রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বিরোধিতা না করে প্রত্যাবাসনে উদ্যোগী হোন

রোহিঙ্গাদের সমস্যা মায়ানমার তৈরি করেছে এবং এর সমাধানও মায়ানমারেই। এ কারণে বাংলাদেশের ওপর অযৌক্তিক ও অন্যায্য চাপ প্রয়োগ না করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক এনজিও, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত মায়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং সেখানে প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি দেখার জন্য একটি কারিগরি ও সুরক্ষা দল পাঠানো। তাই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় বিরোধিতা না করে তাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে উদ্যোগী হতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, সমস্যা মায়ানমার তৈরি করেছে এবং এর সমাধানও মায়ানমারেই। এ কারণে বাংলাদেশের ওপর অযৌক্তিক ও অন্যায্য চাপ প্রয়োগ না করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক এনজিও, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত, রোহিঙ্গারা মায়ানমারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে ভয়ানক মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছে, তার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। জাতিসংঘের উচিত মায়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং সেখানে প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি দেখার জন্য একটি কারিগরি ও সুরক্ষা দল পাঠানো।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার পুনরায় গুরুত্বারোপ করছে যে, ভাসানচর সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং বসবাসের উপযোগী। ৩০ বছর বয়সী এই দ্বীপে স্বাস্থ্যসেবা, পানি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রভৃতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ভাসানচরের সঙ্গে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সি-ট্রাক চালু করা হয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তা কার্যক্রমে নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে পূর্বের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে এবং এক্ষেত্রে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ বিষয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। যদিও ভাসানচরকে কেন্দ্র করে এবং স্থানান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে বানোয়াট ও ভুল তথ্য ছড়ানোর কারণে হতাশ সরকার। এটা মনোবেদনার, বাংলাদেশের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত না জানিয়ে একটি অংশ মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি করছে।’

বাংলাদেশ সরকার বলছে, ‘এটা মনে রাখতে হবে যে, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশ কেবলমাত্র মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য যে কার্যক্রমই নেয়া হোক, তা পুরোপুরি অস্থায়ী। রোহিঙ্গারা তাদের দেশ মায়ানমারে ফেরত যেতে চায় এবং সবার উচিত হবে সেদিকে লক্ষ্য করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। মায়ানমারের নির্বাচন শেষ হয়েছে, এখন আমরা সেদেশের সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃশ্যমান সম্পৃক্ততার অপেক্ষায় আছি, যাতে এই বাস্তুচ্যুত ও নির্যাতিত মায়ানমারের নাগরিকরা জরুরি ভিত্তিতে ও দ্রুত তাদের স্বদেশে ফিরতে পারে।’

বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৬ পৌষ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী 

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বিরোধিতা না করে প্রত্যাবাসনে উদ্যোগী হোন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রোহিঙ্গাদের সমস্যা মায়ানমার তৈরি করেছে এবং এর সমাধানও মায়ানমারেই। এ কারণে বাংলাদেশের ওপর অযৌক্তিক ও অন্যায্য চাপ প্রয়োগ না করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক এনজিও, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত মায়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং সেখানে প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি দেখার জন্য একটি কারিগরি ও সুরক্ষা দল পাঠানো। তাই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় বিরোধিতা না করে তাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে উদ্যোগী হতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, সমস্যা মায়ানমার তৈরি করেছে এবং এর সমাধানও মায়ানমারেই। এ কারণে বাংলাদেশের ওপর অযৌক্তিক ও অন্যায্য চাপ প্রয়োগ না করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক এনজিও, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত, রোহিঙ্গারা মায়ানমারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে ভয়ানক মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছে, তার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। জাতিসংঘের উচিত মায়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং সেখানে প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি দেখার জন্য একটি কারিগরি ও সুরক্ষা দল পাঠানো।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার পুনরায় গুরুত্বারোপ করছে যে, ভাসানচর সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং বসবাসের উপযোগী। ৩০ বছর বয়সী এই দ্বীপে স্বাস্থ্যসেবা, পানি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রভৃতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ভাসানচরের সঙ্গে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সি-ট্রাক চালু করা হয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তা কার্যক্রমে নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে পূর্বের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে এবং এক্ষেত্রে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ বিষয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। যদিও ভাসানচরকে কেন্দ্র করে এবং স্থানান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে বানোয়াট ও ভুল তথ্য ছড়ানোর কারণে হতাশ সরকার। এটা মনোবেদনার, বাংলাদেশের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত না জানিয়ে একটি অংশ মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি করছে।’

বাংলাদেশ সরকার বলছে, ‘এটা মনে রাখতে হবে যে, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশ কেবলমাত্র মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য যে কার্যক্রমই নেয়া হোক, তা পুরোপুরি অস্থায়ী। রোহিঙ্গারা তাদের দেশ মায়ানমারে ফেরত যেতে চায় এবং সবার উচিত হবে সেদিকে লক্ষ্য করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। মায়ানমারের নির্বাচন শেষ হয়েছে, এখন আমরা সেদেশের সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃশ্যমান সম্পৃক্ততার অপেক্ষায় আছি, যাতে এই বাস্তুচ্যুত ও নির্যাতিত মায়ানমারের নাগরিকরা জরুরি ভিত্তিতে ও দ্রুত তাদের স্বদেশে ফিরতে পারে।’