স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভারতের মিজোরাম রাজ্য লাগোয়া বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলে সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে। আমাদের এলাকা থেকে ধাওয়া দিলে তারা দুর্গম এলাকা পার হয়ে সীমান্তের ওপারে (ভারতে) চলে যায়। সেটা যেন না হয় সেজন্য আমাদের বিওপির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। সীমান্ত সড়ক হচ্ছে। এগুলো হলে তাদের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে। গতকাল পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে বাহিনীটির সদস্যদের পদক বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বিভিন্ন কর্মকা-ে ২০২০ সালের বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৪টি ক্যাটাগরিতে মোট ৫৯ জনকে পদক পরিয়ে দেন তিনি। এরমধ্যে ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ১৯ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক সেবা (পিজিবিএমএস) দেয়া হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা, বিজিবির সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা, সৈনিক ও বেসামরিক কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলে থাকেন, আমাদের দেশে এক ইঞ্চি জমিও আমরা কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করতে দেব না। এ লক্ষ্যে সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী ঠেকাতে আমরা কাজ করছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তারা যতটুকু পারছেন সহযোগিতা করছেন। মায়ানমারের সঙ্গেও আমাদের যে সীমান্ত রয়েছে, সেখানেও এমন কিছু এলাকা সম্পর্কে আমাদের কাছে কিছু গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। ওইসব এলাকা থেকে সীমান্ত পার হয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী চক্র অপরাধ করে চলে যায়। আবার ওইখানে অপরাধ করে আমাদের এখানে এসে শেল্টার নেয়। এসব বন্ধ করার জন্য বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী (আকাশ, পানি এবং স্থলপথ) হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া আমরা বর্ডার রোড নির্মাণ ও বিওপি বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছি। এগুলো হয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব বিজিবির ওপর ন্যস্ত। নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান, মাদকপাচার ও নারী-শিশুপাচার রোধে বিজিবির সফলতা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ইয়াবা, ফেনসিডিল এবং অন্য মাদকপাচার রোধে বিজিবি বিশেষ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছে।
নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে। সব বিষয় নজরদারির মধ্যে রয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাফিনুল ইসলাম বলেন, বিএসএফ প্রতিবার আমাদের কিছু এরকম লোকেশন দেয়। আমরা সেখানে অপারেশন পরিচালনা করি। কিন্তু আদতে সেখানে কিছুই পাই না। সেটাও আমরা বিএসএফকে জানিয়েছি, বলেছি যে তোমরা আমাদের যে লিস্টগুলো দিয়েছে সেগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেছি, সেখানে আমরা এরকম কোন ক্যাম্প খুঁজে পাইনি। প্রসঙ্গত, গত ২৫ ডিসেম্বর গৌহাটিতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম মিজোরামে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটির’ অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য বিএসএফকে অনুরোধ করেছিলেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতির’ কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওইসব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৬ পৌষ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভারতের মিজোরাম রাজ্য লাগোয়া বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলে সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে। আমাদের এলাকা থেকে ধাওয়া দিলে তারা দুর্গম এলাকা পার হয়ে সীমান্তের ওপারে (ভারতে) চলে যায়। সেটা যেন না হয় সেজন্য আমাদের বিওপির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। সীমান্ত সড়ক হচ্ছে। এগুলো হলে তাদের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে। গতকাল পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে বাহিনীটির সদস্যদের পদক বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বিভিন্ন কর্মকা-ে ২০২০ সালের বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৪টি ক্যাটাগরিতে মোট ৫৯ জনকে পদক পরিয়ে দেন তিনি। এরমধ্যে ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ১৯ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক সেবা (পিজিবিএমএস) দেয়া হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা, বিজিবির সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা, সৈনিক ও বেসামরিক কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলে থাকেন, আমাদের দেশে এক ইঞ্চি জমিও আমরা কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করতে দেব না। এ লক্ষ্যে সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী ঠেকাতে আমরা কাজ করছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তারা যতটুকু পারছেন সহযোগিতা করছেন। মায়ানমারের সঙ্গেও আমাদের যে সীমান্ত রয়েছে, সেখানেও এমন কিছু এলাকা সম্পর্কে আমাদের কাছে কিছু গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। ওইসব এলাকা থেকে সীমান্ত পার হয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী চক্র অপরাধ করে চলে যায়। আবার ওইখানে অপরাধ করে আমাদের এখানে এসে শেল্টার নেয়। এসব বন্ধ করার জন্য বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী (আকাশ, পানি এবং স্থলপথ) হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া আমরা বর্ডার রোড নির্মাণ ও বিওপি বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছি। এগুলো হয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব বিজিবির ওপর ন্যস্ত। নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান, মাদকপাচার ও নারী-শিশুপাচার রোধে বিজিবির সফলতা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ইয়াবা, ফেনসিডিল এবং অন্য মাদকপাচার রোধে বিজিবি বিশেষ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছে।
নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে। সব বিষয় নজরদারির মধ্যে রয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাফিনুল ইসলাম বলেন, বিএসএফ প্রতিবার আমাদের কিছু এরকম লোকেশন দেয়। আমরা সেখানে অপারেশন পরিচালনা করি। কিন্তু আদতে সেখানে কিছুই পাই না। সেটাও আমরা বিএসএফকে জানিয়েছি, বলেছি যে তোমরা আমাদের যে লিস্টগুলো দিয়েছে সেগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেছি, সেখানে আমরা এরকম কোন ক্যাম্প খুঁজে পাইনি। প্রসঙ্গত, গত ২৫ ডিসেম্বর গৌহাটিতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম মিজোরামে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটির’ অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য বিএসএফকে অনুরোধ করেছিলেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতির’ কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওইসব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।