ী অক্সফোর্ডের টিকা

গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্সফোর্ডের টিকার দাম তুলনামূলকভাবে কম, এটি সহজে উৎপাদনও করা যায়। এর ফলে এই টিকা করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচিতে অনেক বেশি গতি আনতে সক্ষম হবে। এছাড়া অক্সফোর্ডের টিকা রেফ্রিজারেটরের সাধারণ তাপমাত্রাতে সংরক্ষণ করা যায়, এতে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে এই টিকা সরবরাহ তুলনামূলক সহজ হবে।

বিদেশি একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্সফোর্ডের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে তিন পাউন্ডের মতো (দেশীয় মুদ্রায় ৩৩৯ টাকা)। আর ফাইজারের টিকার দাম হবে ১৫ পাউন্ড ও মডার্নার টিকার দাম পড়বে ২৫ পাউন্ডের মতো। যদিও বেক্সিমকো ও সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের দিন (৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ৫ ডলার (৪২৫ টাকা) করে।

সংরক্ষণেও সুবিধা অক্সফোর্ডের টিকা

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ডিসেম্বরেই ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ ওই ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়।

যুক্তরাজ্যই বিশে^র একমাত্র দেশ যারা দুটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটি ২০২০ সালের প্রথম দিকে ডিজাইন করা হয়। এপ্রিলে প্রথম এটি স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর পরীক্ষা করা হয়। পরে হাজার হাজার মানুষের ওপর ব্যাপক আকারের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়।

ব্রিটিশ ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনটি অনুমোদনের মানে হলো- এটি মানবদেহে নিরাপদ ও কার্যকর। ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন সংরক্ষণে ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এবং মডার্নার টিকা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা সাধারণ ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরে সম্ভব নয়। তবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সাধারণ ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। এটি সংরক্ষণে ২-৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা লাগে।

যুক্তরাজ্য সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা নিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা দিয়ে পাঁচ কোটি মানুষকে দেয়া হবে। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দেয়ার পর দেশটিতে ইতোমধ্যে ছয় লাখ মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আওতায় অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোতে গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের সহযোগিতায় গঠিত ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’র (কোভ্যাক্স) আওতায় আট কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে কেনা এবং কোভ্যাক্স সুবিধায় মোট সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য নয় কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৬ পৌষ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

জানুয়ারিতেই আসছে টিকা, আশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির তৈরি টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। আগামী সোমবারই দেশটিতে এই টিকার গণব্যবহার শুরু হচ্ছে। তবে বাংলাদেশকে এই টিকা পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। তবে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে এই টিকা আসবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

‘ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া মোটামুটি শেষ। ভ্যাকসিন আসার একটা সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছিল জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তবে অনুমোদনের প্রক্রিয়া দ্রুত হওয়ায় আরও আগে পাওয়ার আশা করছে সরকার,’ গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এখন ভারত সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্রাজেনেকার টিকা। এরপর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন পেতে আবেদন করবে টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন হলেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা আনবে বাংলাদেশ।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন টিকাদান কর্মসূচিতে একটি মাইলফলক তৈরি করবে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। কারণ এই টিকা অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং এর ব্যবহারবিধি ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচির জন্য তুলনামূলক সহজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা (কোভিশিল্ড) সাধারণ ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা যায়। ব্রিটিশ ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনটি অনুমোদনের মানে হলো- এটি মানবদেহের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর, বলেছেন তারা।

বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে। এই টিকা পেতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং দেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তির আওতায় প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশে কবে নাগাদ এবং কীভাবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া যাবে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘টিকাটি গতকাল যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পেয়েছে, এখন ভারতে অনুমোদন পাবে। এরপর এই টিকার অনুমোদন পেতে ডব্লিউএইচওতে (বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা) আবেদন করবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ। ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন পেলেই আমরা টিকা আনব।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক সংবাদকে বলেন, ‘সেরামের কারখানায় টিকা প্রস্তুত হলে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। তবে বেক্সিমকো থেকে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। এরপরও টিকা গ্রহণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ এবং প্রয়োগের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’

এগুচ্ছে টিকা আমদানি ও সরবরাহ প্রক্রিয়া

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে করোনার টিকা কেনার জন্য অর্থছাড়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। টিকা দেয়ার জন্য সুই-সিরিঞ্জ ও অন্যান্য সরঞ্জাম সামগ্রী কেনার কাজও জোরদার হচ্ছে।

টিকাদান কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘টিকা আমদানির ৫০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, ৫০ ভাগ অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। বাকি কাজও চলমান রয়েছে।’

গত ২৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুষ্ঠিত এক সভার কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, সেরাম ও বেক্সিমকোর সরকারের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে দেশে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। ভারতের পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটের কারখানা থেকে টিকা প্রথমে দিল্লি বিমানবন্দর হয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবে। এরপর টিকা নেয়া হবে বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউসে, সেখান থেকে জেলা পর্যায়ে সরকারের ওয়্যারহাউসগুলোতে টিকা সরবরাহ করা যাবে।

২০২১ সালে ৩ বিলিয়ন ডোজ টিকা উৎপাদন করবে অক্সফোর্ড

অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী এক বছরে তারা পুরো বিশ্বের জন্য তিন বিলিয়ন ডোজ টিকা তৈরি করবে। তারা এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে ইতোমধ্যে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছে। ভারত সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা উৎপাদন শুরু করলে বাংলাদেশও এই টিকা পাবে। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার মতো অক্সফোর্ডের টিকারও দুটো করে ডোজ নিতে হবে। ফাইজারের ক্ষেত্রে দুই ডোজের মাঝে তিন সপ্তাহের বিরতি থাকে। তবে অক্সফোর্ডের টিকার দুই ডোজ নিতে হবে চার সপ্তাহের ব্যবধানে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাসকেল সোরিয়ট বলেছেন, ‘আমরা মনে করি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়ানোর উইনিং ফর্মুলা আমরা পেয়ে গেছি। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রকদের বেধে দেয়া মান বজায় রাখতে পেরেছি। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক প্রভাব অনেক বেশি হবে।’

দামেও সাশ্রয়ী অক্সফোর্ডের টিকা

গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্সফোর্ডের টিকার দাম তুলনামূলকভাবে কম, এটি সহজে উৎপাদনও করা যায়। এর ফলে এই টিকা করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচিতে অনেক বেশি গতি আনতে সক্ষম হবে। এছাড়া অক্সফোর্ডের টিকা রেফ্রিজারেটরের সাধারণ তাপমাত্রাতে সংরক্ষণ করা যায়, এতে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে এই টিকা সরবরাহ তুলনামূলক সহজ হবে।

বিদেশি একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্সফোর্ডের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে তিন পাউন্ডের মতো (দেশীয় মুদ্রায় ৩৩৯ টাকা)। আর ফাইজারের টিকার দাম হবে ১৫ পাউন্ড ও মডার্নার টিকার দাম পড়বে ২৫ পাউন্ডের মতো। যদিও বেক্সিমকো ও সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের দিন (৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ৫ ডলার (৪২৫ টাকা) করে।

সংরক্ষণেও সুবিধা অক্সফোর্ডের টিকা

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ডিসেম্বরেই ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ ওই ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়।

যুক্তরাজ্যই বিশে^র একমাত্র দেশ যারা দুটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটি ২০২০ সালের প্রথম দিকে ডিজাইন করা হয়। এপ্রিলে প্রথম এটি স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর পরীক্ষা করা হয়। পরে হাজার হাজার মানুষের ওপর ব্যাপক আকারের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়।

ব্রিটিশ ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনটি অনুমোদনের মানে হলো- এটি মানবদেহে নিরাপদ ও কার্যকর। ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন সংরক্ষণে ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এবং মডার্নার টিকা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা সাধারণ ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরে সম্ভব নয়। তবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সাধারণ ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। এটি সংরক্ষণে ২-৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা লাগে।

যুক্তরাজ্য সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা নিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা দিয়ে পাঁচ কোটি মানুষকে দেয়া হবে। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দেয়ার পর দেশটিতে ইতোমধ্যে ছয় লাখ মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আওতায় অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোতে গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের সহযোগিতায় গঠিত ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’র (কোভ্যাক্স) আওতায় আট কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে কেনা এবং কোভ্যাক্স সুবিধায় মোট সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য নয় কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাচ্ছে।